নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রাকৃত জন

একজন সাধারণ মানুষ

প্রাকৃত জন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুকুমার রায় সম্পর্কে সৈয়দ মুজতবা আলী

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২০

সুকুমার রায়ের মত হাস্যরসিক বাংলা সাহিত্যে আর নেই সে কথা রসিক জন মাত্রেই স্বীকার করে নিয়েছে, কিন্তু এ কথা অল্প লোকেই জানেন যে, তাঁর জুড়ি ফরাসী, ইংরেজী, জর্মন সাহিত্যেও নেই, রাশানে আছে বলে শুনিনি। এ-কথাটা আমাকে বিশেষ জোর দিয়ে বলতে হল, কারণ আমি বহু অনুসন্ধান করার পর এই সিদ্ধান্তে এসেছি।







একমাত্র জর্মন সাহিত্যের ভিলহেলম বুশ সুকুমারের সমগোত্রীয়- স্বশ্রেণী না হলেও। ঠিক সুকুমারের মত তিনি অল্প কয়েকটি আচড় কেটে খাসা ছবি ওতরাতে পারতেন। তাই তিনিও সুকুমারের মত আপন লেখার ইলাস্ট্রেশন নিজেই করেছেন। বুশের লেখা ও ছবি যে ইউরোপে অভূতপূর্ব সে কথা “চরুয়া” ইংরেজ ছাড়া আর সবাই জানে।







বুশ এবং সুকুমার রায়ে প্রধান তফাত এই যে, বুশ বেশীরভাগই ঘটনাবহুল গল্প ছড়ায় বলে গেছেন এবং সে কর্ম অপেক্ষাকৃত সরল, কিন্তু সুকুমার রায়ের বহু ছড়া নিছক ‘আবোল-তাবোল’; তাতে গল্প নেই, ঘটনা নেই, কিছুই নেই-আছে শুধু মজা আর হাসি। বিশুদ্ধ উচ্চাঙ্গের সংগীত যে রকম শুধু ধ্বনির উপর নির্ভর করে, তার সঙ্গে কথা জুড়ে দিয়ে গীত বানাতে হয়না, তেমনি সুকুমার রায়ের বহু বহু ছড়া স্রেফ হাস্যরস, তাতে অ্যাকশান নেই, গল্প নেই অর্থাৎ আর কোন দ্বিতীয় বস্তুর সেখানে স্থান নেই, প্রয়োজনও নেই। এ বড় কঠিন কর্ম। এ কর্ম তিনিই করতে পারেন যার বিধিদত্ত ক্ষমতা আছে। এ জিনিস অভ্যাসের জিনিস নয় , ঘসে মেজে মাথার ঘাম ফেলে এ বস্তু হয়না।



বুশ আর সুমুমারের শেষ মিল এদের অনুকরণ করার ব্যার্থ চেষ্টা জর্মন কিংবা বাংলায় কেউ কখনও করেন নি। এদের ছাড়িয়ে যাবার তো কথাই ওঠে না।







একদিন প্যারিস শহরে আমি কয়েকজন হাস্যরসিকের কাছে ‘বোম্বাগড়ের রাজা’র অনুবাদ করে শোনাই- অবশ্য আমসত্তভাজা কী তা আমাকে বুঝিয়ে বলতে হয়েছিল (তাতে করে কিঞ্চিৎ রসভঙ্গ হয়েছিল অস্বীকার করিনে) এবং আলতার বদলে আমি লিপস্টিক ব্যবহার করেছিলাম (আমার ঠোঁটে কিংবা চোখে নয়- অনুবাদে)।



ফরাসী ক্যাফেতে লোকে হো-হো করে হাসে না, এটিকেটে বারণ, কিন্তু আমার সঙ্গীগণের হাসির হররাতে আমি পর্যন্ত বিচলিত হয়ে তাঁদের হাসি বন্ধ করতে বারবার অনুরোধ করছিলুম। কিছুতেই থামেন না। শেষটায় বললুম, “ তোমরা যেভাবে হাসছ, তাতে লোকে ভাববে আমি বিদেশী গাড়ল, বেফাঁস কিছু একটা বলে ফেলেছি আর তোমরা আমাকে নিয়ে হাসছ- আমার বড় লজ্জা করছে।” তখন তাঁরা দয়া করে থামলেন, ওদিকে আর পাঁচজন আমার দিকে আড়নয়নে তাকাচ্ছিল বলে আমি তো ঘেমে কাঁই।



তারপর একজন বললেন, “এরকম weird ছন্নছাড়া, ছিস্টিছাড়া কর্মের ফিরিস্তি আমি জীবনে কখনও শুনিনি।”



আরেকজন বললেন, “ঠিক। এবার একটা চেষ্টা দেয়া যাক, এ লিস্টে আর কিছু জুতসই বাড়ানো যায় কি না।”



