নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশরাফুল আলম

চির চেনা

i write for myself, its my hobby, want to be a bolgger.

চির চেনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শবে বরাত

১২ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:১১

বাংলাদেশীদের কাছে শবে বরাত আছে,আছে ভারতীয় আর পাকিস্তানীদের ও।
আর পৃথিবীর কোথাও নেই।
বানানো হাদিস কে কেউ এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ রাত বলতেও বুক কাঁপছে না।
আর হালুয়া রুটি তো মনে হয় ফরজ কোন বিষয়।
এই দিনের ইবাদত বলতে কিছু নেই তারপরেও যারা নামাজ পড়ে তাদের ব্যাপারে কিছু বলার থাকতো না যদি তা স্পৃহা তৈরি করতো বরং এই দিনটি মানুষের ইবাদত নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
ভুয়া দিবসের ভুয়া কাহিনীর কারণে বক ধার্মিক এবং সুযোগ সন্ধানীগুলো সারা বছর নামাজের খবর নেই,ফরজ কে গুরুত্ব দেয় না কিন্তু এই দিনের নফল আর ফাইজালামি গুলোকে আঁকড়ে ধরে এমন ভাব যে জান্নাত কিনে ফেলছে।
৩ দিন/৫ দিন/৭ দিন চল্লিশা,শবে বরাত,ঈদে মিলাদুন্নবি এসব উপমহাদেশীয় ধর্মের আবিষ্কার যার কোন অস্তিত্ব ইসলামে নাই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:১৯

করুণাধারা বলেছেন: ছোট পোস্ট - কিন্তু খুব দরকারি কথা লিখেছেন। উপমহাদেশ ছাড়া আর কোথাও শবে বরাতের অস্তিত্ব নেই। আমাদের দেশে এর প্রচলন তারাই করেছে যারা এটা চালু করে লাভবান হয়। সারাবছরের ফরজ নামাজ না পড়ার পাপ তারা এক রাত মাজারে ঘুরে মুছে ফেলতে চায়।

এদের আল্লাহ হেদায়েত দিন। ++

২| ১২ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৯

হাফিজ রাহমান বলেছেন:
শবে বরাত : বর্জনীয়, করণীয় এবং প্রামাণিকতা

বর্জনীয় বিষয়

১। হালুয়া রুটির পঙ্কিল সংস্কৃতি
সমাজে শবে বারা‘আত তথা মুক্তির রজনীকে কেন্দ্র করে হালুয়া-রুটির আয়োজন বেশ ঘটা করেই চলছে। এ রজনীকে ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় মূর্তিমান হালুয়াও বেশ দৃশ্যমান হয়। এগুলোকে তারা ‘পরম পুজনীয়’ বিষয় বলেই জ্ঞান করে থাকে। অথচ এ ধরনের মনগড়া রসনা বিলাসী আয়োজনের কোনোই ভিত্তি নেই।
হাদীসের নামে জাল কিছু বর্ণনাকে কেন্দ্র করে সমাজে নানা রকম আচার আনুষ্ঠানিকতার প্রাদুর্ভাব ঘটে। ধর্মের নামে সেসব ধর্মাচার অপাঙক্তেয় হলেও তার একটি ঠুনকো সূত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু হালুয়া রুটির প্রাদুর্ভাব কোন সূত্রটিেিক ঘিরে আবর্তিত হলো তার প্রেক্ষাপট আমরা খুঁজে পাই নি। তবে এ সম্বন্ধে হাস্যকর একটি রূপকথার উপাখ্যান কদাচিৎ কর্ণগোচর হয়। তা হলো, উহুদ যুদ্ধে দন্ত মুবারক শহীদ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিন নরম হালুয়া খেয়ে ছিলেন। এ রূপকথার পরিপ্রেক্ষিতে পাঠককে হাসতে বলবো না কাঁদতে বলব বুঝতে পারছি না। আশুরার দিনে ভাল খাবারের আয়োজনের ব্যাপারে একটি হাদীসের সন্ধান পাওয়া যায়। হাদীসটির কার্যকারিতা নিয়ে বিদগ্ধ উলামা মহলে বিতর্ক থাকলেও তার একটি বর্ণনানুগ সূত্র আছে। বস্তুত খাবার আয়োজন নিয়ে শরীয়তের বিশেষ কোনো বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু বৈধ কোনো বিষয়ের স্বাভাবিক গতিধারা যদি সময়কেন্দ্রিকতার কারণে বাধাগ্রস্থ হয় কিংবা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে তখন তা বৈধতার আবেদন হারিয়ে ফেলে। সুতরাং আপাত দৃষ্টিতে হালুয়া রুটির আয়োজন বিধিসম্মত হলেও তা সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে প্রথাগত রূপ লাভ করায় তা আর শরীয়তসম্মত নেই; বরং অবশ্য পরিত্যাজ্য হয়ে গেছে। ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ১৭/১৭ (শামেলা সংস্করণ), আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনুল হাজ্ব আব্দারী, আল-মাদখাল ২৮৯-৩০২, আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলবী, মা-সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ ৩২৫-৩৩৬

