নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বের বিশালতা, স্রষ্টার উদারতা, মানবতার মহিমা ....., সব কিছুতেই আমি মুগ্ধ।

প্লাবন২০০৩

জীবনের সবচেয়ে বড় সুবিধা জীবনকে কখনো চালাতে হয় না, এ চলতেই থাকে, চলতেই থাক...

প্লাবন২০০৩ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্লাসটি নামিয়ে রাখতে হবে, তোমাকে পঙ্গু করার আগেই

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৪:৩২


কলেজের প্রথম দিন, প্রথম ক্লাশ । ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাশে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ, তাদের কলেজ জীবনের প্রথম ক্লাশ, প্রথম শিক্ষক । কিন্তু কেমন হবেন তিনি দেখতে ? তিনি কি আইনষ্টাইনের মত চুলচেরা বিশ্লেষণ মুখী ? নাকি আলফ্রেড নোবেলের মত জীবন মুখী ? নাকি সুকুমার রায়ের মত হাস্য রসে ভরপুর কিন্তু বাস্তব মুখী ? কিরকম হবেন তিনি ? অপেক্ষার সময় আর কাটছিল না ।

অবশেষে আসলেন তিনি । অত্যন্ত সাদামাটা, উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের, সাধারণ শারীরিক গঠন, উচ্চতা খুব বেশী হলে পাঁচ ফিট সাত হবে । পরনে কড়া আয়রন করা হালকা ছাই রঙের সূতির ফুল হাতা শার্ট । হাতা কনুই অব্দি গোটানো, সাথে কালো টেট্রনের প্যান্ট । পায়ে চকচকে কাল জুতো, যেন এই মাত্র কিনে এনেছেন । বাঁ হাতে অতি সাধারণ একটি কালো বেল্ট-এর ঘড়ি । চোখে গোল রিমের কালো ফ্রেমের চশমা । মাথায় ছোট করে ছাঁটানো ঘন কালো চুল । এই সাধারণ ইম্প্রেশনই কিন্তু বুঝিয়ে দিচ্ছে কোথাও... কোন দিক দিয়ে তার মধ্যে অসাধারণ কিছু যেন লুকিয়ে আছে ।

সব ছাত্র-ছাত্রী উঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষককে সালাম জানালো । শিক্ষক মৃদু হেসে সালামের জবাব দিলেন এবং সবাইকে বসতে বললেন ।

-“তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কে আছ ? হাত তোলতো” ।

প্রথম ক্লাশের প্রথমেই শিক্ষকের মুখে এমন কথা শুনে সবাই হতভম্ব । “আমরা কি ভাবে জানব ? সবে তো প্রথম দিন, তারপর এখনও কারো সাথে ভালো করে পরিচয়ই হয়নি । কয়েকদিন গেলে তবেনা বুঝতে পারব । দুয়েকটা মারামারি হোক, তখনই বুঝা যাবে কে বেশী শক্তিশালী । আর আপনার মান রাখতে যদি আমি এমনি দাঁড়িয়ে বলি – আমিই সবচাইতে শক্তিশালী, আর পরে যদি প্রমাণ হয়ে যায় আমার চেয়ে শক্তিশালী ঐ ছেলেটা, তাহলেতো গেলো, সবই গেল । প্রথম ক্লাশেই মিথ্যা কথা ? না বাবা আমি পারবনা, অন্য কেউ এই রিস্ক নিক । আমি নেবনা” । এরকমটাই হয়ত ভাবছিল প্রত্যেকে ।

কিন্ত সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটা ছেলে হাত তুলল । সবাই ঘুরে তাকালো তার দিকে, হ্যাঁ দেখেই বুঝা যায় স্যারের মান রাখার জন্যই হাত তুলেছে । দেখেত তেমন শক্তিশালী মনে হয়না, তারচেয়ে তো শেষ বেঞ্চের ঐ কালো ছেলেটাকেই অনেক বেশী শক্তিশালী মনে হয়, আর হাইট’ও মাশাল্লাহ্‌, ছয় ফিট না হয়েই যায় না ।

- “ঠিক আছে, বাবা এদিকে এস তুমি । আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এসতো” । স্যারের এবারকার কথায় সবাই একটু মজার গন্ধ পেল ।

ছেলেটি পানি নিয়ে আসলে স্যার বললেন, “বাবা তোমাকে আরেকটু কষ্ট দিব, আশা করি কিছু মনে করবে না, এটা তোমাদের জন্যই দরকার” । আক্ষরিক অর্থেই সবাই এবার নড়েচড়ে বসল, মজার কিছু আবশ্যম্ভাবী ।

-“বলত বাবা, তুমি যে গ্লাসে পানি নিয়ে এসেছ তার মোট ওজন কতটুকু হতে পারে”?

