নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিচিত্র চরিত্রের সন্ধানে…

বিচিত্রতায় উপস্থিত হলেই কেবল বিচিত্র চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়।

পৃথ্বীর পরিব্রাজক

কিছু প্রস্ফুটিত স্বপ্নের প্রয়াণ, যেখানে স্বাপ্নিক আমি! কারো অযত্নের, অবহেলার ও অনাদরের পাত্র, সেও এই অপরিত্‌যক্ত আমি!!!

পৃথ্বীর পরিব্রাজক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শবে বরাত ও এর শরীয়ত ভিত্তিক প্রমাণ

১৩ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫

১৪ই শা'বান দিবাগত রাতটি হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত বা বরাতের রাত্র।কিন্তু অনেকে বলে থাকে কুরআন-হাদীছের কোথাও শবে বরাত শব্দ নেই। শবে বরাত বিরোধীদের এরূপ জিহালতপূর্ণ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, শবে বরাত শব্দ দু'টি যেরূপ কুরআন ও হাদীছ শরীফের কোথাও নেই তদ্রূপ নামায, রোযা , খোদা, ফেরেশতা, পীর ইত্যাদি শব্দ কুরআন ও হাদীছ শরীফের কোথাও নেই। এখন শবে বরাত বিরোধী লোকেরা কি নামায, রোযা ইত্যাদি শব্দ কুরআন ও হাদীছ শরীফে না থাকার কারনে ছেড়ে দিবে? মূলত শবে বরাত,নামায, রোযা , খোদা ,ফেরেশতা , পীর ইত্যাদি ফার্সী ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত। ফার্সী শব অর্থ রাত্রি এবংবরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত মানে হল ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত।

মূলতঃ শবে বরাত এবং এর ফযীলত কুরআন শরীফে আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর হাদীস শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শা'বান বা শা'বান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ

فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ

أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ

অর্থঃ

"শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।"

(সূরা দু'খানঃ ২-৫)

কেউ কেউ বলে থাকে যে,"সূরা দু'খানের উল্লেখিত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদর-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে সুস্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি........। আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাতে নাযিল করা হয়েছে তা সূরা ক্বদরেও উল্লেখ আছে ।"

এ প্রসঙ্গে মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন,

"মহান আল্লাহ পাক লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শা'বান মাসের মধ্য রাত বা শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ পাক এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়সালা করে থাকেন।"

(ছফওয়াতুত তাফাসীর, তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খন্ডঃ ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস,তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ডঃ ৩৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খন্ড, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, রুহুল বয়ান, আবী সাউদ, বাইযাবী, দূররে মানছূর, জালালাইন, কামলালাইন, তাবারী, লুবাব, নাযমুদ দুরার, মাদারিক)

লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ সূরা দু'খানের ৪ নম্বর আয়াত শরীফ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ। এই আয়াত শরীফের يُفْرَقُ শব্দের অর্থ ফায়সালা করা।প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে কিরামগণ يُفْرَقُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন ইয়ুকতাবু অর্থাৎলেখা হয়, ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়সালা করা হয়, ইয়ুতাজাও ওয়াযূ অর্থাৎ বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়, ইয়ুবাররেমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়, ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ নির্দেশনা দেওয়া হয়

কাজেই ইয়ুফরাকু -র অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, লাইলাতুম মুবারাকাহদ্বারা শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য শবে বরাতকে লাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়সালার রাত্র এবং শবে ক্বদরকেলাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়।

(তাফসীরে মাযহারী,তাফসীরে খাযীন,তাফসীরে ইবনে কাছীর,বাগবী, কুরতুবী,রুহুল বয়ান,লুবাব)

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক যে সুরা দু'খান-এ বলেছেন,"আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি"এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল"আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি"। আর সুরা ক্বদর-এ"আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি"এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল"আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি"।

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক শবে বরাতে কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন এবং শবে ক্বদরে তা নাযিল করেন।

হাদীছ শরীফেও শবে বরাতে সমর্থন পাওয়া যায়। হাদীছে শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

"হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে। একদা আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ! আপনি কি জানেন, লাইলাতুন নিছফি মিন শা'বান বা শবে বরাতে কি সংঘটিত হয়? তিনি বললেন, হে আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !এ রাত্রিতে কি কি সংঘটিত হয়? আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ রাতে আগামী এক বছরে কতজন সন্তান জম্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক মৃত্যূবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে বান্দার (এক বছরের) আমলসমূহ আল্লাহ পাকের নিকট পেশ করা হয় এবং এ রাতে বান্দার (এক বছরের) রিযিকের ফায়সালা হয়"।

(বাইহাক্বী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,

"হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একদা আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাতযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন আহলিয়া রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহা-এর হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং বললেনঃ আপনি কি মনে করেন আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারনা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন আহলিয়ার হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা'বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন"।

(বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,

"হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা'বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষনা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলুকাতকে ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকা রী ব্যতীত।"

(ইবনে মাযাহ্, আহমদ, মিশকাত শরীফ)



হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,

"হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষাণা করতে থাকেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে সুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষাণা করতে থাকেন"

(ইবনে মাযাহ্,মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,

"আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি শা'বানের মধ্য রাতে (শবে বরাত) ইবাদত করবে তারই জন্য সুসংবাদ এবং তার জন্য সমস্ত কল্যাণ"

হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,

"আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে এবং অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাতের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, সে ব্যক্তির অন্তর ঐদিন মরবে না বা পেরেশান হবে না যে দিন সকলের অন্তর পেরেশান থাকবে"।

(মুকাশাফাতুল কুলুব)

শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

"আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পাঁচটি রাত এমন রয়েছে যেগুলোতে দোয়া করলে তা রদ বা বাতিল হয়না । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শা'বানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) জুমুয়ার রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত"।

(দায়লামী শরীফ)

শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল প্রসঙ্গে অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

"আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই দোয়া বা মুনাজাত পাঁচটি রাতে কবুল হয়ে থাকে । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শা'বানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) ক্বদরের রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত

(মা ছাবাত বিস্ সুন্নাহ, গুনইয়াতুত্ ত্বালিবীন, মুকাশাফাতুল কুলুব)

সুতরাং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।

অনেকে উপরে উল্লেখিত শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু হাদীসকে দ্বয়ীফ বলে শবে বরাতকে বিদায়ত বলে থাকেন। দ্বয়ীফ হাদীছের ব্যাপারে নিচে আলোচনা করা হলঃ

দ্বয়ীফ হাদীছঃ

যে হাদীছের রাবী হাসান হাদীছের রাবীর গুণ সম্পন্ন নন তাকে দ্বয়ীফ হাদীস বলা হয়।

হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কথাই দ্বয়ীফ নয় বরং রাবীর দুর্বলতার কারণে হাদীছকে দ্বয়ীফ বলা হয়।

দ্বয়ীফ হাদীসের দুর্বলতার কম বা বেশী হতে পারে। কম দুর্বলতা হাসানের নিকটবর্ত্তী আর বেশি হতে হতে মওজুতে পরিণত হতে পারে। এ ধরনের হাদীছ আমলে উৎসাহিত করার জন্য বর্ণনা করা যেতে পররে বা করা উচিৎ। তবে আইন প্রণয়নে গ্রহনযোগ্য নয়।

এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

"দ্বয়ীফ হাদীছ যা মওজু নয় তা ফজিলতের আমল সমূহে গ্রহণযোগ্য"

(ফতহুল ক্বাদীর)

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বিহ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

"সকলেই একমত যে দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে।"

(আল মওজুআতুল কবীর, ১০৮ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমাণিত হল যে, দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে। তবে দ্বয়ীফ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত সকল আমল মুস্তাহাব।

যেমনঃ আল্লামা ইব্রাহিম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গুলিয়াতুল মুস্তামালী ফি শরহে মুনিয়াতুল মুছাল্লি কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

"গোসলের পরে রূমাল (কাপড়) দিয়ে শরীর মোছা মুস্তাহাব। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে - আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটুকরা কাপড় (রূমাল) ছিল যা দিয়ে তিনি অযুর পরে শরীর মুবারক মুছতেন"(তিরমিযি শরীফ)

এটা দ্বয়ীফ হাদীছ। কিন্তু ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা যাবে।

হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আল মওজুআতুল কবীরের ১০৮ পৃষ্ঠায় বলেন,

