নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে জানতে চাই,ছুটে চলেছি অজানার পথে,এ চলার শেষ নেই ।এক দিন ইকারাসের মত সূর্যের দিকে এগিয়ে যাব,ঝরা পাতার দিন শেষ হবে ,আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাব ।

অপু দ্যা গ্রেট

গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

অপু দ্যা গ্রেট › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাক যুগের সবাক হিরো: হাসির জাদুকর(চার্লি চ্যাপলিন)

২৮ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬

সহজ সরল একটা মানুষ, শরীরে ঢিলেঢালা ময়লা প্যান্ট আর জীর্ণ কালো কোট, পায়ে মাপহীন জুতো, মাথায় কালো হ্যাট, হাতে লাঠি আর সেই বিখ্যাত কিম্ভুত কিমাকার গোঁফ। লোকটা রাস্তায় ঘুরছে ভবঘুরের মতো আর মজার মজার কান্ড ঘটাচ্ছে আর বিশ্বের মানুষদেরকে আমোদিত করছে।

তখন পাঁচ বছর। একদিন তার মা মঞ্চে গান গাইছিলেন। আর ছোট্ট ছেলেটি বসে বসে মায়ের অভিনীত গীতনাট্য দেখছিলেন। সে সময় লন্ডনে খেটে খাওয়া শ্রমিক, ভবঘুরে কিংবা নেশাতুর লোকেরাই বিনোদনের জন্য থিয়েটারে ভিড় জমাত। মঞ্চে গায়িকা বা নর্তকীর কোনো হেরফের হলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে থিয়েটার মাথায় তুলে নিত। মঞ্চে গান গাইছিলেন চার্লির মা।

তার মায়ের গলায় আগে থেকেই সমস্যা ছিল। গান গাওয়ার এক পর্যায়ে মায়ের গলার স্বর ভেঙে যায়। বাধ্য হয়ে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান। কিন্তু হল ভর্তি দর্শককে শান্ত করার জন্য মায়ের জায়গায় ছেলেটিকে উঠানো হয় মঞ্চে। ছেলেটি তার মায়ের পরিবর্তে মঞ্চে গান গাইতে শুরু করেন- ‘জ্যাক জোনস ওয়েল অ্যান্ড নোওন টু এভরি বডি…’। তার গানে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে কয়েন ছুড়তে থাকে। হঠাৎ অঙ্গভঙ্গিসহ বলে ওঠেন, ‘আমি এখন গান গাইব না; আগে পয়সাগুলো কুড়িয়ে নেই, তারপর আবার গাইব। এটি ছিল দর্শকদের হাসির জন্য তার প্রথম কৌতুকাভিনয়।’

এক বারো বছর বয়সী ছেলে স্টেজে উঠে অসাধারণ অভিনয় করল। দর্শক সারিতে ছিলেন বিশ্বখ্যাত লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। তিনি বালকটির অভিনয় দেখে মুগ্ধ। ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন, “তুমি লেগে থাকো। তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল”। ছেলেটি বলল, “আমি খুব গরিব। আজ এই মুহূর্তে আপনার এক বছরের উপার্জন আমাকে দিলে আগামী পাঁচ বছরে আমার উপার্জন আপনাকে দিয়ে দিতে রাজি আছি”। শুনে কোনান ডয়েল বেশ বিরক্ত হলেন। কিছু বললেন না।
পরে ছেলেটি আমেরিকা চলে যায়। এক বছর পর দেখা গেল তার উপার্জন কোনান ডয়েলের উপার্জনকে ছাড়িয়ে গেছে।

নিজের জীবনের সমস্ত কষ্ট- যাতনাকে নিয়ে করে গেছেন কৌতুক,জীবনকে শিখিয়েছেন কি করে বাঁচতে হয়,স্বপ্ন দেখতে হয়, ছাড়িয়ে যেতে হয় নিজেই নিজেকে।বিরহকে নিজের ভেতর ধারণ করেই যিনি দৃঢ় কণ্ঠ উচ্চারণ করেছেন, “My pain may be the reason for somebody’s laugh. But somebody’s pain must never be the reason of my laugh.” মাথায় বাউলার হ্যাট, নাকের নিচে ছোট গোঁফ , চাপা কোট , ঢিলেঢালা প্যান্ট , হাতে ছড়ি , পায়ে কালো জুতো ,ছোটোখাটো গড়নের একজন মানুষ এভাবেই ধরা দিয়েছেন আমাদের সামনে ।

জ্বী হ্যা যার কথা বলছি তিনি আর কেউ নন বিখ্যাত চার্লি চ্যাপলিন। তার পুরো নাম স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র ১৬ই এপ্রিল, ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২৫শে ডিসেম্বর, ১৯৭৭ সালে মারা যান। চার্লি একজন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা। বিখ্যাততম শিল্পীদের একজন চ্যাপলিন পৃথিবী অন্যতম বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকও। চ্যাপলিনকে চলচ্চি্ত্রের পর্দায় শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতাদের একজন বলেও মনে করা হয়।

