নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/amioparajitapushpita

অপরাজিতা পুষ্পিতা

সাদাকে সাদা, কালোকে কালো সে আমি বলবই।

অপরাজিতা পুষ্পিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুধু মুসলমানদের বেলায় মোটা চামড়া আশা করা হয়, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের বেলায় সহনশীলতার কথা আসে না।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২১

প্রিয় উদারতাবাদী পণ্ডিত:
“আপনি বা আমি কেউই জর্জ ডব্লিউ বুশকে পছন্দ করি না। তার কথা কি মনে আছে? নাইন ইলেভেনের পর বিশ্ববাসীর উদ্দেশে তিনি ঘোষণা দেন, ‘হয় তুমি আমাদের সঙ্গে আছ, নয়তো তুমি সন্ত্রাসীদের পক্ষের লোক।’ সম্প্রতি ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার পর এখন আপনার মুখেও বুশের সুর বাজছে : ‘হয় তুমি বাকস্বাধীনতার পক্ষে নয়তো তুমি এর বিরুদ্ধের লোক। হয় তুমি শার্লি নয়তো বাকস্বাধীনতাবিরোধী লোক।’

আমি আপনার উদ্দেশে লিখছি, দয়া করে বন্ধ করুন এসব। আপনি মনে করছেন, এমন প্রতিবাদের মাধ্যমে আপনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু না, বাস্তবতা হল আপনি সন্ত্রাসবাদের রক্তমাখা হাতের কব্জিতে জোর বাড়াচ্ছেন, আপনি বিভক্তি সৃষ্টি করছেন। কার্যত আপনি ‘আলোকিত উদারনৈতিক পশ্চিম’ বনাম ‘বর্বর পশ্চাত্পদ মুসলমান’ হিসাব মেলাচ্ছেন। এটা ভয়াবহ। ৭ জানুয়ারি প্যারিসের হত্যাকাণ্ডকে আপনি বাকস্বাধীনতার ওপর হামলা বলে আখ্যায়িত করছেন। রক্ষণশীল সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি এটাকে সভ্যতার যুদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন।”

একটু খেয়াল করুন- আমরা সবাই একমত যে, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গেলে একটা সীমারেখা থাকবে, সেটা অতিক্রম করা যাবে না, এমনকি ভিন্ন রুচির দোহাই দিয়েও সেই সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। কিন্তু দ্বিমতটা সামনে চলে আসে যখন প্রশ্ন ওঠে সেই সীমাটা কোথায় নির্ধারিত হবে?

পণ্ডিত মহাশয়! যদি আপনার একটা কাগজ থাকত সেখানে কি হলোকাস্ট নিয়ে বিদ্রূপাত্মক কার্টুন ছাপতেন? নাইন-ইলেভেন হামলায় টুইন টাওয়ার থেকে পড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে ক্যারিকেচার থাকলে কেমন হতো?

অক্সফোর্ড দার্শনিক ব্রায়ান ক্লুগ কল্পনাগুলো হাজির করেছেন। তিনি লিখেছেন, যদি প্যারিসে ১১ জানুয়ারির ‘ঐক্য শোভাযাত্রা’য় কেউ শার্লি হেবদো হামলাকারী শেরিফের নামে ‘আমি শেরিফ’ ব্যাজ নিয়ে অংশ নিত। ক্লুগ আরও বলছেন, ভেবে দেখুন তো, সে যদি নিহত সাংবাদিকদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপকারী কার্টুন নিয়ে হাজির হতো! উপস্থিত লোকজন কী প্রতিক্রিয়া দেখাত? তারা কি এই লোকটাকে বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার নায়ক বলত, নাকি সে চরম আঘাতপ্রাপ্ত হতো। লোকটির জীবন্ত ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে ক্লুগের আশঙ্কায় আপনার কোনো দ্বিমত আছে?

৯/১১-এর পরে ম্যাগাজিনটি আস্তে আস্তে ইসলামফোবিয়া ও বাতিকগ্রস্ত সাংবাদিকতা আখড়া হয়ে ওঠে। যেটা পরে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর বাইরে থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের দ্বারা তাদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এসব কারণেই আসলে আমি শার্লি হতে পারছি না বা হতে চাই না।

আমাদের বরং আহমেদ হওয়া উচিত যে মুসলিম পুলিশ সদস্য ম্যাগাজিনটির অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে জীবন দিয়েছে। এমন দ্বিমুখিতা কেন আপনার? কার্টুনে অ্যান্টি-সেমিটিক চিহ্ন থাকায় ২০০৮ সালে যখন শার্লি হেবদো ফরাসি কার্টুনিস্ট মরিসের চাকরি খেয়ে দিল তখন আপনি নিশ্চুপ ছিলেন কেন?