"সকলে একমত যে দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে। এজন্য আমাদের আইম্মায়ি কিরামগণ বলেছেন, অযুর মধ্যে গর্দান মসেহ্ করা মুস্তাহাব।"

তার মানে অযুর মধ্যে গর্দান মসেহ্ করা -এটি দ্বয়ীফ হাদীছ।

সুতরাং যারা শবে বরাতের হাদীস সংক্রান্ত কিছু দলিলকে দ্বয়ীফ হাদীছ বলে শবে বরাত পালন করা বিদায়াত বলে তাদের এধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভূল।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:০৩

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: প্রথমে মনে রাখতে হবে, কুর'আনে যা যা বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসুল তা ব্যাখ্যা করেছেন। কিছু কিছু আদেশ উনি নিজে করেদেখিয়েছেন। এইগুলাই হাদিস।

মজা লাগল পড়ে যে, যেই রাত্রিতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য শবে বরাতকে লাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়সালার রাত্র এবং শবে ক্বদরকেলাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়।

এর অর্থ কি এই যে আল্লাহও আমাদের মত ফাইলের কাজ করেন। একদিন হুকুম দেন আর অন্য দিন থেকে তা চালু করেন। কবে শুনবো যে আল্লাহ ভূতাপেক্ষেও অনেক কিছু করে থাকেন! (নাউযুবিল্লাহ) এই আল্লাহ কি সেই আল্লাহ যিনি শুধু বলেন হও আর সর সৃষ্টি হয়ে যায়? ধর্মের ব্যাখ্যা দেবার সময়ে এইসব ব্যাপারগুলার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন।

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:১২

পৃথ্বীর পরিব্রাজক বলেছেন: আপনার এই সামান্যটুকু কথার মাঝে হাদিসের সংজ্ঞা নিহিত নয়। হাদিস, সুন্নাহ, আছার এবং খবরের রয়েছে বিস্তৃত সংজ্ঞা এবং রয়েছে তাদের মাঝে কতিপয় পার্থক্য।

এখানে মজা পাওয়ার কোনো যতোপযুক্ত কারণ দেখতে পাচ্ছি না।
এটি কোনো মনগড়া কথা ছিল না। যা এখানে বলেছি তার উপযুক্ত রেফারেনসও দিয়েছি।
আপনি উল্লেখিত কিতাবাবলী দেখেন অতঃপর মন্তব্য করেন।
হ্যাঁ! আল্লাহ তায়ালা কোনো কিছু সৃষ্টি করতে বলেন كن বা হও অমনি তা হয়ে যায় এ কথা যেমন সত্য ঠিক অনুরুপভাবে তার সৃষ্টি জগতকেও একটা ধারাবাহিক পদ্ধতিতে সৃষ্টি করেছেন যেমনঃ এই আসমান-যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সেটাও আল্লাহ ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন।
আমার খেয়াল ঠিকই আছে শুধু আপনাদের এসব ব্যাপারে সুনজর প্রয়োজন।

২| ১৩ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২

পাউডার বলেছেন:
মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কিভাবে জানলেন এই ফজিলত? তিনি কি নবী ছিলেন? তার উপর ইমান আনা কি ফরজ?

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫৬

পৃথ্বীর পরিব্রাজক বলেছেন: সাহাবী (রা.) নিয়েই আপনার সন্দেহ আমি আপনাকে আর কী বলব? যে সাহাবীদেরকে রাসুল (সা.) আকাশের তারকারাজির সাথে তুলনা করেছেন।

৩| ১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২৯

পাউডার বলেছেন:
সাহাবীর উপর ঈমান আনার নিয়ম কি ইসলামে আছে?

১৪ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২০

পৃথ্বীর পরিব্রাজক বলেছেন: কি আছে আর কি নেই সেটা একটু তালাশ করে দেখার অনুরোধ রইল...

