নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডায়েরী হারিয়ে ফেলি।

ৎৎৎঘূৎৎ

হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা,অল্পবিদ্যা, কুশিক্ষা এবং ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দৃষ্টিকোণ না থাকলে প্রকৃত বাঙ্গালি হওয়া যায় না।

ৎৎৎঘূৎৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শব্দেরা খেলে,,,,,

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২০

শব্দেরা খেলে,,,,,শব্দেরা খুব খেলে আমার সাথে। একপেশে খেলা। আমি শ্রোতা। শুনি। সবার ধারণা আমি সুস্থ নই। কারণ আমি কথা খুব কম বলি। প্রয়োজনের তুলনায় কমই। কিন্তু শব্দ শুনতে ভালবাসি। নিশ্বাসের। মধ্যরাতে জেগে গেলে হার্টবিটের শব্দটাও। ঢিব ঢিব ঢিব,,,,,। রাতে ভাল ঘুম হয়না। বিছানায় এপাশ ওপাশ করার সময় খাটের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ,তাও টানে অনেক। ইচ্ছে করে হাত পা ছুড়ি। শব্দ। তা যাই হোক। বেসিনের মধ্যে, বালতির মধ্যে পানি পড়ার শব্দ। টুপ,,,, টুপ,,,, টুপ।রাত গড়াতেই পাশের মসজিদে আযানের ধ্বনি থেকে বাড়তে থাকে আমার শব্দ ক্ষুধা। "আল্লাহ,,,,,,,,,। ভোরের দিকে নীচতলার মহিলা তার কাসা বাজায়, টিং টিটিং টিং টিটিং,,,,,,। একই স্কেলে।বুঝতে পারি তার পুজা শেষের পথে। বিচিত্র মিল এসব শব্দের। তাল কাটেনা। একের পর এক আমার ক্ষুধা মিটিয়ে যায়। এমন সময় মেসের খালা আসে,,,,,"দুয়ার খোলেন"। আমি চাবি হাতে এগিয়ে যাই। রিংের অন্য চাবি গুলো হাত গলে বেরিয়ে একটি অন্যটির সাথে এক শব্দ বানায়। এই শব্দের সাথে আমার অনেকআগে থেকে পরিচয়। ঠিক, আমার মায়ের, নানীমার আচলে বাধা চাবিগুলোর মত না হলেও, কাছাকাছি। খালা তার বাজখাঁই গলায় আরেকবার চেঁচিয়ে থেমে যায় ,," এতক্ষন লাগে, হেই কহন থেইকা শীতটা দিয়া খাড়ইয়া রইসি"। তালার শব্দটা আড়ালে চলে যায় ঐ চিল চিতকারে। মুচকি হাসি দিয়ে সরে যাই। ঐ গলাও আমার অনেক পছন্দের। আমি শব্দ ভালবাসি। মোরগটা তার শেষ ডাকটা ডাকতেই ক্রিং,,ক্রিং,,, শব্দে পেপারওয়ালা পেপারটা দিয়ে যায়। এসময়টায় চায়েরদোকানটায় অনেক ভীড়। নানা মানুষ। নানা ছন্দ, সুর। কানপেতে শুনি। খিদে মেটেনা। আমার বস্তুত উৎসে মাথা ব্যাথা নেই। বাচ্চা ছেলেটা সামনে আসে। জিজ্ঞেস করে, "কি খাইবেন?" এমন সময় দোকানী ধমকে ওঠে," প্রত্যেকদিন জিগাস কিল্লিগা, একটা বন, একটা কলা দে। ভাই চা খাইবেন আইজ?" আমি মাথা নাড়ি। দাম মিটিয়ে আসার সময় শুনতে পাই," লোকটা কি বোবা নিও?" দোকানী জবাব দেয়," ধুর মিয়া, তাইনে কথা কম কয়, এমনে মানুষ ভালা।" এসব শুধু নয়। আমি আরো শুনি।একটি প্রাইভেট কার গলিতে এসে হর্ন দেয়। তখন একটি মেয়ে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে আসে। পেছন থেকে সাবধানী মায়ের গলায় বিরক্তি, "এটা পড়েছ কেন?, আজ তোমার বাবা আসুক।" মেয়েটি ধ্যাপ শব্দে গাড়ির দরজা লাগায়। ঐ শব্দে রাগ মেশানো আছে তা বুঝতে পারি।