২। আলোক-সজ্জার ঝিলিমিলি আয়োজন
লাইলাতু বারা‘আতকে কেন্দ্র কের এক শ্রেণীর মানুষ দোকান-পাট, বাসা বাড়ী এমনকি আল্লাহর ঘর মসজিদের দেয়ালেও ঝুলিয়ে দেয় বাহারী রকমের আলো-ঝিলমিল বাতি। মূলত এটি অগ্নিপুজার একটি অন্যতম অনুসঙ্গ। অমিত ব্যয়ের এ আলো ঝলকানিতেও তারা নেকী-পূণ্যের সমাহার খুঁজেন। স্বাভাবিক সাজসজ্জা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু তা যদি স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন তা আর বৈধ থাকে না; নিষিদ্ধ হয়ে যায়। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. বলেন, এ রাতের নিকৃষ্টতম বিদাত হলো, ঘর-বাড়ি, দেয়াল-দোকানে আলোকসজ্জা করা, এ নিয়ে আত্মগরিমায় লিপ্ত হওয়া, আতশবাজি ও পটকাবাজি নিয়ে উন্মাদনার উদ্দেশে সমবেত হওয়া। নির্ভরযোগ্য কোনো বিশুদ্ধ গ্রন্থাদিতে এ সবের কোনো ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে কোনো দুর্বল বা জাল বর্ণনাও নেই। ভারত উপমহাদেশেই এসব কুসংস্কারের প্রাদুর্ভাব বেশি। আরবসহ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোতে এ জাতীয় কুসংস্কারের তেমন বিস্তৃতি নেই। প্রবল ধারণা যে, এসব আতশবাজি হিন্দুয়ানী দেয়ালি বা দীপাবলি উৎসব থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ ঘৃণিত বিদাতই সে হিন্দু যুগ থেকে চলে আসছে। এবং মসলিমদের সাথে হিন্দুদের সহাবস্থান বজায় থাকার কারণে এবং অমুসলিম নারীদেরকে বাদি বা স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে নেয়ার কারণে মুসলিমদের মাঝে সেসব কুসংস্কৃতির বিস্তৃতি ঘটেছে। পরবর্তী যুগের কতক উলামায়ে কেরাম বলেন, নির্দিষ্ট দিনসমূহে আলোকসজ্জার আয়োজন করা নিকৃষ্ট প্রকৃতির বিদাত। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় অধিক আলোক বাতি ব্যবহার করা উত্তম হওয়ার প্রমাণ ইসলামী শরীয়তে নেই। আলী ইবনে ইবরাহীম রাহ. বলেন, আলোক সজ্জার এ প্রথা বারমাকী সম্প্রদায় থেকে উৎপত্তি লাভ করে। আর এ সম্প্রদায়ের লোকেরা ছিল অগ্নিপুজারী। যখন তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলো তখন তাদের ধারণাপ্রসূত পূর্বেকার কুসংস্কারগুলো ইসলাম ধর্মে চালানোর চেষ্টা করতে লাগল। কারণ তারা তাদের সেকেলে ধারণাগুলোকে মনে মনে সত্য বলে বিশ্বাস করতো। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল অগ্নিপুজা করা। এ কারণে তারা মুসলিমদের সাথে সেই সূর্যকে পুজনীয় মনে করে সেজদা করতো। কিছু মসজিদের নির্বোধ ইমামরা আগ্নিপুজার সেই সংস্কৃতিকেই গ্রহণ করে নিয়েছে। এ আলোক সজ্জায় যেমন আছে মাত্রাহীন অর্থাপচয় তেমনি আছে ধর্মাচারের নামে মাত্রাহীন বাড়াবাড়ি। তাই এ জাতীয় সূত্রবিহীন আচার-আনুষ্ঠানিকতা ইসলাম সমর্থন করে না। এসব অনাচারের প্রাদুর্ভাব রোধে কর্মতৎপর হওয়া আবশ্যক। ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ১৭/১৭ (শামেলা সংস্করণ), ড. নায়েফ বিন আহমদ, শাহরু রাজাব বাইনাল মুবতাদা’ ওয়াল মাশরু’ ৪, আল-আসারুল মারফূ‘আহ ফিল আখবারিল মাউযু‘আহ ১/৭১, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনুল হাজ্ব আব্দারী, আল-মাদখাল ২৮৯-৩০২, আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলবী, মা-সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ ৩৩৬, আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/৪৭০, মুল্লা আলী কারী হারাভী, মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/৪৪৭

৩। আতশবাজির ধর্মহীন উন্মাদনা
যেসব ভাইয়েরা শবে বরাতের নব আবিষ্কৃত আচার-আনুষ্ঠানিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট তারা কি এ রাতের আতশবাজিকেও পূণ্যের বিষয় বলে মনে করেন? জানি না, এ ব্যাপারে তাদের লালিত ধারণাটা কি। যদিও এ বিষয়টির সাথে আবেগী যুব সমাজই বেশি যুক্ত থাকে। ধর্মীয় বিষয়ে মতভিন্নতার ফিরিস্তি নাতি দীর্ঘ হলেও দীন বিষয়ে জানা শোনা এমন কোনো মানুষ পাওয়া দুষ্কর হবে যারা অনর্থক এবং মানবতা বিরোধী এ পটকাবাজীকে বিধানিক বলে মত পেশ করবেন। অথচ মহিমান্বিত একটি রাতকে কেন্দ্র করে এ পটকাবাজির চর্চা হচ্ছে। এতে ইবাদতে নিমগ্ন মানুষের মনোযোগ ব্যহত হচ্ছে, ঘুমন্ত মানুষের ঘুমকে হারাম করে দেয়া হচ্ছে। একটি পাপাচারের সাথে হাজারো পাপাচার এসে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। আইন করেও এ জাতীয় পাপাচারের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এসবই মুক্তির রজনীকে নিয়ে সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ির অশুভ পরিণতি। -ড. নায়েফ বিন আহমদ, শাহরু রাজাব বাইনাল মুবতাদা’ওয়াল মাশরু’৪, আল-আসারুল মারফূ‘আহ ফিল আখবারিল মাউযু‘আহ ১/৭১, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনুল হাজ্ব আব্দারী, আল-মাদখাল ২৮৯-৩০২, আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলবী, মা-সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ ৩২৫-৩৩৬, আলকাউসার, সেপ্টেম্বর ’০৬

