নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কলমই হোক দুর্নীতি দূর করার হাতিয়ার

শামচুল হক

আমি একজন সাধারন লোক

শামচুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অজান্তেই সর্বনাশ (গল্প)

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:২২


শামচুল হক

শওকত প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে। লেখাপড়া খুব বেশি নয়। টেনে টুনে এসএসসি পাশ। কিন্তু অতিরিক্ত ধুরন্ধর এবং বেহায়া প্রকৃতির লোক। লাজলজ্জা বলে কিছু নেই। মুহুর্তের মধ্যেই চোখ উল্টিয়ে কথা বলতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করে না। চোখ উল্টানো কাজে সে আপন পর চোখে দেখে না। শুধু তার স্বার্থ ঠিক থাকলেই হলো। শওকতের কারণে অফিসে সবাই অশান্তিতে আছে। একটা কিছু হলেই এমডি সাহেবের কানে দিয়ে আসে। তার এই চোগলখোরের কাজটি অন্য কেউ ভাল চোখে না দেখলেও এমডি সাহেবের কাছে খুব প্রশংসনীয়।

শওকত কান কথার কারণে প্রতি মাসেই দুই চার জনকে বসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। এই তো কয়েক দিন আগে জিএম সাহেব কি একটা ভুল করেছিল। সেটা সংশোধন করার আগেই শওকত এমডি সাহেবকে বলে দিল। এমডি সাহেব জিএমকে ডেকে নিয়ে ইচ্ছামত ধমকিয়ে দিল। তার নালিশ এমডি সাহেব বেদ বাক্যের মত পালন করে। অফিসের কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা নালিশ দিলেও একচোট ধমকাধমকি হয়ে যায়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ সত্য নালিশ দিলেও এমডি সাহেব শওকতকে কিছুই বলে না। একারণে শওকত কাউকেই পাত্তা দেয় না। এমন ভাব নিয়ে চলে যেন এমডির পরেই তার অবস্থান।

কিছু দিন আগে অফিসের কাজের জন্য কয়েকটি ল্যাপটপ ক্রয় করেছে। ল্যাপটপ সিনিয়ররা না পেলেও শওকত এমডি সাহেবের কাছের লোক হওয়ায় তার ভাগে ঠিকই একটা জুটেছে। তার চেয়েও যারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে তারা ল্যাপটপ পায়নি। শওকত ল্যাপটপ পেলেও ভাল করে অপারেট করতে জানেনা। এমএস ওয়ার্ডে চিঠিপত্র টাইপ করা আর মাঝে মাঝে ভিডিও ওপেন করে নাটক সিনেমা দেখা ছাড়া অন্য কোন সফটওয়ার চালাতে পারে না। তাকে কেউ আগ বাড়িয়ে শিখায়ও না। কারণ এই অতি ধুরন্ধর লোকটিকে ভালভাবে কম্পিউটার শেখালে শেষে সবার মাথায় চড়ে বসবে। যারা কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে কাজ করে তারা আর ওর জ্বালায় চাকরীই করতে পারবে না।

সেদিন ছিল সরকারী ছুটি। সাপ্তাহিক ছুটির সাথে সরকারী ছুটি থাকায় দুইদিন অফিস বন্ধ। শওকত এই সুযোগটি হাত ছাড়া করতে রাজী নয়। ঢাকার মেসে থাকে। বউ গ্রামের বাড়ি। এক বছর আগে বিয়ে করেছে। একটু ছুটি পেলেই সে গ্রামের বাড়ি চলে যায়।

ছুটির আগের দিন অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ল্যাপটপটি তার ব্যাগের ভিতর ভরে নেয়। অফিস থেকে বাসায় না ফিরে সোজা বাস স্টেশনে গিয়ে যশোরগামী বাসে টিকিট কেটে বসে। ঢাকা থেকে বিকালে বাস ছেড়ে রাত বারোটায় যশোরে পৌঁছে। যশোর শহর থেকে আরো তিন কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ি। বাস থেকে নেমে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। ক্লান্ত শরীরে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ে।

পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে সময় কাটায়। ব্যাগের ভিতর লুকিয়ে রাখা ল্যাপটপটি কাউকে দেখায় না। তাদের গ্রামে না আছে বিদ্যুৎ না আছে টিভি দেখার সুযোগ সুবিধা। বাড়ির লোকজনকে ল্যাপটপে একবার নাটক সিনেমা দেখালে কেউ আর তার ঘর ছাড়বে না। এটা তার জন্যে সমস্যা। ঘরে একটু শুয়ে বসে আরাম করবে তখন আর সম্ভব হবে না।

রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমালে শওকত ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে নাটক চালু করে দেয়। বউ গ্রামের মানুষ। ল্যাপটপে নাটক দেখে কিছুটা আশ্চার্য হয়ে যায়। এর আগে কখনও এরকম যন্ত্র দেখেনি। ভিসিআরে দু’একবার সিনেমা দেখেছে, কিন্তু এত ছোট বাক্সের ভিতর এত কিছু দেখা যায় এটা সে কল্পনাও করে নাই। এমন নতুনত্ব আধুনিক যন্ত্র পেয়ে বউ খুব খুশি। স্বামীকে ভাল একটা নাটক দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। স্ত্রীর কথামত শওকত একটি হাসির নাটক দেয়। নাটকটি শেষ হতে অনেক সময় লাগে। বউ আরেকটি নাটক চালু করতে বলে। শওকত আরেকটি নাটক চালু করে কিন্তু শওকতের বউয়ের মনমতো হয়না। তার মনে পরে যায় উত্তরের বাড়ির ময়না ভাবির কথা। ময়না ভাবি ঢাকা শহরে থাকে। স্বামী সরকারী চাকুরীজীবি। মাঝে মাঝে জমিজমা দেখার জন্য গ্রামের বাড়ি এসে দুই একমাস থেকে আবার চলে যায়। তার কাছেই কিছু দিন আগে শুনেছে কম্পিউটারে নাকি অনেক কিছু দেখা যায়। সেই কথা মনে হতেই সে তার স্বামীকে বলে, হা গো, এইতা ছাড়া অন্যতা নেই?
শওকত বউয়ের কথায় কিছুটা আশ্চার্য হয়েই জবাব দেয়, অন্যতা কি!
শওকতের বউ খোলাসা করে না বলে কিছুটা কথার আকার ইঙ্গিতে বলে, এই যে কম্পিউটারে নাকি কি কি দেখা যায়, সেইতা নেই?
শওকত খুবই চতুর লোক। স্ত্রীর আকার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়, না রে বউ, এইতা অফিসের কম্পিউটার, এইতা দিয়ে ওই সব দেখা যাবি নে।
শওকতের বউ কিছুটা হাতাশ হয়েই জবাব দেয়, তাইলে কি ঘুড়ার ডিম আনিছো।
শওকত বউয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে, তোর কি তাইলে ওইতা দেখতি মন চাচ্ছে?
-- কম্পিউটার আনিছই যহন ওইতাও নিয়ে আসতে।
-- ঠিক আছে সামনে আসতি নিয়ে আসপানি।

কিন্তু এদিকে যে কি সর্বনাশ হচ্ছে সেটা দুইজনের কেউই টের পায় না। অপরিপক্ক হাতে ওসমান ভিডিও সফটওয়্যার ওপেন করতে গিয়ে ভুল বশতঃ ভিডিও ক্যামেরা অন করে রেখেছে। ভিডিও ক্যামেরার সফটওয়্যার মিনি মাইজ হয়ে আছে। ভিডিওতে নাটক চালু হওয়ার পাশাপাশি তাদের অজান্তেই তাদের দৃশ্যও যে ভিডিও হচ্ছে এটা তারা বুঝতেই পারে না।

এক পর্যায়ে নাটক শেষ হলে শওকত ল্যাপটপ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। সকালে উঠেই ঢাকায় রওনা হয়। রাতে মেসে থেকে সকাল বেলা অফিসে যায়। রাশেদ মিয়া সিনিয়র একাউন্টেন্ট। অফিসের জরুরী একটি চিঠি প্রিন্ট করা প্রয়োজন। চিঠিটি শওকতের ল্যাপটপে টাইপ করা আছে। রাশেদ মিয়া শওকতকে চিঠিটি প্রিন্ট করতে বললে ঠিক সেই মুহুর্তে এমডি সাহেবও শওকতকে তার রুমে তলব করে। শওকত চিঠি প্রিন্ট করার সময় না পাওয়ায় অগত্যা এমডি সাহেবের রুমে ঢোকার আগে রাশেদ মিয়ার টেবিলে ল্যাপটপটি রেখে যায়।

