নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আঁধার দুনিয়ার ছবি! ..... ছন্নছাড়ার পেন্সিল......সবার অন্ধকার থাকে না, অথবা অন্ধকার প্রিয় নয়। তাই সবাই কবিতা পড়তে পারে না, কবিতা পড়ার জন্য চোখের ভিতর সমুদ্র এবং বুকের ভিতর আদিগন্ত ধূ ধূ প্রান্তর লাগে। ..... কবি নির্ঝর নৈঃশব্দ্য *************************http://www.rabindra-rachanabali.nltr.org/node/2
এইখানে আর ভোর হবে না বলে ঘোষণা ছিলো, অথচ এইখানেই ভোর হচ্ছে। ভোরের গায়ে লেপ্টে আছে ছোপ ছোপ অন্ধকার। যার চোখে মুখে হালকা আলোর ঝিলিক।
একটা কি বলাকা উড়ে গেলো!
অন্ধকারে ঠিক বোঝা যায় নি। যেন আলোর ছুরি, সাঁই করে কেটে দিয়ে গেলো অন্ধকারের বোবা মুখ। সে মুখে এবার হাসি ফুটে! ভোর হচ্ছে।
ভোর হচ্ছে শিশিরভেজা ঘাসে, নিস্তরঙ্গ জলের উপর, মাছরাঙাদের সংসারে! একটা দুটো পাখি ডাকে। দু'চারটে মানুষ জাগে। জেগে উঠে মুয়াজ্জিন!
আর অনাবাদি ঘুমের জমিন নিয়ে অনয়ন। অনয়নের শেষ কবে সারারাত ঘুম হয়েছে, তা ইতিহাস। এই তল্লাটের প্রতিটা ভোর ওর সাথে মোড়ের দোকানে এক কাপ চা খেয়েই তবে তল্লাট ছেড়েছে!
সে ঘুমায় পৃথিবী জাগার পরে, আর পৃথিবী ঘুমায় ওর ঘুমের ভেতর। ভেতরে ভেতরে রাত হয় আর ভোর বাড়ে। ভোরের লোভে অনয়ন পা বাড়ায় ধাপে ধাপে।
-আপনি কী রোজই রাত জাগেন?
-না।
-তবে রোজ দেখি এখানে হেঁটে যান!
- আমি হাঁটি। চলি।
অনয়নের পেছনে লেপ্টে থাকে বিস্মিত মেয়েটার চোখ! অথচ বিস্মিত হবার কিছু নেই।
অনয়ন কেন হাঁটে, মেয়েটা জানে না। অথচ অনয়ন হাঁটে না। সে রাত জাগে না, রাত ওর মধ্যে জেগে থাকে।
-আপনিও সকালবিহারি। রোজ দেখি।
-বেয়াড়া মেদ শাসন করি!
- হোক তবে।
-কী মনে হয় আপনার?
-জানি না। সীমারেখা বুঝি না এসবের।
মেয়েটা মেদবহুল নয়, অথচ মেদ শাসন করে। করতেই পারে। অনয়ন বিস্মিত হয় না। ভোর দেখেই ওর যত বিস্ময়। মেদে বিস্ময়ের কিছু নেই।
-আমি উপরে উঠে যেতে চাই।
-আপনি উপরে উঠে যেতে চান কেন?
-ভোর মানে অন্ধকারের ভেতর আলোর মুঠো মুঠো সন্তরণ। ক্রমাগত। আমি সেই সন্তরণ দেখতে চাই। যেমন পাখি দেখে।
-আমি পাখিদের কৌশল জানি না। তবে পাখি ভালো লাগে। পাখিদের মেদ নেই।
-পাখিদের ভেদ আছে। বিভেদ আছে।
-নিরর্থ! আপনি সময়কে ভাঙছেন কেন?
সময়কে কেন ভাঙছে অনয়ন! জানে না সে। সময় কী, সেটাওতো জানা নেই। সময়ের ভাঙন হয় কীভাবে!
কোনো উড়ন্ত বলাকা সময়কে কেটে ফেলে কি!
-আপনি কী খুঁজেন?
-বলাকা।
-অন্ধকারে!
-বলাকার উড্ডয়নচিত্র।
নাম জানা হয়নি। অথচ পূর্ণ মনোযোগের দাবি নিয়ে রয়েছে। আচ্ছা, ছেলেটা কি মনোযোগ দাবি করে?