৪। মাজার-কবরে নারী পুরুষের অবাধ জমায়েত
১৪ শা’বান দিবাগত রাতে কবর-মাজারগুলোতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে আপামর জনতার ঢল নামে। সেখানে গিয়ে তারা এমন এমন আচার আনুষ্ঠানিকতায় নিরত হয় যা ইসলামী শরীয়ত আদৌ সমর্থন করে না। নারীদের কবরস্তানে গমনের ব্যাপারে এমনিতেই বিধি নিষেধ রয়েছে। সেখানে পর্দা বিধান লঙ্ঘন করে মাজার কবরে অবাধ যাতায়াতের ব্যাপারটি কিভাবে বিধিসম্মত হতে পারে। কবর যিয়ারত একটি কাক্সক্ষীত এবং পূণ্যময় বিষয়। সহীহ হাদীসের বর্ণনায় এ সম্বন্ধে স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। কিন্তু দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে সেটাকে সম্মিলিত পোষাকী রূপ দেয়া আদৌ শরীয়তসম্মত নয়। আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনুল হাজ্ব আব্দারী, আল-মাদখাল ২৮৯-৩০২, আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলবী, মা-সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ ৩২৫-৩৩৬, আলকাউসার, সেপ্টেম্বর ’০৬

৫। শবে বরাতের ‘গোসল-স্নান’
অনেকে শবে বরাত উদযাপনের উদ্দেশে এ রাতে গোসল নীতি পালন করে থাকেন। ফুট পাথীয় কোনো পুস্তকে হয়েতো দেখেছেন, এ রাতে গোসল করলে পানির ফোঁটায় ফোঁটায় নেকির ফল্গুধারা বয়ে যাবে। কিন্তু ভাইয়েরা এসব ‘রূপকথা’র শুদ্ধাশুদ্ধি বিচার করে দেখেন না। স্বার্থান্বেষী এবং দীনের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ লোকেরা অনেক কিছুই লিখেন। পথে ঘাটে দীনের নামে অনেক বর্ণনাই পাওয়া যায়। তাই বলে তো সব কথাই শুদ্ধ নয়। সব কথাই দীনের কথা নয়। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ ধারণা লাভের জন্য দীন সম্বন্ধে অভিজ্ঞ লোকদের দ্বারস্থ হতে হবে। পুস্তককেন্দ্রিক দীনী ধারণা পঙ্কিলতামুক্ত নয়। নিছক বই-পুস্তককে দীন শেখার প্রস্রবন বানালে নিশি রাতের ইন্ধন সংগ্রাহকের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তো এ রাতের গোসলের মাহাত্ম্যের ব্যাপারে একটি জাল বর্ণনা রয়েছে। বর্ণনাটিতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি বরাতের রাতে ইবাদত পালনের উদ্দেশে গোসল করবে তার গোসলের প্রতি ফোঁটা পানির বিনিময়ে তার আমলনামায় ৭০০ রাকাআত নফল নামাযের পূণ্য লেখা হবে। বানোয়াট এ বর্ণনাটিকে ঘিরেই ‘হিন্দুয়ানী স্নানব্রত’ সদৃশ এ পরগাছার জন্ম হয়েছে। যাইলুল মাকাসিদিল হাসানাহ, যাইলু তানযীহিশ শরী‘আহ, শা’বান মাস অধ্যায়। মাওলানা আব্দুল মালেক, প্রচলিত জাল হাদীস ১০৫

৬। বিশেষ পদ্ধতির সালাত আদায়
বারা‘আতের এ রজনীতে নামাজ পড়াব বহু রকমের নিয়ম পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত আছে। মানুষ না জেনে না বুঝে কষ্টসাধ্য এসব নামাজের পেছনে মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করে। এতে প-শ্রমের সাথে সাথে জাহান্নামে যাওয়ার পথ আরো অবারিত ও মসৃণ হয়। ইমাম ইবনুল জাউযী রাহ. বলেন, আমি কিছু মানুষকে দেখেছি, তারা সারা রাত জেগে হাজার হাজার বার বিভিন্ন সূরা যোগে এ জাতীয় নামাজ আদায় করে। এরপর ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ফজর নামাজ কাযা করে ঘুমিয়ে থাকে। সুতরাং এ রাতের এক হাজার বার সূরা ইখলাস সম্বলিত একশত রাকআত নামাজ, একত্রিশ বার সূরা ইখলাস সম্বলিত বার রাক‘আত নামাজ, বিশেষ পদ্ধতির চার রাকআত খাসমা’র নামায, সেজদার বিশেষ দু‘আ সম্বলিত নামায, বিশেষ কিরাত সম্বলিত চৌদ্দ রাকআত নামাযসহ আরো যত প্রকার বিশেষ প্রকৃতির নামাজ রয়েছে সবই বানোয়াট। এসবের কোনো ভিত্তি নেই। এসবের পেছনে শ্রম দিয়ে পাপ কামাই করার কোনো অর্থ হয় না। আব্দুল হাই লাক্ষ্নবী, আল-আসারুল মারফু‘আ ফিল আখবারিল মাউযুআহ ৭৮-১১৪, ইমাম ইবনুল জাউযী, কিতাবুল মাউযুআত ২/১৩০, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনুল হাজ্ব আব্দারী, আল-মাদখাল ২৮৯-৩০২, আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলবী, মা-সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ ৩২৫-৩৩৬