এমডি সাহেবের রুম থেকে শওকতের বের হতে অনেক দেরি দেখে রাশেদ মিয়া নিজেই ল্যাপটপটি অন করে। এমএস ওয়ার্ড ওপেন করতে গিয়ে ভুল বশতঃ মিনিমাইজ করা ভিডিওতে ক্লিক করে। মুহুর্তেই ভিডিও ওপেন হয়ে যায়। খারাপ কিছু নয়, শওকত আর তার বউয়ের বিছানায় শুয়ে শুয়ে কথোপকথনের ভিডিও চলতে থাকে। রাশেদ মিয়া ভেবেছে হয়তো শখের বশে নিজেদের ভিডিও বউকে দেখানোর জন্য ধারণ করেছে। দু’এক মিনিট কথোপকথন দেখে ভিডিও টেনে টেনে সামনে আগাচ্ছে। ভিডিওর মাঝামাঝি গিয়েই রাশেদের চক্ষু চড়ক গাছ। এযে তাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও। একটু দৃশ্য দেখেই রাশেদ মিয়া ভিডিও বন্ধ করে দেয়। অফিসে এরকম ভিডিও চালানো শোভন নয়। তবে ভিডিও দেখার আকর্ষণও ছাড়তে পারেনা। আড়ালে বসে একা একা দেখার জন্য নিজের পকেট থেকে পেন ড্রাইভ বের করে কপি করে নেয়। ভিডিওটি চালানোর সময় পাশের টেবিলে বসে আমিন হওলাদার দেখে ফেলে। সেও তার পেনড্রাইভ এগিয়ে দিয়ে বলে, রাশেদ ভাই, জিনিষটা একটু আমাকে কপি করে দিবেন?

রাশেদ মিয়া আপত্তি জানালে আমিন হাওলাদার কথার প্যাচে তাকে দিতে বাধ্য করে। তাদের মৃদু ঝগড়া আশে পাশের টেবিলের অনেকেই লক্ষ্য করে। তারাও কৌতুহল নিয়ে রাশেদ সাহেবের টেবিলে চলে আসে। ঠিক সেই মুহুর্তে এমডি সাহেব রাশেদ মিয়াকে তার রুমে যাওয়ার জন্য জরুরী তলব করে। রাশেদ মিয়া ল্যাপটপটি বন্ধ করার সুযোগ না পেয়ে ওপেন রেখেই এমডি সাহেবের রুমে দ্রুত চলে যায়। রাশেদ মিয়ার অনুপস্থিতিতে অনেকেই তাদের পেনড্রাইভে ভিডিওটি কপি করে নেয়। মুহুর্তেই ভিডিওটি কয়েকটি পেন ড্রাইভে কপি হয়ে টেবিল থেকে টেবিলে চলে যায়। অফিসে তার ভিডিও নিয়ে এত কিছু ঘটনা ঘটলেও শওকত এসবের কিছুই জানে না। সে এমডি সাহেবের রুম থেকে অনেকক্ষণ পর বের হয়।

এক পর্যায়ে জিএম সাহেবের কাছের লোকজন হাসতে হাসতে শওকতের ভিডিওটি তার কম্পিউটারে কপি করে দেয়। জিএম সাহেব ভিডিও দেখে অবাক। অফিসের লোকজনের এমন ভিডিও আশা করে নাই। কিছু দিন আগে শওকতের কারণে এমডি সাহেবের নিকট ধমক খেলেও তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তিনি ইচ্ছুক নন। জিএম অনেক ভাল লোক। অশ্লীল ভিডিওটি প্রচার হয়ে শওকতের ক্ষতি হোক এটা তিনি চান না।

শওকত পাজি কিন্তু তার বউ তো পাজি নয়? শওকতের নষ্টামীর কারণে তার বউ ক্ষতিগ্রস্থ হোক এটা জিএম সাহেব ভাবতেই পারছেন না। ভিডিওটি যাতে আর কারো হাতে না পরে সেই দিকে চিন্তা করতে থাকেন। মনে মনে ভাবতে থাকেন যদি শওকত নিজের থেকেই ভিডিওটি ধারন করে থাকে তাহলে তাকে দিয়েই ভিডিওটি মুছে ফেলা দরকার। হাজার হলেও একই অফিসের লোক, এরকম ভিডিও বাজারে ছড়ালে পরিচিত লোকজনের কাছে মুখ দেখানো মুস্কিল হবে। একজনের কারণে পুরো অফিস লজ্জায় পড়ে যাবে। এসব চিন্তা করেই জিএম সাহেব ভিডিওটি মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

