নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে জানতে চাই,ছুটে চলেছি অজানার পথে,এ চলার শেষ নেই ।এক দিন ইকারাসের মত সূর্যের দিকে এগিয়ে যাব,ঝরা পাতার দিন শেষ হবে ,আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাব ।

অপু দ্যা গ্রেট

গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

অপু দ্যা গ্রেট › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্নবাদী লড়াইয়ের এক কিংবদন্তীঃ নেলসন ম্যান্ডেলা

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:১৪




পৃথিবীর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকি ১৮ জুলাই বুধবার। আজ থেকে একশ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা ম্যান্ডেলা। তিনি মানুষকে পথ দেখিয়েছিলেন শান্তি ও স্বাধীনতার। যদিও লেখাটি গতকাল লেখা উচিত ছিল কিন্তু ব্যস্ততার জন্য হয়ে ওঠেনি । তিনি শুধু একটা জাতিকে পথ দেখানি বা স্বাধীনতার কথা বলেননি । তিনি তৈরি করছেনে আগামীর ভবিষ্যত ।

পুরো নাম নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা । তার পিতা মপাকানাইসার ছিল চারজন স্ত্রী ও সর্বমোট ১৩ জন সন্তান । ম্যান্ডেলার মা মপাকানাইসার ৩য় স্ত্রী নোসেকেনি ফ্যানি । তার ডাক নাম “রোলিহ্লাহ্লা” এর অর্থ হলো “গাছের ডাল ভাঙ্গে যে” অর্থাৎ দুষ্ট ছেলে । ম্যান্ডেলা তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি পড়াশোনা করেছেন । স্কুলে পড়ার সময় শিক্ষিকা মদিঙ্গানে তার ইংরেজি নাম রাখেন “নেলসন” ।

স্কুল থেকে পাস করার পর ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস কোর্সে ভরতি হন। এখানেই অলিভার টাম্বোর সাথে তার পরিচয় হয়। টাম্বো আর ম্যান্ডেলা সারাজীবন ধরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ম্যান্ডেলার আরেক বন্ধু ছিলেন ট্রান্সকেইয়ের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী কাইজার (কে ডি) মাটানজিমা। এই বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই পরবর্তীকালে ম্যান্ডেলা বান্টুস্থানের রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণে জড়িত হন। তবে এসব নীতিমালার ক্ষেত্রে ম্যান্ডেলা ও মাটানজিমার মতবিরোধ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শেষে ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদের ডাকা আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। এর ফলে তাঁকে ফোর্ট হেয়ার থেকে চলে যেতে বলা হয়। শর্ত দেওয়া হয়, কেবল ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সদস্য হতে পারলেই তিনি সেখানে ফেরত আসতে পারবেন। জীবনের পরবর্তী সময়ে কারাগারে বন্দি থাকার সময়ে ম্যান্ডেলা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অধীনে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

এখানে মজার বিষয় হচ্ছে যে ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার ছাড়ার অল্প পরেই জানতে পারেন যে জোঙ্গিন্তাবা তার সন্তান জাস্টিস(যুবরাজ ও সিংহাসনের উত্তারাধিকারী) এবং ম্যান্ডেলার বিয়ে ঘোষণা করেছেন । কিন্তু তারা দুজনেই এভাবে বিয়ে করতে নারাজ । কি করা যায় দুজনের মাথায় চিন্তা ।

তবে তারা ঠিক করলেন তারা পালিয়ে যাবেন । যেই ভাবা সেই কাজ । দুজনেই পালালেন । চলে গেলেন জোহানেসবার্গ । সেখানে ম্যান্ডেলা একটি খনি প্রহরীর চাকরি নেন । তবে কিছু দিনের মধ্যে খনি মালিকে যেনে ফেলেন যে ম্যান্ডেলা বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে । তারপর তাকে ছাটাই করে দেয়া হয় । পরবর্তীকালে ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের আইনি প্রতিষ্ঠান উইটকিন, সিডেলস্কি অ্যান্ড এডেলম্যানে কেরানি হিসেবে যোগ দেন।

