নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিশ্চিত গন্তব্য

ভণ্ড সাধক

আমি কেউ না

ভণ্ড সাধক › বিস্তারিত পোস্টঃ

লালনও সাহিত্যে নোবেল পেতে পারতেন

২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:১২



গানের মানুষ বব ডিলান পেয়েছেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার।আমেরিকার সংগীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক ব্যাঞ্জনা সৃষ্টির’ জন্য ২০১৬ সালে তাকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এ পুরস্কারের মধ্য দিয়ে বব ডিলানের গানকে সাহিত্যের মর্যাদা তুলে আনা হয়েছে। তাকে পুরস্কার দেওয়ার মধ্যে দিয়ে নোবেল কমিটি কেবল ‘সাহিত্য কী’ এটা নিয়েই প্রশ্ন তোলেনি বরং কথাটির অর্থ এবং প্রাসঙ্গিকতাকেও সম্প্রসারিত করেছে। যদিও এই ধরনের সম্প্রসারণে অনেকে সংশয়ী ও বিস্মিত হয়ে পড়েছে।

যদি বব ডিলান সাহিত্যে নোবেল জিততে পারেন, বাংলার সেই মহান কবি ও সাধক ফকির লালন শাহের গানও নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। নোবেল পুরস্কার কখনো মরনোত্তর দেওয়া হয়া না বলে, লালনের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দাবি করা যাচ্ছে না।

লালন ফকির লালন ফকির ছিলেন কবি, আউল-বাউল এবং দার্শনিক। মানবতাবাদের দর্শনে তিনি বিশ্বাসী। সেই লালনকে টুকরো টুকরো করার একটা চেষ্টা চলছে। যা শুরু হয়েছে দেশভাগের পর থেকেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পরে দুই বাংলার ফকিরেরা এবং লালন অনুরাগীরা ভেবেছিলেন লালনের দর্শনের চর্চা এ বার বাড়বে। কিন্তু না, দিনে দিনে লালন হয়ে উঠেছে ধর্ম আর রাজনীতির কারবারীরদেরও একটা বিশেষ ইস্যু। লালন এখন তিন টুকরো। লালন ‘মুসলিম’ সম্প্রদায়ের, লালন ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’, লালন ‘কেনা-বেচার মশলা’। এই পরিস্থিতিতে, লালনের অনুগামী এবং অনুরাগীরা কী ভাবে লালন চর্চা করে চলেছে তা জানতে হলে বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদে গেলে হবে না। যেতে হবে ও-পারে। বাংলাদেশে। কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায়। লালনের আখড়ায়। লালন নেই। আখড়া হয়ে উঠেছে কারও কাছে লালন ধাম, কারও কাছে বা লালন মাজার।

বাংলার বাউল সংস্কৃতি হলো লোক গানের মধ্য দিয়ে কাব্যিক অভিব্যক্তি প্রকাশের সংস্কৃতি। আর এই সংস্কৃতির সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠ সন্দেহাতীতভাবে লালন ফকির। যিনি উনিশ শতকে বেঙ্গল রেঁনেসাসের অংশ, যখন আধুনিকতা ও নতুন চিন্তা বাঙালি সমাজে প্রবেশ করছিল। লালন জন্মগ্রহণ করেন কুষ্টিয়ায় (যা এখন বাংলাদেশের অংশ)। তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষা ছিল না এবং তিনি দীর্ঘজীবন দারিদ্র্যের মধ্যে কাটিয়েছেন। লালনের গানগুলো ছিল আধ্যাত্মিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। যা তিনি দরিদ্র চাষিদের উদ্দেশে গাইতেন। তাঁর খ্যাতি বৃদ্ধির সাথে সাথে, লালন অনেক কবিকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। যাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং এলেন গিনসবার্গের মতো কবিও আছেন। তিনি ছিলেন মরমী সাধক, গীতিকার, গায়ক, সমাজ সংস্কারক ও চিন্তক। কিন্তু তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস ছিল তাঁর নিজের জীবনাচরণ, কোনো দর্শন বা সাহিত্যিক মতবাদ নয়।

লালন সাই ৮ হাজারের মতো গান রচনা করেছিলেন। এর মধ্যে মাত্র দুই হাজির উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় তার এই গানগুলোর কোনো লিখিত রূপ ছিল না। এগুলো প্রধানত তাঁর গ্রামীণ শিষ্যদের মধ্যে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল; যাঁরা ছিলেন অক্ষরজ্ঞানহীন এবং এই কাজগুলো প্রতিলিপি করতে অক্ষম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনের কিছু কাব্যিক অভিব্যক্তির কথা লোকগীতি কলকাতার মাসিক ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন।