যে সকল ব্যক্তি ঈমানেরহালতে নবী করীম ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ঊয়া সাল্লাম )-এর সাহচর্য্যলাভ করেছিলেন বাতাঁকে এক নজর দেখেছিলেন ( এবংঈমানের উপরই মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদেরকে সাহাবী বলা হয়।ইসলামে সাহাবীদেরগুরুত্ব অনেক। সাহাবীদের এত গুরুত্ব কেন ও কিরূপ তার একটি নজীর লক্ষ্য করুন। ইসলামের মূল কালেমাতৌহিদের দু’টি বিষয়- আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই এবং হযরত মুহাম্মাদ ( সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আল্লাহ তাআলাররাসূল। ঈমানে মুফাসসাল কলেমায়আছে- আমি বিশ্বাস স্থাপন করছি- আল্লাহ তাআলারপ্রতি,আল্লাহর ফেরেশতাগণের প্রতি, আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি, আল্লাহর রাসলগণেরপ্রতি...। লক্ষ্য করুন, আল্লাহ ওরাসূলের মধ্যস্থলে আল্লাহর কিতাব ও তার পূর্বে ফেরেশতাগণের উপর বিশ্বাস ও ঈমানআনার কথা বলা হয়েছে। ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাকে ঈমানের মৌলিকবিষয়াবলীর মধ্যে স্থান দেয়া হয়েছে। এই গুরুত্বের একটি বিশেষ কারণ এই যে, ওহী ছাড়ানবীহতে পারে না। আর ওহী ও আল্লাহর কিতাব প্রেরণ একমাত্র ফেরেশতার মাধ্যমেই হয়।তাই যেখানে রসূল ও কিতাবের প্রতি ঈমান আনতে হবে সেখনে ফেরেশতাদের প্রতিও ঈমান আনতেহবে। ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান ছাড়া কিতাব ) রসূলের উপর ঈমান আনয়নের অর্থই হতে পারেনা।এই দৃষ্টান্তেই বুঝুন।আল্লাহর কালাম কোরআনমাজীদ ও আল্লাহর রসূল মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর পরিচয় এবং তাঁর জীবনাদর্শ বিশ্বমানব একমাত্র সাহাবীদের মাধ্যমেই লাভকরতে পেরেছে। হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আল্লাহ তাআলারদরবার হতে আনিত আদর্শ ও দ্বীনের ভিত্তিতে স্বয়ং নিজ পবিত্র হাতে সাহাবীগনের জামাতগঠন করে গিয়েছেন। তাঁদের আমল, বয়ান এবং প্রচারেরমাধ্যমেই দ্বীন ইসলাম বিশ্বেরকোণে কোণে প্রসার লাভ করেছে।আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) হতে দ্বীন লাভের মাধ্যম এই সাহা্বীগণের উপর হতেবিশ্বাস উঠে যাওয়ার অর্থ হবেকোরআন ও হাদীস হতে বিশ্বাস উঠে যাওয়া।সাহাবীগণ সম্পর্কেপূর্বাপর সকল ইসলামী মনীষীগণের আক্বীদা হল-আমরা সাহাবীগণের গুণচর্চা ব্যতীত মোটেও দোষচর্চা করতে পারবনা। সাহাবীদের প্রতি ভক্তি, মহব্বত রাখাই ধর্ম, ঈমান ও আল্লাহনূরুক্তির পরিচয়।ইমাম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন,রসূল( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )-এর প্রত্যেক সাহাবীরই শুধুমাত্র গুণচর্চাইআমরা করব; কোন সাহাবীরই দোষচর্চা আমরা করতে পারব না।ইসলামী আক্বীদা ওমতবাদ বর্ণনার প্রসিদ্ধ কিতাব আল-মোছামারায় বর্ণিত আছে,নবীজীর সুন্নতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং খাঁটি মুসলিমজামাতভুক্ত সকলের সর্বসম্মত মতবাদ ও আক্বীদা এই যে, সমস্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহুতাআলা আনহুমগণকে ভাল ও খাঁটি বলিয়া বিশ্বাস করতে হবে, তাঁদের কাউকেও দোষী মনে করাহতে বিরতথাকতে হবে এবং গুণচর্চা করতে হবে।ইসলামে সাহাবীগণেরগুরুত্ব এবং তাদের দোষচর্চা হতে বিরত থাকার অবশ্য কর্তব্যকে স্বয়ং রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) ইসলামের ভিত্তিরূপে প্রকাশ করতে বিশেষসতর্কবাণী উচ্চারণ করে গিয়েছেনঃসাবধান! সাবধান! আল্লাহকে ভয় করিও আমার সাহাবীদের সম্পর্কে। খবরদার!