নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাল যেকোন বিষয় পড়তে ভাল লাগে, লেখার চেয়ে।

সাইফুর রহমান পায়েল

খুবই শান্ত মনের ও ঠান্ডা মেজাজের একটা চমৎকার মানুষ।

সাইফুর রহমান পায়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আমার পরিবার"

১১ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৩৭

আব্বু, আম্মু, ভাইয়া, আমি আর আমার পিচ্ছি বোন। ছোট বেলা থেকে এটাই ছিল আমার পরিবার। ভাইয়া এখন সোনিয়া ভাবিকে বিয়ে করেছে এবং তাদের ঘর জুরে এসেছে সিনহা মনি। ছোট বোনটারও বিয়ে হয়ে গেছে।
আব্বু সরকারী চাকুরী করতেন। বর্তমানে অবসরে আছেন। আম্মু গৃহিণী।
ছোট বেলা থেকেই আমাদের বাসার একটা অলিখিত নিয়ম ছিল। আর সেটা হল রাতের বেলা একসাথে খেতে হবে।
প্রায় প্রতিদিনই এই ৫ জনের একসাথে খাওয়া হত। শুধু খাওয়া না, সাথে কথাও চলত। আব্বুকে আমরা ভয় পেতাম, কিন্তু আম্মু ছিল বন্ধুর মতন।
ব্যাডমিন্টনের খেলার টাকা, ক্রিকেট ব্যাট বা বল অথবা ফুটবল যাই লাগুক না কেন প্রথমে সেটা যাবে আম্মুর কানে। আম্মু এটা আব্বুকে জানাবে।
আমাদের পরিবারের বন্ধনটা অনেক ভাল। ভয়, ভালবাসা, শাসন বা স্নেহ কি নেই।
আব্বু সন্ধ্যের পরে বাইরে থাকা পছন্দ করেন না। এমনকি রাতে অন্য বাসায়ও আমাদের ঘুমাতে যাওয়া পছন্দ করতেন না। দিতেনও না যেতে।
এখনও মনে আছে আমি যখন আন্তঃজেলা ফুটবল (উচ্চতা ৪ফুট ১০ ইঞ্চি) এর দলে চান্স পেলাম ভাইয়া, টুম্পা আম্মু খুশি হয়েছিল। আব্বু ছিল ভাবান্তর।
আব্বু খেলা পছন্দ করেনা। ভাবলাম তাই হয়তো।
কিন্তু প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়ার পরে ২য় ম্যাচে জার্সি পরে মাঠে নামার পরে যখন জানতে পারলাম আব্বু নিজে অফিসের থেকে তারাতারি বের হয়ে টিকেট কেটে খেলা দেখতে এসেছে, তখন আসলেই অনেক ভাল লেগেছিল।
ওই ম্যাচটা আমরা হেরেছিলাম। কিন্তু আব্বু তারপরেও বলেছিল ভাল খেলেছি।
দশম শ্রেণীতে উঠে আন্তঃজেলা দাবা খেলায় যখন অন্তরা ক্লাবের হয়ে খেলে ২য় রাউন্ডে উঠেছিলাম, বাসায় তখনও প্রশংসা পেয়েছিলাম। কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পরি।
পরিবারকে যে কতটা ভালোবাসি সেটা বুঝলাম এসএসসি এর পরে।
সেন্ট যোসেফ কলেজে চান্স হল। আব্বু বলল ভর্তি হতে। সেই থেকে ঢাকায় একা থাকা শুরু আমার। ভাইয়া কিছুদিন ঢাকায় ছিল। পরে সেও চলে যায়। আমি একাই থাকতাম।
পরিবারকে মিস করতাম। বিশেষ করে রাতের খাওয়া।
একসাথে খাওয়াটা যে পরিবারের মাঝে এত শক্তিশালী বন্ধন বানাবে সেটা আগে বুঝিনি।
মন ছটফট করত বাসার জন্য।
কিন্তু কিছু করার নেই। সেন্ট যোসেফে সম্পর্কে যারা জানেন তাদের আর কিছু না বললেও চলবে। কিন্তু যারা জানেন না তাদের বলছি ইহা একটি জেল খানার ন্যায়। ক্লাস মিস দেয়া যাবেনা। ক্লাস টেস্ট, সারপ্রাইজ টেস্ট, প্রাক্টিক্যালের জ্বালায় জীবন কয়লা।
পুরো ২ বছরে আমি২ দিন ক্লাস মিস করেছিলাম। তাও অসুস্থ ছিলাম বলে।
ক্লাস মিস মানে বিশাল প্যারা। সেই প্যারা নেয়ার চেয়ে ক্লাস করা অনেক সহজ। এই কাহিনি আরেকদিন হবে।
