নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্যান্টা আসে ঘরে ঘরে

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৭

স্যান্টা এসেছে আমাদের বাসায়ও। স্যান্টা আসে ফায়ার প্লেসের চিমনি দিয়ে। বেশি ঠান্ডা পড়লে ঘরের মধ্যে আগুণ জ্বালিয়ে রাখতে যে বিশেষ জায়গা রাখা হয় সেটাকেই ফায়ার প্লেস বলে। অষ্ট্রেলিয়াসহ উন্নতবিশ্বের প্রতিটা ঘরেই থাকে ফায়ারপ্লেসের ব্যবস্থা। এখন আবার কাঠ জ্বালানোর ফায়ারপ্লেস উঠে যাচ্ছে। সেই জায়গা দখল করছে গ্যাস ও ইলেকট্রিক হিটার। তারপরও ফায়ারপ্লেস দিয়ে ধোয়া বেরুনো চিমনি ঠিকই আছে ঘরে ঘরে। এই চিমনি দিয়েই ক্রিসমাসের আগের রাত্রে ঘরে ঘরে নেমে আসে স্যান্টাক্লস। সামর্থ অনুযায়ী দিয়ে যায় নানান ধরণের উপহার।

স্যান্টা আসে মূলত বাচ্চাদের সারা বছরের ভাল কাজের জন্য উপহার দিতে। ক্রিসমাসের আগের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ই বাচ্চারা খুব ভোরে উঠার শপথ নেয়। ঘুম থেকে উঠেই ছুটে আসে ফায়ারপ্লেসের চিমনির দিকে। বাড়ীতে একাধিক বাচ্ছা থাকলে উপহার নিয়ে যাতে কাড়াকাড়ি বা মারামারি না লাগে তার জন্য স্যান্টা প্যাকেটের গায়ে নামও লিখে রাখে। আর বাচ্চা যখন বুঝতে শেখে, স্যান্টা আসলে আসে না। তাদের মা-বাবাই স্যান্টার নাম করে তাদের ঘুমানোর পরে ফায়ারপ্লেসে উপহার রেখে দেয়- তখনই বেঁধে যায় যত গন্ডগোল। কারণ তখন থেকে ক্রিসমাস ইভে স্যান্টা আর আসে না চিমনি বেয়ে। তাই ছেলেমেয়েরা বুঝতে শিখলেও মা-বাবাকে স্যান্টা আসার বিষয়ে কোন অভিযোগ করে না। বরং আগেভাগেই বলে রাখে, কোন জিনিসটা তার প্রিয় আর সে চায় স্যান্টা তাকে সেটা উপহার হিসাবে দিক। বাবা-মায়ের সামর্থ ও ইচ্ছা থাকলে স্যান্টা ঠিকই সময়মতো ওই উপহার রেখে যায় ফায়ারপ্লেসের নির্দিষ্ট জায়গায়।

অষ্ট্রেলিয়াতে ধর্মপালনকারী মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট কম। আবার ধর্মের প্রতি মানুষের আস্থাও কমে যাচ্ছে বেশ দ্রুতহারে। ২০১১ সালের এক সরকারী হিসাব মতে ২২.৩% মানুষ নিজেরাই ঘোষণা করেছেন যে তারা নাস্তিক। আরো ৮.৫৫% মানুষ নিজেদের ধর্মের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেন নি। এছাড়া আছে মানবতবাদী সহ অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও। সবমিলিয়ে এখানে ধর্মের বেশ দুর্দিন চলছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, বড়দিন বা ইস্টার পালনে আস্তিক, নাস্তিক, মানবতাবাদী কেউই কম যান না। সারা বছর ধর্মীয় কাজ করার জন্য যারা সময় পান না, তাদের অনেকেও ক্রিসমাসের বিশেষ প্রার্থণায় যোগ দিতে গির্জায় যান। সারা বছর বিশালাকৃতির গির্জাগুলো ফাঁকা পড়ে থাকলেও তাই বড়দিন বা ইস্টারে বেশ লোকসমাগম দেখা যায়।

