নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিশ্চিত গন্তব্য

ভণ্ড সাধক

আমি কেউ না

ভণ্ড সাধক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ শুয়োরের দেশ, ওদেশে মানুষ থাকে না!

২২ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৬:৩১

Annando Kutum (আনন্দ কুটুম) নামে ফেসবুকের এক আইডিতে বাংলাদেশের মানুষকে খুবই নিচু করে কলকাতাবাসী এক কথিত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এবং সেটি ভাইরাল হয়েছে।গল্পের হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই মুক্তিযোদ্ধা নাকি ৭৫-এর পর মুসলমানদের অত্যাচারে সর্বস্ব হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়্। রতন তালুকদার নামে ফরিদপুরের ওই কমান্ডার কলকাতায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে নাকি বেশ ভালোই আছে। অানন্দ কুটুম বাংলাদেশ থেকে আসা লোক জানাতে পেরে ওই ব্যক্তি এদেশের মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলে, "বাংলাদেশ একটা শুয়োরের দেশ। ওদেশে কোন মানুষ থাকে না। শুয়োরের জাত সব। ঘেন্না লাগে। ঘেন্নায় আর ঐ মুখো যাই না। কোন মুসলিম শুয়োরের বাচ্চাকে আর বিশ্বাস করি না। কোন বাংলাদেশী শুয়োরের বাচ্চারে আর বিশ্বাস করি না।" কল্পিত ওই মুক্তিযোদ্ধার মুখ থেকে আরো শোনানো হয়, 'ইন্দ্রা গান্ধী না থাকলে দেশ স্বাধীন হইত? কি না করছে মহিলা। সবাইরে দিয়া আগে স্বীকৃতি দেওয়াছেন। এর পর তিনি দিছেন। যেদিন ইন্ডিয়ান আর্মি দেশে ঢুকল ৩ খান বড় বড় বিমান বোম্ব ফুটাইতে ফুটাইতে দেশে ধুকছিল। দেশ স্বাধীন হবার পরে পানির মত রিলিফ দিছেন এই মহিলা।' মোট কথা ওই গল্পে ছিল বাংলাদেশি বিশেষত মুসলমানদের চরিত্র হননের চেষ্টা আর ভারতের বন্দনা।

প্রোফাইল ইনফোতে গিয়ে বুঝলাম 'আনন্দ কুটুম' বর্তমানে কলকাতায় বাস করছেন। স্বাভাবিকভাবেই তার ফ্রেন্ডলিস্টে কলকাতার বন্ধুরাই বেশি। আনন্দ কুটুমের ওই বানোয়াট গল্পের স্ট্যাটাসের নিচের কমেন্টসগুলো দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। বাংলাদেশিরা বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান, নিমকহারাম, কাঙালের বাচ্চা, পা-চাটা কুকুর এইসব গালিগালাজ। কমেন্টসে কেউ কেউ লিখেছেন-- ইন্দিরা গান্ধিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া উচিত, ভারত আত্মীয় ভেবে নিঃস্বার্থভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে আর নিমকহারাম বাংলাদেশিরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের কাছে ভারত হেরে যাওয়ায় উল্লাসিত হয়, বাংলাদেশের মানুষ সব কুলাঙ্গার, বাংলাদেশিরা জারজ, একাত্তরে ইন্ডিয়া পাশে না দাড়ালে এখনো পাকিস্তান ওদের পু--- মারতো ইত্যাদি ইত্যাদি।

মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। পরে মাথাটা ঠান্ডা করে Ananda Kutum-এর ওই বাংলাদেশী বিদ্বেষী স্ট্যাটাসে একটা কমেন্টস দিলাম এইরকম-