ম্যানেজার একটু পরে পিয়ন দিয়ে শওকতকে ডেকে আনে। শওকত ম্যানেজারের রুমে ঢুকলে দরজাটি বন্ধ করে দিয়ে সামনের চেয়ারে বসতে বলে। শওকত দরজা বন্ধ করে মনে মনে চিন্তা করে হয়তো অফিসের কোন কনফিডেন্সিয়াল কাজ আছে। কনফিডেন্সিয়াল কাজের জন্য শওকত নিজেকে খুব গর্বিত মনে করে। অফিসে আর কিছু না হোক অন্তত গোপন কাজগুলো তাকে ছাড়া হয় না। এমডি সাহেবও তাকে ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে গোপন কাজ করায় না।

ম্যানেজার শওকতকে চেয়ারে বসতে বলে ভাবতে থাকে কিভাবে সে এই ভিডিওর কথা বলবে? বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে বলে উঠে, আচ্ছা শওকত, আপনি কি ল্যাপটপ গ্রামের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন?
শওকত ধুরন্ধর এবং বেহায়া। ম্যানেজারের এই প্রশ্নে সে মনে করল, যদি ল্যাপটপ গ্রামের বাড়ি নিয়েছিল একথা স্বীকার করে তাহলে হয়তো ম্যানেজারের কাছে নত হতে হবে। অফিসের জিনিষ বাসায় নেয়ার কোন নিয়ম নেই। যদি এমডি সাহেবকে বলে দেয় তাহলে তার উপর এমডি সাহেবের যে বিশ্বাস আছে সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। এসব ভেবেই সে ঝটপট উত্তর দেয়, না স্যার, আমি ল্যাপটপ গ্রামের বাড়ি নেব কেন?
-- তাহলে কি আপনার গ্রামের বাড়িতে কম্পিউটার আছে?
-- না স্যার, আমার কি সেই সামর্থ আছে যে আমি কম্পিউটার কিনবো।
-- তাহলে কি আপনার ভিডিও ক্যামেরা আছে?
-- না স্যার, ক্যামেরা ট্যামেরা কিছু নেই।
-- তাহলে আপনি ভিডিও তুললেন কি দিয়ে? ক্যামেরা ভাড়া করেছিলেন?
-- বলেন কি স্যার, আপনি আমার ভিডিও পেলেন কই? আমি তো জীবনে কোনদিন ভিডিওই তুলি নাই!
-- তাহলে আপনার ল্যাপটপে এই ভিডিও এলো কি ভাবে?
-- কোন ল্যাপটপে স্যার?
-- আপনি যেটা ইউজ করেন।
-- আমার ল্যাপটপে?
-- জি আপনার ল্যাপটপে। বিশ্বাস হচ্ছে না?
শওকত মাথা ডানে বামে নেড়ে উত্তর দেয়, না স্যার, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
-- আপনার ল্যাপটপটা নিয়ে আসেন।
শওকত তার টেবিল থেকে ল্যাপটপ নিয়ে এলে জিএম সাহেব শওকতকে ল্যাপটপটি অন করতে বলেন।
শওকত ল্যাপটপ অন করলে জিএম সাহেব ভিডিও সফটওয়্যার ওপেন করতে বলেন। ভিডিও সফটওয়্যার ওপেন করে শওকত দৃঢ়তার সাথে বলে, কই স্যার আমার ভিডিও? আপনি কার কাছে শুনলেন? নিশ্চয় কেউ আমার নামে আপনার কাছে মিথ্যা বলে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে।

