নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রাকৃত জন

একজন সাধারণ মানুষ

প্রাকৃত জন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালির ইতিহাস চর্চা

২৮ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮

বাঙালিকে ইতিহাস বিমুখ জাতি বলে গালি দেয়ার দুঃসাহস কদাচিৎ কেউ করবে বলে মনে হয়না। মাটি খুঁড়ে চার হাজার বছর আগের ইতিহাস এরা খুঁজে আনে। বিশ্ববাসীর কাছে গর্বভরে তুলে ধরে তাদের কৃষ্টি। কিন্তু বাঙালি যে সব সময় মাটি খুঁড়েই ইতিহাস টেনে আনে এমন নয়, এরা স্বপ্নেও ইতিহাস বানিয়ে ফেলতে পারে। এখানেই বাঙালির বিশেষত্ব। যা পৃথিবীর আর কোথাও কোন জাতি পেরেছে বলে নজির পাওয়া যায়না। এরা স্বপ্নে কিছু একটা দেখে যদি পরের দিন ঘোষণা করে যে বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো আর্য-মৌর্য-গুপ্ত শাসনামল ছিল না তো সেদিন থেকে সেই তথ্যসূত্র ধরে লেখালেখি শুরু হয়ে যাবে এবং কিছুদিন পর দেখা যাবে প্রধান প্রধান তথ্যকেন্দ্রে তার স্বপক্ষে গাদাগাদা বই বেরিয়ে গেছে। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? ঠিক আছে উদাহরণ দিচ্ছি-

“ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মোট জীবনহানির সংখ্যার হিসাব কয়েক লাখ হতে শুরু করে ৩০ লাখ পর্যন্ত অনুমান করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁরা ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে অস্থায়ী সরকার গঠন করেন।” বাংলা উইকিপিডিয়া

আমাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে বাংলা উইকিপিডিয়াতে এভাবেই লেখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা কয়েক লাখ থেকে ৩০ লাখ পর্যন্ত অনুমান করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকার ১০ এপ্রিল গঠিত হয় এবং শপথ গ্রহণ ১৭ এপ্রিল অথচ উইকিপিডিয়াতে মুজিব নগর সরকার ১০ এপ্রিল গঠিত না হয়ে একধাক্কায় ১৭ এপ্রিল হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা, কিংবা কত মা বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন তা নিয়ে মাঝে মাঝেই তর্ক হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উইকিপিডিয়াতেও তার অবকাশ দিয়ে আমাদের দেশের কোন পণ্ডিত বাংলাদেশ সম্পর্কে এই প্রবন্ধ দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন।

ইতিহাস বিকৃতি বলে একটা শব্দ খুব শোনা যায় কিন্তু আমাদের দেশে শুধু বিকৃতি নয়, ইতিহাস বানিয়েও ফেলা হয়। একটা সময় খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে দেয়া হল। কেউ কেউ প্রতিবাদ করেছিল, কেউ কেউ মনে করেছিল –যাকগে, দাবী করলেই তো হবে না। কিন্তু আমরা দেখলাম অনেকেই তা বিশ্বাস করে ফেলেছে। দেশের স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় পর্যন্ত সবাই লিখে দিচ্ছে জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক। এটা সত্য না মিথ্যা তা বিবেচ্য বিষয় নয়, বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে বইয়ে তা আছে আর সেভাবেই সব জায়গায় মুল্যায়ন হবে। কেননা, সরকার বলছে জিয়া আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক।

বিপদটা হয়েছিল এই ইতিহাস সৃষ্টির কয়েক বছর পরে। তখন নতুন বই, আবার নতুন ইতিহাস। গতবছর জিয়ার নাম লিখলেই হচ্ছিল, কিন্তু এই বছর আর হচ্ছে না। ইতোমধ্যে হান্নান সাহেব দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। যদিও তিনি শুধু পাঠ করেই থেমে ছিলেন। তিনি যদি কোন নতুন দল করতেন, এবং সে দল দেশের ক্ষমতায় আসত তাহলে নিশ্চিত তাঁর দল থেকে তাকেই স্বাধীনতার ঘোষক বলে চালানো শুরু হয়তে যেত। যেহেতু তিনি আওয়ামীলীগের নেতা আর ক্ষমতায় আওয়ামিলিগ তাই শেখ মুজিবুর রহমান আবার স্বাধীনতার ঘোষকের মর্যাদা ফিরে পান।

কিন্তু বিপদটা কোথায়? তা হচ্ছে আমাদের একটা প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই ধান্দায় পড়ে যায়, তারা বুঝতে পারেনা কোনটা সঠিক কোনটা নয়। কারো কারো কাছে আবার এই জিনিসটাই খেলো হয়ে যায়। তখন যদি জিজ্ঞেস করা হত, আমাদের স্বাধীনতার ঘোষককে তাহলে উত্তর আসত- ক্ষমতায় কে আছে তা আগে বিবেচ্য। যদি বিএনপি থাকে তাহলে জিয়া , লীগ থাকলে শেখ মুজিবুর রহমান। এটা আজো সুরাহা হয়েছে বলে মনে হয়না। শুধু বিএনপি বেশ কয়েক বছর ক্ষমতার বাইরে আছে বলে এটা নিয়ে খুব বেশী উচ্চবাচ্চ্য হয়নি এই কয়েক বছর।

কিন্তু সর্বস্তরে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও বিএনপির নয়া কাণ্ডারি ইতোমধ্যে জিয়ার মর্যাদা একলাফে কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। হটাৎ এক ব্যানারের রেফারেন্স দিয়ে তিনি ঘোষণা করে দিয়েছেন শুধু জিয়া এবং জিয়াই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। এবং তার একদিন না যেতেই খালেদা জিয়াও বলতে শুরু করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। আমি নিশ্চিত আর কিছুদিনের মাঝেই একটা বুদ্ধিজীবী গোষ্টি এর পক্ষে যুক্তি নিয়ে হাজির হয়ে যাবে এবং তার কিছুদিনের মাঝেই জিয়া বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নামে গ্রন্থ বাজার ছেয়ে যাবে।

আমার এক স্যার বলতেন স্বপ্নে যখন খাব তখন পান্তা খাব কেন? পোলাও খাব। তারেক সাহেব মনে হয় সেই দর্শনে বিশ্বাসী। স্বপ্নে যখন দেখেছি বাবাকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বানানোই তো ভাল। আর সাইদীকে যখন চাঁদে পাঠানোর গল্প লোকে খেয়েছে, বাবার প্রথম রাষ্ট্রপতি হওয়াও জনগণ মেনে নেবে। অবশ্য তার মনে অন্য ভাবনাও থাকতে পারে। সেই গৃহস্তের বাঘ দেখার মত। ১৬ হাত বাঘের দাবী করে শেষ পর্যন্ত যদি দুয়েক হাতে এসে দফা করা যায়। মানে রাষ্ট্রপতি না মানলেও যদি ঘোষক মেনে নেয় জনগণ তাই বা কম কিসের?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.