‌‍"এটা যে বানোয়াট তা পরিস্কার, তবে লেখনির তারিফ করতেই হয়। এ লেখার থিম হলো ভারত-বন্দনা। ভারত একাত্তরে কী আমাদের নিঃস্বার্থ সাহায্য করেছিল? কেবল আত্মীয়তার বন্ধন! বাহ, দারুণ। ওই সময়ের বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন, তাহলে বুঝবেন। কেন পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পন মঞ্চে ওসমানী বা তাজউদ্দিনকে রাখা হয়নি? ভারতের তৈরি আত্মসমর্পন দলিলে কেন বাংলাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা বা বঙ্গবন্ধু - এসব শব্দ রাখা হয়নি? জেনারেল অরোরাকেই কেন সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হল? আর কার নির্দেশে আত্মসমর্পণের পর পাকিস্তানি সৈন্যদের অস্ত্র-সামরিক যান দ্রুততার সঙ্গে রাতের আধারে ভারত পাঠানো হল? একাত্তরে পাকি-সৈন্যরা এদেশে লুন্ঠন চালিয়ে ষে ধন-দৌলত-স্বর্ণ জমিয়েছিল সেগুলো তো তারা নিজ দেশে পাঠানোর সুযোগ পায়নি। ওই লুন্ঠন করা সম্পদ গেলো কই? দিল্লি কেন একবার সেই হিসাব ঢাকাকে দিলো না? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুজেন। এরপর ভারতকে মহান আর ইন্দিরাকে জাতির মাতা খেতাব দিয়েন।"

ওরে ওরে... ফুটন্ত কড়াই থেকে জলন্ত চুলাতে পড়লাম। কেউ আমাকে ঠেসে কাঠালপাতা খাওয়ায়, কেউ আমাকে পাকিস্তানে কবর দেয়, কেউবা আমার জন্ম-পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে... আর গালিগালাজের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। আবারও কমেন্টস করলাম-
"সবার উদ্দেশ্যেই বলছি, অবশ্যই ভারত একাত্তরে আমাদের জন্য অনেক করেছে। কিন্তু সব কি নিঃস্বার্থ? ভারত কি কোন সুবিধা আদায় করে নেয়নি? এটাই হলো আমার বক্তব্য। এ কথাগুলো অবশ্যই ধ্রুবসত্য নয়। যুক্তি আর ডকুমেন্টস দিয়ে খন্ডানো সম্ভব। আমি যা বলেছি তার পেছনে আমার কাছে ডকুমেন্টস আছে। গালাগালি যারা করছেন, তারা নিজেদের কুরুচির পরিচয় দিচ্ছেন। পাকিস্তানি সেন্যদের আত্মসমর্পনের ডকুমেন্টসটা দিলাম। এখানে কোথায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, কোথায় মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা আর কোথায় বঙ্গবন্ধু? সব কৃতিত্ব ভারতই নিয়েছে। এই কি নিঃস্বার্থ সহযোগিতার নমুনা?"

[কমেন্টসের সঙ্গে অরোরার কাছে নিয়াজির Instrument of Surrender এটাচ করে দিলাম। এতে ছয়বার জেনারেল অরোরা নাম থাকলেও বঙ্গবন্ধু, ওসমানি বা তাজউদ্দিনের নাম একবারও নেই। মুক্তিযুদ্ধ শব্দটিই নেই-- The PAKISTAN Eastern Command agree to surrender all PAKISTAN Armed Forces in BANGLA DESH to Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA, General Officer Commanding in Chief of the Indian and Bangladesh forces in the Eastern Theatre. This surrender includes......]

ডকুমমেন্টস না পড়েই আবার শুরু হলো গালি শিক্ষার আসর। দু একজন ভদ্রলোকের কমেন্টসও ছিল। ভেবেছিলাম এখানে আর কোনো কমেন্টস-ই করবো না। Payal Đ Banik নামে একটা মেয়ে ভদ্রভাবেই জানতে চাইলো, "ভারতের নিঃস্বার্থ সহযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন? আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন, ভারত কেন বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল? আপনার কি মনে হয়?" মেয়েটার প্রোফাইলে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের বয়সী তাই তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পারলাম না। লিখলাম-