খবরদার! আমার পরে মামার সাহাবীদেরকে তোমরা সমালোচনা বস্তুতে পরিণত করো না।অধিকন্তু যে কেউ আমার সাহাবীদেরকেভালবাসবে, বস্তুত সেই ভালবাসা আমার প্রতিইভালবাসা হবে। আর যে কেউ তাঁদের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করবে, বস্তুত সেই খারাপধারণা আমার প্রতি পোষণ করা গণ্য হবে। যে কেউ তাঁদেরকে ব্যথা দিবে সেই ব্যথা আমাকেইদেওয়া হবে, আর যে আমাকে ব্যথা দিবে সে যেন আল্লাহকে ব্যথা দিল এবং আল্লাহকে ব্যথাদিবে অনতিবিলম্বেই আল্লাহতাআলা তাকে পাকড়াও করবেন। ( তিরমিজী শরীফ )রাসূল ( সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম )বলেন,আল্লাহতাআলা আমাকে বাছাই করেছেন ( নবীগণের শ্রেষ্ঠরূপে ), আমার সাহাবীদেরকেউ বাছাইকরেছেন ( নবীদের পরে সকল মানব শ্রেষ্ঠরূপে )। তাঁদেরকে আমার এতঘনিষ্ঠ বানিয়েছেন যে, আমার শ্বশুর-জামাতা সব তাঁদের মধ্য হতে বানিয়েছেন এবংতাঁদেরকে আমার সাহায্যকারী বানিয়েছেন।হে আমার ভবিষ্যত উম্মতগণ! তোমরা সতর্ক থেকো-আমার পরবর্তী যুগে এমন একশ্রেণীর লোক সৃষ্টিহবে যারা সাহাবীদের প্রতি সম্মানহানিকর কথাবলবে। হুশিয়ার!হুশিয়ার! এই শ্রেণীর লোকদের মেয়ে তোমরা বিবাহ করবে না এবনহ তাদের নিকটতোমাদেরমেয়ে বিবাহ দিবে না। খবরদার! তাদেরসঙ্গে তোমরা নামাজও পড়বে না। এই শ্রেণীর লোকদেরজন্য তোমরা দোয়াও করবে না; নিশ্চিত জেনেথাকো এই শ্রেণীর লোকদের উপর আল্লাহরঅভিশাপ বর্ষিত হয়েছে। ( মুসনাদে ইমাম শাফেয়ী )সাহাবীদের এই সব মান-মর্যাদা খামাক আওকারণে নিশ্চই নয়। রাসূলুল্লাহসাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য্যে তাঁদের মধ্যে এমন গুণেরই সৃষ্টি হয়েছিলযার অনবার্য ফল ছিল এইরূপ মান-মর্যাদা।মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম )-এর পরশ-দৃষ্টিতে সাহাবীদেরমধ্যে যে গুণাগুণের সঞ্চার হয়েছিল পরবর্তী সময়ের লোকদের পক্ষে উহার অনুভূতি দুরূহহলেও আল্লাহ এবং রাসূলের যেসব সাক্ষ্য তাঁদের পক্ষে বিদ্যমান রয়েছে সেগুলোর দ্বারাতাঁদের সেই গুণাগুণের আভাস লাভ হতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন,মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। তাঁর সাহাবীগণ আল্লাহদ্রোহীদের প্রতি অতি কঠোর,পরস্পর অতি কোমল। তাঁদেরকে দেখবে, আল্লাহর প্রতি অতিশয় নত ওরত- রূকু, সিজদায়অবনত, আল্লাহর সন্তুষ্টি ওকরুণা অন্বেষণে সদা মগ্ন ও ব্যতিব্যস্ত,আল্লাহ্নুরূক্তির আভা তাঁদের চোখে-মুখে উদ্ভাসিত। তাঁদের এই বৈশিষ্ট ও গুণাবলীরউল্লেখ ( পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব ) তাওরাত ও ইঞ্জিলেও বিদ্যমান রয়েছে। ( পারা-২৬,রুকু-১১ )কোন কাজ একমাত্রআল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করাকে এখলাস বলা হয়। এই এখলাস গুণের তারতম্যেমানুষঅসাধারণ বৈশিষ্টের গৌরব লাভে ধন্য হয়।নবীজী মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )-এর সাহচর্য্যে সাহাবীগণের মধ্যে এই এখলাস গুণএত উচ্চ পর্যায়ে বিদ্যমান ছিল যে, আমরা তা ব্যক্ত করব দূরের কথা, তা উপলব্ধি করতেওসক্ষম হব না।