নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"মস্তিষ্ক বিকৃত, কিন্তু বিক্রীত নয়\" (never care for what they say......)

পুরোনো পাপী

"তোমার মনের মইধ্যে আলেকের বাস, সে না কাউরে শোনে, না কাউরে বোঝে। তুমি যা বোঝাও সে তাই বোঝে।"

পুরোনো পাপী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"অপরিণত"

১০ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১১

ভুতে বিশ্বাস করে এমন মানুষ খুব বেশি আছে বলে মনে হয় না। তারপরেও আমাদের আশে পাশেই বোধ করি অনেক অধিভৌতিক ঘটনা ঘটছে যার কোন ব্যাখ্যা নাই। এবং মনোবিজ্ঞানের ভাষায় সহজেই একে হ্যালুসিনেশনের কাতারে ফেলে দিয়ে দায় সারা হয়। আমি নিজেও ভুত বা পেত্নী টাইপের জিনিষের পক্ষপাতী নই। পাশে দারিয়ে “ভাই লাইটারটা দেন, বিড়ি ধরামু” বললেও হয়তো বিশ্বাস করবো না যে ভুত। যদিও বলার সম্ভাবনা ক্ষীণ।







ভুতের ঘটনা গুলোও বেশ রসালো। এক জনকে দিয়ে শুরু হয়। তারপরে একজন একজন করে বিস্তৃত হতে থাকে। সেইরকম অনেক অনেক ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। হাটে মাঠে তো ভুতের কথা শুনেই থাকবেন কত। কিন্তু সাগরে পানির মাঝে ভুত?? আমি নিজেও জানিনা আদৌ সম্ভব কিনা। তবে দেখা যাক গল্পের শেষ কোথায় গিয়ে থামে।



একটা বেশ পুরোনো জাহাজের গল্প। জাহাজের নাম BALTIC LEADER. জাহাজের ক্যাপ্টেন ইন্ডিয়ান। চীফ অফিসার পাকিস্তানি। সেকেন্ড ও থার্ড অফিসার বাংলাদেশী। ক্যাডেট দুইজন ইন্ডিয়ান। আবারো ঘটনা যেহেতু ডেক অফিসার দের নিয়ে তাই ইঞ্জিনিয়ারদের সম্পর্কে শুধু অল্প পরিচয়ে দায় সারি। চীফ ইঞ্জিনিয়ার ইথিওপিয়ান (আমার বর্তমান চীফ ইঞ্জিনিয়ার এতই বজ্জাত তারে এইখানেও মনে হইতেছে তাই নিয়া আসলাম), সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার ইন্দোনেশিয়ান। থার্ড ইঞ্জিনিয়ার ইউক্রেনিয়ান। ইঞ্জিন ও ডেকের সকল ক্রু ফিলিপিনো। সাধারণত জাহাজের সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকে যতক্ষণনা অন্য কোন প্রভাবক এসে তা নষ্ট না করে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রভাবক টাকা পয়সা নামক বস্তু। সেই দিকে না যাই। সিম্পল সাধারণ জাহাজ। যেখানে সবাই সবার সাথে খুব সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।



জাহাজের পাকিস্তানি চীফ অফিসার অসাধারণ মানুষ। ক্রু রা তাকে দেবতার মতন মনে করে। নাম আরশাদ উমর। তার সাথে সবারই সম্পর্ক খুব ভাল। চীফ অফিসারে সাথে ক্যাডেটদের সম্পর্ক সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে। এইটা স্বাভাবিকতা। কিন্তু এক্সসেপশনও আছে। এটা সেরকমেরই। একটা উদাহরণ দেই তার সাথে কিরকম ভাল সম্পর্ক ছিল ক্যাডেটদের। ইন্ডিয়ান ক্যাডেট নাম সতীশ। তার গার্ল ফ্রেন্ড সুইডিশ। বাবা ক্যাপ্টেন হওয়ার সুবাদে সে দেশে থাকার সুযোগ হয়েছিল অনেক বছর। সে থেকেই সম্পর্ক। মাঝে মাঝে প্রিয়তমার কাছে চিঠি লিখতো এবং সেই চিঠি কারেকশনের ভার চীফ অফিসারের কাছে ছিল এইধরণের সম্পর্ক তাদের। ক্যাডেট হিসেবেও তার বেশ ভালই পার্ফরমেন্স। সেকেন্ড অফিসার, থার্ড অফিসার সবারই কিছু না কিছু কাজে সব সময়েই সাহায্য করে। চীফ অফিসার তাকে যে কোন কাজ দিয়েও শান্তিতে থাকে। বিশ্বাস যোগ্যতা খুব বড় জিনিষ। ভাসমান অবস্থায় সেটার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু অন্য কেউ বুঝবে না।



