নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বের বিশালতা, স্রষ্টার উদারতা, মানবতার মহিমা ....., সব কিছুতেই আমি মুগ্ধ।

প্লাবন২০০৩

জীবনের সবচেয়ে বড় সুবিধা জীবনকে কখনো চালাতে হয় না, এ চলতেই থাকে, চলতেই থাক...

প্লাবন২০০৩ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্পোরেট ডিসিশন

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৭:৪৫


হঠাৎ একদিন একটা কোম্পানী ডিসিশন নিল, তারা স্পোর্টস্‌ ইভেন্টে-এ নিয়মিত অংশ গ্রহণ করবে, এ জন্য প্রয়োজনে তারা একটা নতুন সেকশন গঠন করবে (মূল উদ্দেশ্য অবশ্য কিছু পাবলিসিটি আর সরকারের কিছু ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া) । কিন্তু ইভেন্ট কি হবে? বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স সারাদিন মিটিং করল, কিন্তু কোন সমাধানে ঐক্যমতে পৌছাতে পারল না । অতঃপর সবাই একত্রে সবচাইতে সহজ ডিসিশনটা নিল, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারকে ডেকে পাঠাল, তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিল আর আগামী মিটিঙয়ের আগেই এ ব্যাপারে ডিটেইল রিপোর্ট দিতে বলল ।

ম্যানেজারের মাথা খারাপ হবার দশা - “আরে বাবারা বলে কি? আমি সারাজীবন চললাম Nine Fingers / Ten Fingers করে (Nine Fingers / Ten Fingers মানে হচ্ছে সারাজীবন অন্যান্য এমপ্লয়ীদের পেছনে একটি আঙুল দিয়ে রাখতে হয়, তাই তাকে সবসময় হাতের নয় আঙুল না দশ আঙুল খেয়াল রাখতে রাখতেই দিন যায়), আর আমাকে কিনা বলে কোম্পানী কোন স্পোর্টস্‌ ইভেন্টে পার্টিসিপেট করবে তা নিয়ে রিপোর্ট করতে ? কেন সেলস্‌ ম্যানেজার যে সারাদিন কাজ ফাঁকি দিয়ে খেলাধূলা নিয়ে থাকে, তাকে বলা যায় না ?

অতঃপর কিছুদিন তার ডিপার্টমেন্টের সবাইকে চূড়ান্ত ত্যক্ত বিরক্ত করে, ইউনিভার্সিটি জীবনের সকল বন্ধুদের অফিসে অফিসে ধরণা দিয়ে এবং বউএর সাথে ঝগড়া ঝাঁটি করে তাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে সে পরবর্তী মিটিঙয়ে তার বোর্ড কে যে রিপোর্ট করল তার সারমর্ম মোটামুটি এই রকম- “বাংলাদেশ একটি নদী মাতৃক দেশ, এই দেশী একটি কোম্পানী হয়ে আমরা যদি আমাদের অস্তিত্বকে ভুলে যাই, সেটা আমাদের কোম্পানীর অস্তিত্বকেই ভুলে যাবার সমতুল্য । তাই নৌকা বাইচ ইভেন্টে আমাদের অংশ গ্রহন অধিক যুক্তি সঙ্গত । অন্যদিকে এই ইভেন্টে প্রতিযোগিতার হার অনেক কম, তাই আমাদের জয়ী হবার সম্ভাবনা বেশী, এটি আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে । এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ আমাদের বিদেশী বায়ারদের কাছেও আমাদের দেশাত্ববোধ সমুন্নত রাখবে । এই ইভেন্টের খেলোয়ারদের বেতন কাঠামো অনেক কম । এই খেলোয়ারদের সাধারণ গ্রামের মাঝি বা জেলেদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে, শ্রম আইন সম্পর্কে এদের কোন ধারণা না থাকায় এদিক দিয়ে আমরা অনেক নিরাপদ এবং তা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সাশ্রয়ীও বটে । সুতরাং সব দিক বিবেচনা করে নৌকা বাইচ কে আমাদের কোম্পানীর নিয়মিত স্পোর্টস্‌ ইভেন্ট হিসাবে পরগণিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি” ।

