নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নের লোভে আমি, রাতদিন হাঁটি.।.।.।.।.।.।।।\n

রিয়াদ হায়দার

আহির

রিয়াদ হায়দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

তরুর বিয়ে............

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩০



বলা নেই কওয়া নেই হুট করে তরুর বিয়ে।তরু বুঝতে পেরেছে এই বার আর রক্ষে নেই।তরুর বাবার নাম ফারুক আহমেদ,অবসর প্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।সামরিক কর্মকর্তাদের একটা কমন সাইকোলজিক্যাল সমস্যা হলো,তারা ভাবে এই পৃথিবীতে তারা ছাড়া আর সবাই অনিয়ম করছে, তারাই সঠিক।তরু অনেক ভেবে দেখেছে,বাবাকে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই,তাকেই কিছু একটা ভেবে বের করতে হবে।কিন্তু কোন কিছুতেই কোন লাভ হলো না। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন হাজির।

আজ তরুর বিয়ে, সবাই একটু মনমরা, একটা মাত্র মেয়ে,মেয়েটা চলে যাবে আজ, তবুও আনন্দের কমতি নেই। ব্যতিক্রম শুধু তরু, সে সকাল থেকে খুব আনন্দে আছে, মনে হচ্ছে তার আনন্দের মাত্রা ক্রমেই বেড়েই চলছে।তরুর সব কিছুতে হাসছে, এর মধ্যে সে হাসতে হাসতে একটা গ্লাস, একটা জগ হাত দিয়ে ফেলে দিয়েছে। ওর বাবা ফারুক সাহেব খুব বিরক্ত , মেয়ের এই কাণ্ডকীর্তি দেখে। একবার তো তারস্বরে তরুর মা নাদিরা কে ডাক দিয়ে বললেন, আজ কি তোমার মেয়ের জন্মদিন!না পাশা খেলা দিবস? আজকে যদি তোমার এই বদ মেয়ের বিয়ে না হতো, তাহলে আমি তাকে আনন্দধারা বহিছে ভুবনে, বোঝাতাম। ফাজিল মেয়ে, আজ তো বিয়ে আর তোর ঢং মাথায় উঠছে। নাদিরা কি বলবেন না বলবেন তা বুঝে উঠে পারছেন না। ফারুক সাহেব কে তিনি ভীষণ ভয় পান, লোকটা রাগি কিন্তু মন ভালো।উনি বলেই চলেছেন,
আমি জানি এই মেয়ে বিয়েতে রাজি না, সে ইচ্ছে করে আনন্দের ঢং করছে। নাদিরা বলল, জানেনই যখন তখন বিয়ে দিচ্ছেন কেন?
তুমি থামো, যাও আমার সামনে থেকে, আর শোন, টগর কে বলো,সব সময় যেন ওকে চোখে চোখে রাখে।বাড়ি ভর্তি মানুষজন, শেষ পর্যন্ত কি না কি করে বসে! লা ইলাহা ইল্লা আন্তস সোবাহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন ! যাও সামনে থেকে, আমাকে একটু একা থাকতে দাও।নাদিরা,কোন মতো কাঁপতে কাঁপতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন ।