সাহাবীদের মধ্যে এখলাস গুণের অসাধারণ পর্যায় হাসিল থাকার কারণেইতাঁদের বহু অসাধারণ বৈশিষ্টও হাসিল ছিল। যেমন-রসূল ( সাল্লালাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন,(হে আমার ভবিষ্যত উম্মত! তোমরা ) আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলো না; তোমাদের কাহারওউহুদপাহাড় পরিমাণ স্বর্ন দান করা তাঁদের কোন একজনের মাত্র এক মুদ্দ ( প্রায় চৌদ্দছটাক ) বা উহার অর্দ্ধ পরিমাণ কোন বস্তু দানের সমানও হতেপারবে না। ( বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ )ইহা অপেক্ষা আরও অসাধারণ অতি অসাধারণ একটি বৈশিষ্ট সাহাবীদের জন্যসুষ্পষ্টরূপে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে-হযরত ওমর ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) বর্ণনা করেন,আমি নিজ কানে রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )-কে এই কথা বলতে শুনেছি- রাসূল ( সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আমার সাহাবীদের( ভবিষ্যতসম্ভাব্য ) বিরোধ সম্পর্কে আবেদন করলাম। তদুত্তরে আল্লাহ তাআলা আমার নিকট ওহীপাঠিয়ে বললেন, আপনার সাহাবীগণ আমার নিকট আকাশের নক্ষত্ররাজি তুল্য। কমবেশিপ্রত্যেকের মধ্যেই আলো রয়েছে। অবশ্য কাহারও আলো কাহারও অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী; (কিন্তু অন্ধকার কারওমধ্যে নেই ), প্রত্যেকের মধ্যেই আলো রয়েছে। অতএব কোন ক্ষেত্রেতাঁদের বিরোধ হলে যে কেউ তাদের যেকোন একজনের মত ও পথ অবলম্বন করবে সে আমার নিকট সৎপথের পথিকই সাব্যস্ত হবে।হাদীস খানামেশকাত শরীফের ৫৫৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে। এছাড়াও আরও নয়খানা হাদীস গ্রন্থে বর্ণিতইবনে আছাকের, (৬) হাকেম, (৭) দার-কোৎনী, (৮) ইবনে আব্দুল বর, (৯) মাদখাল-বায়হাকী।সাহাবীগণের মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্টের উল্লেখপূর্ববর্তী আসমানী কিতাবেওউল্লেখ ছিল। যথা-তাওরাত শরীফে নবীজী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরআবির্ভাব আলোচনায় মক্কা বিজয় ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে-তিনি দশ সহস্রপবিত্রাত্মা মহাত্মাসহ এমন অবস্থায় আসলেন যে, তাঁর দক্ষিণ হাতে একটি অগ্নিশিখা তুল্য(জোতির্ময়) বিধিব্যবস্থা রয়েছে।মক্কা বিজয়ের সময় নবীজীর সথে দশ হাজার সাহাবী ছিলেন।তাওরাত কিতাবে এই সাহাবীদেরকেইপবিত্রাত্মা মহাত্মা বলা হয়েছে।নবীদের পরে কোন স্তরের মানুষই সাহাবীদের সমমর্যাদা দূরের কথা নিকটবর্তীমর্যাদারও হতে পারবে না। এই আক্বীদা ও বিশ্বাস ইসলামী মতবাদরূপে ইসলামের সোনালীযুগ ইমামগণের যুগ হতেই প্রচলিত।ইমাম আবু হানিফা ( রহমতুল্লাহি আলাইহি )-এর শাগরেদ বিশিষ্ট মোহাদ্দিস হযরতআব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক ( রহমতুল্লাহি আলাইহি )-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,সাহাবী মুয়াবিয়া (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) ও অলিকুল শিরোমণি উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহমতুল্লাহিআলাইহি )-এর মধ্যে কার মর্তবা বড়?উমর ইবনে আব্দুল আজিজ ( রহমতুল্লাহি আলাইহি )অনেক বৈশিষ্টের অধিকারীছিলেন। (১) তিনি বিশিষ্ট তাবেয়ী ছিলেন, (২) তিনি এই উম্মতের সর্বপ্রথম মোজাদ্দেদছিলেন, (৩) বিশিষ্ট আউলিয়া ছিলেন, (৪) খলীফাতুল মুসলেমীনরূপে এত নেক ও সৎশাসনকর্তা ছিলেন যে, তাঁকে পঞ্চম খলীফায়ে রাশেদীনতুল্য শাসনকর্তা গণ্য করা হত। (৫)তাঁকেদ্বিতীয় উমর বলা হত।