৭। লাইলাতুল বারা‘আতকে লাইলাতুল কদরের সমমর্যাদায় বা ততোধিক মর্যাদায় ভূষিত করা
কুরআনের স্পষ্ট ভাষ্য হলো, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল কাদরে (মহিমান্বিত রজনীতে)। আর লাইলাতুল কদর সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? লাইলাতুল কদর সহ¯্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সেই রাত্রিতে প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে জিবরীল এবং অন্যান্য ফেরেশতাগণ অবতরণ করেন। শান্তিই শান্তি সেই রজনী; ঊষার উদয় পর্যন্ত। আল-ক্বাদর ১-৫। এ হলো ‘শবে কদর’ এর কুরআনিক পরিচিতি। কুরআনের ভিতরেই স্পষ্ট ভাষায় এ রাতের মহিমা গাওয়া হয়েছে। অন্য দিকে শবে বরাতের মহিমা শুধু হাদীসের ভাষ্যে প্রমাণিত। তা নিয়েও উলামায়ে কেরামের মাঝে রয়েছে নানা বিতর্ক । কিন্তু লাইলাতুল কদরের মর্যাদা বা মহিমার ব্যাপারটি সব ধরণের বিতর্কের উর্ধ্বে। এ ব্যাপারে কেউ বিতর্ক করতে এলে তার ঈমানের উপর আঘাত চলে আসবে। অথচ মানুষ সেই শবে কদরের চেয়েও শবে বরাতকে শ্রেষ্ঠতর মনে করছে। কেউ কেউ ভাষ্যে কিংবা বিশ্বাসে এ কথার জানান দিচ্ছে। কেউবা আচার আনুষ্ঠানিকতায় তার প্রমাণ দিচ্ছে। কারণ শবে কদরের সময় ইবাদত-বন্দেগী নিয়ে এত মাতামাতি আর এত পরিমাণে বর্ণাঢ্য আয়োজন লক্ষ করা যায় না। এতেই প্রমাণ হয়, তাদের নিকট শবে বরাত যতটা গুরুত্বপূর্ণ শবে কদর ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা নিতান্তই আপত্তিকর এবং অতীব গর্হিত ব্যাপার। এ জাতীয় ধ্যান ধারণার আশু অপনোদন জরুরী। -আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনুল হাজ্ব আব্দারী, আল-মাদখাল ২৮৯-৩০২, আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলবী, মা-সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ ৩২৫-৩৩৬

৮। ইবাদাতকে সম্মিলিত এবং আনুষ্ঠানিক রূপ দান
শবে বরাতের মাহাত্ম্য সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত। এ রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে এবং সম্মিলিত আনুষ্ঠানিক রূপ না দিয়ে সাধারণ ইবাদত বন্দেগীতে রত থাকাও নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু আজ কাল বিশেষ নিয়মে সম্মিলিত ও আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়ে যেভাবে শবে বরাত উদযাপনের প্রক্রিয়া চলছে তাতে শবে বরাতের স্বাভাবিক ধর্মাচারের গতিধারা ব্যহত হয়। নির্দিষ্ট সময় করে ওয়াজ নসীহত এরপর দুআ-মুনাজাত এবং তাবারক বিতরণী- এসবই অতিরঞ্জন এবং বাড়াবাড়ি পর্যায়ের কর্মপদ্ধতি। এগুলো পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। মসজিদ মূলত ফরজ নামাজের জন্য। নফল নামাজ নিজ নিজ গৃহে আদায় করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল নামাজ নিজ গৃহে আদায় করতেন। এ সম্বন্ধে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আমরা শবে বরাতের রাতে যে অতিরিক্ত নামাজ আদায় করি তা সবই নফল নামাজের পর্যায়ভুক্ত। ইবনে উমর রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের ঘরেও কিছু নামাজ আদায় করো। তোমাদের ঘরগুলোকে কবর-সমাধি বানিয়ে রেখো না। সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৩২। হাসান শুরুমবলালী রাহ. শবে বরাত তথা মধ্য শা’বান রজনীর নামাজসহ অন্যান্য বিশেষ সময়ের নফল নামাজ সংক্রান্ত আলোচনা শেষে বলেন, উপরোল্লিখিত রাত্রিসমূহের নামাজের জন্য মসজিদ প্রভৃতি জায়গায় একিত্রত হওয়া মাকরুহ। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম এমনটি করেন নি। ইমাম মালেক রাহ. এর শিষ্যবৃন্দ, মদীনার বিশিষ্ট ফুকাহায়ে কেরাম, আতা ইবনে আবি রাবাহ, ইবনে আবি মুলাইকাহসহ হিজাযের অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে প্রবল আপত্তি করে থাকেন। তাঁরা বলেন, এসবই বিদ‘আত। ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. বলেন, অর্ধ শা’বান রাতে সম্মিলিতভাবে রাত জেগে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে সিরিয়ার উলামায়ে কেরামের দুটি মত রয়েছে। ১। মসজিদে একত্রিত হয়ে সারা রাত ইবাদত করা উত্তম। ২। এ রাতে নফল নামাজ, ওয়াজ-নসীহত এবং দু‘আ-প্রার্থনার জন্য মসজিদে সমবেত হওয়া মাকরুহ। তবে মসজিদে একাকি নামাজ আদায় করতে কোনো অসুবিধা নেই। এটাই সিরিয়া বাসীদের ইমাম আউযায়ী, সিরিয়ার ফুকাহা এবং উলামায়ে কেরামের অভিমত। আর এটিই অতীব নৈকট্যপূর্ণ মত। ইবনে রজব হাম্বলী, লাতায়িফুল মাআ‘আরিফ ১৯০, হাসান শুরুমবলালী, মারাকিল ফালাহ মা‘আ হাশিয়াতিত তাহতাবী ৪০২, ইবনে আবিদীন, রদ্দুল মুহতার ২/২৭, ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ, ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ১৭/১৭