জিএম সাহেব নিজেও তার পেন ড্রাইভে এককপি নিয়েছেন। শওকত যখন দৃঢ়তার সাথে বলল, কই স্যার ভিডিও? তখন জিএম সাহেব মনে করেছে হয়তো সে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেছে। তাই প্রমাণ হাতে থাকাতে বলল, আমি শুনি নাই, আমি দেখেছি।
-- কি দেখেছেন স্যার? আমাকে দেখান তো?
জিএম তার সামনেই কম্পিউটারের ভিডিও লিস্ট থেকে ভিডিওটি চালু করে দিল। তাদের দুইজনের শুয়ে শুয়ে কথোপকোথনের দৃশ্য চলতে থাকে। ভিডিওটি দেখে শওকত মৃদু হেসে বলল, স্যার যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে বলি--।
ম্যানেজার তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছে বলেন।
শওকত বলল, গত সপ্তাহে দুইদিন অফিস বন্ধ ছিল, সেই সময় আমি ল্যাপটপটি বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে স্যার একটা অনুরোধ--এই কথাটা এমডি স্যারকে বলবেন না।
-- তা না হয় না বললাম, কিন্তু নিজের সর্বনাশটা করলেন কেন?
-- কি সর্বনাশ স্যার?
-- এই ভিডিওটি অফিসে নিয়ে আসলেন কেন?
-- কম্পিউটারে যে আমাদের দুইজনের কথা ভিডিও হয়েছে এটাই তো আমি জানি না স্যার!
-- না জানলে এই জঘন্য ভিডিওটি তুললেন কি ভাবে?
-- স্যার, আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না, কি জঘন্য স্যার?
-- আপনি জানেন না, না জেনেই এই রকম ভিডিও করেছেন?
-- না স্যার, আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না?
জিএম শওকতের নাক কাটা বেহায়া স্বভাবের চরিত্র মনে করে জোর দিয়ে বলল, বুঝতে পারছেন না বলে ন্যাকামো করছেন? নিজেই নিজের কি সর্বনাশ করেছেন তা এখনও বুঝতে পারছেন না? না জানার ভান করে আমাকে আহাম্মক বানাতে চাচ্ছেন?
শওকত জিএমের কথায় মুখটা কালো করে বলল, স্যার, এত ঘোরপ্যাচ দিয়ে কথা বললে বুঝবো কি করে? যা বলবেন, আমাকে সরাসরি সোজা করে বললেই তো বলতে পারেন।

শওকতের কথায় জিএম তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল, এগুলো কি করেছেন? বলেই ভিডিওটি সামনের দিকে এগিয়ে দিলে তাদের অন্তারঙ্গ মুহুর্তের দৃশ্য চলতে থাকে। শওকত তার এবং তার স্ত্রীর নগ্ন ছবি দেখেই দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে পাগলের মত বলতে থাকে, স্যার, স্যার, বন্ধ করেন স্যার। স্যার আপনার পায়ে পড়ি স্যার, ভিডিওটি মুছে ফেলেন স্যার। বলেই মাতালের মত লজ্জায় টলতে টলতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রুম থেকে বেরোতেই দেখে পুরো অফিসের লোকজন জিএম সাহেবের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই তার দিকে কি রকম যেন ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যদি এই অশ্লীল দৃশ্য তারা দেখে থাকে তাহলে তাদের সামনে এই ঘৃণিত মুখ নিয়ে দাঁড়ানো উচিৎ নয়। এর চেয়ে মৃত্যু হওয়া অনেক ভাল। তার মনে হলো সবার সামনে থেকে গায়েব হওয়া দরকার। পুরো শরীরটা মাটির ভিতর লুকিয়ে ফেলা দরকার। এত লজ্ঝা নিয়ে এখানে আর এক মুহুর্ত থাকা ঠিক হবে না। শওকত মুহুর্তেই মুখ ঢাকা অবস্থায় এক দৌড়ে দোতালা থেকে রাস্তায় চলে গেল। রাস্তায় গিয়ে শওকত নিজেকে মুহুর্তেই লুকিয়ে ফেলল, পিছনে পিছনে পিয়নটি গিয়েও আর খুঁজে পেল না। সেই যে শওকত অফিস ছেড়েছে আর কখনও অফিসে আসেনি।

শওকত রুম থেকে বের হয়ে গেলে জিএম কম্পিউটার অপারেটরকে ডেকে দ্রুত ভিডিওটি মুছে ফেলতে নির্দেশ দিলেন। কম্পিউটার অপারেটর জিএম সাহেবের কথামত শওকতের ল্যাপটপ থেকে ভিডিওটি মুছে ফেলল বটে কিন্তু ততক্ষণে শওকতের নগ্ন ভিডিও পেন ড্রাইভের গন্ডি পেরিয়ে ইন্টারনেটে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে।