-“স্যার আসলে এভাবে বলাতো কষ্টকর, তবে ২৫০ গ্রামের মত হবে”-ছাত্রের উত্তর ।

-“এটি এভাবে হাতে নিয়ে হাত সোজা করে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে”?

-“আমি আপনার কথা বুঝতে পারিনি স্যার”, ছাত্রের উত্তর ।

-“আমি বলছি, আমি যদি তোমাকে গ্লাসটি হাতে নিয়ে হাত সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকতে বলি, তাহলে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে”?

এতক্ষণে ক্লাসে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে, ও কি কোন অন্যায় করেছে? অন্যায় করলে কি অন্যায় করেছে ? আর কখনই বা কি করল ? এইসব হাবিজাবি চিন্তা প্রত্যেকের মনে...।

চিন্তা ভাবনা করে ছাত্রটি জানাল –“স্যার দু ঘন্টা পারব”, সেও ততক্ষণে ঘাবড়ে গেছে । সে বুঝেই উঠতে পারছে না কোথা থেকে কি হয়ে যাচ্ছে ।

-“ঠিক আছে, দু ঘন্টা । এর পর কি হবে” ? সহাস্য জিজ্ঞাসা স্যারের মুখে ।

- “হাত ব্যথা করবে স্যার” ।

-“যদি পাঁচ ঘন্টা হয়, তাহলে কি হবে” ?

-“হাত কাঁপতে থাকবে স্যার” ।

-“যদি এক দিন হয়, তখন কি হবে” ?

-“হাত অবশ হয়ে আসবে স্যার” ।

-“যদি তিন দিন হয়, তখন কি হবে”?

-“সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসবে স্যার, আমি পড়ে যাব, আর পঙ্গুও হয়ে যেতে পারি স্যার” । ততক্ষণে ওর গলা কাঁপতে শুরু করেছে, কান্না চলে আসছে বুক বেয়ে গলার কাছে, কি এমন করেছে ও ? এত বড় শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ।

-“ঠিক আছে, অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে । যাও তোমার সীটে গিয়ে বস” ।

ততক্ষণে গলা পর্যন্ত উঠে আসা কান্না আর বাঁধ মানছিল না, নেহায়েৎই কলেজে উঠে গেছে, নইলে কতক্ষণে... !!

এবার শুরু করলেন স্যার – তার গুরুগম্ভীর আর এতক্ষণ চেপে রাখা আসল আর মোহময় ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন কন্ঠস্বর দিয়ে, যা এক অদ্ভুত স্বর্গীয় বাণীর মত, যা ছেলেপেলে গুলো মনে রাখবে সারা জীবন প্রতিটা মুহুর্ত প্রতিটা চিন্তা ভাবনায় –

“এটি তোমাদের জন্য একটি শিক্ষা, এটি তোমাদের পরীক্ষায় পাশ করাতে পারবে না ঠিক, কিন্তু যথার্থ শিক্ষিত মানুষ হিসাবে পাশ করাতে পারবে ঠিকই । এটি তোমাদের মুক্ত জীবন, মুক্ত চিন্তা ভাবনা কে রক্ষা করবে নষ্ট হওয়া থেকে । এটি তোমাদের শক্তি দিবে স্বাধীন থাকার, সকল অনিষ্টকারী চিন্তা ভাবনা থেকে, যা বিশাল ক্ষতি করে ফেলতে পারে তোমার, তোমার প্রিয়জনের, তোমার পরিবারের, তোমার সমাজের, তোমার দেশের বা সমগ্র মানব জাতির ।

এটি একটি শিক্ষা, যা কোন বইয়ে পাবে না । কিন্তু অর্জন করতে হবে মানুষ হবার জন্যে । আমার পরবর্তী কথাগুলো মগজে গেঁথে রাখ, মনে রেখ পরীক্ষায় একবার ফেল করলে আবার পরীক্ষা দিতে পারবে, আবার ফেল করলে আবার পরীক্ষা দিতে পারবে, কিন্তু মানুষ হিসাবে একবার ফেল করলে এই জীবনে আর কেউ তোমার পরীক্ষা নেবার সাহস করবে না ।

