নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাল যেকোন বিষয় পড়তে ভাল লাগে, লেখার চেয়ে।

সাইফুর রহমান পায়েল

খুবই শান্ত মনের ও ঠান্ডা মেজাজের একটা চমৎকার মানুষ।

সাইফুর রহমান পায়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

দৃষ্টি বিভ্রম ও একটি চশমা। অর্থ মন্ত্রীকে উৎসর্গ করা হল।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬



অনেকক্ষণ থেকেই সংসদ ভবনের বাইরে অপেক্ষা করছি। কখন যে সে আসবে কে জানে।

সেই সকাল ৯ টা থেকে দাঁড়ানো। উফফ আজ যা ঠাণ্ডা, শীত কোন মতেই যাচ্ছেনা। কুয়াশা যেন কেমন গুমোট ভাব করে রেখেছে। দেখে যেন ঠাণ্ডা আরও বেশী লাগছে। গায়ে সোয়েটার, মাফলার, কনভারস পরেও শীত আটকানো যাচ্ছেনা।

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে এসেছি, তার কাছে জিনিসটা দেয়া জরুরী। সকালেই বাস কনট্রাক্টরের সাথে গেঞ্জাম। শুক্রাবাদ থেকে সেফটি (৩৬ নং) বাসে উঠে ২ টাকা ভারা দিলাম। সে বলল ৫ টাকা ভারা। আমি বললাম শুক্রাবাদ থেকে উঠেছি। সে বলল কোথায় যাবেন, আমি বললাম সংসদ ভবনের সামনে। সে বলল ২০ টাকা ভারা। কেন জানতে চাইলে বলল চেকার আছে, ওটা পার হলেই ২০ টাকা ভারা। আমি জিজ্ঞেস করলাম চেকার কোথায়? সে বলল আসাদগেট এর পরে। আমি বললাম আচ্ছা তোমার চেকার এর আগেই নামবো। আর কিছু বলল না। এই বাসটা আমার খুব ভাল লাগে, ৩৬ নং বাস। মিরপুর ১২ থেকে আজিমপুর যায়। আজিমপুর থেকে কলাবাগান পর্যন্ত ভারা ২ টাকা দিলেই হয়। ভারা কম অনেক। বাচ্চা বুড়ো, ছাত্র শিক্ষক সবাই এই ভারা উপভোগ করে।



আমি আধা ঘণ্টা ধরে দাড়িয়ে আছি। সে আসেনি।

গতকাল খবরটা শোনার পরেই ভেবেছি কেন এমন সিদ্ধান্ত সে নিল?

কোন কারনে রেগে থাকবেন হয়তো। নাহ সামান্য রাগ করলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা না।

সংসদ ভবনের সামনের একজন পুলিশ আমাকে সন্দেহের চোখে দেখছে। দেখুক, আমি কোন অন্যায় তো করছিনা। হাতে একটা র‍্যাপিং করা প্যাকেট আর একটা চিঠি থাকা অন্যায়ের মধ্যে পরে না মনে হয়।

মনে হয় বললাম কারন ইদানিং অন্যায় আর সঠিকের মাঝে ঠিক পার্থক্য খুজে পাইনা।

অন্তত বাংলাদেশের পুলিশের কাজে তাই মনে হয়। একুশে টেলিভিশন একটা অনুষ্ঠান দেখাল যা পর্ণ ভিডিও, ঠিক তেমন টাইপের অনুষ্ঠান যখন অন্য টিভি তে দেখানো হয় সেটা সচেতনতা।

আমি একটু সরে দাঁড়ালাম, পুলিশ বলে কথা, ধরে কোন কারন ছারাই জামাত-শিবির বলে নিয়ে যেতে পারে।

এখন আমাকে পুলিশ দেখতে পাচ্ছে না। কিছুটা স্বস্তি পেলাম। যাক আমার দিকে এখন আর কেউ সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে না।

শীতে গা জমে যাচ্ছে। সহ্য হচ্ছে না। পাশে একটা বাদাম ওয়ালাকে দেখলাম যাচ্ছে। ডাক দিলাম।

-বাদাম আছে?

-হয় আছে, কটটুক দিমু?

-৫০ গ্রামে কতটুকু পাব দেখি?

সে মেপে আমাকে দেখাল।

আমি ১০০ গ্রাম কিনলাম, কখন আসবে কে জানে। বেশি করে কিনে সময় কাটাই।

তার কাছে ভাংতি ছিলনা।

সে বলল মামা ভাংতি দেন। আমি মানি ব্যাগ বের করে খুজতে লাগলাম। ২ টাকা ১ টাকা ৫ টাকা ১০ টাকা করে সব মিলিয়ে হল।

পানি খেতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু এই সকালে এখানে পানি কই পাই? ইসস ফিল্টার পানির দোকান গুলো থাকলে ভাল হত। ১ টাকা এক গ্লাস।

১১ টা বাজে। সে আসেনি।

আপনি কি কার জন্য অপেক্ষা করছেন?