কম্পিউটার চালানোর অদক্ষতা এবং অসতর্কতার কারণে নিজের অজান্তেই সর্বনাশ হলো শওকতের।

(গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক)
(ছবি ইন্টারনেট)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৩

কলম-বাঁশ বলেছেন: চরিত্রের নাম প্রথমে ওসমান তারপর শওকত আবার ওসমান আবার শওকত আবার ওসমান। নাম একই থাকলে ভালো হতো।

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:০২

শামচুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, আপনি বিষয়টি দেখিয়ে দেয়ায় খুশি হলাম। প্রথমে শওকত নামেই গল্পটি লেখা শুরু করেছিলাম পরে ওসমান নাম পরিবর্তন করায় সমস্যাটি হয়েছে।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:১০

চিন্তিত নিরন্তর বলেছেন: ভাল লিখেছেন, শওকত কিংবা ওসমান যেই হউক এইরকম লোক সরকারী বা বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায়। এরা বিষ ফোঁড়। এদের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান কিংবা দেশ এগুতে পারছেনা।

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০

শামচুল হক বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


গল্পটির প্লট ভালো, কিন্তু ব্লগের জন্য বড় হয়ে গেছে; চর্বি ফেলে দেবেন।

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৬

শামচুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই, আপনার উপদেশ মেনে চলার চেষ্টা করবো।

৪| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৫১

সনেট কবি বলেছেন: ভাল বিষয় তুলে এনেছেন। সচেতনতা মূলক পোষ্ট।

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৫

শামচুল হক বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৫| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৩৬

সনেট কবি বলেছেন:



গল্পকার সামচুল হক

অল্পস্বল্প গল্প লেখে সামচুল হক
ব্লগে গিয়ে পড়ে দেখি মোটামুটি বেশ
অজান্তেই সর্বনাশ কিভাবে যে হলো
শয়তান মানুষের কূ-কর্মের ফলে।
দূরাচার বেটা লাগে অপরের পিছে
অপরের দূরবস্থা দেখে হয় খুশী
উল্টোতে তার জন্য কি অপেক্ষা করে
সেকথার ভাবনাটা তার মনে নেই।

অবশেষে অসতের বিপদের কাল
একদিন এসেপড়ে অযাচিত ভাবে
পাওনাটা একসাথে বদলোক পায়।
মন্দ কাজে মন্দ ফল একদিন ফলে
শামচুল হক সেটি তুলেছেন গল্পে
আন্তরিক ধন্যবাদ তাঁর জন্য তাই।

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৪

শামচুল হক বলেছেন: আপনার ব্লগে গিয়ে আপনার সনেট লেখার মেধা দেখে আশ্চর্যই হলাম। আপনার মেধা আছে বটে।

৬| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৫০

চিটাগং এক্সপ্রেস বলেছেন: স্নোডেন ডকুমেন্টারিতে দেখছিলাম সবার ল্যাপটপ আর কম্পিউটারে CIA কি সব হিডেন ক্যামেরা যুক্ত করে দেয়। যাতে সবার উপর নজরদারি চালানো যায় ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৩

শামচুল হক বলেছেন: সিআইএর বিষয়টি জানা ছিল না জেনে ভালো লাগল।

৭| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:৪১

চানাচুর বলেছেন: সুন্দর হয়েছে গল্প। এত ঝরেঝরে লেখা যে এক টানে পড়া হয়ে গেল।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮

শামচুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৮| ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৫১

খায়রুল আহসান বলেছেন: অসাবধানতা কিংবা অজ্ঞতার ফলে এরকম অজান্তে সর্বনাশ অনেকের ভাগ্যেই ঘটে যেতে পারে।
'শওকত' চরিত্রটি সব আপিস আদালতেই দেখা যায়।
"ওসমান" নামটা এখনও এক জায়গায় রয়ে গেছে।

৩১ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

শামচুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ খায়রুল ভাই, প্রথমেই ওসমান নামে গল্পটি লিখেছিলাম পরবর্তিতে শওকম নামে পরিবর্তন করলেও অজান্তেই দুই এক জায়গায় রয়ে গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.