তার এরূপ তথ্য বহুল ও বাস্তবসম্মত রিপোর্টে সবাই বিমুগ্ধ ও বিমোহিত । বলাই বাহুল্য তাকেই এই সেকশনের ইনচার্জ করা হোল । পরবর্তী মূল্যায়নে তার সিনিয়র ম্যানেজার হওয়া আর ঠেকায় কে?


ম্যানেজার সাহেব সেদিনই অফিস ছুটি নিয়ে লাইব্রেরীতে গেলেন, কোম্পানীর বেশ কিছু টাকা খরচ করে নৌকা বাইচ সংক্রান্ত সব বই কিনে আনলেন এবং মহা উৎসাহে তা পড়া শুরু করলেন । একই সাথে কোম্পানীর খরচ বাঁচানোর জন্য প্রথম বছর শুধু একজন বাইন (যে নৌকার বৈঠা বায়) নিয়োগ দেয়া হোল । সে এখন লুঙ্গি গামছা বাদ দিয়ে শার্ট প্যান্ট পড়ে আর প্রতিদিন নয়টা পাঁচটা অফিস করে ।

অবশেষে আসল প্রথম প্রতিযোগিতা । প্রতিযোগিতার দিন কোম্পানীর বোর্ডের সিদ্ধান্তে সকল ডিপার্টমেন্ট হেডরাও অংশ গ্রহণ করবে, তবে বাইন হিসাবে নয়, ক্যাপ্টেন হিসাবে ।


প্রতিযোগিতা শুরু হোল । প্রতিযোগিতায় কোম্পানীর নৌকা হারল । অবস্থান সর্বশেষ নৌকাটি থেকেও এক মাইল পেছনে ।


প্রতিযোগিতায় আসা কোম্পানীর সকল সাপোর্টারের চেহারা আর দেখা যায় না । সবাই লজ্জায় নয়, ভয়ে অস্থির । এখন এম ডি’র কাছে এই দুসংবাদ পৌছাবে কে? চাকরি নিয়ে যে একেবারে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে !

অবশেষে মার্কেটিং ম্যানেজারের ওপর দায়িত্ব পড়ল এম ডি’কে ফোন করে এই দুঃসংবাদ জানানোর । এই জাতীয় বিপদগুলোতে নাকি তার প্রেজেন্টেশনগুলোই সবচাইতে কাজে আসে । তিনি এম ডি’কে ফোন করলেন –“স্যার, আস্‌সালামু-আলাইকুম স্যার । কেমন আছেন স্যার ? আমি মার্কেটিং ম্যানেজার বলছিলাম স্যার । জ্বী জ্বী স্যার, হিউম্যান রিসোর্স মানেজার কাছেই আছেন স্যার, তবে উনার একটু হাঁচির সমস্যা আছেতো স্যার, আপনিতো জানেনই স্যার, আর তারওপর এতক্ষণ পানিতে ছিলেন স্যার, তাই কন্টিনিউয়াস হেঁচেই যাচ্ছেন স্যার । উনিই আপনাকে ফোন করতে যাচ্ছিলেন স্যার, আমিই মানা করলাম স্যার । উনাকে বললাম যে আপনি একটু রেস্ট নেন স্যার, আপনার ওপর অনেক খানি ধকল গেছে স্যার, আর স্যারকে সুসংবাদটা আমিই জানাই স্যার । জ্বী, জ্বী স্যার? না, না স্যার, আমরা ফার্ষ্ট হই নাই স্যার, তবে স্যার সুখবর হচ্ছে ফার্ষ্ট বারের তুলনায় আমরা অনেকখানি এগিয়ে ছিলাম স্যার । পরেরবার আমাদের আর কেউ আটকাতে পারবে না স্যার । হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার অফিসে ফিরেই আমি রিপোর্ট করব স্যার । না, না, স্যার পরেরবার নিয়ে আপনি আর টেনশন করবেন না স্যার, আমি তো আছিই... স্যার ।

