নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"মস্তিষ্ক বিকৃত, কিন্তু বিক্রীত নয়\" (never care for what they say......)

পুরোনো পাপী

"তোমার মনের মইধ্যে আলেকের বাস, সে না কাউরে শোনে, না কাউরে বোঝে। তুমি যা বোঝাও সে তাই বোঝে।"

পুরোনো পাপী › বিস্তারিত পোস্টঃ

╚»★ এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০) ★«╝ {একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র}

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:০৪

শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ খুব বেশিদিন আগের নয়। বাংলাভাষায় তাই শিশুতোষ চলচ্চিত্রও খুব বেশি নেই। সত্যজিৎ রায়ের “গুপীগাইন বাঘা বাইন”, “হীরক রাজার দেশে” নির্মাণ করে শিশুদের জন্যে বেশ উপযোগী, শিক্ষামূলক ও বিনোদন ধর্মী চলচ্চিত্রের নিদর্শন রাখেন। এছাড়াও কাউকে জিজ্ঞাসা করলে আরো একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্রের নাম সবারই জানা। অথবা বাংলাদেশী শিশুতোষ চলচ্চিত্রের কথা জিজ্ঞাসা করলে সবাই এক বাক্যে যা বলবে তা হল মোর্শেদুল ইসলাম নির্মিত “দীপু নাম্বার টু”। কিন্তু সম্পুর্ণ সরকারী অনুদানে বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ছিল “এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০)”।







“এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী” ‘র মতন শিশুতোষ যে নির্মিত হয় নি আমাদের দেশে তা কিন্তু নয়। কিন্তু এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল এখানে তিনি একসাথে অনেক শিশুকে অভিনয়ে অংশ গ্রহণ করান। এতে করে শিশুদের ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিষয় গুলো সোজা হয়। পুরো ব্যাপারটাই তারা প্রায় খেলাচ্ছলেই করে। এছাড়াও, “দীপু নাম্বার টু” তে বাবা মায়ের সাথে শিশুদের সম্পর্ক, “দূরত্ব” সিনেমাতে ধনী গরীব শিশুদের বৈষম্য তুলে ধরা বেশ লক্ষণীয়। তারেক মাসুদ এববগ ক্যাথরিন মাসুদও কিন্তু বেশ কয়েকটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যার মাঝে “মাটির ময়না” তে তৎকালীন মাদ্রাসার ছাত্রদের শিক্ষা গ্রহণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। “ভয়েস অফ চিল্ড্রেন” তাদের নির্মিত শিশুতোষ আরেকটি প্রামাণ্য চিত্র। এটি এখনো দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি আমার।



“এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী” ‘র দিকে চোখ রেখে যদি আমরা বর্তমান সময়ের শিশুতোষ কোন চলচ্চিত্রের খোজ করি চিত্রটি খুব বেশি সুখকর নয়। কারণ কি?? কারণ পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। সাথে অশ্লীল চলচ্চিত্রের হার বৃদ্ধি সহ নানান চিত্র চোখে পরবে। শুদের সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে সরকারেরও কোন বিশেষ ভূমকা লক্ষণীয় না। শুধু শিক্ষার মাধ্যমেই নয় সুস্থ চলচ্চিত্র ও সুস্থ সংস্কৃতি শিশুদের বিকাশে অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কিশোর অথবা শিশু অপরাধের হারও কমাতে সাহায্য করে এই সকল বিষয়। এক্ষেত্রে কার্টুন অথবা এনিমেশন ফিল্মেরও ভূমিকা রয়েছে। নিজ ভাষায় এনিমেশন ফিল্ম হলে তা শিশুদের কাছে আরো বেশি গ্রহনযোগ্যতা পাবে। কিন্তু সেদিক দিয়েও কারো কোন পদক্ষেপ নেই। শিশুদের খেলার স্থান যেমন কেড়ে নেয়া হচ্ছে, তেমনি তাদের সৃজনশীলতার বিকাশেও বাধা দিচ্ছি আমরাই। কারো কোন ভ্রুক্ষেপই নেই এই বিষয়ে। অনেক আগে একটা গান শুনেছিলাম। “বৃত্ত” ব্যান্ড এর “রুদ্ধ শৈশব”। কথা গুলো এমন,



