নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোরসন্ধানে

পুষ্পজিৎ

বাংঙ্গালী

পুষ্পজিৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিত্যরঞ্জন পান্ডে নিহত

১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:১৮

#১৭ মাসে মোট নিহত ৪৯

আগাম ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাবনায় একটি আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঝিনাইদহে পুরোহিত হত্যার তিন দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটল। আর গত পাঁচ দিনের মধ্যে এটা চতুর্থ হত্যাকাণ্ড।

নিত্যরঞ্জন পান্ডে (৬২) পাবনার সদর উপজেলার হিমাইতপুর গ্রামে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ সেবাশ্রমের (হিমাইতপুর ধাম) সেবায়েত। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রাতর্ভ্রমণে বের হলে পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রধান ফটকে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই হত্যার মিল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, একই গোষ্ঠী এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এই হত্যার প্রতিবাদে পাবনা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন গতকাল দুপুরে নিত্যরঞ্জনের মরদেহ নিয়ে শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অভিজিত চট্টোপাধ্যায় গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি নিত্যরঞ্জনের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে সহমর্মিতা জানান।

গত বছর থেকে দেশে নতুন মাত্রায় জঙ্গি তৎপরতা শুরু হয়। এর মধ্যে কেবল চলতি বছরের গত পাঁচ মাসেই বিভিন্ন জেলায় ১৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন পুরোহিত, সাধু, বৌদ্ধ ভিক্ষু, খ্রিষ্টান ধর্মযাজক, শিয়া, লালনভক্ত, পীরের অনুসারী, সমকামীদের অধিকারকর্মী, ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ ও জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী। এসব ঘটনার বেশির ভাগেরই দায় স্বীকার করেছে আইএস (ইসলামিক স্টেট) ও আল-কায়েদার কথিত বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। তবে পুলিশ বলছে, দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবি বা আনসার আল ইসলাম এসব ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন।

অবশ্য গত রোববার চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমদুা খানমকে হত্যা এবং সর্বশেষ গতকাল নিত্যরঞ্জন হত্যার দায় এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী স্বীকার করেনি।

ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের নির্বাহী পরিষদের সদস্য বলাই কৃষ্ণ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, নিত্যরঞ্জন খুব সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। কারও সঙ্গেও তাঁর কোনো বিরোধ ছিল না। ডায়বেটিসের কারণে তিনি প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে বের হতেন। গতকালও তিনি একই সময়ে হাঁটতে বের হন।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের পেছনে আশ্রমটি অবস্থিত। আশ্রমের সামনে একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। মানসিক হাসপাতালের চারপাশে পিচঢালা পথ। এ পথেই নিত্যরঞ্জন প্রতিদিন ভোরে হাঁটতেন। তাঁর হাঁটার সঙ্গী ছিলেন আশ্রমের আরেক সেবক হরিপদ মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দুজন একসঙ্গে আশ্রম থেকে বের হয়ে হাসপাতালের চারপাশের রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন। তিনি কিছুটা ধীরে হাঁটায় পেছনে পড়ে যান আর নিত্যরঞ্জন এগিয়ে যান। তিনি মানসিক হাসপাতালের প্রধান ফটক পর্যন্ত এসে দেখেন নিত্যরঞ্জন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তিনি চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ও মানসিক হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা এগিয়ে আসেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

পাবনার সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত সেবায়েতের ঘাড়ের ডান পাশের অর্ধেক অংশ কেটে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চাপাতিজাতীয় কোনো অস্ত্র দিয়ে একই স্থানে দু-তিনবার কোপানো হয়েছে।

র‍্যাব-১২-এর পরিচালক শাহাবুদ্দীন খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে পরিকল্পিত খুন বলে মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে র‍্যাবও তদন্ত শুরু করেছে।

আশ্রমের কর্মকর্তারা জানান, নিত্যরঞ্জনের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আরুয়া কংসুর গ্রামে। তিনি প্রায় ৩৫ বছর ধরে হিমাইতপুরের এই আশ্রমে সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরাও এখানেই থাকতেন। ছেলে স্নাতকোত্তর পাস করে গোপালগঞ্জে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার পর তাঁরা গ্রামে চলে যান।

আশ্রম পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর ঘোষ জানান, গোপালগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নিত্যরঞ্জনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

পাবনার হিমাইতপুরে আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডে হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল তাঁর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে জেলা শহরের পৌর মুক্তমঞ্চের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ l ছবি: প্রথম আলোমানববন্ধন : হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা নিত্যরঞ্জনের মরদেহ নিয়ে বেলা একটার দিকে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কে মানববন্ধন করেন।
এ সময় ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি চন্দ্রণ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা শান্তিতে ছিলাম। এখন আমরা প্রত্যেকে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। আমরা এর একটা বিহিত চাই।’
সাধারণ সম্পাদক বিনয় জ্যোতি কুন্ডু অবিলম্বে নিত্যরঞ্জনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
আশ্রমের সেবায়েত সেফালী সিংহ রায় বলেন, দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও খুনের ঘটনায় আমরা ভীত। আশ্রমে থেকেও রক্ষা মিলছে না। নিরীহ, অসহায় মানুষদের কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক প্রলয় চাকী ও জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সৌমেন ভানু।
গ্রামে মাতম: প্রথম আলোর ফরিদপুর অফিস জানায়, গোপালগঞ্জে নিত্যরঞ্জনের গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে এলাকাবাসী।

নিত্যানন্দের স্ত্রী দুলু রানী পান্ডে আরুয়া কংসুর গ্রামের বাড়িতে আছেন। তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে নন্দ দুলাল গোপালগঞ্জ সদরের বাবুরগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বড় মেয়ে নন্দিতা পান্ডের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে সন্দিপা মাস্টার্সে পড়ছেন।

ছেলে নন্দ দুলাল পন্ডে বলেন, ‘আমারা জীবন নিয়ে শঙ্কিত, আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

নিত্যরঞ্জনের ভাই সত্যরঞ্জন পান্ডে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, এ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করুন, বিচার করুন, এ হত্যা বন্ধ করুন।’

পারিবারিক সূত্র জানায়, নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে দাহ না করে বাড়ির আঙিনায় সমাধিস্থ করা হবে।






মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:২৮

পোড়া কপাইল্লা মিন্টু বলেছেন: খুব খারাপ সংবাদ । :(

২| ১২ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৫:২৯

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: পুরো দেশটাই অসুস্থ হয়ে গেছে। এটা কী হলো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.