নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দেখা বৃন্দাবন

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৮

(এক)

দিল্লী গিয়েছি সংগঠনের কাজে। সেই ২০০৫ সালের কথা। আমরা দলে ৯ জন। কাজ শেষে ফিরতি বিমানের এখনও দুদিন বাকী। দিল্লীতে দেখার অনেক কিছু আছে বলে ওভাবেই দুদিন হাতে রেখে বিমানের টিকিট করা হয়েছিলো। আমরা কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবো সেই ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছি, এমন সময় আমাদের এক দিল্লীর বন্ধু বল্লেন, আপনারা সময় যখন পেয়েছেন তখন বৃন্দাবন না গিয়ে অন্য চিন্তা করছেন কেন? বৃন্দাবন??? উনি বিস্ময় প্রকাশ করে বল্লেন বৃন্দাবনে বটবৃক্ষ থেকে রাধা-কৃষ্ণের হাত বেরিয়েছে শুনেন নি? বলেন কি? উনি হিন্দিতেই বল্লেন কথাগুলো। কমবেশি হিন্দি বুঝি বলে হিল্লি-দিল্লি করতে তেমন সমস্যা হয়না।

বলা ভাল, আমাদের ৯ জনের টীমে ৮ জনই মুসলমান। এই ধারণা ওনার থাকলে উনি আমাদের বৃন্দাবন দর্শনের জন্য পিড়াপীড়ি তো দুরের কথা এ সম্পর্কিত কথাও হয়তো তুলতেন না। যাই হোক আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে এবার আমরা বৃন্দাবন দর্শনই করবো। টীমের অনেকেই বললেন যে, হজ্বে না হয় পরে যাবো কিন্তু হিন্দুদের মহাতীর্থ দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না। আমিও যেমন ইচ্ছা পোষণ করি মক্কা-মদীনা ঘুরে দেখার।

যাই হোক পরের দিন সকাল সকাল রওনা হলাম বৃন্দাবন দর্শনে। কোথা থেকে কিভাবে কম খরচে, সহজে বৃন্দাবন যাতায়াত করা যায় ঐ বন্ধুটি তার সমস্তই বাতলে দিলেন। ট্যুরিষ্ট বাসটি দেখতে দেখতেই ভরে গেলো। ড্রাইভার পথে থামিয়ে ইঞ্জিন কাভারেও কয়েকজনকে তুলে নিলেন। একেবারে বাংলাদেশি চিত্র।

বৃন্দাবন যাওয়ার পথে মথুরা পড়বে। তাই মথুরায়ও বাসটি থামবে এক ঘন্টার জন্য। এক ঢিলে দুই পাখি। দেখতে যাচ্ছি বৃন্দবন, সঙ্গে কংসরাজার বাড়ী দেখবো ফাউ।

দুপুরের দিকে মথুরা পৌঁছালাম। বাস থেকে নেমেই দেখলাম বিশাল একটা গভীর চৌবাচ্চা। ঢাকায় বহুতল ভবনের বেজমেন্টের কাজ করার জন্য যেমন গভীর করে মাটি খোঁড়ে-চৌবাচ্চাটা দেখতে তেমনই। জিজ্ঞাসা করে জানলাম ওটা নাকি গর্দান দেয়ার জায়গা ছিল। কংস অত্যাচারি রাজা ছিল সেটা কৃষ্ণের নানান কাহিনীতে পাওয়া যায়। গর্দানের বিশাল জায়গাটা অত্যাচারের স্বাক্ষ্য বহন করে।এরপর বিশাল উঁচু লোহার গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। হ্যা, যথেষ্ট মানুষের সমাগম সেখানে।তবে দেখে মনে হলো টুরিষ্টের চেয়ে পূজা দিতে আসা মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। কংস রাজার বাড়ীতে খুব আশ্চর্য কিছু দেখলাম না- একটি সুদীর্ঘ সিঁড়ি ছাড়া। বিশাল খোলা সিঁড়ি একটার পর একটা, অনেক উঁচু। সম্ভবত ছয়-সাত তলা বিল্ডিংয়ের সমান হবে। তখনকার দিনে এত উঁচু করে সিঁড়ি বানানো যথেষ্ট কষ্টের কাজ ছিল বটে। অনেকের মতো আমিও সিঁড়ি বেয়ে ওঠা শুরু করলাম। হ্যা একটানে উঠতে পারিনি। পা ধরে যাচ্ছিলো। কয়েকশত সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে ওঠা- তারপরও কষ্ট করে উঠে গেলাম। একেবারে সিঁড়ির উপরে একটা মন্দির। নিচে থেকে বোঝাই যায় না যে উপরে মন্দির আছে। মন্দিরে প্রচুর লোক যাচ্ছে ভোগ দিতে। ভোগ কেনার ইচ্ছা ছিলোনা বলে ভোগ ছাড়াই উঁকি দিয়ে দেখলাম মন্দিরের ভিতরটা। হ্যা- সাধারণ একটা মন্দির। তবে সিঁড়িটা খুবই বিখ্যাত। রাজা কংস নাকি সিঁড়ি বেয়ে স্বর্গে যেতে চেয়েছিলেন, সে কারণেই নাকি তিনি হুকুম দিয়েছিলেন মাটি থেকে স্বর্গ পর্যন্ত সিঁড়ি তৈরী করার।সিঁড়ি সম্পর্র্কিত তথ্য লোক মূখেই শোনা।সিঁড়ির নিচেয় বেশ বড় খোলা জায়গা এবং তার চারপাশ দিয়ে নানান মূর্তী .. কৃষ্ণের বিভিন্ন লিলা উপাস্থাপন করা হয়েছে।কিছু লোক সেসব মূর্তীর দিকে ফিরে প্রণাম করছে, ভোগ দিচ্ছে।