Payal Đ Banik এখানে আমার এটাই শেষ কমেন্টস। শুরুতেই বলি, আমি ঘোর পাকিস্তান বিরোধী। শপথ করে বলছি, কোনোদিন পাকিস্তানি পণ্য আমি স্পর্শ করিনি, ঘৃণাই করি ওই বর্বরদের। একাত্তরে পূর্ববাংলার মানুষকে ভারত সহায়তা করেছিল্ এ অঞ্চলের আধিপত্যের জন্য।ওই সময় মার্কিন আর সোভিয়েত জোটের স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। আজকের ভারত ছিল সোভিয়েত জোটে আর দ্বিজাতিতত্বের ঘৃণ্য নীতিতে সৃষ্টি অখন্ড পাকিস্তান ছিল মার্কিন শিবিরে। ভারতীয় উপমহাদেশে আধিপত্যের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ওইসময় ভারতকে সহযোগিতা দেয়, আর যুক্তরাষ্ট নিজেদের অধিপত্যের স্বার্থে পাকিস্তানকে সহায়তা করে। অখন্ড পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ছিল গোজামিল মার্কা, পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে ধর্ম ছাড়া সংস্কৃতি-ভাষা কোনো কিছুতেই মিল ছিল না। ধর্ম ছাড়া এ রাষ্ট্রের কোনো ভিত্তিই ছিল না আসলে।আর শুরু থেকেই পশ্চিম অংশের মানুষ পূর্ব অংশের মানুষকে শোষণ করতে থাকে। এ কারণে পূর্ববাংলার বাঙালিরা ছিল শাসক পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি বিক্ষুব্ধ। উপমহাদেশে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে সামরিক দিক দিয়ে পশ্চিম আর পূর্ব প্রান্তের দুই পাকিস্তান ছিল ভারতের জন্য হুমকি। কাজেই পূর্ববাংলার মানুষরা যখন পাকিস্তানিদের অত্যাচারে স্বাধীনতার কথা ভাবতে শুরু করলো। ভারত এসে তাদের পাশে দাড়ালো। কারণ দুইখণ্ড পাকিস্তান ভেঙে গেলে এ অঞ্চলের আধিপত্য ভারতের মুঠোয় চলে আসবে, পূর্বপাশের সামরিক নিরাপত্তা নিয়ে ভারতকে ভাবতে হবে না, এটাই ছিল স্বার্থ। অনুগ্রহ করে যুক্তিসহ কথা বলুন, গালাগালি করলে তো নিজেকেই মুলত ছোট করা হয়। সবাইকে ধন্যবাদ।"

ফুটনোট:
যারা মন দিয়ে আমার এই স্ট্যাটাসের সবটা পরেছেন তাদের কাছে প্রশ্ন, আমি কি ভুল কিছু বলেছি? আর বন্ধুদের কাছে অনুরোধ Ananda Kutum নামে ওই প্রোফাইলে গিয়ে একবার ওই বানোয়াট গল্পটা এবং ফলোআপ স্ট্যাটাসগুলো পড়েন। দেখেন নিজেকে বাংলাদেশি দাবি করে কিভাবে এদেশের মানুষকে নিচু-হীন-জংলি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। কমেন্টসগুলিও পড়েন, দেখে এদেশের কিছু লোকও ভারতের বন্দনায় মেতেছে।আর নিজেরাই নিজেদের দেশতে জাতিকে গালাগালি করতেছে।... সত্যি স্যালুকাস।

ক্লিক: আনন্দ কুটুমের স্ট্যাটাস লিংক:https://www.facebook.com/annando.kutum/posts/1391556857577199

(বিপুল হাসানের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:০০

আওরঙ্গজেব চৌধুরী রিফাত বলেছেন: আপনার বক্তব্য ঠিকই ছিল। ওই পোস্টটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল

২| ২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৩৮

জগতারন বলেছেন:
আপনার মন্তব্য ও বক্তব্য ঠিকই ছিল।
আপনার প্রতি সুভেচ্ছা ও অভিন্দন জ্ঞাপন করছি।

৩| ২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৩৮

জগতারন বলেছেন:
আপনার মন্তব্য ও বক্তব্য ঠিকই ছিল।
আপনার প্রতি সুভেচ্ছা ও অভিন্দন জ্ঞাপন করছি।

৪| ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫৯

নতুন নকিব বলেছেন:



//জগতারন বলেছেন:
আপনার মন্তব্য ও বক্তব্য ঠিকই ছিল।
আপনার প্রতি সুভেচ্ছা ও অভিন্দন জ্ঞাপন করছি।//

---সহমত। ধন্যবাদ।

৫| ২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ৩:৫৬

কানিজ রিনা বলেছেন: ভারতের মানুষ কেমন শুয়োরের বাচ্চা
সেই ভারত মাতার ইন্দ্রাগান্ধিকে ছেলেকে
খুন করে ভারতে শুয়োররা বসবাস করছে।

৬| ২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:৩১

নোয়াখাইল্ল্যা বলেছেন: ভারত কিংবা পাকিস্তান বলেন এদের মানসিকতা যে কত নিচু, প্রবাসে না থাকলে বুজতাম না।।।যারা এই জাতিগুলোর সাথে নিয়মিত মিশেছেন কেবল তারাই ভাল বলতে পারবেন।শুভকামনা রইল ভাই।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.