এতগুলো বৈশিষ্ট্যেপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহমতুল্লাহি আলাইহি )-কে সাহাবী মুয়াবিয়া ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু )-এর পরিমাপেরপ্রশ্ন করা হলে ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক ( রহমতুল্লাহি আলাইহি) উত্তরে বললেন,মুয়াবিয়া ( রাদিয়াল্লাহুতাআলা আনহু ) যে ঘোড়ায় চরে জিহাদে গমন করতেনঐ ঘোড়ারপায়ের দাপটে ধুলি উড়ে ঘোড়ার নাকেযে ধূলিকণা লাগত ঐ ধূলিকণার মর্তবা ও মর্যাদাওউমর ইবনে আব্দুল আজিজ ( রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর মর্তবা ও মর্যাদার অনেক উর্ধে। (মেরকাত-শরহে মেশকাত )।এই দীর্ঘ আলোচনায় প্রমাণিত হল, সাহাবীগণ সম্পর্কে উচ্চ ধারণা ও বিশ্বাসইসলামের বিশেষ আক্বীদা এবং মুসলামান্দের বিশেষ কর্তব্য। এই কারণেই অধিকাংশ হাদীসগ্রন্থে সাহাবীগণের বৈশিষ্টের বর্ণনায় বিশেষ অধ্যায় উল্লেখ হয়।এমনকি বোখারী শরীফ,মুসলিম শরীফ, তিরমিজী শরীফ যে শ্রেণীর গ্রন্থ, উহাকে হাদীস শাস্ত্রেরপরিভাষায় জামে বলা হয়। যে গ্রন্থে সাহাবীগণেরবৈশিষ্টের অধ্যায় না,থাকবে সেই গ্রন্থ জামে হিসেবে পরিগণিত হবে না।এমরান ইবনে হোসেন ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) বর্ণনা করেন,রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যেসর্বোত্তম যুগও জামাত আমার (গঠিত ) যুগ ও জামাত ( তথা আমার সাহাবীগণের যুগ )। তারপর ঐ যুগ সংলগ্ন যুগ( অর্থাৎ, সাহাবীদেরহাতে গঠিত তাবেয়ীনদের জামাত ), তারপর এই দ্বিতীয় যুগ সংলগ্ন তৃতীয়যুগ ( অর্থাৎ,তাবেয়ীনদের হাতে গঠিত তাবে-তাবেয়ীনদের জামাত ) ; এই যুগটির উল্লেখ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) করেছেন কিনা সে সম্পর্কে বর্ণনাকারী সাহাবী সন্দিহান রয়েছেন।মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )বলেছেন- এই সব উত্তম যুগ চলেযাওয়ার পর এমন যুগের সৃষ্টি হবে, ( লোকদের মধ্যে দায়িত্ববোধও পরিণামের চিন্তামোটেই থাকবে না, যেমন- সাক্ষ্যদানের মত দায়িত্বর কাজেও প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য নারেখে শুধু কোন প্রকার স্বার্থেরখাতিরে ) সাক্ষী না বানালেও সাক্ষ্য দানে দৌড়িয়াআসবে। খেয়ানত করতে অভ্যস্ত হবে, আমানতের নির্ভরযোগ্যতা একেবারেই হারিয়ে ফেলবে।আল্লাহর নামে মান্নত করেও উহা পুরা করবে না। (আখিরাতের চিন্তা শূন্য ভোগ-বিলাসেমত্ত থাকবে এবং আখিরাতের উন্নতির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করিয়া শুধু ) দৈহিক মেদবহুলবা মোটা হওয়ার অভিলাসী হবে এবং মোটা হতে থাকবে। ( বুখারীশরীফ )আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) হতে বর্ণিত আছে, নবীকরীম ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন,মানব সমাজের মধ্যেসর্বোত্তম সমাজ ও যুগ আমার(গঠিত) সমাজ ও যুগ, অতঃপর যে যুগ উহার সংলগ্ন,তারপর যেযুগ এই দ্বিতীয় যুগের সংলগ্ন। তারপর এমন লোকের সৃষ্টি হবে, ( তাদের মধ্যে দ্বীন ওশরীয়তের মোটেই কোন মর্যাদা থাকবে না, যেমন- আল্লাহর নামে শপথ বা কসম করার মত মহানকাজেরও তারা গুরুত্ব দিবে না, সাক্ষ্যদানে কসমের আবশ্যক না থাকা সত্যেও কসমব্যবহার করবে যে, দ্বিধাহীন ও দিশেহারা রূপের তাড়াহুরার পরিচয় দিবে ) কখনও বাসাক্ষ্য দান করে কসম খাবে, কখনও বা সাক্ষ্যদান করে কসম খাবে। ( বুখারী শরীফ )আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সাহাবীগণের গুরুত্ব সঠিকভাবে বুঝার এবং সেঅনুযায়ী আমল করারতৌফিক দান করুন।

