নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ মানুষের জন্য.............

নিবিড় শ্রাবন

সাধারন মানুষ

নিবিড় শ্রাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক দুঃখীনি মায়ের গল্প

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫০

সায়রা বেওয়া । বয়স সত্তর বা তার কিছু ‌বেশী । ১৯৪৭ সা‌লের দেশ বিভাজ‌নের পর ভার‌তের বিহার থে‌কে সপ‌রিবা‌রে চ‌লে আসেন নীলফামারীর সৈয়দপু‌রে, বসবাস শুরু ক‌রেন বাঙ্গালীপুরস্থথ ৭নং স্টান্ডার্ড পা‌কিস্তানীজ ক্যা‌ম্পে । বাবা ছি‌লেন দিনমজুর, মা ছি‌লেন গৃ‌হিণী । সংসা‌রে আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সায়রা বেওয়ার মা সাংসা‌রিক কা‌জের ফা‌কে ইট ভাঙ্গার কাজ কর‌তেন ।

তখন সায়রা বেওয়ার বয়স ছিল ১০-১২ । মা‌কে সাহায্য কর‌তে তি‌নিও মা‌য়ের সা‌থে ইট ভাং‌তেন । আধা কে‌জি ওজ‌নের হাতুরী দি‌য়ে প্র‌ত্যেক‌দিন সকাল থে‌কে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইট ভে‌ঙ্গে টুক‌রো টুক‌রো ক‌রে দু‌বেলা দুমু‌ঠো খাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টার মা‌ঝে কে‌টে গে‌ছে অ‌নেক‌দিন । সায়রা বেওয়ার বি‌য়ে হয়, পর্যায়ক্রমে কো‌লে আসে ৫টি ফুটফু‌টে সন্তান । সায়রা বেওয়ার স্বামীর আর্থিক সচ্ছলতা থাকায় ই‌টের ম‌ধ্যে হাতুরীর আঘাত কিছু‌দিন বন্ধ ছিল । কিন্তু এরই মাঝে স‌ঠিক চি‌কিৎসার অভা‌বে তার দুই সন্তান মারা যায় । ঠিক তার বছর পাঁচেক প‌র সায়রার স্বামী না ফেরার ‌দে‌শে চ‌লে যায় ।

ক‌ষ্টের দিন যেন আর শেষ হয় না! আবার সায়রা বেওয়ার সংগ্রামী জীব‌নের শুরু, ‌বে‌চে থাকা অন্য তিন‌টি সন্তান‌কে ‌নি‌য়ে ‌বে‌চে থাকার তা‌গি‌দে সায়রা আবার হা‌তে তু‌লে নেয় হাতুরী । ‌আটকে পড়া পা‌কিস্তানী হওয়ায় তার সা‌থে বি‌ভিন্নভা‌বে খারাপ আচরণ করা হয়, মজু‌রি বৈষম্য তো ছিলই। এভা‌বেই ক‌ষ্টের মা‌ঝে তিল তিল ক‌রে বড় কর‌তে থা‌কেন বু‌কের ধন তিন ছেলে‌কে । একসময় ছে‌লেরা বড় হয়, উপার্জন কর‌তে শে‌খে । সায়রা বেওয়া ম‌নে ম‌নে সুখভা‌ব আনে, ‌ছে‌লে‌দের কামাই খাওয়ার তৃ‌প্তিময় স্বপ্ন দে‌খে । সে ম‌নে ক‌রে এই বু‌ঝি তার ক‌ষ্টের দিন শেষ হল । কিন্তু না, তার কষ্ট ‌শেষ হয় না।

সে যা‌দের এত কষ্ট ক‌রে মানুষ করল আজ তারা বি‌য়ে ক‌রে‌ছে । সায়রার বড় ছে‌লের বয়স (৪২), পেশায় বাবুর্চি। অ‌ন্যের আনন্দের মাত্রা‌কে বা‌ড়ি‌য়ে দি‌তে বি‌ভিন্ন মুখ‌রোচক খাবার রান্না কর‌লেও নি‌জের মা‌য়ের চোখাশ্রু মু‌ছে মু‌খে দু‌মো‌ঠো খাবার তু‌লে দেবার মত বয়স তার এখনও হয়‌নি । বড় ছে‌লের মত রাজ‌মি‌স্ত্রি মে‌জো ছে‌লে (৩৪) আর ট্রা‌কের হেলপার ছোট ‌ছেলের (২৭) ‌বো‌ধোদয়ও হয়‌নি ।

তাই‌তো জীব‌নের পড়ন্ত বেলা‌তে এ‌সেও সায়রা বেওয়ার আধা কে‌জি ওজ‌নের হতিুরী‌টি তু‌লে রাখা সম্ভব হয়‌নি। বাবা আমি ৬০ বছর ধ‌রে এই ‌‌খোয়া (ই‌টের টুকরা) ভা‌ঙ্গি, যখন কাজ শুরু কর‌ছি তখন ১ আনা মজুরী ছিল । এ‌খোন তো ১০০ রু‌পিয়া (টাকা) পাই । এ‌খোন বয়ছ (বয়স) হই‌ছে বাবা, আগের মত ‌খোয়া ভাং‌তে পা‌রি না ।

একটু ঠান্ডা-গর‌মের কম‌বেশী হই‌লেই অসুস্থ হ‌য়ে যাই । তখন কা‌জে আসতে পা‌রি না, তাই পে‌টে খাবারও যায় না। আপনার ছে‌লেরা তখন অাপনা‌কে খাবার দেয় না! বল‌লে তি‌নি দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে ব‌লেন, বাবা, ওরা ভাল খাউক, ভাল থাউক । আমি ও‌দের কা‌ছে কিছু চাই না, ও‌দের য‌দি কম হয়ে যায়! ‌
......................................

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হায় কুলাঙ্গার সন্তান!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

একনও তাদের জন্যই মায়ের দরদ- ""বাবা, ওরা ভাল খাউক, ভাল থাউক । আমি ও‌দের কা‌ছে কিছু চাই না,"" ও‌দের য‌দি কম হয়ে যায়! ‌
আর এই মাকেই অবহেলা করছে তারা!! ছিঃ

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

মো : হাবিবুর রহমান বলেছেন: মায়ের সাথে এমন আচরন মেনে নেওয়া যায়না । হে আল্লাহ তুমি সব সন্তানদের সুবুদ্ধী দাও , কোন সন্তান যেন মা-বাবার প্রতি এমন অন্যায় আচরন না করে , মা-বাবা যেমন সন্তানকে লালন-পালন করেছে , ঠিক সেভাবে সন্তান ও যেন বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে
শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিয়ে লালন-পালন করে ।

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫

নৈশ শিকারী বলেছেন: মায়ের মতো অমূল্য রত্নকে যে ধরে রাখতে পারেনা সে পৃথিবির সবচেয়ে দামি রত্ন কোহিনূরের মালিক হলেও আল্লাহ পাক তাকে সুখী করবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.