নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাল যেকোন বিষয় পড়তে ভাল লাগে, লেখার চেয়ে।

সাইফুর রহমান পায়েল

খুবই শান্ত মনের ও ঠান্ডা মেজাজের একটা চমৎকার মানুষ।

সাইফুর রহমান পায়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"স্মৃতির ডায়েরী"

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩



১২/১০/২০০২ সকাল ১১টা
--এই পাগলী দাড়া বলছি।
--তুই আর আমার সাথে কথা বলবি না।
--কি করলাম সেটা তো বলবি?
--না বলব না। তুই যা কফি খেয়ে আয়।
--তোকে নিয়ে যাব তো।
--তুই ওই মাইয়া রে নিয়া একা যা। আমি যাইতাম না। ভাগ যা।
বলেই চলে যায় বন্যা। আমি চেষ্টা করেছিলাম তাকে রাখার জন্য। পাগলী মেয়েটা কিছুই মানতে চায়না। আমাকে সে ভালবাসে তার আচরনে বোঝা গেলেও সে মুখে বলবে আরে ধুর, তুই আমার ভাল বন্ধু।
পাগলীটা একটু লাজুক লাজুক।
আমি ফিরে আসলাম সাদিয়ার কাছে।
সাদিয়াঃ অমিত বন্যা কি তোকে লাভ করে?
---জানিনা তো কিছু বলেনি। আমরা সুধু ভাল বন্ধু।
--আমার মনে হয় করে, বলুক আর না বলুক। তোর কি মনে হয় তুই করস?
---আমরা শুধু ভাল বন্ধু। বাদ দে তো কফি খাবি না চল।
--আজ না, তুই বন্যার কাছে যা। বন্যা মনে হয় মাইন্ড করেছে।
আমি আর কথা বাড়াই না।
সাদিয়াকে চলে যাওয়ার সময় দেই। এর পরে ঘুরেই বন্যার দিকে ছুটি। কিন্তু ওকে পাইনা। রাগ করেছে আমার উপর।
১৮/১০/২০০২
বন্যার ফোনে ঘুম ভাঙে আমার। দেখা করবে। সাইন্স ল্যাবের ওখানে ৩০ মিনিটের মধ্যে যেতে হবে। আমি জানিও ১০ মিনিটের মধ্যেই আসবে। আমাকে ৩০ মিনিট বললেও।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গিয়েও দেখি বন্যা দাঁড়ান।
সাথে সাথে ধমক।
মানুষ এত লেট কিভাবে করে।
আমি হাসি। বলল রিকশাতে ওঠ।
--কোথায় যাব।
-জাহান্নামে।
--তুই তো ওই একটা পথই চিনিস। জান্নাতের পথ থাকলে সেটা বল।
--ওঠ তো,
ধানমন্ডি লেকে অনেকক্ষণ সময় কাটে আমাদের।
২৫/১১/২০০২
তোকে আমার থাপ্পর মারতে ইচ্ছে করছে বন্যা। মানুষ এভাবে হারায়??
লাস্ট এক মাসের বেশি সময় তোর কোন খবর নাই। মোবাইল বন্ধ। কোথাও তুই নাই।
কোথায় ছিলি?
কাজ ছিল। ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম। বিন্দাস একটা ভ্রমন করে আসলাম। ছবি দিবনে। দেখিস।
বন্যা হাসছে। ওর হাসিটা মায়াময়। আমি এটাকে উপেক্ষা করতে পারি না।
হেসে বলল কি মারবি নাকি। গাল পেতে দিল।
নাহ আমি ওকে মারতে পারব না। হেসে ফেলি।
এই সময় সাদিয়া ফোন করে। আমি বললাম বন্যা ফিরে এসেছে।
বন্যা বলে তুই সাদিয়াকে এখনও ছারস নাই। রিলেসন নাকি?
আমি বললাম আরে ধুর মেয়ে। কি বলিস।
৩১/১২/২০০২
সাদিয়া আগেই বলেছিল বছরের শেষ দিন বিকেলে ঘুরবে। আমি বন্যাকে জানাই। সে আসতে পারবে না বলে দেয়। কাজ আছে।
সাদিয়া ৯ টা পর্যন্ত আমার সাথে ছিল। বাসায় ফিরে বন্যাকে ফোনে পেলাম না। পাগলী টা না রাগ করে আছে কে জানে।
০১/০১/২০০৩
বন্যাকে দেখা করতে বললাম। পারবে না। কেন?
--অমিত তোর যেমন সাদিয়া আছে তেমন আমারও বয়ফ্রেন্ড আছে। ওকে আজ সময় দিতে হবে।
--তোর বয়ফ্রেন্ড কই কোন দিন জানাস নি তো।
--এখন তো জানলি। ও ইন্ডিয়া থাকে। এর আগে ওর ওখানেই গিয়েছিলাম।
খুব তারাতারি আমি আবারো যাব।
অমিত নিসচুপ।
০৩/০১/২০০৩
সাদিয়া দেখা করবে। বন্যা সহ আসতে বলেছে। ঘুরবে।
বন্যাকে ফোন করি আসবে না। তার বয়ফ্রেন্ড এর মানা আছে।
আমিও ব্যাস্ত বলে দেখা করিনা।
১৭/০১/২০০৩