৪| ১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬

পাউডার বলেছেন:
এত বড় কমেন্ট দিয়া কি প্রমাণিত হইল যে সাহাবিদের উপর ইমান রাখা যায়?
আশাকরি নিজের মাথার মগজ কাজে লাগিয়ে চিন্তা করে উত্তর দিবেন।

১৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৪১

পৃথ্বীর পরিব্রাজক বলেছেন: এত দীর্ঘ কমেন্ট কিছু প্রমাণ করার জন্য করিনি, শুধু আপনাকে সাহাবীদের মর্যাদা সম্পর্কে একটু অবগত করাতে চেষ্ঠা করেছি মাত্র। যদিও সেটা আমার জন্য বৃথা চেষ্ঠা।
যাদের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইসলামের প্রচার এবং প্রসার ঘটেছে তাদের প্রতিই আপনার বিশ্বাস নেই আর আমি চিন্তা করে কিছু উত্তর দিলে সেটা আপনি কিভাবে বিশ্বাস করবেন?

৫| ১৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০

পাউডার বলেছেন:
দুইটা প্রশ্ন। শর্টকাটে উত্তর আশা করি।
১। সাহাবি কারা?
২। ইসলাম প্রচার হয় কত সাল থেকে?


১৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

পৃথ্বীর পরিব্রাজক বলেছেন: প্রথম প্রশ্নের জবাব উপরে আছে আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে- অনেকের মতে ইসলাম শুরু হয়েছে ৬২২ ঈসায়ী থেকে। এ ব্যাপারেও যদি কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে আপনার পছন্দের সালটি বেছে নিবেন।

৬| ১৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০৯

মুদ্‌দাকির বলেছেন: পড়ব

৭| ১৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৩

পাউডার বলেছেন:
আপনি কোরান বিরোধী ধারনা পোষণ করছেন। আগের নবি-রাসুলদের কাজই ছিল ইসলাম প্রচার করা।

আল্লাহ কোরানে বলছেনঃ
৪২ঃ১৩ - তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।

আপনি কি এর পরও বলবেন যে মুহাম্মদ সঃ এর আমল থেকে ইসলাম প্রচার হচ্ছে এবং তা করেছেন সাহাবিরা?

৮| ১৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫

পাউডার বলেছেন:
আপনি কোরান বিরোধী ধারনা পোষণ করছেন। আগের নবি-রাসুলদের কাজই ছিল ইসলাম প্রচার করা।

আল্লাহ কোরানে বলছেনঃ
৪২ঃ১৩ - তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।

আপনি কি এর পরও বলবেন যে মুহাম্মদ সঃ এর আমল থেকে ইসলাম প্রচার হচ্ছে এবং তা করেছেন সাহাবিরা?

১২ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৭

পৃথ্বীর পরিব্রাজক বলেছেন: প্রত্যেক নবী-রাসূলই তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন ইসলামের নয়, ইসলাম ও তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন একমাত্র সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ।

ধর্ম হিসাবে ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা রাসূল (সাঃ) এর যুগেই হয়েছে। আর পরবর্তীতে এর বিস্তার এবং প্রসার ঘটেছে সাহাবীদের মাধ্যমেই।

৯| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩

পাউডার বলেছেন:
পরিব্রাজক ভাই আমার, তাদেরতো তাওহীদের নবী বলা হয় না। ইসলামের নবী হিসাবেই আমরা মানি। :D

আল্লাহ বলছেন যে একই পথের কথা। আর আপনি বলছেন ইসলাম না, তাওহীদের পথ! আসুন আমরা তর্কের খাতিরে তর্ক করা থেকে বিরত থাকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.