নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন দেশ প্রেমিক, এই দেশ এবং সাধারণ মানুষের কথা সবসময় ভাবিয়ে তুলছে আমাকে.. নিজের সম্পর্ক বলার মত আর কিছু নেই.।

কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ

আমি একজন দেশ প্রেমিক,

কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছেলেটির নাম তানভীর..

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩১

তানভীর নামক ছেলেটার কাছ থেকে যখন তার ভিক্ষুক হওয়ার পেছনের কাহিনীটা শুনলাম তখন সত্যিই আমার হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসে। শরীরের প্রতিটা শিরা অপশিরা যেন চিৎকার করে বলতে থাকে পৃথিবী থেকে কি মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে গেছে? মানুষের ভেতর কি এতটুকু দয়া মায়া নেই? নাকি মনুষ্যত্ব ছাপিয়ে তাদের ভেতর পশুত্ব বাসা বেঁধেছে? কিন্তু পশুরাও তো এতটা নিষ্ঠুর হয় না। নিজের কার্য সিদ্ধির জন্য মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে? কিভাবে?
.
একটু পেছনে যাওয়া যাক...
.
বসে আছি ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশনে। লোক সমাগম বেশি না হলেও কম না। যে ট্রেনে উঠবো বরাবরের মত এবারও সেটা লেট করছে। স্টেশনে আসতে সময় নিবে আরও ঘন্টাখানেক। এইটুকু সময় অতিবাহিত করার জন্য বেছে নিলাম ফেসবুকিং আর চারিদিকে চোখ বুলানোকে।
.
বসে আছি, বসে আছি এর মধ্যে এক ভিক্ষুকের আগমন। দিলাম তাকে পাঁচ টাকা। কিছুক্ষণ বাদে আরও একজন সামনে এসে হাত পাতলো। তাকেও দিলাম পাঁচ টাকা। মিনিট পাঁচেক পর আরও একজন এলো। উনাকেও দিলাম। দেখি যে এদের আসা আর বন্ধ হয় না। এভাবে সবাইকে দিতে থাকলে তো সমস্যা। তাই এরপর যেই আসলো তাকে একটা হাসি দিয়ে বললাম, 'ভাংতি নেই।'
.
ফেসবুকিং করে আরও কিছুক্ষণ সময় পার করবার পর আর ভাল লাগছে না। বোর হচ্ছিলাম। চতুর্দিকে তাকাতে লাগলাম। দেখলাম এবার একটা মাঝবয়সী যুবক লাঠিতে ভর দিয়ে এক পায়ের সাহায্যে ভিক্ষা করতে আসলো। একটা পা নেই তার। আমার সামনে যতগুলো লোক ছিল ওরা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। অনুনয় করেও সে তাদের পকেট থেকে একটা টাকা বের করতে পারলো না। বরং সে তাদের থেকে পেয়েছে চরম দূর্ব্যবহার। সবশেষে ছেলেটা আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। দুটো হাত জোর করে চেহারায় তীব্র বেদনা নিয়ে আকুল কন্ঠে বললো, 'ভাই কয়ডা টাকা দেন না, সকাল থেইকা কিছুই খাই নাই। দেন না ভাই কয়ডা টাকা।' ছেলেটার এমন আকুল আবেদন শরীরের ভেতর দিয়ে কেমন যেন একটা খারাপ লাগা বয়ে নিয়ে গেল। কেন যেন মনে হলো টাকা না দিয়ে ওকে খাওয়াই। তাই তাড়াতাড়ি করে দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে এনে ওকে দিলাম। পাশে বসালাম। সে খাচ্ছে আমি তা দেখছি। ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাওয়ালে যে একটা অন্যরকম তৃপ্তি পাওয়া যায় এটা আজ বুঝলাম। ভাবতে লাগলাম ঠিক এভাবে তো সে, ঐ মানুষগুলোর কাছেও চেয়েছিল। তাহলে ওরা দিলো না কেন? আচ্ছা না দিলে না দিবে তাই বলে এত বাজে ব্যবহার? কেন? ও কি মানুষ না? মনের প্রশ্ন মনেই রেখে দিলাম। ছুঁড়তে পারলাম না ওদের দিকে। শুধু ঘৃণার দৃষ্টিতে একবার তাকালাম।
.
জিজ্ঞেস করলাম কি নাম? তানভীর আলম। কোথায় থাকো? টঙ্গী। আর কে কে আছে তোমার ? দেখলাম সাথে সাথে ও কেমন বিমর্ষ হয়ে গেল। নিচু স্বরে বললো কেউ নেই। তারপর জিজ্ঞেস করলাম পায়ে কি হয়েছিল? কিভাবে হলো এমন?
.
তানভীর আমাকে যা বললো তার সারসংক্ষেপ হচ্ছে এই; তানভীর যখন ছোট তখন একদিন সে তার মা বাবার সাথে কোথাও ঘুরতে বেরিয়েছিল। তানভীর আপন মনে খেলতে খেলতে হঠাৎ তার মা বাবাকে হারিয়ে ফেলে। আর খুঁজে পায় না তাদের। তখন তাকে একটা লোক রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়ে একটা বস্তিতে আশ্রয় দেয়। সেখানে তার মত আরও অনেক বাচ্চা আছে। কিন্তু কেউই পুরোপুরি সুস্থ নয়। মানে কারো হাত নেই তো, কারো পা নেই। এইরকম। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে দেখে যে তার ডান পা নেই।
.
এমনটা করা হয় তাকে দিয়ে, তার মত বাচ্চাদের দিয়ে ভিক্ষা করানোর জন্য। ভিক্ষা করে দিন শেষে তানভীররা যা পায় তার পুরোটাই দিয়ে দিতে হয় ওদের। একটু বড় হবার পর সে ওখান থেকে পালিয়ে আসে। কিন্তু ভিক্ষাটা আর ছাড়তে পারেনি। এটাকেই পেশা বানিয়ে নিয়েছে। আর বরণ করে নিয়েছে সারাজীবনের পঙ্গুত্ব।
.
ঝিকঝিক শব্দ করে ট্রেন এসে স্টেশনে থামলো। যাত্রী উঠতে শুরু করলো কিন্তু আমি উঠছি না। তানভীরের চোখে টলমল করা পানিটা দেখছি। সে যে এক কঠিন নিষ্ঠুরতার স্বীকার সেটা ভাবছি।
.
ট্রেন হুইসেল বাজাচ্ছে। ছেড়ে দেবে এখুনি। কেন যেন বসা থেকে উঠতে পারছি না। কিন্তু আমাকে যে যেতেই হবে। ট্রেনে উঠে পড়লাম। আমাকে বিদায় জানানোর কেউ নেই। কিন্তু একজন আমাকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছে। তানভীর। চলে যাচ্ছি সাথে নিয়ে যাচ্ছি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর এক নিষ্ঠুর গল্প।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩

মুদ্‌দাকির বলেছেন: :( ভয়ানক

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০

কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ বলেছেন: ভয়ানক না ভাইজান এইটা নিষ্ঠুরতা ... :(

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০

আজমান আন্দালিব বলেছেন: নিষ্ঠুর মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার তানভীর। পৃথিবী নিষ্ঠুর নয়।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪

কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ বলেছেন: হুঁম আমাদের শুধু প্রয়োজন সুন্দর একটা দেশ এবং সুন্দর একটি সমাজ এই দুই মিলে সবকিছু পরিবর্তন করে দিতে পারে..।

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬

আবু শাকিল বলেছেন: তানভীর জীবন টা অন্য হতে পারত।
হায় রে মানুষ।এত নিষ্ঠুর ,নির্দয় মানুষ কিভাবে হয়।
আল্লাহ মাফ কর।আর কারও ভাগ্যে যেন এমন টা না হয়।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৭

কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ বলেছেন: হুম আল্লাহতালা যেন সবাইক'কে ক্ষমা করে.. শত তানভীর এই ভাবে পিছিয়ে যায় এই সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে..

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৮

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: এভাবেই বেশির ভাগ তানভীরের জন্ম হয়।

ভয়ানক অবস্থা।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৭

কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ বলেছেন: এই ভয়ানক অবস্থা আমরাই পারি পালটাতে ... শুধু মাত্র দরকার ভাল একটা সমাজা ..।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.