নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভণিতাহীন নিঃশব্দ কথা

আমি কেবল তোমার কষ্টপক্ষ ছুঁয়ে থাকতে চাই

সোহেল আহমেদ পরান

একজন সাধারণ মানুষ। ভালোবাসি সত্য ও সাধারণকে। ভালোবাসি ভালোবাসতে। মনেপ্রাণে পজিটিভ।

সোহেল আহমেদ পরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ দহন

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:২২



~এক~

একাত্তর বয়স চলছে তাঁর। সুঠাম দেহ টানটান ভাব হারালেও তেমন দুর্বল হয়ে যাননি তিনি। ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে যান ঠিক আযানের সময়। কোনো এলার্ম দরকার হয় না। রুটিন করে ঠিক ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্ত্রী রাফিজা বেগম মারা গেছেন দশ বছর আগে। এরপর অনেকদিন ঘুম না আসার রোগ গেছে তাঁর। তারপর ক্রমেই এ অভ্যাস হয়ে গেছে তাঁর। যখন ইচ্ছে ঘুম থেকে ওঠে যেতে পারেন তিনি এখন। অথচ স্ত্রী বেঁচে থাকতে ছিলো ঠিক উল্টো। স্ত্রীর ক্রমাগত ডাকে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁকে ঘুম থেকে ওঠতে হতো।
তিনি কাদের সিদ্দিকী। মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী। একই নামে একজন বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা থাকায় খুব গর্ব হয় তাঁর। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তবে গাজীপুরের ধনুয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এই কাদের সিদ্দিকী। এখন থাকেন ঢাকায়। ভাড়া বাসায় । ছেলের সংসারে। খাঁচায় বন্দি বনের পাখি। ফজরের নামাজ শেষে রোজই তিরিশ মিনিট হাঁটেন তিনি। হালকা ডায়াবেটিক আছে তাঁর। উচ্চ রক্তচাপও আছে। রোজকার মতো হাঁটা শেষ করে বাসায় কলিংবেল চাপেন তিনি। ন’বছরের নাতনি প্রজ্ঞা দরজা খুলে দেয়ঃ
” শুভ সকাল। আসসালামু আলাইকুম দাদাভাই।”
মন ভীষণ ভালো হয়ে যায় কাদের সিদ্দিকীর। প্রজ্ঞাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভেতরে ঢুকেন তিনি। মনে মনে প্রতিদিনই ছেলেকে ধন্যবাদ দেন এই জন্য যে, সন্তানদের তাঁর শেখানো আদবকায়দা শিক্ষা দিয়েছে বলে।

~দুই~
চা শেষ করে ফুরফুরে মেজাজে পত্রিকা হাতে নেন কাদের সিদ্দিকী। একটু ভয়ভয়েই হাতে নেন তিনি। কারণ প্রতিদিনই মনখারাপ করার মতো একাধিক খবর থাকে। আজ প্রথমেই খুব ভালো একটা খবর নজর কাড়ে তাঁর। ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ইংল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে জয় এবং তা নিয়ে সারাদেশের মানুষের উল্লাস। পতাকা নিয়ে মিছিল। আনন্দে চোখ ভিজে আসে তাঁর। চোখ বুজে একাত্তরে চলে যান তিনি। আহা! কী আবেগ! কী ভালোবাসা পতাকা ঘিরে।

ভালোলাগার আবেশটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না মুক্তিসেনা কাদের সিদ্দিকীর। চোখ আটকে যায় অন্য একটি খবরে- “পুলিশ সদস্যের বাসায় অপহৃত স্কুলছাত্রের লাশ” । পড়তে শুরু করেন তিনি। “চার দিন আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে শিশু অপহৃত হওয়ার পর পরিবারকে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। সিলেটের নগরীর ঝর্ণার পাড় সুনাতলা এলাকায় বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুর রহমানের বাসা থেকে শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে শিশু সাঈদের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান। নিহত আবু সাঈদ (৯) নগরীর শাহ মীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। –” আর এগুতে পারেন না তিনি। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। খানিক আগের আনন্দাশ্রু এখন তাঁর বিষাদের কান্না। এমন অনেক খবরই তাঁর রোজ পড়তে হয়। ভেবে পান না তিনি- দেশে কী হলো? মানুষ এটো নৃশংস হয়ে যাচ্ছে কেনো?