আজ বন্যা ইন্ডিয়া যাবে বলে জানায়। মাস খানেক এর মত থাকবে। এ বছরের মাঝেই ওদের বিয়ে হবে।
আমি কষ্ট পেলেও কিছু বলিনা ।
আসলেই সে ইন্ডিয়া যায়। পুরো পরিবার নিয়ে। আমি বুঝলাম বন্যাকে আমি আর পাব না।
ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখলাম। যোগাযোগ রাখলেই আমার কষ্ট বাড়বে। থাক ওকে ওর মত থাকতে দেই।
২৯/০৬/২০০৩
বন্যাকে আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু তার নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে ফোন আসে।
আমিঃ হ্যালো
--বাবা তুমি কি অমিত?
--জি আমি অমিত, কে আন্টি?
--হ্যা বাবা, বন্যা হাসপাতালে। বারবার তোমার কথা বলছে। এক্তু আসবে?
--কি হয়েছে আন্টি কোন হাসপাতালে?
--আস, সব বলব। স্কয়ার হাসপাতালে আস।
আমি ছুটে যাই।
বন্যা আইসিইউ তে। তার ২টা কিডনিই প্রায় নষ্ট। রক্ত লাগবে, সাথে অপারেশন করাতে হবে।
কিডনি এর ব্যবস্থা হচ্ছে না।
আমি বললাম ওর হবু বর কোথায়?
আন্টিঃ হবু বর কে?
--ইন্ডিয়া থাকে যে।
--মানে??
--কয়েক মাস আগে আপনারা ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন কেন?
--বন্যা এর চিকিৎসার জন্য।
--তারও আগে?
--চিকিৎসার জন্য।
আমি বুঝতে পারলাম ও বাচবেনা জেনে আমার থেকে সরে দারিয়েছে।
আসলে সব ভুয়া। আমি কেদে ফেলি আরালে।
অনেক খুজেও কিডনি পাওয়া যাচ্ছে না।
তখন আমি আমার রক্তের গ্রুপ টেস্ট করতে বলি। আমি দিতে পারব কিনা সেটার জন্য।
রিপোর্ট ভাল। আমি চাইলেই দিতে পারব।
কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যাই।
৩০/০৬/২০০৩
অপারেশন সফল হয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সন্ধ্যা ৭ টায় বন্যা মারা যায়।
আমি সেদিন কতক্ষন কেদেছি মনে নেই। সুধু জানি এর চেয়ে বেশি আমি জিবনেও কাদিনি।
১৮/১১/২০১৬
রাত ২ টা
দরজা নক করছে কেউ।
--ভেতরে আসুন।
আমার বাসার কাজের লোকটা আসলো।
--স্যার, আপনি এখনও ওই ডায়েরি পরছেন। এটা পরেন আর কাঁদেন। ওটা রাখেন তো স্যার।
আমিঃ আমার যে এখন সুধু এই ডায়েরী টাই আছে রে।
--স্যার চোখ মুছেন, নেন টিস্যু নেন।
চোখ মুছে। তোমার মেম সাহেবের রুমটা গুছিয়েছ?
--জি স্যার, ছবিটাও পরিস্কার করে রেখেছি। আপনি যান।
উঠে ড্রাইভার কে গারি বের করতে বললাম।
আমি ফিরে আসলাম। বন্যা এর ছবিটা চকচক করছে। আমি হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম। ছবি না মনে হল বন্যাকে ছুয়ে দিলাম।
চোখে চোখ রেখে দারিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ।
ড্রাইভার জানাল গারি রেডি।
চোখ মুছে বেরিয়ে আসলাম।
--স্যার কোথায় যাবেন? আজিমপুর?
--হ্যা, শুক্রবারে আমার একটাই কাজ আজিমপুর কবরস্থান যাওয়া।
--আচ্ছা স্যার।
কবরস্থানে টা বেশ সুনশান। নিরব। আমি হেটে চলে আসলাম বন্যা এর কবরের পাশে।
দোয়া করলাম। প্রতি সপ্তাহের মত এবারেও আমি চিৎকার করে কাদলাম। আমার এই কান্নার শব্দ নগরবাসী পাবেনা।
প্রতিবারের মত এবারো আমার পাশে অনেক গুল কুকুর দেখলাম। জানিনা কেন তাদের চোখ বেয়ে অশ্রুর ফোটা গড়িয়ে পরেছে।
আমার কান্না কবরস্তানের নিরবতা ভেঙ্গে ছুটে চলেছে দূরে।
আমার এই চিৎকার করে কান্নাতে বন্যা কোনদিন উঠবে না জানি, কিন্তু শুনতে পেলে সে বুঝবে তাকে কতটা ভালবাসি, এখনও, আজীবন বাসব।
আমার কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে।
আফসোস একটাই বন্যাকে এখনও বলা হয়নি ভালবাসি তোমাকে।
অনেক অনেক বেশি এখনও।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.