এইচএসএসসি পাশ করার পরেই নেভিতে আবেদন করি।
একটা প্রিলিমিনারী মেডিকেল করার পরে আইকিউ হয় লিখিত।
তার পরে ভাইভা।
ভাইভা বোর্ডে গিয়ে সেন্ট যোসেফ থেকে পাস করেছি শুনে তারা আমাকে একটা প্রশ্নই করেছিল।
:Are you a Joshephian?
: No sir, I am a josephite.
মুলত তারা ইংরেজি ভাষার দক্ষতা কেমন সেটা দেখে।
আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করেই রিকমান্ড করে দিয়েছিল।
বাসায় সবাই খুশি।
আইএসএসবি এর চতুর্থ দিনে গিয়ে আমি বাদ পরি।
আমার বাসায় আফসোস করেনি তেমন না। কিন্তু আব্বু আম্মু আমাকে বলেছে, কোন ব্যাপার না হবে। নিজের যোগ্যতায় অনেক গিয়েছিস। ট্রাই কর হবে।
তাদের সাহসে আবার দেই, নাহ হল না।
কিন্তু আমার পরিবার তারপরেও আমাকে বলেছে, আরও ভাল কিছু হবে।
অনার্স শেষ করি। পুলিশের সাব ইন্সপেক্টরে লিখিত তে পাস করি।
এবার ভাইভা তে বাদ পরি। মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি পাই তাদের অনুপ্রেরনাতে।
আব্বু আম্মু এখনও বলে ভাল জব হবে চেষ্টা করে যা।
অনুপ্রানিত হই।
ভাইয়া বিয়ে করে আরও আগে।
সোনিয়া ভাবি এসে যেন আমাদের পরিবারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পুরো পরিবারটাকে নিজের করে নিয়েছে।
সে নিজে একজন সরকারী স্কুলের শিক্ষিকা। কিন্তু বেতন পেয়ে সে আব্বুর হাতে তুলে দেয়। দরকারে আব্বুর থেকে টাকা চেয়ে নেয়।
স্কুল, বাসা, রান্না কোথায় ভাবির হাত নেই। সব একাই সামলায়।
চাকুরি করার কারনে দেশে যেতে পারি কম।
আমার পরিবারের সাথে কাটানো সময় আসলেই অসাধারন।
আমি একবার রাত ২ টায় বাসায় গিয়ে পৌছাই।
সবাই ঘুমে ছিল। ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বাসায় ঢুকি। ফ্রেশ হয়ে দেখি ভাইয়া খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
একটু পরে ভাবি আসে। ভাইয়া আমার পাশে বসা। আব্বু আসে, তার একটু পরেই আম্মু। সব শেষে আমার ঘুম কাতুরে ছোট বোন। আমি খাচ্ছি সবাই পাশে বসে আছে। কথা বলছে। ভাইয়ার মেয়েটাও উঠে যায়। পুরো পরিবার ডাইনিং টেবিলে। আমি একা খাচ্ছি, সবাই সেটা দেখছে।
এটা যে কি রকম অনুভূতি। সেটা বোঝানো যাবে না।
কেউ অসুস্থ হলে সেই রাতে আব্বু আম্মুর ঘুম নেই। সারারাত প্রায় নির্ঘুম।
এখনও পর্যন্ত আমার পরিবারের সাথে থাকা মানে মুহূর্তে সময় চলে যাওয়া।
বাসায় গেলে আমাকে ফোনে পাওয়া যায়না। আসলে সেটা কোথায় যে থাকে ওটাই মনে থাকে না।
রাতে ১১ টায় একবার খেতে বসেছিলাম সবাই মিলে। খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সবাই মিলে কথা বলেছিলাম। যখন উঠি তখন বাজে ১ টা।
আমার আম্মু একটু ইমোশনাল।
আমি মাদারীপুর থেকে ঢাকা ফেরার দিন আমি পারলে তার সাথে না দেখা করেই আসতে চাই।
যখন বলব আম্মু আমি যাচ্ছি। সে বলবে যাও, চোখটা ভেজা।
এই জিনিসটা কেই আমি দেখতে চাইনা।
ভাইয়া, টুম্পা, ভাবি, আব্বু এমনকি ভাইয়ার পিচ্চিটা (সিনহা) সবার মাঝেই একটা বন্ধন আছে।