যথারীতি মার্কেটিং ম্যনেজার অফিসে ফিরেই রিপোর্ট করলেন । তার রিপোর্ট এম ডি যথাযথ ব্যবস্থা নেবার জন্য বোর্ডের কাছে পাঠালেন । বোর্ড কোম্পানীর সাত ডিপার্টমেন্টের সাত জন হেড’দের নিয়ে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিলেন । তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হোল পরবর্তী মিটিঙেই কোম্পানীর এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় হারার পেছনের কারণ অনুসন্ধান, তা বিশ্লেষণ ও পরবর্তী করণিয় সম্বন্ধে ডিটেইল রিপোর্ট করার জন্য ।


পরবর্তী মিটিঙে তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে যা উল্লেখ করল তার সারমর্ম দাঁড়াল এরকম –

প্রথমত, যে নৌকাটি প্রথম হয়েছে তাতে ছিল সাত জন বাইন আর একজন ক্যাপ্টেন ।


দ্বিতীয়ত, কোম্পানীর নৌকাটি প্রথম হতে পারেনি, কারণ তাতে ছিল সাত জন ক্যাপ্টেন আর একজন বাইন । এবং যেহেতু বোর্ড শুধুমাত্র ডিপার্টমেন্ট হেডদের এবং বাইনকে বাইচে অংশগ্রহণ করতে বলেছিল, এ ছাড়া তাদের পক্ষে আর অন্য কাউকে নৌকায় নেয়া সম্ভবপর ছিল না ।


বোর্ড এই প্রকার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারল না, তারা তৃতীয় একটি উপদেষ্টা কোম্পানীকে নিয়োগ দিল এ সংক্রান্ত সব সমস্যা সমাধানের জন্য ।


উপদেষ্টা কোম্পানী তাদের চাহিদা মত যথেষ্ট পরিমান টাকা নিয়ে তাদের কাজ শুরু করে দিল । কয়েক মাস ব্যাপি একটানা গবেষণা করে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, অনেক বেশী সংখ্যায় ক্যাপ্টেন এবং মাত্র একজন বাইন, এই ছিল কম্পিটিশনে কোম্পানীর হারার মূল কারণ । অতঃপর তারা এ সংক্রান্ত তাদের উপদেশ প্রদান করল বোর্ডের কাছে ।


তাদের উপদেশ মত কোম্পানী নৌকার ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ পুনঃগঠন করল । পুনঃ গঠিত ব্যবস্থাপনায় নৌকায় এবার থাকল একজন সিনিয়র ম্যানেজার, দুই জন ম্যানেজার, চার জন ক্যাপ্টেন আর পূর্বের মতই একজন বাইন । তাদের উপদেশ মত বাইনের যথাযথ ট্রেনিঙের ব্যবস্থাও করা হোল ।


পরবর্তী বছর আবার কম্পিটিশন এল । এবার কোম্পানীর নৌকার অবস্থান হোল সর্বশেষ নৌকারও দুই মাইল পেছনে ।


বাইনের এই দূর্বল পারফরমেন্সের জন্য সে সাথে সাথে চাকরি হারাল ।


কিন্তু নৌকার অন্যান্য কর্মকর্তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়ীত্ব ঠিক ঠাক মত পালন করার জন্য পুরুষ্কৃত হোল ।


উপদেষ্টা কোম্পানী আবার নতুন করে সব কিছু বিশ্লেষণ শুরু করে দিল । তাদের রিপোর্টে যা লেখল, তা হোল ষ্ট্রাটেজি ভালো ছিল, নৌকার কর্মকর্তাদের পারফরমেন্সেও কোন ঘাটতি ছিল না, শুধু নৌকাটি পরিবর্তন করে নিলেই হবে ।


