নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গতকাল টা কেমন একটা দিন ছিল !

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০৪

ছোট বেলার একটা ঘটনা মনে আছে । আমি তখন কোন ক্লাসে পড়ি সেটা মনে পড়ছে না । আমার বাবা তখনও ব্যবসায় নামেন নি । একজনের আন্ডারে চাকরি করতেন । তখন বাবার খুব বদলি হত । আজকে এখানে ও কাল সেখানে । তখন তার পোস্টিং জয়পুরহাটে । আমরা থাকি চুয়াডাঙ্গাতে । আমার বড় ভাই তখন পড়ালেখার নাম গন্ধ নেই । সারাদিন খেলা ধুলা নিয়ে আছে । বাবা দূরে থাকলে যা হয় । ঠিক হল যে তাকে আব্বার কাছে যেতে হবে ।

সব দিনক্ষণ ঠিক হল । নির্ধারিত সময়ে যখন বাসা থেকে ট্রেন স্টেশনের দিকে রওয়ানা দেওয়া হল আমার মনের ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি এসে জড় হল। আমার কান্না যেন থামে না । অথচ তার সাথে আমার সব মারামারি লেগেই থাকত এটা সেটা নিয়ে । পরিবারে দুই ভাই থাকলে যা হয়। অথচ আমার তখন মনে হচ্ছিল যে আমার যেন কী দূরে চলে যাচ্ছে । আমার কান্না দেখে আমার মা আমাকে নিয়ে আবার চল স্টেশনে । শেষবারের মত আরেকবার ভাইয়ের দেখা হবে । অথচ খুব যে দূরে যাচ্ছে তাও কিন্তু না । ট্রেনে উঠলে এক ট্রেনে সরাসরি আমাদের কাছে চলে আসা যায় ।

এরপরে অবশ্য একটু বড় হওয়ার পরে ছোট বেলার সেই আবেগ অনুভূতি আর ছিল না । মানে ঐ ভাবে আর নিজের অনুভূতি সবার সামনে আমি আর প্রকাশ করি নি । যখন ক্লাস নাইনে পড়ি সে একবার গেল সিঙ্গাপুর গেল । বাসা থেকে সবাই গেল তাকে সি-অফ করতে । আমি গেলাম না । আমাকে কয়েকবার বলার পরেও গেলাম না । আমি বাসাতেই রয়ে গেলাম একা । তবে সেই দিন রাতে সবাই যখন চলে গিয়েছিল আমার মন কি খারাপ হয়েছিল? আমার মনে নেই । হয়েছিল নিশ্চয়ই । ব্যাপারটা অদ্ভুত না? তার থেকেও আগের ঘটনা আমার মনে আছে অথচ সেই ক্লাস নাইনের ঘটনাটা আমার মনে নেই ।

গতকাল আবারও সে দেশের বাইরে গেল । বাপের ব্যবসা তার করার ইচ্ছে নেই । সাথে করে ভাবি এসেছে আর আমি । যখন সে গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল মনের ভেতরে সেই অদ্ভত অনুভূতি এসে জমা হল আবার ! এমন না যে তার তার সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয় । বরং উল্টো। আমি যখন বাসায় যাই তখনও তার সাথে কথা হয় না খুব একটা । অবশ্য আমার কারো সাথেই খুব একটা কথা হয় না । আমি গেটের দিকে কেবল তাকিয়ে রইলাম যেন আরও একটু তাকে দেখা যায় । কিন্তু বেশি সময় আর দেখা গেল না । সে ভেতরে চলে গেল ।

ফেরার পথে পুরো পথ মনের ভেতরে একটা গুমট ভাব চেপে রইল। আমার মা আমাকে বলে আমার মনে মায়া দয়া কম । হয়তো কম । অথবা আমি হয়তো দেখাতেই পারি না । ছোট বেলা আমরা যত সহজে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি বড় হয়ে গেল সেসব আর পারি না । কোথায় যেন আটকে থাকে । একবার মনে হয়েছিল যাওয়ার সময় তাকে জড়িয়ে ধরে বলি যে চিন্তা নেই এদিকে আমি সব দেখে রাখব। তোর ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না । তার পড়াশোনার দিকটাও দেখব আমি । এতো মানুষ পড়িয়ে মানুষ করিয়ে ফেললাম আর নিজের ভাইয়ের ছেলেকে পড়াতে পারব না ! বলতে পারলাম না । কেন পারলাম না কে জানে !

এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে ভাবিকে পৌছে দিয়ে ফিরে এলাম । আর কোন কাজ ছিল না । ঘরে ফেরার একটু তাড়া ছিল কারণ একটা অনুবাদের কাজ তখন বাকি । রাতের ভেতরে জমা দিতে হবে । বাসায় না ঢুকে আশে পাশের রাস্তায় ঘাটতে লাগলাম কোন কারণ ছাড়াই । এই সময়ে আমার কেবল খাওয়া দাওয়া করতে ইচ্ছে করে । মনের ভেতরে যখন স্বাভাবিক ভাবে কাজ কর্ম চলে না তখন খাওয়া আমার পছন্দের কাজ । পেট ভরলে আস্তে আস্তে সব কিছু শান্ত হয় ।

সকালে ঘুম থেকে উঠলে হয়তো আবার সব কিছু আগের মত হয়ে যাবে । অনুভূতিটা মনের অন্ধকার কোন গলিতে পড়ে থাকবে । এটা হয়তো আমার পরিবারের কেউ কখনই জানতেও পারবে না । কাল দুপুরে হয়তো মা আবার ফোন করে বলবে তোর মনে কি মায়া দয়া নেই । ভাইডা চলে গেল একটু মনও খারাপ করলি না !
আমিও হয়তো বলব, এসব এসব মনটন খারাপ করে কোন লাভ আছে ! গেছে আবার চলে আসবে !

আমি ঠিক করেছি সে একটু সেটেল হলেই আমিও চলে যাব তার কাছে । আমি যখন এয়ারপোর্টে যাবো তখন কাউকে সাথেই নিব না । কাউকে বলবই না । ওখানে একেবারে পৌছে তারপর সবাইকে জানাব। বাসায় ফোন করে বলব সারপ্রাইড ! দেশ ছেড়ে চলে এসেছি । তখন তারা কান্না কাটির বদলে আমার উপরে রাগ বেশি করবে । কান্নার থেকে শকের ব্যাপারটা বেশি ভাল ।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৩৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অনেকের আবেগ প্রকাশের ধরণটা আলাদা।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৩৬

অপু তানভীর বলেছেন: অনেকে হয়তো ঠিক মত প্রকাশই করতে পারে না । কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না মানে তো আর এই নয় যে অনুভব করে না।

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৪৯

শেরজা তপন বলেছেন: দুই ভাই চলে গেলে ব্যাপারটা ভাল হবে না। একজনের দেশে থাকার প্রয়োজন আছে।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৩৭

অপু তানভীর বলেছেন: খুব একটা টেনশন নেই যদিও । আমি তো আর এখনই যাচ্ছি না । আমি যেতে যেতে ভাতিজা বড় হয়ে যাবে । আর আমি যাওয়ার কয়েক দিন পরে ভাইকে দেশে পাঠিয়ে দিব।

৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৫১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: একজনের আন্ডারে চাকরি করতেন। এইটা কওয়ার মানে কি? চাকরী তো কারো না কারো আন্ডারেই করতে হবে, নাকি!! আমরা কি এইটা জানি না!!! :P

আসলে রক্তের সম্পর্কটাই এমন। অনেকেই প্রকাশ করে না বা করতে পারে না। কিংবা মনের গহীনে যেই অনুভূতি থাকে, সেটা সব সময়ে বের করা সম্ভব হয় না। তবে টানটা ঠিকই থাকে। আমি দেশে গেলে আসার সময়ে এই একই অনুভূতি হয়। স্বভাবগত কারনে প্রকাশ করতে পারি না, কিন্তু ভিতরে রক্তক্ষরণ ঠিকই হয়।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

অপু তানভীর বলেছেন: হ্যা তা তো করতেই হয় । সরকারি চাকরি অবশ্য সরকারের আন্ডারে।

আগে ছোট বেলায় এই অনুভূতি গুলো প্রকাশ করা যেত সহজেই কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে এই অনুভূতি প্রকাশের ভাষা কেমন জানি সংকুচিত হয়ে গেছে । চাইলেও কাছের মানুষ বিশেষ করে বাবা মা ভাই বোনদের কাছে মনের কথা বলা যায় না । মনের কথা মনেই রয়ে যায় । কী অদ্ভুত না ব্যাপার তা

৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:০১

ইসিয়াক বলেছেন: আমি যখন আমার শৈশবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি তখন একটানা সাত/ আট দিন সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতাম।এরপর মন খারাপ ছিল দীর্ঘ দিন। আমি খুব একটা কথা বলতাম না প্রয়োজন ছাড়া তারপর থেকে আমার অনুভূতি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে বলা যায় । সেই থেকে এখনও কেউ ছেড়ে গেলে খুব একটা খারাপ লাগে না মনে হয় এটাই স্বাভাবিক। অথচ আমি নির্দয় মানুষ নই।
আসলে একেক জনের ভাব প্রকাশ একেক রকম।কেউ সহজে আবেগ তাড়িত হয় আবার কেউ ভিতরে ভিতরে গুমরে মরলেও তা বাহিরে প্রকাশ করে না।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৪৫

অপু তানভীর বলেছেন: পুরুষ মানুষ বড় হয়ে গেলে আসলে তাদের অনুভূতি প্রকাশের পরিমানটা কমে যায় । তার মানে কিন্তু এই না যে তারা অনুভব করে না । মেয়েরা খুব পারে অনুভূতি প্রকাশ করতে।

৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:০৬

করুণাধারা বলেছেন: মাঝে মাঝে একবাক্যের মেসেজ দিতে পারেন ভাইকে। তাতে অনুভূতি কিছুটা প্রকাশ করা যায়।

ভাইয়ের ছেলেকে দেখে রাখবেন এটা তাকে বলতে হবে কেন? এটা এমন এক কাজ যা করলে যেটুকু পরিশ্রম হয় তার বহুগুণ বেশি আনন্দ আসে মনে। তাই এটা করতেই পারেন।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৪৭

অপু তানভীর বলেছেন: ফোনটোন আসলে দেওয়া হয় না । কোন দরকার ছাড়া আমাদের মাঝে কথাও হয় না !

বলতে হবে ঐ যে বললাম যে আমি কখনই কিছু বলি না এই কারণেই হয়তো ! সম্ভবত ঢাকা ছেড়ে এবার বাড়ি চলে যেতে হবে । এমন একটা প্লান রয়েছে মাথায় । লেটস সী !

৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৫৯

মিরোরডডল বলেছেন:





আবেগ বিষয়টা এমনই, বুকের ভেতর কত উলটপালট হয়ে যায় কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারিনা বা করতে চাই না।



০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৪৭

অপু তানভীর বলেছেন: অনেকে পারে আবার অনেকে পারে না । যা পারে তারা আসলেই ভাগ্যবান ।

৭| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৩২

রোকসানা লেইস বলেছেন: এক এক মানুষের আবেগ এক এক রকম। আবার বিভন্নি সময়ে বদলে যায় অনুভুতি।
ছোটবেলাটা খুব নির্ভেজাল ভালােলাগার থাকে

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

অপু তানভীর বলেছেন: ছোটবেলাটাই আসলে ভাল ছিল অনেক । তখন সব কিছু কত সহজেই না প্রকাশ করা যেত। এখন আর যায় না।

৮| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




আবেগের আবেগীয় প্রকাশ ,
প্রকাশ শৈলীতেও রয়েছে অভিনবত্ব।
পাঠে ভাল লাগল ।

ইংরেজী নব বর্ষের শুভেচ্ছা রইল

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:০০

অপু তানভীর বলেছেন: আমরা বেশির ভাগই হয়তো আমাদের আবেগ আমাদের কাছের মানুষদের কাছে প্রকাশ করতে পারি না । অন্যের কাছে পারি।

আপনাকেও ইংরেজি নবরর্ষের শুভেচছা রইলো।

৯| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:১৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: লেখাটিতে মনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। আপনি ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির। সেক্ষেত্রে আপনার মায়ের তো আপনাকে চেনা খুব স্বাভাবিক ছিল। যাইহোক কিছু একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে।যে কোন অবস্থাতেই এর ব্যবধান কমানোর দরকার।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:০১

অপু তানভীর বলেছেন: আমার অবশ্য সবার সাথেই এমন । আমি কাউকেই খুব একটা আামর কাছে আসতে দিই না । ইদানীং এই অনুভূতিটা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে । এই গ্যাপ কমবে বলে মনে হয় না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.