মূল গল্পের শুরুতেই ক্রুদেরও কিছুটা পরিচিত করতে হবে। কারণ এদের বিস্তৃতি কম নয়। Bosun ক্রু সর্দার সকল ক্রুর বস। তার পর আছে Able Bodied Seaman. এদের কাজ সবচেয়ে মজার। সময় মতন ডিউটি। ঘুম খাওয়া দাওয়া সব এদের জন্যেই। তার নীচে Ordinary Seaman, আর সব শেষে Deck boy. ইঞ্জিনে দুই জন Motor Man. একজন চীফ কুক আর একজন স্টুয়ার্ট। সাথে ইঞ্জিনে একজন Fitter ও থাকে। অনেক ভ্যাজর ভ্যাজর করার একটাই কারণ যাতে গল্প বড় হয়, এছাড়া আর কিছুই নয়।



চলুন তবে শুরু করা যাক। সুমালিয়ান কোস্টের কথা সবাই জানেন। সাধারণত যেই সব জাহাজ গাল্‌ফ অফ এডেন পাড়ি দেয়ার সময় আর্মস গার্ড না থাকে তাদের ক্রু এবং ক্যাডেটরা সকলে চক্রাকারে ডিউটি দেয়, পাইরেসি ডিউটি। তেমনই এক রাতের কথা। এক জন এবল সিম্যান আর সাথে একজন মোটর ম্যান ডিউটিতে। সাথে একটা ক্যাডেটও আছে। রাত প্রায় ২ টার সময় AB দেখতে পায় জাহাজের রেলিঙ্গের উপরে একজন বসে আছে। রেলিং মানে শেষ রেলিং। একটু এদিক সেদিক হলেই পরে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই বান্দা পা ঝুলিয়ে মাথা নাড়িয়ে গান শোনার তালে শরীর দুলাচ্ছে। AB জাহাজে এসেছে বেশি দিন হয় নি। সে কাছে যেতে যেতে হঠাত কোথায় যেন কেউ তাকে ডাকলো এমন মনে করে পিছে ফিরলো। পরক্ষণেই সামনের রেলিঙ্গের উপরে থাকা মানুষটি কোথায় যেন চলে গেল। খুজে পেল না আশে পাশে। মনে সন্দেহ দানা বাধতে থাকে তার। সাথে থাকা ক্যাডেট আর মোটর ম্যানকে বলে সে কথা। সবাই মুখ থম থম করে কিছুই বলে না আর। এদিকে তার মনে খুতখুত করতেই থাকে। পরদিনের কথা। দুপুরে খাবার সময়ে Bosun কে আগের রাতের ঘটনা শোনায়। তখন বোসান তাকে যেই কাহিনী শোনায় তা কিছুটা এইরকম,



একদিন সকালে চীফ অফিসার সতীশকে সারাদিনের কাজের কথা বলে দিল। সে সব কিছু শেষ করে সাধারণ দিনের মতন দুপুরে লাঞ্চ করে নিজের কাবিনে চলে যায়। দুপুরে ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত লাঞ্চ ব্রেক। তারপরে আবার সবাই যে যার কাজে লেগে যায়। কারো অন্যের দিকে খেয়াল করার সময় নেই। হঠাত এক AB ডেকে কাজ করতে করতে কি মনে করে জাহাজের পাশের রেলিঙ্গের কাছে যায়। খেয়াল করে পাইলট ল্যাডার বলে একটা জায়গা আছে কার ক্যারিয়ার গুলোতে এটা সাধারণত ৬ নাম্বার কার ডেকে থেকে পাইলট ওঠানোর জন্যে থাকে। সেই পাইলট ল্যাডারের কাছে কেউ রেলিঙ্গে বসে আছে পা দুলিয়ে। তেমন কিছু মনে না করে নিজের কাজে ফিরে যায় AB. বিকাল ৪ টায় চীফ অফিসার ডিউটিতে এসে সতীশকে খুজে না পেয়ে কেবিনে কল দেয়। কেউ ফোন রিসিভ না করায় ডেকে খুজতে পাঠায় আরেক ক্যাডেটকে। সেখানেও কেউ নেই। দুপুরের লাঞ্চের পরে কেউ তাকে দেখে নি আর। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চীফ অফিসার ক্যাপ্টেনকে জানায়। সবাইকে ডাকা হয়। সতীশ নেই সেখানেও। তারপরে ইমার্জেন্সি এলার্ম বাজানো হয়। তার পরেও পাওয়া যায় না তাকে। শেষ পর্যন্ত এনাউন্স করা হয় যাদে সে কোথাও লুকিয়ে থাকলেও বেরিয়ে আসার জন্যে। অনেক সময় ভুল কিছু করে আত্ম উপলব্ধিতে লিকিতে থাকতে পারে ভেবে। তার পরেও খোজ মেলে না। তখন সবাইকে আলাদা টীমে ভাগ করে খুজতে পাঠানো হয়। কোথাও খুজে পাওয়া যায়না তাকে।



