নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোরসন্ধানে

পুষ্পজিৎ

বাংঙ্গালী

পুষ্পজিৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একাত্তরের ২৫শে মার্চ - মানব ইতিহাসের অন্যতম বর্বর নিষ্ঠুরতম গণহত্যার একটি রাত

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯



একাত্তরের ২৫শে মার্চের সেই রাত।গভীর রাতের নিস্তব্ধতার মধ্যে হঠাৎই ট্যাংকের গর্জন শুনতে পায় শহরবাসী। পাখির ডাক নয়, বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের লাখ লাখ জনসাধারণ জেগে ওঠে অনবরত গোলাগুলির শব্দে। বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম এবং বৃহত্তম এক গণহত্যার সূচনা হয় এভাবেই, যা পরিচালনা করেছিল তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল ইয়াহিয়া।
সারা বিকাল ধরে পাকিস্তানী সামরিক কর্মকর্তারা সারা দেশে হেলিকপ্টারে টহল দিতে থাকে, সকল ধরনের সামরিক সংস্থার সদস্যদের বার্তা দিতে থাকে অবশ্যম্ভাবী এক সামরিক অপারেশনের জন্য সদাপ্রস্তুত থাকতে।
গোধূলি অতিক্রান্ত হবার সাথে সাথেই গুজব ছড়িয়ে যায় সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তিপ্রয়োগ শুরু হবে যেকোনো সময়। দলের সহকর্মী এবং অন্যান্য অনেকেই বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে তার বাসভবনে চলে যান। তিনি তাঁর পক্ষ থেকে সকলকে ঢাকা ত্যাগ করার উপদেশ দেন। কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে দেন, তিনি কোথাও যাচ্ছেন না, তিনি এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলেন, যদি তিনি তা না করেন, সামরিক বাহিনী ঢাকাকে গুড়িয়ে দেবে।
অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান সন্ধ্যা সাতটার দিকে পাকিস্তানি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে করাচি ফিরে যান। সমস্ত আয়োজনই ছিল পরবর্তীতে কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রস্তুতি। বিমানে চড়ার আগেই উচ্চতর সামরিক কমান্ডকে নির্দেশ দিয়ে যান বাঙালিদের বিরুদ্ধে অপারেশন শুরু করতে, তবে তা রাষ্ট্রপতি করাচিতে অবতরণের আগে নয়। পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা মেজর জেনারেল খাদেম হোসেন রাজাকে এই বার্তাই দেন।
“খাদেম, ইটস টুনাইট”, বলেন টিক্কা, যা ছিল বাঙালিদের উপর সামরিক আক্রমণ শুরুর প্রথম ইঙ্গিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং ঢাকার সাধারণ জনতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সামরিক সেনাদের সম্ভাব্য আক্রমণ রুখে দিতে ব্যারিকেড দিতে থাকেন। কিন্তু কারও ধারণাই ছিল না কী ব্যাপক আকারের ভয়ানক এক আক্রমণ সামরিক বাহিনী পরিকল্পনা করে রেখেছিল।
রাত ১১টা থেকে সাড়ে এগারোটা নাগাদ পাকিস্তান আর্মি বাংলাদেশের জনগণকে আক্রমণের জন্য বেরিয়ে আসতে থাকে। সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট রাস্তায় মার্চ করতে করতে বিভিন্ন গন্তব্যের দিকে ধাবিত হয়। রাতের অন্ধকারে ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়ি বহর এবং ট্রাকভর্তি সৈন্য নিয়ে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে এগিয়ে চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রেসকোর্স ময়দান (যেখানে কালী মন্দির অবস্থিত), হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বর্তমানে রূপসী বাংলা) এবং পুরান ঢাকার দিকে।
আরেকটি বহর এগিয়ে যায় ধানমণ্ডির দিকে এগিয়ে চলে। উদ্দেশ্য তাদের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করা।
অন্যান্য ইউনিটগুলো ধ্বংসলীলা চালায় রেসকোর্স ময়দানের কেন্দ্রে অবস্থিত কালী মন্দিরে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আরও কিছু বাহিনী আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে বন্দী করতে যায়, যাদের অধিকাংশই গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সামরিক কিছু কন্টিনজেন্ট আক্রমণ চালায় রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টা এবং পিলখানায় অবস্থিত ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে।
পাকিস্তান আর্মি এভাবে ঢাকায় হাজারো নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের নৃশংসতায় শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, পুলিশ, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলের সদস্য এবং ঘুমন্ত রিকশাওয়ালা কেউই রক্ষা পায়নি, শত শত গুলি আর বেয়োনেটে ক্ষতবিক্ষত হয় তারা। প্রথম প্রহরেই যে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয় কালী মন্দির ও শহীদ মিনার থেকে, তা পরবর্তী নয় মাস জুড়ে অসংখ্য গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক নজীর স্থাপন করে। প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের মধ্যে যারা নিহত হন তাঁদের অন্যতম ছিলেন, শ্রদ্ধেয় জিসি দেব এবং পণ্ডিত জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রদের লাইনে দাঁড় করিয়ে, গুলি করে মেরে, তারপর গণকবর খুড়ে, দ্রুত মাটি চাপা দেয়া হয় সেখানেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁকে বন্দী করে রাখা হয় তৎকালীন দ্বিতীয় রাজধানীর (বর্তমানের শের-এ-বাংলানগর) নির্মাণাধীন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলী বিল্ডিংয়ে। তারপর তাঁকে সরিয়ে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্টের আদমজী কলেজে, যেখানে তাঁকে সেই রাতে আটকে রাখা হয়, এবং পরবর্তীতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ফ্ল্যাগস্টাফ হাউজে। তিন দিন পরে তাঁকে বিমানে করে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে, মিয়ানওয়ালি জেলে তাঁকে আলাদাভাবে বন্দী করে রাখা হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.