নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিশ্চিত গন্তব্য

ভণ্ড সাধক

আমি কেউ না

ভণ্ড সাধক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হত্যার নগরী নারায়ণগঞ্জ, লাশের ভাগার শীতলক্ষ্যা!

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৫০


সোনালী আঁশ পাটের আশির্বাদে একসময় নারায়ণগঞ্জকে বলা হতো ’প্রাচ্যের ডান্ডি’। পাটশিল্পের বিপর্যয়ে হারায়নি নারায়ণগঞ্জের শিল্পনগরীর খেতাব। নিট গার্মেন্টস ও হোসিয়ারি শিল্পের জন্য রাজধানীর পাশের ওই জনপদটি হয়ে ওঠে সুপরিচিত।

বর্তমানে সেই পরিচয়ও হারিয়ে ফেলেছে জেলাটি। বর্তমানে সারা দেশের মানুষের কাছে হত্যানগরী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ। আর লাশের ভাগার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে শীতলক্ষ্যা নদী।

মেধাবী ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক থেকে শুরু করে সাধারণ শিশু-নারী-বৃদ্ধ কেউই বাদ পড়ছেন না খুনের তালিকা থেকে। পারিবারিক বিরোধ, অর্থ লেনদেন, জমি দখল, প্রেম-বিয়ে কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মতো সাধারণ কারণেই চলছে এই হত্যার ‘উৎসব’।

সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে দেশব্যাপি নারায়ণগঞ্জ চিহ্নিত হয় ১৯৯৬ সালে। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এক ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে ২২ জনের প্রাণহানি ঘটে। তৎকালীন সরকার ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

এরপর ২০১৩ সালের ৮ মার্চ শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে সম্ভাবনাময় ও মেধাবী ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকির লাশ উদ্ধারের পর আবারও আলোচনায় আসে জেলাটি।

একই বছরের ১৯ এপ্রিল রাতে সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের ঝাউগড়া এলাকার নিজ বাড়িতে খুন হন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের স্ত্রী, শ্যালক ও বাড়ির দুই গৃহপরিচারিকা। ওই ঘটনায় শামীম আহমেদ নামে এক আসামি সোনারগাঁ থানায় নির্যাতনের কারণে নিহত হন।

১৩ জুন ফতুল্লার দুর্গম চরাঞ্চলে স্কুলছাত্র ইমনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ৯ টুকরা করে ধঞ্চে ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়।

৯ জুলাই ফতুল্লায় নবম শ্রেণির ছাত্র নাজমুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রেম নিয়ে বিরোধে ৩ জুলাই দ্বাদশের ছাত্রী মৌসুমীকে (১৮) পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

ওই বছরের ২২ জুলাই আড়াইহাজারে স্কুলছাত্র মাহাবুবকে হত্যার পর নাক ও কান কেটে নেয়ার পাশাপাশি চোখ উপড়ে ফেলা হয়।

৭ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রমজানকে খুন করা হয়।

এছাড়াও ৮ নভেম্বর গভীর রাতে স্কুলছাত্র সালমান খুন হয়। ২৩ নভেম্বর শহরের মাসদাইর আদর্শ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সিয়ামকে হত্যার পর লাশ মুন্সিগঞ্জে নিয়ে ফেলে দেয়া হয়।

তবে নারায়ণগঞ্জের স্মরণকালে সবচেয়ে নৃশংস ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল। ওইদিন পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে তুলে নিয়ে যান র‌্যাব সদস্যরা। এর তিনদিন পর ২৯ এপ্রিল সাতজনেরই মৃতদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। এ ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে আরো বেশি পরিচিত পায়।

এছাড়াও একই বছর নারায়ণগঞ্জ আলোচনায় আসে ধারাবাহিকভাবে স্কুল ছাত্র খুনের ঘটনায়। অপহরণের পরে মুক্তিপণ আদায়, পূর্বশত্রুতা ও তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তাদের প্রাণ দিতে হয়।

এর মধ্যে ২১ জানুয়ারি কাঁচপুর থেকে অপহরণের শিকার হয় স্কুলছাত্র জাহিদুল ও সাকিন। পরদিন ভারগাঁও বেড়িবাঁধ থেকে জাহিদুলের লাশ উদ্ধার হয়।

পাঁচদিন পর ২৬ জানুয়ারি মোল্লা বাড়ির বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে সাকিনের গলাকাটা বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হয়।

২৯ জানুয়ারি মোটা অংকের মুক্তিপণের জন্য স্কুলছাত্র ইমনকে (১৪) অপহরণ করে তারই চাচাতো ভাই আল আমিন। ৩৫ দিন পর ডোবা থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হয়।

১ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জ থেকে নাঈম (১৪) নামে অপর ছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পর দিন ২ ফেব্রুয়ারি একটি মোবাইল ফোন নিয়ে মোস্তফা (১২) নামে স্কুলছাত্র খুন হয় তারই বয়সী খেলার সঙ্গীদের হাতে।

এছাড়া ২০১৪ সালের ২৮ মার্চ সোনারগাঁওয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেনকে। ওইদিনই রূপগঞ্জের স্কুলশিক্ষক মেহেদী হাসানকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এর সাতদিন পর ৪ এপ্রিল রূপগঞ্জের বালু নদী থেকে নিখোঁজ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার শিক্ষক রাজীব আহাম্মদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

দুদিন পর ৬ এপ্রিল জেলার নিতাইগঞ্জের নায়না ফ্লাওয়ার মিলের ভেতর গলাকেটে হত্যা করা নৈশ প্রহরী আবদুল আজিজ ও হেলপার হোসেন মিয়াকে।

একই বছরে ব্যবসায়ী, গৃহবধূ, ছাত্রসহ ডজনেরও বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ডোবা আর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে। এসব লাশের মিছিলে রয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় শনাক্তহীন অনেক লাশ।

সর্বশেষ শনিবার আবারও সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে নারায়ণগঞ্জ। জেলার বাবুরাইল এলাকার একটি বাসা থেকে একই পরিবারের পাঁচজনের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এদের মধ্যে দুই নারী ও দুই শিশুও রয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, জেলায় সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয় সিদ্ধিরগঞ্জ, রূপগঞ্জ, ফতুল্লা ও সোনারগাঁও থানায়। একশ্রেণির মিল কারখানার মালিকদের দখলদারিত্বের লড়াই, ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য, জাল-জালিয়াত চক্র ও গডফাদারদের ইশারায় এসব এলাকায় অপরাধ বেশি হচ্ছে। তাছা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের সঙ্গে অপরাধীদের বিশেষ সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ তো রয়েছেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও কোনো ঘটনার বিচার না হওয়ায় দিন দিন অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।


লিংক : হত্যার নগরী নারায়ণগঞ্জ, লাশের ভাগার শীতলক্ষ্যা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.