ম্যান্ডেলার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী ওয়াল্টার সিসুলু এই চাকুরি পেতে ম্যান্ডেলাকে সহায়তা করেন। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময়ে ম্যান্ডেলা ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকার দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অধীনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

এর পরে ম্যান্ডেলা ইউনিভার্সিটি অব উইটওয়াটার্সরান্ডে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শুরু করেন। এখানে তাঁর সঙ্গে জো স্লোভো, হ্যারি শোয়ার্জ এবং রুথ ফার্স্টের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে এই বন্ধুরা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশ নেন। এসময় ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের উত্তরের দিকের শহর আলেক্সান্দ্রিয়াতে বাস করতেন।

১৯৪৮ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল পার্টি নির্বাচনে জয় লাভ করে । এই পার্টি হচ্ছে তারাই যারা বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিল । সবাই কে আলাদা জাতি এবং পক্ষপাতী হিসেবেই দেখত । ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের জনগণের সম্মেলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। এই সম্মেলনে মুক্তি সনদ প্রণয়ন করা হয়, যা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল ভিত্তি। এই সময় ম্যান্ডেলা ও তাঁর বন্ধু আইনজীবী অলিভার টাম্বো মিলে ম্যান্ডেলা অ্যান্ড টাম্বো নামের আইনি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। এই প্রতিষ্ঠানটি উকিল নিয়োগ করার মতো টাকা নেই, এমন দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের স্বল্প মূল্যে আইনগত সাহায্য প্রদান করত।

ম্যান্ডেলা তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে মহাত্মা গান্ধীর দর্শনে প্রচুর প্রভাবিত হন । ক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী কর্মীরা আন্দোলনের প্রথম দিকে গান্ধির অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিল।

ম্যান্ডেলাও প্রথম থেকেই অহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ খ্রস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেপ্তার করে। এই মামলাটি সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) চলে, কিন্তু মামলার শেষে সব আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হন।

১৯৬২ সালের ৫ অগাস্ট ম্যান্ডেলা আবার গ্রেপ্তার হন । তার এবং তার পার্টির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম এ নেতৃত্বদান করা । এছাড়া শ্রমিক ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয়া ও বেআইনি ভাবে দেশের বাইরে যাওয়া । এই দুই অভিযোগে পাচ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয় । ম্যান্ডেলা কারাগারে বন্দি থাকার সময়ে পুলিশ এএনসি-র প্রথম সারির নেতাদের ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই জোহানেসবার্গের কাছের রিভোনিয়ার লিলেসলিফ ফার্ম থেকে গ্রেপ্তার করে।

'রিভোনিয়ার মামলা' নামে খ্যাত এই মামলায় ম্যান্ডেলাকেও অভিযুক্ত করা হয়। সরকারের প্রধান আইনজীবী ডক্টর পারসি ইউটার ম্যান্ডেলাসহ এএনসি-র নেতাদের অন্তর্ঘাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। এছাড়াও তাঁদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। ম্যান্ডেলা অন্তর্ঘাতের অভিযোগ স্বীকার করে নেন। কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রের দালাল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য আনা দেশদ্রোহিতার অভিযোগটি ম্যান্ডেলা অস্বীকার করেন।

তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশি বিনিয়োগকে তাঁরা নিরুৎসাহিত করবেন, আর এর মাধ্যমে বর্ণবাদী ন্যাশনাল পার্টির সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন। জবানবন্দির শেষে ম্যান্ডেলা বলেন, "During my lifetime I have dedicated myself to the struggle of the African people. I have fought against white domination, and I have fought against black domination. I have cherished the ideal of a democratic and free society in which all persons live together in harmony and with equal opportunities. It is an ideal which I hope to live for and to achieve. But if needs be, it is an ideal for which I am prepared to die."