তারা এখন একটি নতুন ধরণের নৌকা ডিজাইনের কাজে ব্যস্ত । চলবে...
হঠাৎ একদিন একটা কোম্পানী ডিসিশন নিল, তারা স্পোর্টস্‌ ইভেন্টে-এ নিয়মিত অংশ গ্রহণ করবে, এ জন্য প্রয়োজনে তারা একটা নতুন সেকশন গঠন করবে (মূল উদ্দেশ্য অবশ্য কিছু পাবলিসিটি আর সরকারের কিছু ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া) । কিন্তু ইভেন্ট কি হবে? বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স সারাদিন মিটিং করল, কিন্তু কোন সমাধানে ঐক্যমতে পৌছাতে পারল না । অতঃপর সবাই একত্রে সবচাইতে সহজ ডিসিশনটা নিল, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারকে ডেকে পাঠাল, তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিল আর আগামী মিটিঙয়ের আগেই এ ব্যাপারে ডিটেইল রিপোর্ট দিতে বলল ।

ম্যানেজারের মাথা খারাপ হবার দশা - “আরে বাবারা বলে কি? আমি সারাজীবন চললাম Nine Fingers / Ten Fingers করে (Nine Fingers / Ten Fingers মানে হচ্ছে সারাজীবন অন্যান্য এমপ্লয়ীদের পেছনে একটি আঙুল দিয়ে রাখতে হয়, তাই তাকে সবসময় হাতের নয় আঙুল না দশ আঙুল খেয়াল রাখতে রাখতেই দিন যায়), আর আমাকে কিনা বলে কোম্পানী কোন স্পোর্টস্‌ ইভেন্টে পার্টিসিপেট করবে তা নিয়ে রিপোর্ট করতে ? কেন সেলস্‌ ম্যানেজার যে সারাদিন কাজ ফাঁকি দিয়ে খেলাধূলা নিয়ে থাকে, তাকে বলা যায় না ?

অতঃপর কিছুদিন তার ডিপার্টমেন্টের সবাইকে চূড়ান্ত ত্যক্ত বিরক্ত করে, ইউনিভার্সিটি জীবনের সকল বন্ধুদের অফিসে অফিসে ধরণা দিয়ে এবং বউএর সাথে ঝগড়া ঝাঁটি করে তাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে সে পরবর্তী মিটিঙয়ে তার বোর্ড কে যে রিপোর্ট করল তার সারমর্ম মোটামুটি এই রকম- “বাংলাদেশ একটি নদী মাতৃক দেশ, এই দেশী একটি কোম্পানী হয়ে আমরা যদি আমাদের অস্তিত্বকে ভুলে যাই, সেটা আমাদের কোম্পানীর অস্তিত্বকেই ভুলে যাবার সমতুল্য । তাই নৌকা বাইচ ইভেন্টে আমাদের অংশ গ্রহন অধিক যুক্তি সঙ্গত । অন্যদিকে এই ইভেন্টে প্রতিযোগিতার হার অনেক কম, তাই আমাদের জয়ী হবার সম্ভাবনা বেশী, এটি আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে । এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ আমাদের বিদেশী বায়ারদের কাছেও আমাদের দেশাত্ববোধ সমুন্নত রাখবে । এই ইভেন্টের খেলোয়ারদের বেতন কাঠামো অনেক কম । এই খেলোয়ারদের সাধারণ গ্রামের মাঝি বা জেলেদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে, শ্রম আইন সম্পর্কে এদের কোন ধারণা না থাকায় এদিক দিয়ে আমরা অনেক নিরাপদ এবং তা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সাশ্রয়ীও বটে । সুতরাং সব দিক বিবেচনা করে নৌকা বাইচ কে আমাদের কোম্পানীর নিয়মিত স্পোর্টস্‌ ইভেন্ট হিসাবে পরগণিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি” ।

তার এরূপ তথ্য বহুল ও বাস্তবসম্মত রিপোর্টে সবাই বিমুগ্ধ ও বিমোহিত । বলাই বাহুল্য তাকেই এই সেকশনের ইনচার্জ করা হোল । পরবর্তী মূল্যায়নে তার সিনিয়র ম্যানেজার হওয়া আর ঠেকায় কে?