তোমাদের জীবনে আজ কলেজের প্রথম দিন । উচ্চশিক্ষার প্রথন ধাপ এটি, এই পৃথিবীতে তোমাদের যোগ্য প্রমাণ করার শুরু এখান থেকে । পানি ভর্তি গ্লাসটি ছিল একটি উপমা মাত্র । জীবনে অনেক ঘটনা, অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবে তোমরা । এর মধ্যে কিছু থাকবে আনন্দের, কিছু বেদনার, কিছু থাকবে তিক্ততার কিংবা কিছু থাকবে ভয়ঙ্কর । সব অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা অর্জন করবে, কিন্তু কোন ঘটনাকেই মনে রাখবে না সেই পানি ভর্তি গ্লাসের মত । একটি সাধারণ ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি পানি ভর্তি গ্লাস যদি একজন মানুষকে মাত্র তিন দিনে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে ফেলতে পারে, তোমাদের মস্তিস্কে সংরক্ষিত কোন তিক্ত বা বেদনাদায়ক বা ভয়ংকর কোন অভিজ্ঞতা তোমাদের দিনের পর দিন কিংবা মাস কিংবা বছর ধরে কি করতে পারে তা চিন্তা করে নাও এখনি, এই মূহুর্তে । আর যদি কিছু থেকে থাকে খালি করে ফেল ঠিক এখন এই মূহুর্তে । ভুলে যাবার জিনিসগুলোকে দেরি না করে ভুলে যাবে । সব সময় মনে রাখবে “গ্লাসটি নামিয়ে রাখতে হবে, তোমাকে পঙ্গু করার আগেই” । আর তা শুরু হোক এখান থেকেই .........


কূণাল পাঞ্জাবী-এর “PUT THE GLASS DOWN TODAY” টিকে মূল বিষয় বস্তু ধরে লেখা । Address: Click This Link

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:০৩

রিপন বর্মণ বলেছেন: Valo laglo

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:১০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ ।

২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৬

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: প্রিয়তে+++++

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৫৩

সুফিয়া বলেছেন: খুব ভাল লাগল। +++++=

ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২০

রবিউল ৮১ বলেছেন: সুন্দর একটা লিখা পড়লাম।লেখক কে ধন্যবাদ।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২৩

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।

৫| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:২৩

আনপ্রেডিক্টেবল রিফাত বলেছেন: খুব ভালো লাগল, এইরকম একটা শিক্ষণীয় গল্প উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ :)

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আপনাকেও ধণ্যবাদ

৬| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৫৪

মঙ্গলগ্রহের মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন: ভালো লাগলো

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:১২

এহসান সাবির বলেছেন: খুব ভালো লাগল।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ

৮| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৫৮

সুমন কর বলেছেন: অসাধারণ।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

৯| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২০

সোহেল মাহমুদ বলেছেন:
অসাধারণ শিক্ষনীয় একটি গল্প।


শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

১০| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৭

শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ভালো লেখা

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

১১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০

মিঠু জাকীর বলেছেন: চমৎকার !

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

১২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৩:০৯

নিয়েল হিমু বলেছেন: কিন্তু আমার যদি গ্লাসটা নামিয়ে রাখতে ইচ্ছা না হয় ? যদি গ্লাসটা রেখে পঙ্গু হয়ে যেতে চাই তবে ?

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:১২

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: বলেছেন: তখন পঙ্গু হয়ে যাবেন ! তখন কি আর আপনার কাছ থেকে সুন্দর সুন্দর লেখাগুলো পাবো বলেন ? কেন ভাই হিসাবে, ব্লগার হিসাবে আপনার ওপর আমাদের কোন দাবী নেই ?

১৩| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৫

ফ্লাইং সসার বলেছেন: গ্লাসটা কিভাবে নামায় রাখবো?

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৪

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: নামায় রাখার অনেক গুলো উপায় আছে । আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে যেটা সেটা হচ্ছে -
দরজা বন্ধ করুন । এবার একটি উঁচু চেয়ার নিন, চেয়ারটির ওপর দাঁড়ান । চোখ দুটি বন্ধ করুন আর আপনার হাতের গ্লাসটি কল্পনা করুন । এবার আস্তে করে গ্লাসটি থেকে আপনার হাতের আঙ্গুলগুলি সরিয়ে নিন । কল্পনা করুন গ্লাসট কেমন শব্দ করে মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে গেল । এবার আরও উঁচু শব্দে চিৎকার করে বলে উঠুন - I F**k you (Glass) !
যতদিন পর্যন্ত হাত থেকে গ্লাসটি না সরবে, ততদিন পর্যন্ত করতে থাকুন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.