আজ তরু খুব খুশি কারন আজকে তরু,কনকের সাথে পালিয়ে যাবে। অনেক দিন থেকেই সব প্লানিং করা, কনক যে গাধা, শেষ পর্যন্ত গুবলেট পাকিয়ে না বসে।ও তরুর দূরসম্পর্কের ফুপাত ভাই। তরুদের বাসায় থেকেই লেখা পড়া করেছে।তরুর মতো এমন সুন্দরী মেয়ে যে কি ভাবে ওর প্রেমে পড়লো,তরু নিজেও জানে না।টগর চোখ বড় বড় করে তরুকে বলল,
বুবু তুই কি পালাবি? তরু চুলে চিরুনি টানতে টানতে বলল, হুম ।কনকদা কৈ দেখছিস? টগর নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, হুম দাদা ডেকরেটরের লোকের সাথে কথা বলছে, আচ্ছা বুবু তোর কি মনে হয়,কনকদা এই কাজ করবে? তরু টগর কে কাছে টেনে নিয়ে হেসে দিয়ে বলল,না ও করবে না ।প্রভুভক্ত সাধু টাইপের প্রাণী তো, এ কারনেই করবে না।টগর অবাক হয়ে বলল, তারপরও তুই এই কাজ করবি?হুম,করবো কারন নিজের কাছে নিজের উত্তর দিতে হয়, অন্তত নিজেকে বলতে পারবো, আমি চেষ্টা করেছিলাম।
বিয়ে ঠিক হবার পর, তরু কনক কে একদিন ছাঁদে ডেকে নিয়ে বলল,তোমার কি মনে হয় না আমাদের একসাথে থাকা উচিত? তোমার বাবাকে জানানো উচিত !কনক মনে মনে হাসল কারন তরু কি ভেবেছে ওর বাবা টের পায়নি? কনক জোরে হেসে দিয়ে বলল, আমরা এক সাথেই আছি, এক ছাদের নিচেই আছি কিন্তু এক বিছানায় থাকার কথা আমি তোর বাবাকে বলতে পারবো না।তবে আমি তোর পিছনে আছি, তুই এগিয়ে যাহ।কনকের দিকে চোখ পাকিয়ে তরু বলল,তোমার এই আলগা টাইপের ফাজলামো,তুমি তোমার নাইন টেনের কচি ছাত্রিদের সাথে গিয়ে করো। এগুলো শুনলে আমার বিরক্ত লাগে !
যাহ, বাবা একটু মজা করলাম।কনক বলল, আচ্ছা বল তোর প্লান কি?তরু প্লান বলল, কনক, খুব মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো । কিন্তু তরুর মনে হলো না,যে কনকের মাথায় কথা ঢুকছে। তরু অজান্তেই একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল ।
ওদের প্লান হল বিয়ের দিন সন্ধ্যা ৬ টায় তরু আগে বাসা থেকে চম্পট দেবে,বান্ধবিদের সেট করা, আর টগর তো আছেই। ৭ টা বা ৭.৩০ এ খোঁজার ভান করে বের হবে।তারপর কমলা পুর রেল স্টেশনে, ওখানে তরু অপেক্ষা করবে ।
প্লান শুনে কনক আবারো হাসতে হাসতে বলল,বুচি একটু সিনেমার মতো হয়ে যাচ্ছে না !তরু ঘুষি পাকিয়ে কনকের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, তোকে আজ মেরেই ফেলবো শয়তান।কনকের হঠাৎ মনে হলো, এই মেয়েটাকে ছাড়া ওর কোনদিনও চলবে না !কিছু কিছু ভালোবাসা অগ্রাহ্য করা যায় না,কারন সেই ভালবাসার আসে পাশে অসংখ্য মায়া ঘুরঘুর করতে থাকে।যদি উপায় না থাকে অস্বীকার করা ছাড়া কিছু করার নেই।কনকের কান্না পাচ্ছে, তার মনে হচ্ছে একই সাথে বেঁচে থাকা সার্থক ও অর্থহীন।

৬ টার সময় তরু বাড়ি থেকে পালিয়েছে, এখন বাজে ১০ টা।কনক এখনও আসেনি।তরুর খুব অসহায় লাগছে, বাসায় ফিরে যাবে! বান্ধবীর বাসায়, নাহ, বাসায় ই ফিরে যাওয়া ভালো। তরু জানতো যে কনক আসবেনা। কনক ওদের বাড়ি একধরনের আশ্রিত। ওর বাবা তাকে স্নেহ করে। কনক,তার মামার আদেশ কখনওই ফেলবে না।
গত পরশুদিন, কনককে ডেকে ফারুক সাহেব বলেছেন, কেমন আছো তুমি?
জ্বি মামা,আপনার দোয়ায়,
তোমাকে কয়েকটা সরাসরি কথা বলি?
বলেন-
তরু যে তোমাকেই বিয়ে করবে বলে গো ধরেছে এটা কি তুমি জানো?!
জ্বি,
শুধু জ্বি জ্বি বলবে না। আমি চাই আমার আদরের মেয়ে কোন ঘরে গিয়ে সুখে শান্তিতে থা্‌ক কিন্তু সেটা আমার ঘরে না।আমি এটা মানবো না, তুমি কিছুই করোনা, গল্প লিখে আমার মেয়েকে কি খাওয়াবে?আর খাওয়ানোর চাইতে বড় কথা, আমি কখনও এভাবে ভাবিনি ।আমার মনে হয়,
তরুর একটা সুন্দর জীবন প্রাপ্য, যা তুমি তাকে দিতে পারবে না। শোন বিয়ের দিন এই মেয়ে পালাবে,আমার মেয়ে, আমি চিনি। তুমি তার কোন কিছুতেই সায় দেবে না, সে নিজে শিক্ষা পাক।
কনক মাথা নিচু করে বলল,মামা আপনি তো জানেন,আমার দৌড়।নিশ্চই আপনার চাইতে ভালো কেউ বুঝবে না ।তারপরও আপনি মনে হয়, আরেকটু ভেবে দেখেন । এখানে আমার সুখের বিষয় না।এখানে আপনার মেয়ের সুখের বিষয় ।আর আমি যেহেতু আপনার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো সেহেতু আমি আপনার সিদ্ধান্তের উপর কোন কিছু বলতে পারি না ।
শুধু এটুকু বলতে পারি আপনি ভুল করছেন। এই বলে কনক বেড়িয়ে গেলো।