না।
রোজ ভোর দেখে। কেন দেখে! বলাকার অন্ধকারে উড্ডয়নচিত্র কেমন দেখায়!
-আমি আপনার সাথে ভোর দেখবো! বলাকার অন্ধকারে উড্ডয়নচিত্র দেখবো!
-আমি তো সেসব আটকে রাখি নি।
-তবুও আপনার সাথেই দেখব। আমি জানি না কীভাবে দেখতে হয়। আপনি শেখাবেন।
-ভোর ও বলাকা।
-হ্যাঁ।
-হোক তবে। রাতে আসবেন। মধ্যরাতে।
-রাতে কেন! আমি ভোর দেখবো। রাত তো নয়!
-রাত কখন যে একটা বলাকার ডানার ঘাঁই খেয়ে হঠাৎ ভোর হয়ে যাবে, সে তো আমি আপনি জানি না। তাই রাতকেই ধরতে হবে।
-ঠিক আছে।
মধ্যরাতে মেয়েটা দাঁড়ায়। ছেলেটা নেই। আশ্চর্য! চলে আসার কথা!
কোথায় থাকে? কী নাম? কে চিনে তাকে? কিছুই তো জানা নেই!
আচ্ছা, সে কি রাতের হদিস দিয়ে গেছে? ভোরে নিশ্চয় আসবে!
মেয়েটা রাত দেখে। রাত প্রগাঢ় হয়। আরো হয়। আরো হয়। তারপর উড়ে উড়ে আসে বলাকা। দেখা যায়। দেখা যায় না। যেন একটা শাদা ছুরির ফলা। সাঁই করে কেটে দিয়ে যায় অন্ধকার!
তারপর সব চুপ। কোথাও কেউ নেই। কিছু নেই। ছেলেটাও নেই। আশ্চর্য! কেন আসছে না! তবে কি ছেলেটা না আসলে ভোর হবে না!
হঠাৎ ডেকে উঠে পাখি। একটা পাখি। দূরে একটা পাহারাদার। হাঁক দেয়। আর এক পশলা! আলো! ভেসে উঠে! আবার মিলিয়ে যায়! তারপর আবার! আবার!
মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে দেখে আলোর ছুরি! ভোর হচ্ছে!
অথচ ছেলেটা আসেনি। থাক, না আসুক। সে না আসলেও ভোর হয়!
-আপনি রোজ রাত জাগেন?
-না।
-রোজ দেখি এখানে হেঁটে যান!
-ভোর দেখি। আসি।
ছেলেটা অবাক হয়। তার চোখ লেপ্টে থাকে অপসৃয়মান মেয়েটার ছায়ায়। আশ্চর্য! মেয়েটা ভোর দেখে!
-কী করছো ওখানে!
-তোমার জন্য আলোর ছুরি বানাই। বলাকা উড়াই।
-আমি তোমাকে কতকাল খুঁজছি!
-ভুল। তুমি ভোর খুঁজছো। রোজ খুঁজছো। নিজস্ব ভোর খুঁজে পাওনি এখনো।
-তুমি পেয়েছো?
-হ্যাঁ।
-আমি কবে পাবো?
-দেরী আছে। প্রশ্ন ও বিস্ময়মুক্ত হতে হবে যে আগে।
-আমার যে এখনো প্রশ্ন জাগে। তোমার নাম কী?
-অনয়ন।
-অনয়ন, আমি তোমার আলোর ছুরি হব।
অনয়ন হাসে। অভয়ের হাসি। তারপর আলোতে মিলিয়ে যায়। ভোর হয়ে গেছে। আলোর ছুরি মিশে গেছে থোকা থোকা আলোয়।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৫
পাপতাড়ুয়া বলেছেন: ভাল লাগলো খুব তোমার মন্তব্যে।
অনয়ন!
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩
হাসান মাহবুব বলেছেন: ঘোর জাগানিয়া লেখা।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
পাপতাড়ুয়া বলেছেন: ধন্যবাদ হামা ভাই।
খরার পর এই লেখা আমার কাছে বৃষ্টির মত। কত মিলিমিটার হল, এটা বুঝতে পারছি না।
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫২
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: মুগ্ধপাঠ !
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
পাপতাড়ুয়া বলেছেন: কৃতজ্ঞতা!
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:০০
সমুদ্র কন্যা বলেছেন: বহুদিন পর বোধহয় তোমার এই ধরনের লেখা পড়লাম। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম!
অনয়ন কেমন নাম! বেশ কিন্তু...