পালনীয় বিষয়

শাবান মাস পবিত্র রমাযান মাসে প্রবেশের সেতুবন্ধ। এ মাসের পথ বেয়েই রমাযানের অফুরন্ত পূণ্যাশীষ ও কল্যাণ লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে শাবান মাসের আলাদা একটি শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। তাছাড়া স্বতন্ত্রভাবে শাবান মাসের ইবাদত ও মাহাত্ম্য বিষয়ে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ বর্ণনা রয়েছে। হাদীসের গ্রন্থগুলোতে শাবান মাস বিষয়ে আলাদা আলাদা অধ্যায় রচিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে ইবাদতে মনোযোগী হতেন। উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল! আপনি শাবান মাসে যে পরিমাণ রোযা রাখেন অন্য কোনো মাসে আপনাকে সে পরিমাণ রোযা রাখতে দেখি না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি রজব এবং শাবানের মধ্যকার এমন একটি মাস যার মাহাত্ম্য সম্পর্কে মানুষ উদাসীন। এটি এমন একটি মাস যে মাসে মানুষের আমলের হিসাব নিকাশ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর কাছে উত্থাপন করা হয়। সুতরাং আমি চাই আমি রোজারত অবস্থায় আমার কার্যতালিকা আল্লাহ তা‘আলার নিকট উত্থাপিত হোক। সুনানে নাসায়ী আ-মুজতাবা হাদীস ২৩৫৭
আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একমাত্র রমাযানেই পূর্ণ মাস রোযা রাখতে দেখেছি। আর তাঁকে শাবান মাসের তুলনায় অন্য কোনো মাসে এত অধিক পরিমাণে রোযা রাখতে দেখে নি। সহীহ বুখারী, হাদীস১৯৬৯
অন্য একটি বর্ণনায় আয়িশা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে বেশি অন্য কোনো মাসে রোযা রাখতেন না। কারণ তিনি নিয়মিত শাবান মাসের রোযা রাখতেন। প্রাগুক্ত হাদীস১৯৭০

এ ছিল শাবান মাসের স্বাভাবিক শ্রেষ্ঠত্ব। এসব বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হয়, পূর্ণ শাবান মাস জুড়েই ইবাদতের ব্যাপারে তুলনামূলক বেশি যত্মবান হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য দিকে শাবান মাসের বিশেষ একটি অংশের ব্যাপারে স্বতন্ত্র তাৎপর্য এবং মাহাত্ম্যের কথা হাদীসের কিতাবগুলোতে আলোচিত হয়েছে। আর সে অংশটি হলো ১৪ শাবন দিবাগত রজনী। হাদীসের ভাষায় মহিমান্বিত এ রজনী ‘লাইলতুন নিসফি মিন শা’বান’ আর সাধারণ মানুষের পরিভাষায় লাইলাতুল বারা‘আত এবং শবে বরাত বা মুক্তির রজনী হিসেবে পরিচিত। এ রজনীটিকে ঘিরে আমাদের কিছু ভাইয়েরা বিদাত প্রতিরোধের নামে মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ের শিথিলতার আশ্রয় নেন। অথচ যতটুকু বিদাত এবং ধর্মীয় অনাচারের পর্যায়ে পড়ে ততটুকুই রোধ করা প্রয়োজন ছিল। দেহের কোনো অঙ্গে অপারেশন পর্যায়ের ইনফেকশন হলে নির্দিষ্ট সে অঙ্গটিকেই অপারেশন করে কেটে ফেলতে হয়। ইনফেকশনের ধোঁয়া তুলে যদি পূর্ণ দেহটিকেই দু টুকরো করে দেয়া হয় তবে তো তাতে আর প্রাণের স্পন্দন থাকবে না। ফরজ নামাজ কিংব ফরজ রোজাকে ঘিরে অনেক জায়গায় নানা রকমের কুসংস্কার প্রচলিত আছে। তাই বলে তো সংস্কারের নামে ফরজ নামাজ রোজাকে ছেটে ফেলে দেয়া যাবে না। দীনের কাজ করতে হলে অনেক সূক্ষè বিষয় মাথায় রাখতে হয়। সামনে রাখতে হয় নববী কর্মপন্থা। অতি আবেগ যে কোনো সময় ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মাহাত্ম্যপূর্ণ এ রজনী সম্পর্কে কয়েকটি বর্ণনা এবং সালাফের কিছ উক্তি রয়েছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনাসহ কয়েকটি বর্ণনা ও আসলাফের কিছু উক্তি এখানে তুলে ধরছি।