ইদানিং আমি সকাল ৪.৩০ এর গারিতে ঢাকা আসি। একটাই কারন, আম্মু ঘুমিয়ে থাকবে। কান্না ভেজা চোখ টা আমি দেখতে পারিনা।
নিজের কাছেই খারাপ লাগে।
আমার বোনটা আমার সাথে ঝগড়া করবে, কিন্তু আমি আসব যেনে সেই সবচেয়ে লাফাবে। আমার মনে আছে ওর উপর রাগ করে ওর সাথে কথা বলিনি। সন্ধ্যের পরে ও আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। আমি বলিনি। ভাবি এসে বলে টুম্পা কাদতেছে। আমি সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরি। ওর কান্না দেখে আমার চোখ ভিজে গিয়েছিল । মরা কান্না। কাদিস কেন পাগলী মেয়ে? কান্না জড়ানো কণ্ঠে সে বলে, তুই কেন আমার সাথে কথা বলস না?
নিজ হাতে চোখ মুছে দিলাম। সেদিন টের পেয়েছিলাম এই ভালবাসা কত শক্তিশালী।
৫ম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার খবর পেয়ে টুম্পা "ভাইয়া রে" বলে চিৎকার দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। হাসিমুখ, কিন্তু চোখে জল।
ঢাকা থেকে মাদারীপুর পৌঁছে ভাইয়াকে বাস থেকে নেমেই দেখব দাড়িয়ে আছে।
ভাইয়া আমার বড় হলেও আমাদের মাঝে যে সম্পর্ক সেটা ক্লোজ বন্ধুর সাথেও হয়তো হবেনা।
আমাদের নিচ তলায় ৩ টা পরিবার ভারা থাকে।
তারা ও আমাদের মাঝে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার সম্পর্ক নেই।
যেটা আছে সেটা মধুর সম্পর্ক।
অনেককে আড়ালে বলতে শুনেছি, আমাদের পরিবারে কেউ এলে আমরা তাকে কানপরা দেই, এমন কান পরা সে আর বাপের বাড়ি যেতে চায়না।
হেটারস রা বলবেই। তাতে কিছু যায় আসেনা।
আমাদের পরিবারে কেউ এলে আমি নিশ্চিত সে এই পরিবারের বাধনে বাধা পরতে বাধ্য। কান পরা নয়, ভালবাসা এটা।
এটা এমন ভালোবাসা, কেউ কেউ যা কল্পনাও করতে পারবে না।
সারা জীবন যেন আমাদের পরিবারের এই বন্ধন থাকে আল্লাহ এর কাছে এই দোয়া করি।
আব্বুর টাকায় চার তলা এই ভবনের ২ তলা হয়েছে।
আমরা এটা সম্পূর্ণ করতে চাই। দোয়া প্রার্থী।
আব্বু, আম্মু, আপু, ভাইয়া, ভাবি, সিনহা তোমাদের যে কতটা ভালোবাসি বোঝাতে পারবনা। কখনও হয়তো বলিনি।
কিন্তু কেউ যদি প্রশ্ন করে দুনিয়াতে আমার সবচেয়ে প্রিয় কি?
নির্দ্বিধায় উত্তর দিব "আমার পরিবার"।

লেখাঃ ০১ ডিসেম্বর ২০১৬

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৪২

জগতারন বলেছেন:
আপনার লিখাটি পড়লাম, খুব ভালো লাগল। আমাদেরও এমন একটি সুন্দর পড়িবার ছিল, খুব কষ্ট হয় সেই পাড়িবারিক বন্ধনটি এখন আর নেই। আধুনিক জগতের বিভিন্ন উপাদান এসে সে নিবীড়তাকে যেন তাড়িয়ে দিয়েছে।

আপনার পড়িবারের প্রতি সুভেচ্ছা রহিল।

১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২৪

সাইফুর রহমান পায়েল বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৫০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভালো। তবে আপনার বিয়ের পর আসল 'পরীক্ষা' শুরু হবে...

১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২৫

সাইফুর রহমান পায়েল বলেছেন: ইনশাআল্লাহ পাশ করে যাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.