অন্য আরো অনেক খবরই তাঁকে বিচলিত করে। কষ্ট দেয় অনেক ঘটনা। সত্যের নির্বাসন আজ যেনো অবধারিত সবস্তরে। মূল্যবোধের মূল্য নেই – মানবিকবোধ কেঁদে ফিরছে দ্বারে দ্বারে। মানুষের হঠাৎ গুম হয়ে যাওয়া আর অপরাধীর বড় সমাজপতি বনে যাবার বিষয়গুলো একজন নিবেদিতপ্রাণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেক পীড়া দেয় কাদের সিদ্দিকীকে এই বয়সে। তিনি ভাবতেই পারেন না- সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কীভাবে ফাঁস হয়ে যেতে পারে! পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নাকি মোবাইল ফোনে ঘুরে বেড়ায়। জাতি কি তাহলে মেধাশূন্য হয়ে যাবে?
“বাবা, আপনার গোসলের সময় হয়েছে।” – বউমা কাঁকনের কথায় চিন্তায় ছেদ পড়ে তাঁর।
“আমি যাচ্ছি মা।”
কাদের সিদ্দিকী ভাবেন- এ যুগে তাঁর ছেলে ও ছেলের বউ তাও বেশ আন্তরিক তাঁর যত্ন নেয়ার ব্যাপারে। ছেলে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। সকালে বেরিয়ে যায়। ফেরে সেই রাত নয়টার দিকে। তবু ফিরেই বাবার খোঁজ নেয় সে। সংসারে টানাটানি আছে- বুঝতে পারেন কাদের সিদ্দিকী। কিন্তু তা নিয়ে কখনোই কথা শুনতে হয়নি তাঁকে।

সেদিন তাঁর এক সহযোদ্ধা মনির উদ্দিন ফোন করেছিলো বরিশাল থেকে। অনেক কষ্টের কথা জানালো- একমাত্র ছেলে ভালো চাকরি করে। থাকে ঢাকায়। ছেলে খোঁজ খবর নেয় না বৃদ্ধ বাবা মায়ের। শোনা যায়- মনির উদ্দিনের নাতি – উঠতি বয়সের ছেলেটি নাকি নেশায় আসক্ত। ইয়াবা খেয়ে ঝিম মেরে থাকে সারাদিন। এসব শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে গিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী।

“দাদাভাই, দাদাভাই, দেখো আমি একটি ছবি এঁকেছি। আমাদের গ্রামের ছবি। বলোতো কেমন হয়েছে?” নাতনি প্রজ্ঞা দৌড়ে এসে ছবিটি কাদের সিদ্দিকীর হাতে দেয়।
“বাহ! খুব সুন্দর ছবি হয়েছেতো দাদাভাই। একেবারে আমাদের সেই সবুজ গ্রাম।”

মেয়েটি সত্যি খুব সুন্দর ছবি আঁকে। অবসরের গল্প-সঙ্গী এই নাতনিটি তাঁর। কাছে টেনে কপালে চুমু খান তিনি প্রজ্ঞার। ঊঠে পড়েন গোসল সাড়ার জন্য। তখনই বাইরে থেকে একটা মাইকিং এর আওয়াজ পাওয়া যায়। কান খাড়া করেন তিনি। প্রজ্ঞাও। – এ মহল্লারই চার বছরের মেয়ে মুসকানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সকালে খেলতে বেড়িয়েছিল। ফেরেনি এখনো। সিদ্দিকী সাহেব ভাবলেন, হয়তো আশেপাশে আছে। চলে আসবে মেয়েটি।

~তিন~
খাবার টেবিলে বসে সিদ্দিকী সাহেব সবসময় নস্টালজিক হন। গাঁয়ে কতো তাজা টাটকা খাবার পেতো তারা! শাকসবজি, ফলুমূল সব। তাঁদের একটা গজারি বন ছিলো। সেখানে প্রতিবছর মৌচাক বসতো। বড় পাতিল ভরা খাঁটি মধু থাকতো সবসময় ঘরে। আর এখন! সবকিছুতে ভেজাল। ভেজাল খেয়ে না না দুরারোগ্য অসুখে আক্রাত হচ্ছে মানুষ। ইদানিং নাকি ঔষধেও ভেজাল দিচ্ছে। কী হচ্ছে আসলে। এই চিন্তার দূষণে আক্রান্ত দেশ কি চেয়েছিলেন তখন মুক্তিকামী মানুষ? কষ্ট হয় এই ভেবে যে, তাঁর নাতিরা বিশুদ্ধ বা খাঁটি জিনিস কেমন হয় দেখতেও পারছে না। আহা!