(১) মু‘আজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রজনীতে সৃষ্টি জগতের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং শেরেকে আচ্ছন্ন ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। - সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৯০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৬৬৫ (শায়খ শু‘আইব আরনাউত এর মন্তব্য, হাদীসটির ইসনাদ সহীহ), আল-জামি’ লিশু‘আবিল ঈমান, হাদীস ৬৬২৮, আল-মু’জামুল আউসাত লিততাবারানী, হাদীস ৬৭৭৬, আ-মু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস ২১৫, বারি’ ইরফান তাউফীক, সহীহু কুনূযিস সুন্নাহ, কিছু দিন-সময়ের শ্রেষ্ঠত্ব অধ্যায় ৪ (মন্তব্য, সহীহুল বাইহাকী), মাজমাউয যাওয়াইদ লিলহাইসামী, হাদীস ১২৮৬০ (মন্তব্য, ইমাম তাবারানী হাদীসটি তাঁর আ-লমু’জামুল কাবীর ও আল-মু’জামুল আউসাতে সূত্রপীঠিকাসহ বর্ণনা করেছেন। দুটি সূত্রপীঠিকার সকল বর্ণনাকারীই নির্ভরযোগ্য।), মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহুইয়াহ, হাদীস ১৫২০, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস ৩০৪৭৯, সহীহুল জামিইস সাগীর লিশশাইখ আলবানী, হাদীস ৪২৬৮ (মন্তব্য, আশশামিলার এক সংস্করণে ‘সহীহ’ অন্য সংস্করণে ‘হাসান’), সহীহ ইবনে মাজাহ লিশশাইখ আলবানী, হাদীস ১১৪০, সহীহুত তারগীব ওয়াততারহীব লিশ শায়খ আলবানী, হাদীস ১০২৬ (মন্তব্য, হাসানুন সহীহুন), আসসিলসিলাতুস সহীহাহ লিশশায়খ আলবানী, ৩/২১৮/১১৪০ (মন্তব্য, হাদীসুন সহীহুন), আত্তারগীব ওয়াততারহীব, হাদীস ৪১৯০ (মন্তনব্য, সনদ সমস্যাপূর্ণ নয়)
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিগুলোর আলোকে হাদীসটির সুপুক্সক্ষ শাস্ত্রীয় আলোচনায় না গিয়েও এ কথা বলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে, হাদীসটি আমলযোগ্য। আমাদের কিছু ভাইয়েরা শায়খ ইবনে বায রাহ. এর একটি আলোচনার আলোকে অর্ধ শাবানের রজনীর মাহাত্ম্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। কিন্তু ইবনে বায রাহ. তাঁর ফাতাওয়া সমগ্রে (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায ১/১৮৬ (১/২৩৫ আততাহযীর মিনাল বিদা’ অধ্যায়) যে আলোচনাটি করেছেন তাতে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. এবং ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. এর উদ্ধৃতি টেনেছেন। কিন্তু তঁদের নিজস্ব অভিমতকে তিনি গ্রহণ করেন নি। তাছাড়া ইবনে বায রাহ. বহু জাল হাদীসের মু-ুপাত করেছেন। কিন্তু উপরোক্ত হাদীসটি তাঁর সে আলোচনায় উল্লেখ করেন নি। আর কিছু না হোক উপরোক্ত হাদীসটি সামনে থাকলে মহিমান্বিত এ রজনীকে এভাবে অপাঙক্তেয় ঘোষণা করার কথা নয়। জানি না, সংশ্লিষ্ট আলোচনাটি করার সময় ইবনে বায রাহ. এর ‘যেহেনে’ উক্ত হাদীসটি ছিল কি না। হয়তোবা তিনি মাত্রাজ্ঞানহীন লোকদের সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ির প্রতিকার কল্পে এমন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তবে এটা তো ইলমে শরীয়তের একটি স্বীকৃতি নীতি, প্রান্তিকতা বা বাড়াবাড়ির প্রতিকার বিধিত বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করে করা যাবে না; বরং বিধানিক বিষয়ের যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই বাড়াবাড়ির প্রতিকার করতে হবে। এবার আমরা বিশেষ ঘরানার সম্মানিত ভাইদের জ্ঞাতার্থে এ বিষয়ে তাদের কয়েকজ আদর্শ পুরুষসহ কয়েকজন মহামনীষীর মন্তব্য তুলে ধরছি।

১। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, অর্ধ শাবান রজনীর শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে একাধিক মারফু হাদীস ও আসার বর্ণিত হয়েছে। এসব বর্ণনার আলোকে প্রতীয়মান হয়, পনের শাবানের রজনীটি একটি মহিমান্বিত রজনী। সালাফের কেউ কেউ এ রাতে নফল নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হতেন। আর শাবানের রোযার ব্যাপারে তো অসংখ্য হাদীসই বর্ণিত হয়েছে। সালাফ এবং খালাফের মধ্য হতে কেউ কেউ এ রাতের শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করেন। তবে হাম্বলী এবং অহাম্বলী মাসলাকের অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এ রাতের শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করেন। ইমাম আহমদ রাহ. এর ভাষ্যও এ মতের প্রমাণ বহন করে। কারণ এ সম্বন্ধে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আর এগুলোর সমর্থনে সালাফের আসারও বিদ্যমান রয়েছে। এ রাতের ফযীলত সম্পর্কিত কতক বর্ণনা মুসনাদ ও সুনান শিরোনামে সংকলিত হাদীস গ্রন্থেও বর্ণিত হয়েছে। তবে শাবানের পনের তারিখের দিনে স্বতন্ত্রভাবে রোযা রাখার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া মাকরুহ। (ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. এর অভিমত এটিই। তাঁর মতে পনের তারিখের সাথে দু এক দিন মিলিয়ে রোযা রাখা উত্তম)। আর এ রাতে বিশেষ খাবারের ব্যাবস্থা করা, সাজ-সজ্জার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া বিদাত; এর কোনো ভিত্তি নেই। তেমনিভাবে এ রাতে ‘সালাতে আলফিয়া’ নামক বানোয়াট নামাজের জন্য মসজিদে মসজিদে সমবেত হওয়াও বিদাত। কারণ নির্দিষ্ট সময়, সংখ্যা এবং কিরাত যোগে এ জাতীয় নফল নামাজের জন্য সমবেত হওয়া শরীয়তসম্মত নয়। -ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ১৭/১৭ (শামেলা সংস্করণ)