সবাই মিলে অনেক্ষণ ধরে আকাশ পাতাল হাতড়ালুম, দু একজন একটা দুটো অদ্ভুত কর্মের নামও করলেন, কিন্তু আর সবাই সেগুলো পত্রপাঠ ডিসমিস করে দিলেন। আমরা পাঁচ প্রাণী আধ ঘন্টা ধস্তাধস্তি করেও একটা মাত্র জুতসই এপেনডিক্স পেলুম না। গোটা কবিতার তো প্রশ্নই ওঠে না।







আগের থেকেই জানতুম, কিন্তু সেদিন আবার নতুন করে উপলব্ধি করলুম; যদিও সুকুমার রায় স্বয়ং বলেছেন, “উৎসাহে কি না হয়, কি না হয় চেষ্টায়”, যে জগতে সুকুমার বিচরণ করতেন, সেখানে তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম।



বোনাস

সুকুমার সমগ্র ১

সুকুমার সমগ্র ২

সুকুমার সমগ্র ৩



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৬

মামুন রশিদ বলেছেন: 'চরুয়া' ইংরেজ, হাহাহা ;)


দারুণ লাগলো । যথাযত মুল্যায়ন । সৈয়দ মুজতবা আলীর পক্ষেই এই মুল্যায়ন সম্ভব ।

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:০১

অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট বলেছেন: মুজতবা আলী অতিশয় বিনয়ী ছিলেন, বাঙালীদের পরবাসে অতি উচ্চাসনে বসাতেন সৎ দেশপ্রেমিকের মতো । পূর্বসূরী লেখকদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ অতুলনীয়।

তাঁর বিদগ্ধতার প্রমাণ মেলে বাঙলার জনপদের চাষা ভুষোদের কথা কাব্য, প্রলাপ, গীতি, পূথিঁ থেকে পরশ পাথর তুলে আনতেন।

সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হোলো পাঠককে পাগল করে ফেলতেন এই চেতনা দান করে যে, কিভাবে একটি রচনার না বলা কথা হৃদয়ঙ্গম করতে হয়। অথার্ৎ সাদা কাগজের মাঝে কালো অক্ষরে লাইনের পর লাইনের মাঝখানে সাদা কালিতে সাদাকাগজে যে অদৃশ্য কিন্তু ফরজ যে ম্যাসেজ লেখক দিয়ে যেতেন, তাঁর মর্ম আবিস্কারে। ইংরেজীতে যাকে বলে between the lines.

যাই হোক সুকুমার রায় অবশ্যই নমস্য (মুজতবা ঘরানার শব্দ) লেখক। তবে সর্বাংসে মৌলিক নন। উনার (সুকুমার রায়ের) অনেক ননসেন্স রাইম-এ ইউরোপের কতিপয় মৌলিক লেখকের প্রভাব আছে। যেমন আবোল তাবোল লুইস ক্যারলের আজব দেশে এলিস-এর ছায়া পাই। (মনে রাখতে হবে, সুকুমার রায়ের মনোজগত ই্রউরোপীয় রেনেঁসা আক্রান্ত ) তবে তিনি অনুকরন করেননি অনুসরন করেছেন। যা অতি অবশ্যই নূতন সৃষ্টির সমকক্ষ।

যেমনটা করেছেন, রবীন্দ্রনাথ। জাপান থেকে, আইরিশ থেকে, রাশিয়া থেকে, ইংরেজী সাহিত্য থেকে ধার নিয়েছেন (প্রকৃত পক্ষে আত্মস্থ করেছেন), অনুসরন করেছেন, নিজে ঝদ্ধ হয়েছেন এবং সম্পূর্ণ নূতন কিছু তৈরী করেছেন।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৩৬

প্রাকৃত জন বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। বিদেশী সাহিত্য আমার পড়া নেই। সুকুমার পড়তে মজা লাগে। কয়দিন টানা মুজতবা আলী পড়তে পড়তে এটা চোখে পড়ল। আমরা দিন দিন আমাদের পুরনো লেখকদের ভুলে যাচ্ছি; হয়তো বই পড়তেই ভুলে যাচ্ছি। এই লেখাটি দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল একই সাথে সৈয়দ মুজতবা আলী এবং সুকুমার রায়কে নজরে আনা। আমাদের ভুলে যাওয়া রত্নগুলোকে আবার আবিষ্কার করা।

৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৩৯

সুমন কর বলেছেন: আপনার দেওয়া লিংকগুলো কাজ করে না।

৪| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪৩

প্রাকৃত জন বলেছেন: দেখুন, এখন কাজ করছে।

৫| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০২

আমিই মিসিরআলি বলেছেন: সুকুমার রায় আমার একমাত্র প্রিয় সাহিত্যিক যার যেকোনো লেখা পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি :) :)

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পোষ্টের জন্যে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.