বাসে উঠে বসলাম আবার।সবাই আসলে পরে বাস ছাড়লো।গন্তব্য বৃন্দাবন।কৃষ্ণলিলার সেই বৃন্দাবন।হিন্দদের মহাতীর্থ বৃন্দাবন।কত গল্প শুনেছি এই বৃন্দাবন সম্পর্কে।আজ দুচোখ ভরে দেখবো। মনের কোনে তখনও লুকিয়ে আছে সেই রাধা-কৃষ্ণের হাত কাহিনী।বিভিন্ন মিডিয়ায়ও নাকি এ সম্পর্কে রিপোর্ট হয়েছে।ধর্মপ্রাণ মানুষও নাকি ছুটছে লাইন দিয়ে। ঘটনাটা কি!! এই ঘোর কলিতেও বটগাছ ফুড়ে রাধা-কৃষ্ণের হাত!!

বাস ছাড়ার পর এবার একজন বক্তৃতা শুরু করলেন। প্রথমে ভাবছিলাম হকার হবে বোধহয়। পরে উনি নিজেই নিজের পরিচয় দিলেন। উনি পেশায় একজন গাইড।বৃন্দাবন যারা ঘুরতে আসেন তাদের সহায়তা করেন, পথ দেখান, তথ্য প্রদান করেন ইত্যাদি।বিভিন্ন ট্যুরিষ্ট কোম্পানীর পয়সায় ওনার সংসার চলে। শুরু করলেন বৃন্দাবনের বর্ণনা।হিন্দি তারপর ইংরেজি। হ্যা ভদ্রলোক ইংরেজিটা ভালই রপ্ত করেছেন।বৃন্দাবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম গাইড বাবাজির কাছ থেকে।

বৃন্দা অর্থ তুলসী, আর বন অর্থ জঙ্গল।অর্থাৎ বৃন্দাবন অর্থ তুলসী বন।বৃন্দাবনে পাঁচ হাজারের মতো মন্দির আছে।আছে অসংখ্য গো-শালা বা গরুর খামার।হাজার হাজার কৃষ্ণপাগল গোপী সমস্বরে এখনও গীতা পাঠ করে বৃন্দাবনে। সত্যিকারের তুলসী বনেরও নাকি এখনও অস্তিত্ব আছে সেখানে।আছে সোনা আর হিরা দিয়ে তৈরী রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তী যা জগৎবিখ্যাত। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন অলৌকিক বিষয়- বটবৃক্ষের মধ্য থেকে যুগল হস্ত।

মথুরা থেকে বৃন্দাবন এক ঘন্টার পথ মাত্র। কিন্তু পথ আর ফুরাচ্ছে না-গাইডের বক্তৃতাও ফুরাচ্ছে না।একের পর এক গল্প বলে যাচ্ছেন বৃন্দাবন সম্পর্কে, বরণনা করছেন কোন কোন বিখ্যাত লোক কখন কিভাবে বৃন্দাবনে আসেন.... ইত্যাদি।

একটা ধুলাময় খোলা জায়গায় এসে হঠাৎ করে বাসটা থামলো। গাইড উচ্চস্বরে বললেন-আগিয়া, আগিয়া।

(.....চলবে)

পাঠক লাল গোলদার

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.