২। বর্তমান সময়ের আলোচিত ব্যক্তিত্ব শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. উপরোল্লিখিত হাদীসটির সমর্থনে আটটি হাদীস উপস্থাপন করে বলেন, এসব সূত্রের সামগ্রিক বিবেচনায় হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ।...সুতরাং শায়খ কাসেমী রাহ. তাঁর ইসলাহুল মাসাজিদ গ্রন্থে (১৭০) জারহ তা’দীলের ইমামদের উদ্ধৃতির আলোকে ‘অর্ধ শাবানের রাতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে কোনো সহীহ হাদীস নেই’ বলে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে যদি কেউ এ জাতীয় ঢালাউ উক্তি করে থাকেন তবে সেটা তার দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদান এবং সূত্র অনুসন্ধানে কষ্ট স্বীকার করতে না পারার (অশুভ) পরিণতি। সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ ১/১২৪

৩। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. এ রাতের ফযীলত সংক্রান্ত দীর্ঘ আলোচনার পর বলেন, একজন মুমিনের জন্য বাঞ্ছনীয় হলো, এ রাতে জিকর ও দুআ-প্রার্থনার জন্য সম্পূর্ণরূপে অবসর হয়ে যাওয়া। সে নিজের পাপ মার্জনা এবং বিপদ আপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দু‘আ-প্রার্থনায় রত হবে। খাঁটি মনে তাওবা করবে। কারণ যে ব্যক্তি এ রাতে তাওবা করে তার তাওবা আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন। তবে এক্ষেত্রে মুমিনের জন্য আবশ্যক হলো, দু‘আ কবুল হওয়া ও মাগফিরাত লাভের ক্ষেত্রে যেসব পাপাচার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেসব থেকে বিরত থাকা। লাতায়িফুল মা‘আরিফ ফীমা লিমাওয়াসিমিল আমি মিনাল ওয়াযায়িফ ১৯২

৪। সুনানে তিরমীযীর ভাষ্যকার আল্লাম আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রাহ. এ রাতের ফযীলত সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, এসমস্ত হাদীস ঐসমস্ত ব্যক্তিদের বিপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে পরিগণিত যারা ধারণা করে, অর্ধ শাবানের রাতের ফযীলাতের ব্যাপারে কোনো কিছুই প্রমাণিত নয়। তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৩৬৭

৫। মিশকাতুল মাসাবীহ এর সমকালীন ব্যাখ্যাতা আবুল হাসান উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, ...এ সমস্ত হাদীস অর্ধ শাবান রজনীর মহত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব এবং মহিমার ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। এ রাতটি আর পাঁচটা রাতের মত নয়। সুতরাং এ ব্যাপারে উদাসীন হওয়া উচিৎ নয়। বরং শ্রেয় হলো, ইবাদত, দু‘আ এবং যিকর-ফিকরে রত থেকে এ রাতের অফুরন্ত কল্যাণ অর্জন করা। মির‘আতুল মাফাতীহ শরহু মিশকাতিল মাসাবীহ ৭/৫৮

৬। শায়খ ইবনুল হাজ্ব রাহ. বলেন, ‘এ রাত যদিও শবে কদরের মত নয়; কিন্তু এর অনেক ফযীলত ও বরকত রয়েছে। আমাদের পূর্বসূরি পূণ্যাত্মারা এই রাতের যথেষ্ট মর্যাদা দিতেন এবং এর যথাযথ হক আদায় করতেন। কিন্তু আজ সাধারণ লোকেরা বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উল্টো করে ফেলেছে। তারা রসম-রেওয়াজ ও কুসংস্কারের পেছনে পড়ে (মনের অজান্তেই) এর খায়ের বরকত ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একে তো ওরা এ রাতে আলোক সজ্জার নিকৃষ্টতম রসম যা অগ্নিপূজকদের প্রতীক, তা করেছে; অপরদিকে মসজিদসমূহে সমবেত হয়ে শোরগোল করে পবিত্র পরিবেশকে নষ্ট করছে। তাছাড়া মহিলাদের কবরস্তানে যাওয়া, তা-ও আবার বেপর্দা অবস্থায়, পাশাপাশি পুরুষদেরও কবর যিয়ারতের উদ্দেশে ওখানে ভিড় সৃষ্টি করা- এসব কিছুই নব আষ্কিৃত বেদআত এবং নববী সুন্নত ও সালাফে সালেহীনের পথ ও পদ্ধতির পরিপন্থী।’ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনুল হাজ্ব আব্দারী, আল-মাদখাল ২৮৯-৩০২, আলকাউসার, সেপ্টেম্বর ’০৬

৭। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ.তাঁর ‘মা সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ’-এ এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে ইতিবাচক করেছেন এবং এ রাতের গর্হিত বিষয়াবলির ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ রাতের নিকৃষ্টতম বেদআদসমূহের মাঝে নিচের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত- ঘর-বাড়ি, দোকান-পাটে আলোকসজ্জা করা, খেলাধুলা ও আতশবাজির উদ্দেশে সমবেত হওয়া ইত্যাদি। এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এগুলোর সপক্ষে কোথাও কোন জাল রেওয়ায়াতও নেই। প্রবল ধারণা যে, এগুলো হিন্দুদের ‘দেওয়ালী’ প্রথা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।’ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলবী, মা-সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ ৩২৫-৩৩৬, আলকাউসার, সেপ্টেম্বর ’০৬

৮। ইমাম ইবনুস সালাহ রাহ. বলেন, অর্ধ শাবান রজনীর অসীম ফযীলত ও মহত্ত্ব রয়েছে। এ রাতে ইবাদতে রত হওয়া মুস্তাহাব। তবে সেটা ব্যক্তি পর্যায়ে; সমবেত রূপ দিয়ে নয়। মানুষ যে রজবের ‘রাগাইব’ রাত্রি এবং এ রাত্রিকে বিশেষ উৎসব-আনুষ্ঠানিকতার রূপ দিয়ে উদযাপন করছে তা নিতান্তই গর্হিত বিদাত। এ রাতে স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে মানুষ যে আলোকসজ্জার আয়োজন করছে তা আদৌ শরীয়তসম্মত নয়। আল-আসারুল মারফূ‘আহ ফিল আখবারিল মাউযু‘আহ ১/৭১