জাত পাতের সংস্কারের ধুম্রজালে দোলায়িত হয়ে লালন বৈরাগ্যের জীবন বেছে নেয় এবং তাঁর সাথে উদাস বাউল রিক্ত হতাশাগ্রস্ত বাউল বন্ধনের বাহুডোরে আবদ্ধ না হয়ে একতারার সুরে ধরণীর ধরাতলে নৈসর্গিক আলো বাতাসে ঘুরে ফিরে ধ্যানে সাঁই, জ্ঞানে অচিন পাখিকে খুঁজে বেড়ায়। বাউল অনুসারীরা নিষ্ঠুর সমাজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কিন্তু এ বিদ্রোহ সমাজকে গড়ার জন্য। সমাজ থেকে পালিয়ে বিবাগী হয়ে, ভিক্ষাপজীবী হয়ে, আলাদা সমাজ গঠনে নিজের জীবনকে করে তোলে নিভৃতচারী। তাই বাউলের কণ্ঠে, শব্দ সুরে সিক্ত হয়ে করুণ রস মিশ্রিত হয় ও সঙ্গীত আবেগ সিক্ত আকুতিতে প্রকাশ পায় উদাসী গান।

লালনের গান আজও বাংলার সব বয়সের সব ধরনের মানুষকে আনন্দ দেয়, ভাবরসে আন্দোলিত এবং ভক্তিরসে সিক্ত করে। সঙ্গীত-রসিকদের কাছে তাঁর গানের বাণী ও সুরের আবেদন অলঙ্ঘনীয়। ছেউড়িয়া আজও দুই বাংলার আউল, বাউল, ফকিরদের অন্যতম তীর্থস্থান। ধর্মীয়, রাজনৈতিক হোতাদের ঠান্ডা চোখকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র একতারা হাতে ফকিরেরা অবলীলায় পৌঁছে যান ছেউড়িয়ায়। সেই যাত্রাপথে অনেক সময় কোনও কোনও ফকিরের রক্ত ঝরে। হ্যাঁ, একতারা হাতে নিরীহ ফকিরেরা আজও বাংলাদেশের নানা জায়গায় আক্রান্ত। কিন্তু, লালন চর্চা থেমে নেই। সাবেকি ঢঙের পাশাপাশি এ কালের ঢঙে লালনের গান আজও গেয়ে চলেছে লক্ষ লক্ষ জন। আর শুনছে কোটি কোটি মানুষ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:৫০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ খুব ভাল একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন । সাহিত্যের জন্ম বলতে গেলে গান থেকেই । প্রাচীন সব গান গুলিই তো হয়েছে পালাক্রমে লোক গাথা , সেখান থেকে কাব্যগাথা , গদ্য কথা , নাটক নভেল উপন্যাস আর যতসব সাহিত্যের শাখা প্রশাখা । লালন তার গানে আমাদের সাহিত্য ভান্ডারকে করেছেন সমৃদ্ধ । দুইশত বছরের অধীককাল হতে তিনি পরিচিত বাংলার ঘরে ঘরে , প্রায় সকলেই লালন গান ভক্ত । লালন কোটি কোটি মানুষের কাছে শত বর্ষ ধরে পেয়েছেন যা তার মুল্য ও সন্মান নোবেল থেকেও শত কোটি বেশী পরিমান ।
শুভেচ্ছা রইল ।

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:৫৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৪:৫৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
নোবেল মরণোত্তর দেয় না - তাই অনেক শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী বা দর্শনী গীতিকার এই পুরষ্কারটা পেতে পারছে না। লালন বেঁচে থাকলে অবশ্যই নোবেল সে পেত। আশা করা যায়।

তবে গানকে সাহিত্যের কাতারে আসলে ফেলেনি কখনো। এবারই প্রথম। যদি আরো পঞ্চাশ বছর আগে গানকে সাহিত্য হিসেবে গন্য করা হত - তাহলে আমাদের কাজী নজরুল ইসলামও কিন্তু নোবেলের দাবিদার ছিলেন।

বব ডিলানের মাধ্যমে নতুন ধারা খুললেও কিছু আফসোস আমাদের রয়েই যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.