আর একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এখানে শিশু-কিশোরদের কোন ধর্ম হয় না। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত কারো উপর ধর্মের বোঝা চাঁপানো অষ্ট্রেলিয়াতে বেআইনী। বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজন কোন ধর্মের এটা এখানে তেমন কোন বিষয়ই না। ছেলে বা মেয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয় তারা কোনো ধর্ম পালন করবে কি না? যদি করে তাহলে কোন ধর্ম? ধর্ম পালন বা না পালন করার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক কোন বাধ্যবাধকতা নেই এখানে। তাই বেশিরভাগ মানুষ ধর্মের কোন ধার ধারে না। সারাক্ষণ নিজের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকে।

আমি নিজে সংস্কৃতিগতভাবে হিন্দু, আর আমার বউ মনবতাবাদী। মুখে মুখে মানবতাবাদী নয়? সরকারী খাতায়ই ধর্মের স্থানে মানবতাবাদ লেখা আছে। কিন্তু তারপরেও ক্রিসমাসের আগের রাত্রে স্যান্টাক্লস আসে আমাদের বাসায়, আমার দুই বছর বয়সের ছেলেকে উপহার দিতে। চকলেট, ললি, আকর্ষণীয় খেলনার সমাহার ফায়ারপ্লেসে।

আমাদের এক বান্ধবীর তিন মেয়ে। পাঁচ বছর বয়সের মেজো মেয়েটা যেমন দুষ্টু, তেমনি মারামারি-ঝগড়ায় পটু। বড়টাকেও মারে, ছোটটাকেও মারে। আবার মা-বাবার কথা-উপদেশ ইত্যাদিও শুনতে চায় না। গত ক্রিসমাস ইভের রাতে ওই বান্ধবীর বাড়ীতেও যথানিয়মে স্যান্টা আসে। ফায়ারপ্লেসে রেখে যায় তিনটা প্যাকেট। বড় ও ছোটটার প্যাকেটে নানান ধরণের চকলেট, ললি ও অন্যান্য উপহার। কিন্তু মেজোটার প্যাকেটে এক কেজি আলু এবং সাথে মাত্র একটি চকলেট বার। মেজো মেয়েটার সে কি কান্না! মা অনেক করে বোঝালেন, ‘স্যান্টা সবই জানে, বোঝে! তুমি তো সব সময়ই দুষ্টামি করো! আবার আমার কথাও শোনো না! তাই স্যান্টা তোমাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য খারাপ উপহার আলু নিয়ে এসেছে’! তুমি যদি মা-বাবার কথা শোনো, দুষ্টামি-মারামারি না করো, নিশ্চয়ই স্যান্টা সেগুলো দেখবে এবং পরের ক্রিসমাসে তোমাকে অনেক অনেক উপহার দিবে। এবার ওই বান্ধবীর মেজো মেয়েটি অন্য দুই বোনের চেয়েও ভালো উপহার পেয়েছে।ক্রিসমাসে ভাল উপহার পাওয়ার জন্যই সে তার স্বভাব পরিবর্তন করে ফেলেছে। মা-বাবাও সব সময় সাহায্য করেছে তার স্বভাব পরিবর্তন করতে। স্যান্টাক্লসের উপহার তাই বাচ্চাদের জন্য অনেক আশা-নিরাশার বিষয়।

আমি ব্যবসায়িক স্যান্টাক্লসের কথা বলছি না। গির্জায় বা বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে স্যান্টাক্লস সেজে বাচ্চাদের মধ্যে যে উপহার বিলানো হয়, সেটার সাথে ধর্ম এবং ব্যবসার অনেক মাখামাখি থাকতে পারে। কিন্তু ক্রিসমাসের আগের দিন রাতে প্রতি ঘরে ঘরে যে স্যান্টা আসে- তা শিশুদের জন্য যথেষ্ট উতসাহ ব্যঞ্জক, যথেষ্ট আনন্দের! শিশুদের ভাল কাজের এবং ভাল মনের মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে এবং ক্রিসমাসের দিনটাকে আনন্দঘন করতে স্যান্টার ভূমিকা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.