নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমিয় উজ্জ্বল

অমিয় উজ্‌জ্‌বল

অর্থ নয় কীর্তি নয় সফলতা নয় আরো এক বিপন্ন বিস্ময় অন্তর্গত রক্তের ভেতর খেলা করে।

অমিয় উজ্‌জ্‌বল › বিস্তারিত পোস্টঃ

হযরত উসমানের শেষ দিন গুলি......

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৩৯

আমীরুল মুমেনীন হজরত উসমান (রা:)'র বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলেছে অসংখ্য মানুষ। এই মানুষগুলি মদীনার বাইরে থেকে এসেছে, যদিও এদের সাথে কিছু মদীনাবাসীও আছে। এরা এসেছে মূলত মিশর, কুফা, বসরা থেকে।

মানুষগুলি কি চায়? তারা আমীরুল মুমেনীনের পদত্যাগ চায়। জুন্নুরাইন, জমিয়াতুল কুরান, স্বয়ং রাসূলের জামাতা,প্রথম জমানার বিশ্বাসী, ইসলামের জন্য দুই দুইবার হিজরতকারী হযরত উসমানের পদত্যাগ চায়।
আরো দু:খের বিষয় এদের সাথে আছে প্রথম খলিফা, নবীর শ্বশুর,সিদ্দীকে আকবর হজরত আবু বকরের পুত্র মুহম্মদ ইবনে আবু বকর।
আমীরুল মুমেনীন অবিচল, তিনি পদত্যগ করবেন না। বিদ্রোহীরা মদীনা শহরের দখল নিয়ে নিয়েছে একরকম। তাদের নেতা মসজিদে নববীতে ইমামতি করছে। উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছে। দাবী দাওয়া পেশ করছে।

তাদের কি অভিযোগ? কেন তারা বিক্ষোভ করছে?
তাদের অভিযোগ হজরত উসমান হয় মিথ্যাবাদী নয়ত অযোগ্য দুর্বল খলিফা।
ঘটনার সূত্রপাত হজরত উসমানের খেলাফতের শুরু থেকেই।
খলিফা উসমান ক্ষমতায় গিয়েই প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল শুরু করেন। মিশরে গভর্নর করে পাঠান তার দুধভাই আব্দুল্লাহ বিন সাদকে। এই আব্দুল্লাহ বিন সাদ একজন মুরতাদ। প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করেও সে পরে ইসলাম ত্যাগ করে। মক্কা বিজয়ের পর নবী তাকে মৃত্যুদন্ডের সিদ্ধান্তও দেন। কিন্তু হজরত উসমানের সুপারিশে নবী তাকে ক্ষমা করে দেন। সেই আব্দুল্লা ইবনে সাদকে মিশরের গভর্নর করা হয় আমর ইবনে আল আসকে সরিয়ে।

মারওয়ান ইবনে হাকাম একজন মিথ্যাবাদী অবিশ্বস্ত লোক। নবী তাকে একবার মদীনা থেকে বের করে দেন তার কোন এক অবিশ্বস্ততার দরুন। এই মারওয়ান হলো উসমানের চাচাত ভাই। উসমান খলিফা হলে মারওয়ান হন তার মীর মুনশী বা প্রধান উপদেশক। উসমানের প্রশাসন চলে মারওয়ানের কথায়। ক্ষমতা পেয়ে মারওয়ানও হয়ে ওঠে বেপরোয়া। মদীনার বিশিষ্ট নাগরিকদের অপদস্ত করতেও তার বাধেনা।
এভাবেই বিভিন্ন প্রদেশে হজরত উসমানের নিকটাত্মীয়রা (উমাইয়া বংশীয়) প্রশাসনিক পদগুলো দখল করে যাদের অধিকাংশই ছিল উচ্চাভিলাষী আর অযোগ্য।

উসমান সরকারি তহবিল থেকে বিশেষ কয়েকজনকে নিয়মিত মাসোহারা দিতেন যারা তাঁর একান্ত কাছের। এরা প্রশাসনের কেউ না, স্রেফ ভাতাপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নাগরিক। উম্মুল মুমেনীন হজরত আয়েশা (রা:), হজরত তালহা, হজরত জুবায়ের (রা:) আছেন এই তালিকায়। যদিও এরা প্রত্যকেই এমনিতেই বিপুল সম্পদের অধিকারী ছিলেন সে সময়।

মুয়াবিয়ার সাথে এক বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন বিশিষ্ট সাহাবী আবু জর গিফারী (রা:) । মুয়াবিয়ার বিপুল সম্পদ সঞ্চয় আর আয়েশি জীবনকে অনৈসলামিক বলে ঘোষণা দিলেন তিনি। এই বিবাদ অনেকদুর গড়ায়। ফলশ্রুতিতে আবু জার গিফারী সাহেবকে নির্বাসন দিলেন হজরত উসমান। মুয়াবিয়া আবার উসমানের স্বগোত্রীয় এবং নিকটাত্মীয়।

