নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুটেরাদের বিজয়! পরাজয় মুক্তিযোদ্ধাদের!

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৯

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বিজয় দিবস সব সময়ই ‘মহান’! যদিও বিজয়ের ৪২ বছর পরেও আবার একটা মুক্তিযুদ্ধের বড় বেশি প্রয়োজন! আবারও প্রয়োজন আরেকবার বিজয় অর্জনের।

৩০ লক্ষ মানুষ জীবন উতসর্গ করেছিলো, ২ লক্ষ মা-বোন হারিয়েছিলো সম্ভ্রম। কেন তাদের এই অতিমানবীয় উতসর্গ? কেন এই আত্মবলীদান?? কেন জীবন বাজী রেখে পাকহানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো লক্ষ লক্ষ কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষ???

কারণ তারা বুঝেছিলো, পাক হানাদারেরা শোষণ-বঞ্চনা-অপসাশনের মাধ্যমে সমস্ত সম্পদ পাকিস্তানে নিয়ে যাচ্ছে। বাঙালীরা গরীব থেকে ভিখারীতে পরিণত হচ্ছে। ক্ষুধা-দারিদ্রতা বেড়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। প্রতিবাদ করলে নেমে আসছে অমানবিক নির্যাতন। দেশের সাধারণ মানুষ সেই অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছিলো। আর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত বাঙালী জাতিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলো যে, যুদ্ধেই একমাত্র মুক্তি। পাকিস্তানীদের বিতাড়নই শোষণ-বঞ্চণা-নির্যাতন থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।

যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো সমগ্র বাঙালী জাতি। মোটা ভাত, মোটা কাপড়ের নিশ্চয়তার আশায় অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলো নিজের জীবন। দেশ শত্রুমুক্ত করতে, নিজের সন্তানের এবং পরবর্তী প্রজন্মের সমৃদ্ধ ভবিষত নিশ্চিত করতে বাংলার দুঃসাহসি দামালেরা সেদিন রুখে দিয়েছিলো পাকহানাদারদের।

কিন্তু কি পেয়েছিলো তারা?? এখনই বা কি পাচ্ছে?? আত্মদান, পঙ্গুত্ব, ভিটেমাটিসহ সর্বস্ব হারানো, ইজ্জত হারানো সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কি দিয়েছে এই ৪২ বছরের বাঙালী শাসন??

পাকিস্তানী আমলে শোষণের কষাঘাতে জর্জরিত বাঙালীরা দিন দিন গরীব হয়ে যাচ্ছিলো। তা এখনও তো সেই একই ধারা বহাল আছে। ভূমিহীনের সংখ্যা পাকিস্তানী আমলে যেভাবে বাড়তো এখন বাড়ছে তার চেয়েও দ্রুত গতিতে। বাড়ছে চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের সংখ্যাও। বেকারত্বের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ঋণগ্রস্ত, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা নির্যাতনও কম হচ্ছে না। দেশ ছেড়ে ইন্ডিয়া পালিয়ে বাঁচা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে দ্রুত হারে। বাড়ছে সাম্প্রদায়িকতা, বাড়ছে ধর্মগাধাদের সংখ্যাও। ধনী গরীবের ব্যবধান এখন আকাশ ছোঁয়া। কৃষক-শ্রমিক ঠকছে, পাকিস্তান আমলের চেয়েও নির্দয়ভাবে। কৃষিখাত এখনও লোকসানি খাত। কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীরা মজা মারছে সেখানে। শিল্পপতিরা রক্ত চুষছে শ্রমিকের। আমলারা আর রাজনীতিকরা মিলে গড়ে তুলেছে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। বারবার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান বানিয়েছে তারা বাংলাদেশকে। আর লুটপাট?? সে তো যে যেখান থেকে পারছে, কনুই ডাবিয়ে করছে। জনগণের স্বার্থকে, দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে পানির চেয়েও কম মূল্যে দেশের তেল-গ্যাস-কয়লাসহ খনিজ সম্পদ তুলে দেয়া হয়েছে বিদেশীদের হাতে। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বিদেশীদের কাছে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্থলভাগ, এমনকি সাগরের মধ্যের খনিজ সম্পদও।

পাকিস্তানী লুটেরাদের তবুও লজ্জা ছিলো, ছিলো আন্দোলনের ভয়ও। কিন্তু গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের যে সমস্ত লুটেরারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের সেই লজ্জা বা ভয়ও নেই। ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ লুটপাটকারী হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডায় পাড়ি জমিয়েছে। অপেক্ষাকৃত ছোট লুটপাটকারীরা মালয়েশিয়া, ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুরে নিজেদের নিরাপদ আবাস গড়েছে। এখনও অসংখ্য দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিক আর লুটেরা ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা বাংলাদেশকে অর্থলুটপাটের অভয়ারণ্য হিসাবেই দেখে থাকে। নিয়মিত তাদের লুটের ভাগ পাচার হয়ে য়ায় বিদেশে।

পাকিস্তানীরা সব কিছু লুটেপুটে নিয়ে যেতো। গত ৪২ বছরে পাকিস্তানী শাসকদের সেই লুটেপুটে খাওয়া কাজটিই তো আরো দক্ষতার সাথে, আরো নতুন নতুন কৌশলে করে চলেছে বাঙালী শাসকগোষ্ঠী। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার ছিলো কোটিপতি। বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠির শতকোটি টাকার মালিকের সংখ্যা ২২শত থেকে, ২২ হাজার হয়ে এখন লক্ষ ছাড়িয়েছে। কারা এই হাজার হাজার শতকোটিপতি মানুষ??

মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে যারা শত শত কোটি টাকার পাহাড় গড়েছে, ক্ষমতার চূড়ায় আরোহন করেছে বা এখনও যারা মুক্তিযুদ্ধকে বেচাকেনাতেই ব্যস্ত, এ বিজয় দিবস তো তাদেরই জন্য। বিজয়ের ভি চিহ্ন তো তারাই দেখাচ্ছে। আর যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্তক সহায়তা করেছে, সেই মুক্তিযোদ্ধারা, তাদের লক্ষ লক্ষ পরিবার পরিজন, তাদের জন্য বিজয় দিবস এখনও বছরের অন্য একটি দিনের মতোই আর্থিক অনটন ও দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত একটি দিন। আজন্ম বঞ্চিত সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ আবার মুক্তিযুদ্ধের দুঃসাহসিক দিনগুলোর স্মৃতিচারণে অশ্রু বিষর্জন দিয়েই পার করেন বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসের দিনগুলো।

তাহলে যারা মুক্তিযুদ্ধের ফেরিওয়ালা, মুক্তিযুদ্ধ যাদেরকে ক্ষমতার শীর্ষে বসিয়েছে, গরীব থেকে আমির বানিয়েছে, তারা কি মুক্তিযুদ্ধ করেন নি??? হ্যা, গত ৪২ বছরে এই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে এসেছে অজস্রবার, সহস্র আঙ্গিকে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক দাবীদার, মুক্তিযুদ্ধের নেতা দাবীদার, মুক্তিযুদ্ধের ফেরীওয়ালা আর মুক্তিযুদ্ধের হাজারো সুবিধাভোগিরা- তারা কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং কমবেশি কিছু ঝুঁকিও নিয়েছিলেন এটা সত্য। কিন্তু নিরেট সত্য হচ্ছে, যুদ্ধকালীন সময়ে নিজেদের এবং তাদের পরিবারকে নিরাপত্তা ঝুঁকির বাইরেই রেখেছিলেন সব সময়। তা না হলে, তাদের কেউ কেউ তো শহীদ হতেন, পঙ্গু হতেন, ধর্ষিত হতেন, স্বজন হারাতেন! বাস্তবতা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের ততকালীন পরিচালনা পরিষদ বা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের কেউই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন নি। ৩০ লক্ষ শহীদের মধ্যে একজনও বড় নেতার নাম নেই। কেউ পঙ্গুও হন নি। কোন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতার নামও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নেই। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন বহাল তবিয়তে। তবে তৃতীয় বা চতুর্থ সারির নেতাদের অনেকেই আছেন শহীদ এবং পঙ্গু তালিকায়।

কিন্তু বিজয় দিবসের পর যখন সরকার গঠিত হয়েছে তখন অক্ষত থাকা মুক্তিযুদ্ধের ফেরীওয়ালারাই ক্ষমতার ভাগ পেয়েছেন, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, পেয়েছেন টাকা কামানো বা লুটপাটের অবাধ সুযোগ। এখনও সেই ধারাই অব্যাহত আছে। যদিও কোটাপ্রথা চালু করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কিছু সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটাও কেরাণীগিরি পর্যন্ত, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সেই চিরচেনা সুবিধাভোগীরাই।

মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে যদি দেশের জনগণ জানতে-বুঝতে পারতেন যে, যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা মানে পাকি শাসক খেদিয়ে বাঙালী শাসক বসানো। যদি জানতেন যে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন মানে পাকি লুটেরাদের বিতাড়িত করে দেশীয় লুটেরাদের জায়গা করে দেয়া। যদি অনুভব করতে পারতেন যে, স্বাধীনতা মানে শুধুই একটি মানচিত্র, আর একটি লালসবুজ পতাকা- তাহলে হয়তো দেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষ যুদ্ধটা করতেন না।

যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেশর মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো, সেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ৩০ লক্ষ শহীদ আর লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের ধোকা দিয়ে কুক্ষিগত করেছে এদেশেরই গুটিকয়েক লুটেরা আর তাদের সহযোগী।

তাই স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও এই বিজয় দিবস শাসকযোগষ্ঠীর গুটিকয়েক মানুষের জন্যই সত্যিকারের বিজয় আর কোটি কোটি মানুষের জন্য পরাজয় দিবস, বিশেষ করে অর্থনৈতিক পরাজয় দিবস। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রম হারানো মুক্তিযোদ্ধা, স্বজন হারানো মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের জন্য বিজয় দিবস মুক্তির স্বাদ দিতে পারি নি এখনও। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বড় বেশি প্রয়োজন আরো একটি মুক্তিযুদ্ধ। যে যুদ্ধের উদ্দেশ্য হবে পাকিস্তানী শোষকদের মতো লুটেরা বাঙালী শোষকদের খেদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সত্যিকার বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি প্রতিষ্ঠা করা। হবে হবেই জয়, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের। জয় বাংলা।



পাঠক লাল গোলদার

১৬ ডিসেম্বর ২০১৩

[email protected]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৮

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: জীবিত ৫০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার গড় বয়স ৭০ বছরের কাছাকাছি; উনাদের কিছু করার নেই, আর হারাবার কিছু নেই; আপনাদের বেকুব জেনারেশন মারামারি করে কুকুরের জীবন যাপন করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.