ম্যানেজার সাহেব সেদিনই অফিস ছুটি নিয়ে লাইব্রেরীতে গেলেন, কোম্পানীর বেশ কিছু টাকা খরচ করে নৌকা বাইচ সংক্রান্ত সব বই কিনে আনলেন এবং মহা উৎসাহে তা পড়া শুরু করলেন । একই সাথে কোম্পানীর খরচ বাঁচানোর জন্য প্রথম বছর শুধু একজন বাইন (যে নৌকার বৈঠা বায়) নিয়োগ দেয়া হোল । সে এখন লুঙ্গি গামছা বাদ দিয়ে শার্ট প্যান্ট পড়ে আর প্রতিদিন নয়টা পাঁচটা অফিস করে ।

অবশেষে আসল প্রথম প্রতিযোগিতা । প্রতিযোগিতার দিন কোম্পানীর বোর্ডের সিদ্ধান্তে সকল ডিপার্টমেন্ট হেডরাও অংশ গ্রহণ করবে, তবে বাইন হিসাবে নয়, ক্যাপ্টেন হিসাবে ।


প্রতিযোগিতা শুরু হোল । প্রতিযোগিতায় কোম্পানীর নৌকা হারল । অবস্থান সর্বশেষ নৌকাটি থেকেও এক মাইল পেছনে ।


প্রতিযোগিতায় আসা কোম্পানীর সকল সাপোর্টারের চেহারা আর দেখা যায় না । সবাই লজ্জায় নয়, ভয়ে অস্থির । এখন এম ডি’র কাছে এই দুসংবাদ পৌছাবে কে? চাকরি নিয়ে যে একেবারে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে !

অবশেষে মার্কেটিং ম্যানেজারের ওপর দায়িত্ব পড়ল এম ডি’কে ফোন করে এই দুঃসংবাদ জানানোর । এই জাতীয় বিপদগুলোতে নাকি তার প্রেজেন্টেশনগুলোই সবচাইতে কাজে আসে । তিনি এম ডি’কে ফোন করলেন –“স্যার, আস্‌সালামু-আলাইকুম স্যার । কেমন আছেন স্যার ? আমি মার্কেটিং ম্যানেজার বলছিলাম স্যার । জ্বী জ্বী স্যার, হিউম্যান রিসোর্স মানেজার কাছেই আছেন স্যার, তবে উনার একটু হাঁচির সমস্যা আছেতো স্যার, আপনিতো জানেনই স্যার, আর তারওপর এতক্ষণ পানিতে ছিলেন স্যার, তাই কন্টিনিউয়াস হেঁচেই যাচ্ছেন স্যার । উনিই আপনাকে ফোন করতে যাচ্ছিলেন স্যার, আমিই মানা করলাম স্যার । উনাকে বললাম যে আপনি একটু রেস্ট নেন স্যার, আপনার ওপর অনেক খানি ধকল গেছে স্যার, আর স্যারকে সুসংবাদটা আমিই জানাই স্যার । জ্বী, জ্বী স্যার? না, না স্যার, আমরা ফার্ষ্ট হই নাই স্যার, তবে স্যার সুখবর হচ্ছে ফার্ষ্ট বারের তুলনায় আমরা অনেকখানি এগিয়ে ছিলাম স্যার । পরেরবার আমাদের আর কেউ আটকাতে পারবে না স্যার । হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার অফিসে ফিরেই আমি রিপোর্ট করব স্যার । না, না, স্যার পরেরবার নিয়ে আপনি আর টেনশন করবেন না স্যার, আমি তো আছিই... স্যার ।