সবার শেষে সন্ধ্যা হচ্ছে তখন সেই দুপুরের AB যে কিনা কিছু একটা দেখেছিল সেই চীফ অফিসারকে ঘটনা বলার পরে সবাই পাইলট ল্যাডারের কাছে যায়। সেখান থেকে আবিষ্কার করে বাইরে থেকে বন্ধ করা এবং খোলা সম্ভব নয়। দ্রুত আশে পাশের সকল জাহাজকে জানানো হয়। ৪ টা জাহাজ খোজাখুজিও করে ২৪ ঘন্টা কোন খোজ পাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সাগর যাকে আলিঙ্গন করেছে তার দেখা কি আর মেলে??



এই ঘটনার পর থেকেই মাঝে মাঝেই রাতে সতীশের অবয়ব দেখা যায় জাহাজের বিভিন্ন রেলিঙ্গে। এবং মাঝে মাঝে কারো নাম ধরে ডাকও শোনা যায়।



ছেলেটার মৃত্যুর কারণও বেশ হাস্যকর। তার সুইডিশ প্রেমিকা নাকি তাকে ছেড়ে আরেক প্রেমিক খুজে নিয়েছিল। সেই ব্যাপার সহ্য করতে না পেরে নিজের জলাঞ্জলি দিতে দেরী করে নি। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার জাহাজের পরের পোর্ট ছিল মুম্বাই যেখানে তার জাহাজ থেকে নেমে যাওয়ার কথা ছিল। তার বাবা-মা অপেক্ষারত ছিল তাদের ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাবার জন্যে।



এই ঘটনা আমার সৌভাগ্য অথবা দূর্ভাগ্যই হোক আমি আমার প্রথম ক্যাপ্টেন আরশাদ উমরের কাছে থেকেই শুনি। বলতে গিয়ে তার চোখে পানি চলে আসে। অসাধারণ ভাল মানুষ গুলোই বেশি ঝামেলায় পরে। কারণ ক্যাডেট মিসিং হলে তার পরের সকল দায় গিয়ে পরে চীফ অফিসারের উপরে। সেই দায় বয়ে বেড়াতে হয় তাকে সারা জীবনই।।



এখানে বলা সকলের নাম কাল্পনিক শুধু আরশাদ উমর নামটি ছাড়া। আর গল্পের সাথে কিছুটা রং মাখানোর দায়িত্ব আমার ছিল। কতটা লাগিয়েছি জানিনা। হয়তো ভুতের গল্প বলতে গিয়ে বিরক্তিকর কিছু বললাম নাকি কে জানে



আমার ল্যাপ্টপ খুজেও ক্যাপ্টেন আরশাদ উমরের কোন ছবি পেলাম না। নাহয় যোগ করা যেত

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৩

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: চমৎকার লিখছস । +++++++ । কিন্তু শিরোনামটা আমার কেন জানি ভালো লাগে নাই ,অন্যকোন শিরোনাম দিতে পারতি । একান্তই আমার মত ।

১০ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৬

পুরোনো পাপী বলেছেন: আমার নিজেরও পছন্দ হয় নাই শিরোনাম :(

কিছু মাথায় আইতাছে না :/

তর মাথায় কিছু আইলে দে বদলাইয়া দেই :/

২| ১০ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩২

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: সি ম্যানস এরর

১০ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫

পুরোনো পাপী বলেছেন: নাহ :/ এই সম্পর্কিত কিছু না :/

৩| ১১ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো লেখাটা। শেষটা বেশ ট্রাজিক।

১৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩

পুরোনো পাপী বলেছেন: ্জঘন্য তম :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.