সর্বশেষ অভিযোগটি গুরুতর। নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে, হজরত আলীর মধ্যস্ততায় এবং একান্ত সুপারিশে উসমানের দুধভাই আব্দুল্লাহ ইবনে সাদকে সরিয়ে মুহম্মদ বিন আবুবকরকে মিশরের গভর্ণর হিসেবে নিযুক্ত করা হলো। কিন্তু পথিমধ্যে খলিফার দুতের কাছ থেকে এক চিঠি উদ্ধার করলো স্থানীয় জনতারা যেখানে লেখা ছিল মুহম্মদ বিন বকর মিশরে পৌছানো মাত্র তাকে যেন সদলবলে হত্যা করা হয়।

মুহম্মদ বিন বকর খলিফাকে জিজ্ঞেস করেন , “এই চিঠি আপনি লিখেছেন?”
খলিফা অস্বীকার করেন, এই চিঠি তাঁর নয়।

কিন্তু আপনার মোহর তো আছে!
আল্লাহর কসম এই মোহর আমি দেইনি, এটা জাল, অন্য কারো কাজ।

বিদ্রোহীদের নেতা বললেন, "আপনার বক্তব্য যদি সত্যি হয় তাহলে আপনি একজন দুর্বল শাসক যার মোহর অন্য কেউ সহজেই জাল করতে পারে। আর যদি আপনি মিথ্যাবাদী হন তাহলে তো কথাই নেই। দুটোর কোনটিতেই আপনার আর ক্ষমতায় থাকা চলে না। "
হজরত উসমান (রা:) নাছোড়। তাঁর এককথা। তিনি পদত্যাগ করবেন না।
বিদ্রোহীরা তার বাসভবন ঘেরাও করে। মদীনার অলি গলি ভরে যায় হাজার হাজার বিদ্রোহী দিয়ে।
হজরত আলী (রা:) তখন কোথায় ছিলেন? কারো কারো মতে তিনি মদীনাতেই ছিলেন, ঘরে একরকম স্বেচ্ছা বন্দী হয়ে। কারো মতে মদীনার বাইরে চলে গিয়েছিলেন। হজরত তালহা, হজরত জুবায়ের তাঁরাও মান সম্মানের ভয়ে ঘরে বসে ছিলেন। আর হজরত আয়েশা এই পরিস্থিতিতে রওনা দিলেন মক্কায় হজ্জের উদ্দেশ্যে।

বিদ্রোহীরা খলিফার বাড়ির পানির লাইন বন্ধ করে দেয়। তারা পদত্যাগের জন্য পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ করে। খলিফা এই অবস্থায় খুবই মর্মাহত হন। কিন্তু সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। ক্ষিপ্ত মুহাম্মদ বিন আবু বকর খলিফার ঘরে প্রবেশ করেন। বৃদ্ধ খলিফার দাড়ি ধরে টানতে টানতে দরজার কাছে নিয়ে আসেন। "আশি বছর বয়স হলো তোমার, তবু ক্ষমতার সাধ মিটলোনা?"
খলিফা জবাব দেন, আমি তোমার বাবার বন্ধু। নবীর জামাতা। বিশ্বাসীদের ভেতর তৃতীয় ব্যাক্তি। আমার সাথে এই আচরণ!
মুহম্মদ বিন আবু বকর খলিফার দাড়ি ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। দরজায় দাঁড়ানো প্রহরীরা বিদ্রোহীদের ঠেকিয়ে রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু একসময় আর সম্ভব হলোনা। বৃদ্ধ খলিফা তখন কুরান তেলওয়াতে বসেছিলেন।
বিদ্রোহীরা ঢুকে পড়ে ঘরে। তলোয়ার দিয়ে এক ঘা বসায় মাথা বরাবর। ঠেকাতে গিয়ে আস্ত আংগুল কাটা পড়ে উসমানের স্ত্রী নায়েলার বিনতে ফারফাদাহর।
নয়টি বর্শার আঘাত তাকে ক্ষত বিক্ষত করে। বিদ্রোহীদের কিল ঘুষি লাথিতে বুকের হাড় ভেংগে যায়।
এভাবেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন খোলাফায়ে রাশেদীনের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা:)। লাশ পড়ে থাকে তিনদিন। পচন ধরে যায় লাশে। তিনদিন পর হজরত আলী (রা:) এর নির্দেশে মরহুমের লাশ দাফন করা হয় কোনরকম গোসল ছাড়াই পরনের কাপড় সহ।
পুনশ্চ:
এই বিদ্রোহের অন্যতম মদদ দাতা ছিলেন সাবা বিন আব্দুল্লাহ, মালিক বিন আশতার সহ অনেকেই। এদের কারোরই কোন বিচার হয়নি। বরং হজরত আলীর খেলাফতের সময় এরা বিশেষ সুবিধা, পদ ও পদবী পায়। এই সমীকরণ সত্যিই জটিল।
তথ্য সূত্র
ইসলামের ইতিহাস : মাওলানা আকবর আলী নজিরাবাদী
ইসলামের ইতিহাস : ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান
ইসলামের ইতিহাস :ফিলিপ কে হিট্টি
Chasing of mirrage - Tarek Fatah
After the death of the propht- Lassley Hazelton

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.