চার্লি চ্যাপলিনের জন্ম বছরেই আলভা এডিসন তৈরী করেন ক্যামেরা এবং এবছরেই জন্ম হয় দুনিয়ায় ত্রাস সৃষ্টি করা এডলফ হিটলারের ।প্রকৃতির কি অসাধারণ সংযোগ। ক্যামেরা তৈরী না হলে চ্যাপলিনের প্রতিভার দেখাও পাওয়া যেত না , অন্যদিকে হিটলারের নির্মমতার বিরুদ্ধে সোচ্চার চ্যাপলিন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তাও জানা যেত না। মূকাভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন নির্বাক চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব।তিনি নিজের ছবিতে নিজেই অভিনয়, সংলাপ রচনা, পরিচালনা, প্রযোজনা এমন কী সঙ্গীত পরিচালনা পর্যন্ত করেছেন। শিল্প কী ?চ্যাপলিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, “শিল্প হচ্ছে পৃথিবীর কাছে লেখা এক সুলিখিত প্রেমপত্র।” যে প্রেমপত্র তিনি লিখে গেছেন বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে ,অভিনয়ের মাধ্যমে কিছু না বলেও।

চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্রে নাম জানা যাক , যেগুলো মাধ্যমে হাস্যরসাত্মক পরিবেশ সৃষ্টি করে পৌঁছে দিয়েছেন নানান বার্তা । The Triumph, Modern Times ,City Lights,The Great Dictator ,The Gold Rush ,The Kid , Limelight ,The Immigrant ,The Circus ,Monsieur Verdoux , A Dog’s Life ,A countes from Hongkong সহ আরও বিখ্যাত সিনেমা তার রয়েছে। দাম্পত্য জীবনে চ্যাপলিনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে তিন বার। যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তারা মূলত চ্যাপলিনের বিপুল অর্থের প্রতিই বেশি মোহগ্রস্থ ছিল। একসময় তিনি বেশ ভীত হতে পড়েন প্রেম-ভালোবাসা- বিয়ে নিয়ে।দুঃখী চ্যাপলিনের মুখে তাই উচ্চারিত হয়েছিল , “I always like walking in the rain, so no one can see me crying. ” তবে দারিদ্রের সাথে সাথে একসময় চ্যাপলিন কান্নাকেও জয় করেছিলেন। সুখীও হয়েছিলেন ব্যক্তি জীবনে।

McCarthyism যুগের সময় চ্যাপলিনকে কমুনিষ্ট ভাবাপন্ন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। সম্প্রতি ২০১২ সালে প্রকাশিত গোপন নথিতে দেখা গিয়েছে, FBI ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের কাছে চ্যাপলিন সম্পর্কিত এমন কিছু তথ্য চেয়েছে যার ফলে তারা তাঁকে আমেরিকা থেকে বহিস্কার করতে পারে, যেমন, FBI জানতে চেয়েছিলো চার্লির প্রকৃত জন্মস্থান কোথায় এবং তার আসল নাম ইসরেল থর্নস্টেন কি না!

১৯৫২ সালে যখন চার্লি তার Limelight চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারের জন্য লন্ডনে আসেন, তখন জে এডগার হুভার আমেরিকান ইমিগ্রাশন বিভাগকে বলেছিলেন কীভাবে চ্যাপলিনের আমেরিকা প্রবেশ আটকানো যায়। চ্যাপলিনও আর আমেরিকায় না- আসার সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি বললেন, “Since the end of the last world war, I have been the object of lies and propaganda by powerful reactionary groups who, by their influence and by the aid of America’s yellow press, have created an unhealthy atmosphere in which liberal-minded individuals can be singled out and persecuted. Under these conditions I find it virtually impossible to continue my motion-picture work, and I have therefore given up my residence in the United States.”

১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য স্ত্রীসহ বিজয়ীর বেশে আবার আমেরিকায় আসেন চ্যাপলিন, সেবারের অস্কারে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার নেবার জন্য।

চার্লি চ্যাপলিন তখন পৃথিবী-বিখ্যাত। তার অনুকরনে অভিনয়ের একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। গোপনে চার্লি চ্যাপলিন নাম দেন সেই প্রতিযোগিতায়। মজার বিষয় হলো প্রতিযোগিতা শেষে দেখা গেলো ১ম ও ২য় স্থান অর্জন অন্য দুজন প্রতিযোগী। চার্লি চ্যাপলিন হন তৃতীয়।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের যখন প্রথম চার্লি চ্যাপলিনের সঙ্গে দেখা হলো তখন আইনস্টাইন চ্যাপলিনকে বললেন- আপনাকে আমি যে কারণে খুব পছন্দ করি সেটা হলো আপনার বিশ্বজনীন ভাষা। আপনি যখন অভিনয় করেন, তখন আপনি হয়তো কোনো ডায়লগই বলছেন না, কিন্তু সারা পৃথিবীর মানুষ ঠিক বুঝতে পারে আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন এবং তারা সেজন্য আপনাকে অসম্ভব ভালোও বাসে। উত্তরে চার্লি চ্যাপলিন বললেন- ড. আইনস্টাইন, আপনাকে আমি তার চেয়েও বড়কারণে পছন্দ করি। আপনার থিওরি অফ রিলেটিভিটিসহ অন্যান্য গবেষণার বিন্দুবিষর্গ কেউ বুঝে না, তবুও গোটা পৃথিবীর মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধা করে।
১৯৭৭ সালের শুরু থেকেই চার্লি চ্যাপলিনের শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না।


১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বরে চার্লি প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান সুইজারল্যান্ডের কার্সিয়ারে । ওই দেশের ডিঙ্গিতে চার্লির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় । কিন্তু এর পর ঘটে একটা দুর্ঘটনা । পরের বছর চার্লির মৃতদেহ চুরি হয়ে যায় । ১৬ দিন পরে তা উদ্ধার করে আবার সমাহিত করা হয় ।

নির্বাক যুগের সবাক হিরো

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.