অন্যদিকে ২০০৫ সালে ড্যানিশ সংবাদপত্র ‘জিলাঁদ-পস্তেন’ যখন মহানবীকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র ছাপল, তখন তো আপনাকে সচেতন হতে দেখিনি! সেই পত্রিকাই আবার যিশুখ্রিস্টকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্রটি ‘গোলমাল উস্কে দিতে পারে’ বলে না ছাপার ঘোষণা দেয়। গর্বের সঙ্গে তারা এ-ও ঘোষণা দিয়ে জানায় যে, কোনোভাবেই হলোকাস্ট নিয়ে কার্টুন ছাপানো যাবে না।

শুধু মুসলমানদের বেলায় মোটা চামড়া আশা করা হয়, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের বেলায় সহনশীলতার কথা আসে না।

বিশেষ করে ফ্রান্সে শিক্ষা, চাকরি বা প্রকাশ্য স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সবক্ষেত্রে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। বাক-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে আপনি মুসলমানদের কাছ থেকে নিন্দা-অভিশাপ আশা করছেন, কিন্তু অন্যদিকে আমাদের নির্বাচিত নেতারা আমাদের এর চেয়ে কত বড় বড় সর্বনাশ করে যাচ্ছে সেগুলোর বেলায় আপনি অন্ধের ভূমিকা নিয়ে বসে আছেন।

পণ্ডিতজি, বারাক ওবামা যখন ইয়েমেনের ড্রোনবিরোধী সাংবাদিক আবদুল্লা-হেল হায়দার সায়ীকে (ক্যাঙ্গারু কোর্টে সন্ত্রাস-সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত) আটক রাখার আহ্বান জানান, তখন আপনার খারাপ লাগে না? ঝাঁপ দিয়ে শুধু বাক-স্বাধীনতাবিরোধী ঘোড়ায় চড়েন আপনি! ২০১৪ সালে গাজায় সাত সাংবাদিক হত্যায় দায়ী দেশের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যখন প্যারিসের ‘ঐক্য শোভাযাত্রা’য় শরিক তখন তো আপনাকে আহত হতে দেখি না আমরা! সে এমন এক দেশের চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সঙ্গে ঐক্য শোভাযাত্রায় যোগ দেন যে দেশে হলোকাস্টবিরোধী মতামত প্রদানের শাস্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাভোগ এবং ডেভিড ক্যামেরন যিনি কিনা টেলিভিশনে ‘ডেমোক্র্যাসি ছুড়ে ফেলে দেওয়ার কথা’ বলায় তাদের নিষিদ্ধ করতে চান নিজের দেশে।
রাইটার: মেহেদি হাসান
পরিচালক হাফিংটনপোস্ট, রাজনীতি বিভাগ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০১

প্রবাসী১২ বলেছেন: এটা মহাসত্যের পর্যায়ের একটা বিষয়। কাউকে অসম্মান করে কথা বলা কোন সমাজেই গ্রহনযোগ্য নয়। কেবলমাত্র শতকোটি মানুষের ভালবাসার পাত্র মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আলাইহিস সালাতু ওয়াত তাসলীমকে নিয়ে মন্দ বল্লে বাক স্বাধিনতার চর্চা করা হয়।




২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৩

নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: কই হিন্দুদের দেব-দেবী নিয়ে তো ইন্ডিয়াতে ব্যাপক আকারে তামাশা ফাজলামো করা হয়। এই নিয়ে তো কেউ কারো মাথা ফাটায় না। বরং এটাকে ওরা আরও উপভোগ করে। ফান হিসেবে নেয়।

৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩

ভাঙ্গা হৃদয় বলেছেন: সুন্দর লেখা। আমার কাছে আমার নবীজি সর্বোত্তম। তাকে নিয়া মশকরা করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। অন্য কোন ধর্ম নিয়ে কথা বললে তাদের গায়ে নাও লাগতে পারে কারন তারা তাদের ধর্মকে কোন রেসপেক্ট এর চোখে দেখে না কিন্তু আমি আমার ধর্মকে দেখি। আমার ধর্ম নিয়ে কেউ চুলকালে তাকে একটু চুলকিয়ে দেওয়া আমি আমার অধিকার হিসেবেই দেখি।

৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৬

শাহরীয়ার সুজন বলেছেন: সহমত! পোস্টে প্লাস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.