ম্যান্ডেলার পক্ষে ব্র্যাম ফিশার, ভার্নন বেরাঞ্জ, হ্যারি শোয়ার্জ, জোয়েল জফ, আর্থার চাসকালসন এবং জর্জ বিজোস ওকালতি করেন। মামলার শেষভাগে হ্যারল্ড হ্যানসন আইনি সহায়তার জন্য যোগ দেন। কিন্তু মামলায় রাস্টি বার্নস্টেইন ছাড়া অন্য সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুন দেওয়া রায়ে ফাঁসির বদলে তাঁদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ম্যান্ডেলার কারাবাস শুরু হয় রবেন দ্বীপের কারাগারে। এখানে তিনি তাঁর ২৭ বছরের কারাবাসের প্রথম ১৮ বছর কাটান। জেলে থাকার সময়ে বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি বাড়তে থাকে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। সশ্রম কারাদণ্ডের অংশ হিসেবে রবেন দ্বীপের কারাগারে ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহবন্দিরা একটি চুনাপাথরের খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হন। কারাগারের অবস্থা ছিল বেশ শোচনীয়।

কারাগারেও বর্ণভেদ প্রথা চালু ছিলো। কৃষ্ণাঙ্গ বন্দিদের সবচেয়ে কম খাবার দেয়া হত। সাধারণ অপরাধীদের থেকে রাজনৈতিক বন্দিদের আলাদা রাখা হত। রাজনৈতিক বন্দিরা সাধারণ অপরাধীদের চেয়েও কম সুযোগসুবিধা পেত। ম্যান্ডেলা তাঁর জীবনীতে লিখেছেন, তাঁকে ডি-গ্রুপের বন্দি হিসেবে গণ্য করা হত, অর্থাৎ সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত বন্দিদের তালিকায় তাঁকে রাখা হয়েছিল। তাঁকে প্রতি ৬ মাসে একটিমাত্র চিঠি দেওয়া হত এবং একজনমাত্র দর্শনার্থীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হত। ম্যান্ডেলাকে লেখা চিঠি কারাগারের সেন্সর কর্মীরা অনেকদিন ধরে আটকে রাখত। চিঠি ম্যান্ডেলার হাতে দেওয়ার আগে তার অনেক জায়গাই কালি দিয়ে অপাঠযোগ্য করে দেওয়া হত।

কারাগারে থাকার সময়ে ম্যান্ডেলা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি প্রিন্সেস অ্যানের কাছে সেই নির্বাচনে হেরে যান।

১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ম্যান্ডেলাকে রবেন দ্বীপের কারাগার থেকে পোলস্মুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এসময় ম্যান্ডেলার সঙ্গে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতা ওয়াল্টার সিসুলু, অ্যান্ড্রু ম্লাগেনি, আহমেদ কাথরাদা এবং রেমন্ড ম্লাবাকেও সেখানে নেওয়া হয়।

ধারণা করা হয়, রবেন দ্বীপে কারারুদ্ধ নতুন প্রজন্মের কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর ম্যান্ডেলা ও অন্যান্য নেতার প্রভাব কমানোর জন্যই এটা করা হয়। তরুণ কর্মীদের ওপর ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহযোদ্ধাদের এই প্রভাবকে ব্যঙ্গ করে 'ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয়' বলা হত। তবে ন্যাশনাল পার্টির তদানীন্তন মন্ত্রী কোবি কোয়েটসির মতে ম্যান্ডেলাকে স্থানান্তর করার মূল লক্ষ্য ছিল ম্যান্ডেলার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গোপন বৈঠক ও আলোচনার ব্যবস্থা করা।

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি বোথা পি ডব্লিউ বোথা ম্যান্ডেলাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শর্তটি ছিল, ম্যান্ডেলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করতে হবে। কোয়েটসিসহ অন্যান্য মন্ত্রী অবশ্য বোথার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তারা মত প্রকাশ করেন যে, ম্যান্ডেলা ব্যক্তিগত কারামুক্তির লোভে পড়ে কখনোই নিজের সংগঠনকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে সরিয়ে আনবেননা।[৫৭] ম্যান্ডেলা আসলেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তিনি তাঁর মেয়ে জিন্দজির মাধ্যমে একটি বিবৃতি দেন, যাতে তিনি বলেন,