তরু বাড়ি এসে দেখে পাত্র পক্ষ বসে আসে। তাদের কে বলা হয়েছে, মেয়ের প্রিয় বান্ধবীর মায়ের স্ট্রোক করে ছিল। তাই মেয়ে সেখানে ছিল। সেই রাতেই তরুর বিয়ে হয়ে গেলো।টগর মুখ কালো করে এগিয়ে এসে তরুকে একটা চিঠি ধরিয়ে দিলো। তরু মায়ের রুমে এসে চিঠিটা খুললো:
বুচি,
আমি জানি তুই আমাকে ভুল বুঝবি না, কিন্তু প্রচণ্ড অভিমান করবি, তোকে আমি কেমন ভালবাসি জানিস? কয়েক আলোক বর্ষ। আমাকে বিয়ে করলে তো একটা মোহ কেটে যেত। আমি চাইনা তোর মোহ কেটে যাক(এটা স্বান্তনা ;) ), মামা আমার অন্নদাতা, তার কথা অমান্য করি কিভাবে!আমি চলে যাচ্ছি,ইচ্ছে করলে আর কিছুদিন পরেই যেতে পারতাম কিন্তু এখন তাড়াতাড়িই যাওয়া উচিত । কালকেই আমার ফ্লাইট, মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে লিটারেচার পড়বো। আর হয়তো ফেরা হবে না, তোর সাথে দেখাও হবেনা, কোনদিন, এইটা মজা না ?তোকে শেষ একটা কথা বলি, এক একজনের ভালোবাসার ধরন এক একরকম ।আমি অনেক কিছুই অস্বীকার করতে পারিনা,তোকেও না,তোর আমার পরিবারকেও না।যদি ভাবিস অজুহাত,তাহলে ভুল করবি কিন্তু আমি জানি,তুই আমার মতো করেই ভাববি।কারো মাঝে আমার মিল খুজিস না, তাহলে ভালো থাকবি।শেষ মুহূর্তে একটা মজার কথা বলি,এই পৃথিবীর সব মানুষই একটা স্বপ্নের জীবন যাপন করে কারন,যে এক বার জন্ম নেয়, তার মৃত্যু নেই।আপত মৃত্যু যাকে মনে হয়,তারপর কিন্তু আমরা জেগে উঠি, মৃত্যুর পর আবার জেগে উঠলে,কিন্তু মনে হবে নতুন করে আবার জীবন শুরু । আগের কথা মনে থাকবে না, সেটা বেহেস্ত দোজখ অথবা অন্য কোন জীবন।তাই আমার হচ্ছে, এটা তোর আর আমার স্বপ্নের জীবন।তুই আর আমি কোন একজীবনে একসাথে ছিলাম, একসাথে থাকবো।তা না হলে এতো আপন লাগবে কেন? এতো কষ্ট লাগবে কেন ?!
খুব ভালো থাকিস,
কনক।

তরু টের ই পায়নি কখন, চিঠিটা চোখের জলে চুপচুপে হয়ে গেছে....................................

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৭

চন্দ্রপ্রেমিক বলেছেন: অবশেষে বিয়ে হল। তবে চিঠিটা দারুন!

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮

বাক স্বাধীনতা বলেছেন: হবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.