যথারীতি মার্কেটিং ম্যনেজার অফিসে ফিরেই রিপোর্ট করলেন । তার রিপোর্ট এম ডি যথাযথ ব্যবস্থা নেবার জন্য বোর্ডের কাছে পাঠালেন । বোর্ড কোম্পানীর সাত ডিপার্টমেন্টের সাত জন হেড’দের নিয়ে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিলেন । তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হোল পরবর্তী মিটিঙেই কোম্পানীর এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় হারার পেছনের কারণ অনুসন্ধান, তা বিশ্লেষণ ও পরবর্তী করণিয় সম্বন্ধে ডিটেইল রিপোর্ট করার জন্য ।


পরবর্তী মিটিঙে তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে যা উল্লেখ করল তার সারমর্ম দাঁড়াল এরকম –

প্রথমত, যে নৌকাটি প্রথম হয়েছে তাতে ছিল সাত জন বাইন আর একজন ক্যাপ্টেন ।


দ্বিতীয়ত, কোম্পানীর নৌকাটি প্রথম হতে পারেনি, কারণ তাতে ছিল সাত জন ক্যাপ্টেন আর একজন বাইন । এবং যেহেতু বোর্ড শুধুমাত্র ডিপার্টমেন্ট হেডদের এবং বাইনকে বাইচে অংশগ্রহণ করতে বলেছিল, এ ছাড়া তাদের পক্ষে আর অন্য কাউকে নৌকায় নেয়া সম্ভবপর ছিল না ।


বোর্ড এই প্রকার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারল না, তারা তৃতীয় একটি উপদেষ্টা কোম্পানীকে নিয়োগ দিল এ সংক্রান্ত সব সমস্যা সমাধানের জন্য ।


উপদেষ্টা কোম্পানী তাদের চাহিদা মত যথেষ্ট পরিমান টাকা নিয়ে তাদের কাজ শুরু করে দিল । কয়েক মাস ব্যাপি একটানা গবেষণা করে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, অনেক বেশী সংখ্যায় ক্যাপ্টেন এবং মাত্র একজন বাইন, এই ছিল কম্পিটিশনে কোম্পানীর হারার মূল কারণ । অতঃপর তারা এ সংক্রান্ত তাদের উপদেশ প্রদান করল বোর্ডের কাছে ।


তাদের উপদেশ মত কোম্পানী নৌকার ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ পুনঃগঠন করল । পুনঃ গঠিত ব্যবস্থাপনায় নৌকায় এবার থাকল একজন সিনিয়র ম্যানেজার, দুই জন ম্যানেজার, চার জন ক্যাপ্টেন আর পূর্বের মতই একজন বাইন । তাদের উপদেশ মত বাইনের যথাযথ ট্রেনিঙের ব্যবস্থাও করা হোল ।


পরবর্তী বছর আবার কম্পিটিশন এল । এবার কোম্পানীর নৌকার অবস্থান হোল সর্বশেষ নৌকারও দুই মাইল পেছনে ।


বাইনের এই দূর্বল পারফরমেন্সের জন্য সে সাথে সাথে চাকরি হারাল ।


কিন্তু নৌকার অন্যান্য কর্মকর্তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়ীত্ব ঠিক ঠাক মত পালন করার জন্য পুরুষ্কৃত হোল ।


উপদেষ্টা কোম্পানী আবার নতুন করে সব কিছু বিশ্লেষণ শুরু করে দিল । তাদের রিপোর্টে যা লেখল, তা হোল ষ্ট্রাটেজি ভালো ছিল, নৌকার কর্মকর্তাদের পারফরমেন্সেও কোন ঘাটতি ছিল না, শুধু নৌকাটি পরিবর্তন করে নিলেই হবে ।


তারা এখন একটি নতুন ধরণের নৌকা ডিজাইনের কাজে ব্যস্ত ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.