"What freedom am I being offered while the organisation of the people remains banned? Only free men can negotiate. A prisoner cannot enter into contracts." (আমাকে মুক্ত করার জন্য দেওয়া এ কেমনতরো প্রস্তাব, যেখানে জনগণের সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে রাখা হচ্ছে? কেবল মুক্ত মানুষই আলোচনায় বসতে পারে। বন্দিরা কখনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেনা।)

ম্যান্ডেলা ও ন্যাশনাল পার্টি সরকারের মেধ্যকার প্রথম আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে। কোবি কোয়েটসি ম্যান্ডেলার সঙ্গে কেপ টাউনের ভোক্স হাসপাতালে দেখা করেন। ম্যান্ডেলা তখন প্রস্টেট গ্রন্থির শল্য চিকিৎসা শেষে আরোগ্য লাভ করছিলেন। পরের চার বছর ধরে ম্যান্ডেলার সঙ্গে সরকার একাধিকবার আলোচনায় বসে। কিন্তু এসব আলোচনায় বিশেষ কিছু অগ্রগতি হয়নি।

১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ম্যান্ডেলাকে ভিক্টর ভার্সটার কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়। মুক্তির আগে পর্যন্ত ম্যান্ডেলা এখানেই বন্দি ছিলেন। আস্তে আস্তে তাঁর ওপর কড়াকড়ি কমানো হয় এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। ম্যান্ডেলার ছাত্রজীবনের বন্ধু হ্যারি শোয়ার্জ এসময় তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।

ম্যান্ডেলার কারাবন্দিত্বের সময়ে তাঁর মুক্তির জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য এই আন্দোলনের বহুল ব্যবহৃত শ্লোগানটি ছিল, Free Nelson Mandela! (ম্যান্ডেলার মুক্তি চাই) ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি বোথা হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ফ্রেডেরিক উইলেম ডি ক্লার্ক। রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনের পরেই ডি ক্লার্ক ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসেরসহ অন্যান্য বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, ম্যান্ডেলাকে অচিরেই মুক্তি দেওয়া হবে। ভিক্টর ভার্সটার কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে মুক্তি দেওয়া হয়। ম্যান্ডেলার কারামুক্তির ঘটনাটি সারা বিশ্বে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

মুক্তির দিনে ম্যান্ডেলা জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণে তিনি শান্তি রক্ষা করা ও দেশের শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আহবান জানান। একই সঙ্গ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি।

কারামুক্তির পর ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত তিনি এই দলের নেতা ছিলেন। এই সময়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এই শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পর ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ম্যান্ডেলা কে তারা গনতান্ত্রিক ভাবে প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে সেদেশের মানুষ। এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আফ্রিকায় বর্নবাদের বিলুপ্তি ঘটে ।

গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক হিসবে গণ্য ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভারত সরকার প্রদত্ত ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ভারতরত্ন পুরস্কার ও ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে নোবেল শান্তি পুরস্কার। তাছাড়াও তিনি ১৯৮৮ সালে শাখারভ পুরস্কারের অভিষেক পুরস্কারটি যৌথভাবে অর্জন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তাঁর গোত্রের নিকট মাদিবা নামে পরিচিত, যার অর্থ হল "জাতির জনক"।

যুগে যুগে তিনি বেচে রইবেন সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে ।

শুভ জন্ম দিন হে কিংবদন্তী।
তথ্যসুত্রঃ গুগল, উইকিপিডায়া ও নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মজীবনী

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:২৭

কাইকর বলেছেন: আজকে এরকম পোস্ট পড়তে পড়তে বির। প্রথমে দেখলাম জানলাম ভাল লাগলো। অনেক বড় মাপের মানুষ ও নেতা সে।

২০ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৫

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট লিডার।

২০ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন: সত্যি গ্রেট লিডার । ওনার সম্পর্কে যত জেনেছি ততই মুগ্ধ হয়েছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.