আরো দুটি বিষয় তাঁকে যারপরনাই ব্যথিত করে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দলবাজি- মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে জালিয়াতি। সেই জালিয়াতিতে আবার জড়িত থাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্তাগণ। কী নির্লজ্জতা ! আবার মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বেদেশি বন্ধুদের সম্মাননা ক্রেস্টেও নাকি ভেজাল!! জাতি হিসেবে মাথা হেট হয়ে যায়। ভাবনাটা আবার আসায় কষ্টটা সহযোগী হয়ে আসে। বুকের বাঁপাশটা চিনচিন করে ওঠে। একটা দহন ভেতর বাড়িতে।

~চার~
সন্ধ্যা পরবর্তী সময়। টিভিতে খবর দেখছিলেন কাদের সিদ্দিকী সাহেব। হঠাৎ শোরগোল শুনে বেলকনিতে বেড়িয়ে আসে সবাই। অনেক মানুষের কোলাহল। হট্টগোল। কান্নাকাটি। কাদের সিদ্দিকীসহ বাসার সবাই মনে করলো- হয়তো হারানো মুসকানকে খুঁজে পেয়েছে। এ কান্না হয়তো আনন্দের।
কিন্তু না। ক্রমশ পরিষ্কার হলো সব। জানা গেলো- অপ্রত্যাশিত নির্মম সত্য।
পাশেই নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের পাইলিংয়ে পাওয়া গেছে মুসকানকে। তবে জীবিত নয়। মিলেছে মুসকানের লাশ। আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। মাত্র চার বছরের এই শিশু মুসকানের কোনো শত্রু থাকতে পারে- ভাবাই যায় না। কী কারণে এ রকম পরিণতি হবে নিষ্পাপ মুসকানের!
একাত্তরের বীর কাদের সিদ্দিকী অসহায়বোধ করেন। শরীর অবশ হয়ে আসে তাঁর। চোখের সামনে নয় বছরের নাতনি প্রজ্ঞার মুখ ভেসে ওঠে। দৌড়ে গিয়ে প্রজ্ঞাকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। যেনো লুকোবেন কোথাও। লুকিয়ে রাখবেন প্রজ্ঞাকে।একাত্তরের সেই বীর যোদ্ধা আজ যেনো ভীষণ শঙ্কিত। কাঁপছেন তিনি।
বৌমা কাঁকন দৌড়ে এসে শ্বশুরকে ধরেন।
“কী হলো বাবা? এমন করছেন কেনো?”
সিদ্দিকী সাহেব শুধু মুখে উচ্চারণ করলেনঃ “প্রজ্ঞা, প্রজ্ঞা।”
বিছানায় শুইয়ে দেয়া হলো তাঁকে। জরুরি ফোন করা হলো প্রজ্ঞার বাবাকে। ডাক্তারকে।
মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে কাদের সিদ্দিকী সাহেবের। পাশে বসা নাতনি প্রজ্ঞা।
ডাক্তার আসার প্রতীক্ষায় সবাই।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:

এটা কি গল্প?

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩০

সোহেল আহমেদ পরান বলেছেন: চেষ্টা করেছি গল্পই লেখার<<
-- অনেক ধন্যবাদ

২| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫৫

মহান অতন্দ্র বলেছেন: গল্পটা কি এখানেই শেষ? শুভ কামনা আপনার জন্য। আরও লিখুন।

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩১

সোহেল আহমেদ পরান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ

৩| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫৮

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: গল্প পরে ভালো লাগল ।

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩২

সোহেল আহমেদ পরান বলেছেন: ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা নিবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.