প্রশ্ন শুনে ঘুরে তাকালাম। দেখি সেই পুলিশটা।

আমি বললাম জি।

-কোথায় আছে সে? আমি বললাম জানিনা, তবে এখানে মাঝে মাঝে আসেন, তাই দাড়িয়ে আছি।

-ফোন করেন।

-তার ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই।

-আপনি যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তার ফোন নাম্বার আপনার কাছে নেই?

-না নেই।

-আপনার আচরন সন্দেহজনক। কার সাথে দেখা করবেন? হাতে কি দেখি?

আমার থেকে র‍্যাপিং করা জিনিসটা নিয়েই খুলতে লাগলো। খুলে দেখে একটা ভারী পাওয়ার এর চশমা। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন এটা কার জন্য।

-আমাদের অর্থ মন্ত্রীর জন্য।

-মানে?

- মানে আমাদের অর্থ মন্ত্রীর চোখে সম্ভবত সমস্যা হয়েছে। আমি তাই তার জন্য এই চশমা কিনে এনেছি। আমাদের মন্ত্রী চোখে কম দেখবেন, তাহলে দেশ চলবে কিভাবে?

-মন্ত্রী চোখে কম দেখেনতা কে বলল?

-গতকাল তিনি যখন বলেছিলেন ১ টাকা আর ২ টাকার নোট তুলে নিবেন, তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন বাজারে কি তাহলে ১ টাকার চকলেট পাওয়া যাবে না? তিনি বললেন ১ টাকায় চকলেট পাওয়া যায় নাকি? যে অর্থ মন্ত্রী, তিনি কিনা জানেনই না দেশের কোন পণ্যের কত দাম, তা কি হয়? তাই আমি নিশ্চিত তার চোখে সমস্যা বলেই তিনি, আলপিন, মিঃ ম্যাঙ্গো, সেন্টার ফ্রুট, এয়ার একশন এসব ছোট চকলেট গুলো দেখেন না। তাই আমি তাকে এটা দিতে এসেছি।

-মন্ত্রী অন্ধ না? আয় শালা তোরে ঢুকাইয়া দিতাছি। জামাত-শিবির করস তাইনা? জেএমবি তে ছিলি?

রাজাকারের বংশধর।

আমার কলার ধরে টেনে নিয়ে আসলেন তেজগাঁও থানাতে।

কোন কথা শুনলেন না।

না শুনলেন না নয়, আসলে শুনতে চাইলেন না।

ভেতরে ঢুকিয়ে দিলেন। চলল উত্তম মাধ্যম।

পরিশেষঃ আব্বু এসে ৫০০০ টাকা দিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে এনেছেন। আমার কেনা চশমাটা তাদের(পুলিশের) করা আঘাতে ভেঙ্গে গেছে, চিঠিটাও ছেঁড়া। অনেক নাম দিয়ে চশমাটা কিনেছিলাম, ভারী পাওয়ার তো।

টাকা নেই। যা ছিল তা দিয়েই বানিয়েছিলাম। এবার ধার করতে হবে হয়তো।

বাসায় আসার আগে ডাক্তার দেখিয়ে এলাম। গায়ে আঘাতের দাগ দেখে ডাক্তার জানতে চাইলেন, তাকে পুরো ঘটনা বলতে হল।

ডাক্তার হেসে ফেললেন।

বাসায় ফিরে বুঝতে পারলাম, দেশের জন্য আমার মত অনেকেই আছেন, যারা আমার চেয়ে বেশি দেশকে ভালবাসেন।

কারন কেউ একজন হয়তো মন্ত্রী সাহেবকে ঠিকঠাক পাওয়ারের চশমা দিয়েছেন। তাইতো টিভি তে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে, মন্ত্রী তার কথা প্রত্যাহার করেছেন। বাজারে ১ ও ২ টাকার নোট থাকবে।

যেই মন্ত্রী সাহেবকে চশমাটা দেন না কেন, আপনাকে ধন্যবাদ।

এবার মনে হয় বাজারে সব রকমের চকলেটই পাওয়া যাবে।

আম্মু আব্বু বকাবকি করছেন, কেন আমি বোকার মত কাজ করি।

পকেট থেকে ২ টাকা দামের সেন্টার ফ্রুট বের করে চিবুতে লাগলাম। তাদের কথায় কান দিলাম না।

মাটির ব্যাংক টাতে কিছু কয়েন আছে, ১,২ ও ৫ টাকার কয়েন। আবার কারও চশমা লাগলে ওটাকে ভাংতে হবে।

লেপটা টেনে গায়ের উপর তুলে কানসহ ঢেকে নিলাম। আম্মুর বকাবকি যেন দূর থেকে ভেসে আসা মৃদু শব্দের মত লাগছে।

ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম আমি।



আমার লেখাটি "শুধুই আমাদের গল্প পেজেও আজ বিকেলে প্রকাশিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.