“ওইযে দূরে ভিজছে সবই

আমার শুধু ভিজছে দু’হাত

এমন সময় বেশতো হত

পারলে যেতে ঐ দূরটাতে

পেরিয়ে সাগর পেরিয়ে নদী

বাসঘর ছেড়ে তেপান্তরে।।”


কথাগুলো আমাদের সময়ে যতটা না সত্য ছিল, এখনকার শিশুদের জন্যে আরো বেশি প্রযোজ্য।



“এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী” ‘র কথা মনে হলেই একটা গান কানে বাজে।

‘আমরা যাব অভিযানে সঙ্গে যাবে কে,

এই তো আমার বীর বাহিনী কোমর বেঁধেছে’






এমিল চরিত্রটির প্রকৃত স্রষ্টা জার্মান লেখক এরিক কাসনার (Erikh Custner)। বিশ্বের নানা দেশে এমিলকে নিয়ে ছবি নির্মিত হয়েছে। এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’র চিত্রনাট্য সেই গল্পকে অবলম্বনেই করা হয়েছে। খেলাঘরের “মুক্ত পাখিকে বন্দী কোরো না” শীর্ষক রচনা প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়ে খুলনার ছেলে এমিল ঢাকায় পুরস্কার নিতে আসে। আসতেগিয়ে তার সাথে থাকা ৫০০ টাকা হারিয়ে ফেলে। ট্রেনে আসার সময়ে এই দূর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু নাছোড় বান্দা এমিল, সেই টাকা উদ্ধার করবেই। এর পর থেকেই শুরু হয় তার অভিযান। অভিযানে তার সঙ্গী হয় ঢাকায় নতুন গড়ে ওঠা কিছু বন্ধু এবং পরে তাদেরই একজনের মামা। কিন্তু আসলেই কি শেষ পর্যন্ত টাকা টা উদ্ধার হয়?? নাকি সে অন্য কোন ফাঁদে জড়িয়ে পরে?? শেষ কাহিনী জানতে হলে সিনেমাটি দেখে ফেলতে হবে অবশ্যই।



খুব ছোট অবস্থায় দেখেছিলাম সিনেমাটি। তাও টিভিতে দেখার কারণে পুরোটা দেখতে পারিনি বলে আবারো দেখে ফেললাম আজ। তখনই সিনেমাটি আমাকে স্পর্শ করেছিল। হয়তো ছোট ছিলাম বলে একটু বেশিই করেছিল। তবে সেইসময়ে নায়ক নায়িকার আর প্রেম নির্ভর সিনেমার ভীড়ে এইধরণের শিশুতোষ সিনেমা তৈরী করে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দেন মরহুম পরিচালক বাদল রহমান। এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী ছাড়া তার উল্লেখযোগ্য আর কোন সিনেমার কথা শুনিনি আমি।



সিনেমায় অভিনেতা অভিনেত্রীরা ছোট বাচ্চাদের আকর্ষণ করতে যেইরকমের অভিনয় দরকার ঠিক তেমনটিই করেছেন। আর এমিল সহ প্রফেসার আর প্রফেসারের মামার চরিত্র সব বাচ্চাদের আকর্ষণই করবে। এছাড়াও বেশ কিছু যায়গা বেশ মজার করে সাজিয়েছিলেন যাতে বাচ্চারা আকৃষ্ট হয়।



তবে গল্প নির্বাচন ব্যাক্তিগত ভাবে আমার পছন্দ হয় নি। এরচেয়ে আরো অনেক ভালো ভালো কিশোর উপন্যাস বাংলা লেখকদেরই ছিল। সেসব কোনতা দিয়ে কাজ করলে হয়তো মানসিক শান্তি পেতাম। এইটা একান্তই ব্যাক্তিগত মত। সেই দিক দিয়ে দীপু নাম্বার টু, আর আমার বন্ধু রাশেদ এর গল্প নির্বাচন বেশি ভালো লেগেছে আমার। গল্প নির্বাচন যাই হোক তার পরেও সাধারণ গল্পকে অসাধারণ চলচ্চিত্রে পরিণত করার জন্যে বাদল রহমানের অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। এই সিনামার জন্যে তিনি এবং তার সহযোগীরা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার জাতীয় চলচ্চিত্রও পুরস্কার পান। একনজরে আমরা দেখে নিতে পারিঃ



জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

সেরা চলচ্চিত্র – এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (প্রযোজক বাদল রহমান)

সেরা পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা – গোলাম মুস্তাফা – এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী

সেরা শিশুশিল্পী – টিপটিপ – এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী

সেরা চিত্রগ্রাহক (রঙিন) – আনোয়ার হোসেন – এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী

সেরা সম্পাদনা – বাদল রহমান – এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী



আমার আশে পাশে বাচ্চা কাচ্চার অভাব নেই। মাঝে মাঝেই এদের নিয়ে বসে পরি কোন এনিমেশন মুভি দেখতে। আশায় থাকলাম আমাদের নবীন চলচ্চিত্রকারেরা হয়তো বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে কিছু তৈরী করবেন। তা এনিমেশনই হোক অথবা শিশুতোষ কোন চলচ্চিত্রই হোক। নাহয় এদের জীবন বৃত্ত’র “রুদ্ধ শৈশব” গানটার মতই হয়ে যাবে।



সিনেমার নাম : এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০)

কাহিনীঃ লেখক এরিক কাসনার

চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ বাদল রহমান

শ্রেষ্টাংশে: গোলাম মোস্তফা, সারা যাকের, মাস্টার পার্থ, এটিএম শামসুজ্জামান, শর্মিলী আহমে, শিপলু এবং আরো অনেকেই।



✘✘✘ দয়া করে কোন বাংলাদেশী মুভির ডাউনলোড লিংক শেয়ার করবেন না। বাংলা মুভি সিনেমাহলে গিয়ে অথবা অরিজিনাল ডিভিডি কিনে দেখুন। দেশের চলচ্চিত্র রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন।



যারা দেখেননি আগে, তারা ইয়ুটিউবে দেখতে পারেন।



এমিলের গোয়েন্দা বাহিনীঃ http://www.youtube.com/watch?v=kcUqhO2o6mA

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:১১

ব্লগ ৪১৬ বলেছেন: ভালো ছবি।

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৮

পুরোনো পাপী বলেছেন: অবশ্যই :)

২| ২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৭

সায়েদ রিয়াদ বলেছেন: দেখতে হয় তাহলে :)
আপনার সাথে একময় ।হ্যা শিশুদের নিয়ে বেশী বেশী চলচিত্র / শর্ট মুভি বানানো দরকার ।

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৯

পুরোনো পাপী বলেছেন: জী ভাই :( এখন এইরকম কিছু দেখাই যায় না :(

৩| ২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৮

বোকামন বলেছেন:



ইদানীংকালে শিশুতোষ বিনোদনের খুব অভাব বাংলাদেশে ....

এমিল চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তার নাম সম্ভবত “রেয়াজ শহীদ”

আপনাকে ধন্যবাদ।

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৩০

পুরোনো পাপী বলেছেন: ইদানিং আসলেই দেখাযায় না শিশুতোষ কিছু। আমরা পরের প্রজন্মের জন্যে কিছুই করছিনা। আরো বেশি বেশি করা দরকার।


ধন্যবাদ :)

৪| ২১ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯

কাফের বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট
আমিও ছবিটা ছোটবেলায় টিভিতে দেখেছিলাম আর মাস খানেক আগে আবার দেখলাম।
আপনার সাথে একমত গল্প নির্বাচন আমারও পছন্দ হয় নাই এর চেয়ে ভালো শিশু কিশোরদের গল্প বাংলাদেশী লেখকদের ছিল।

২১ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৯

পুরোনো পাপী বলেছেন: ধন্যবাদ, সকল বিষয়ে একমত হওয়ার জন্যে :)

৫| ২৬ শে জুন, ২০১৩ রাত ২:২৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:


পোষ্টে +++

২৭ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৫

পুরোনো পাপী বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.