৯। ইমাম আব্দুল হাই লাক্ষèবী বলেন,‘ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল বাকী যুরকানী রাহ. আল্লামা কাস্তাল্লানী রচিত আ-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে উপরোক্ত হাদীসটি সম্পর্কে বলেন, আল্লামা কাস্তাল্লানী রাহ. ইবনে রজব এর উদ্ধৃতিতে বলেছেন, ইবনে হিব্বান রাহ. হাদীসটিকে সহীহ বলে অভিহিত করেছেন। এতে প্রমাণিত হয়, ইবনে দিহইয়া রাহ. এর উক্তি ‘অর্ধ শাবান রজনী সম্বন্ধে কোনো সহীহ হাদীস প্রমাণিত নেই’ প্রত্যাখ্যাত। হ্যাঁ যদি তিনি পারিভাষিক সহীহকে অস্বীকার করে থাকেন তবে তাঁর ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই। কারণ মু‘আয রা. সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি হাসান; সহীহ নয়।’ আর রফউ ওয়াততাকমীল, ইকায ৬, ২৮ (মাজমু‘আতু রাসাইলিল লাকনবী ৫খণ্ড)

১০। ইন্টারনেটভিত্তিক ৫৬ হাজার ফতওয়া সম্বলিত আরবী ফতওয়াসমগ্র ‘ফাতাওয়া আশশাবাকাতিল ইসলামিয়া’তেও (২/২৫৬৩) এ রাতের মহত্ত্ব সম্বন্ধে ইতিবাচক আলোচনা করা হয়েছে।
অর্ধ শাবান রজনীর সপক্ষে এত সূত্রভিত্তি থাকার পরও কোন বিবেকে শুধু ইবনে বায রাহ. এর একিটি বিচ্ছন্ন মতের আলোকে এ রাতের মহত্ত্বকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার স্পর্ধা দেখানোর সুযোগ থাকতে পারে?

(২) আলা ইবনুল হারিস রাহ. সূত্রে বর্ণিত, আয়িশা রা. বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দাঁড়ালেন। কিন্তু সেজদাকে এতটা দীর্ঘায়িত করলেন, আমার ধারণা হলো তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেছে। এ অবস্থা দেখে আমি উঠে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বৃদ্ধাঙ্গুলী নাড়া দিলাম। তখন আঙ্গুল নড়ে উঠে। ফলে আমি যথাস্থানে ফিরে এলাম। যখন তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠালেন এবং যথা নিয়মে নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, আয়িশা! তুমি কি ধারণা করেছো, আল্লাহর নবী তোমার অধিকার ক্ষুণœ করবে? তখন আমি বললাম, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তবে আপনার দীর্ঘ সেজদার কারণে আমি মনে করেছিলাম, আপনার ইন্তেকাল হয়ে গেছে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লা রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা হলো, অর্ধ শাবানের রজনী। আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রজনীতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোনিবেশ করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দেন। আবু বাকার বাইহাকী রাহ. বলেন, এটি উত্তম পর্যায়ের মুরসাল হাদীস। সম্ভবত আলা ইবনুল হারিস মাকহুল থেকে হাদীসটি শ্রবণ করেছেন। - আলজামি’ লিশুআবিল ঈমান হাদীস ৩/৩৮২/৩৮৩৫
এ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ সেজদা সম্বলিত দীর্ঘ নামাজ আদায় করা শরীয়তের কাক্সক্ষীত বিষয়। তবে সাধারণ নিয়মে দু রাকআত, চার রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব আদায় করবে। সাথে কুরআন তিলাওয়াত, দুআ-দরূদ এবং যিকর ইস্তেগফারে মনোযোগী হবে। তবে সবিশেষ লক্ষ রাখতে হবে যেন রাত জাগা ক্লান্তির কারণে ফজরের নামাজের অত্যামশ্যিক ইবাদত ছুটে না যায়। এসব আমল একান্ত ঘরোয়া পরিবেশেই করা শ্রেয়। তবে যদি কোনোরূপ আহ্বান-ঘোষণা ব্যতিরেকে কিছু লোক মসজিদে এসে যায় এবং ব্যক্তিগতভাবে নিজ নিজ আমলে মগ্ন থাকে তবে এতেও কোনো ক্ষতি নেই। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় হলো, আমার ইবাদতের কারণে যেন অন্যের আমলে কোনোরূপ ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়।
এ মাসের পনের তারিখে রোযা রাখার আমলও করা যেতে পারে। এ দিনের রোযার ব্যাপারে সুনানে ইবনে মাজাহতে (হাদীস ১৩৮৮) একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটিকে উলামায়ে মুহাদ্দিসীন সূত্রগত দিক থেকে যয়ীফ বলে অভিহিত করেছেন। তবে এ মাসে অধিক পরিমাণ রোযা রাখার বিষয়টি অসংখ্য সহীহ হাদীসে আলোচিত হয়েছে। উপরন্তু শাবান মাসের ১৫ তারীখ হলো ‘আইয়ামে বীয’ তথা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের অন্তর্ভুক্ত। আর আইয়ামে বীযে রোযা রাখার ব্যাপারটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি মাসের আইয়ামে বীযে রোযা রাখতেন। মিলহান কাইসী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদেরকে তের চৌদ্দ এবং পনের তারিখে বীযের রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৪৯। আবু হু

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.