- তোমার কি সমস্যা?
- আমি শব্দ ভালবাসি। মনে রাখার চেস্টা করি।
- মানে?
- আপনি একটু আগে আপনার ব্যাগের চেইন লাগিয়েছেন। অর্ধেকের চেয়ে একটু বেশী। পুরোটা লাগান নি।
- স্ট্রেইঞ্জ। রাতে ঘুম হয়?
- নাহ। আমি ঘুমাতে চাইনা।
- কিন্তু বাবা, এমন করলে যে অসুখে পড়বে। পরে?
-(,,,,,আমি নিরুত্তর)
- ঘুমানোর চেস্টা করো, কেমন?
-,,,,,,,,,
- এই ওষুধ গুলো ঠিকমতো,,, হ্যা?
-,,,,,,,,,
একটু পর বের হয়ে এলাম। বের হতেই মায়ের কল,
- ডাক্তার কি বললো?
-,,,,,,,,,
-ওষুধ দিয়েছে?
-,,,,,,,,,,
- ঠিকমতো খাস। এ ছেলে নিয়ে আমি আর পারিনা,,,,,,,আরে এটা না,,,,,, এ শাড়ীটা,,,,,হ্যা হ্যা,,,,,,ইয়ে হ্যালো,, তুই আছিস লাইনে?,,, হ্যালো,,,,,ধুর! আরে আপনাকে বললাম না,,,টোট,,,,টোট,,,,,টোট,,,,,

মায়ের ধারনা এটা আমার মনস্তাত্ত্বিক রোগ।সবাই তাই মনে করে। স্কুলে, কলেজে থাকাকালীন, এখন ভার্সিটিতেও। কিন্তু আমি নির্বিকার। শ্রোতা। প্রাত্যহিক শব্দ ক্ষুধা নিবারণ চলছে। প্রত্যেকের জুতার মেঝে ঘসে চলার শব্দ, চুড়ির শব্দ, বইয়ের পাতা ওল্টানোর শব্দ, কলমের আঁকিবুঁকির শব্দ, কোন তরুনীর ন্যাকামী, হুল্লোড়, হাই ফাইভ,,, কিছুই বাদ পড়েনা। ক্রমাগতই শুনে চলেছি। ক্ষুধা মেটেনা।

- তুমি এত চুপচাপ কেন? -,,,,,,,,,,,,,
আবার জিজ্ঞেস করে।
- হ্যালো, তোমাকে বলছি।
-,,,,,,,,,,,,,,
- weird.
ভ্রু কুচকে মেয়েটি চলে যায়। একবার পেছনে ফেরে। কিছু বুঝতে চায়। কিন্তু আমি লক্ষ্য করি তার পায়েলের শব্দ। সুক্ষ, তীব্র। আরেকবার শুনি। ঠিক পা ফেলার সময় আন্দোলিত হয় পায়েল গুলো। অদ্ভুত শব্দ। আরেকবার, এরপর আরেকবার।

- ঐ দাড়া! ভাইয়ে ডাকে।
আমি এগিয়ে যাই।
- একটা মোবাইল করবো ভাইয়ে। দে তো।
আমি মোবাইল বের করে তার হাতে দেই।
- এখন সোজা হাট।
এমন সময় আরেকজন বলে ওঠে।
- দাঁড়ান, দাঁড়ান। আপনি কই যান?
- টিউশনে। সামনের বাসাটাতে।( অনেক্ষন পর উত্তর দেই)
- মোবাইল টা দে।
সাথের ছেলেটাকে ধমকে ওঠে সে।
- ভাই, এই ব্যাপারে কাউরে কিছু বইলেন না। তারা চিনেনাই আপনারে।ঘটনার আকস্মিকতা আমাকে ছোঁয় না। আমি ফেরত চলে আসি। টিউশনের বাসায়। কলিংবেল টিপতেই শব্দটা কানে আসে।টিং টং। ক্ষুধা মেটেনা। কাগজের উপর কলমের আচড়। খসখস। চায়ের কাপ টেবিলে নেমে আসার শব্দ। বই ওল্টানোর শব্দ। প্রানভরে গিলি এসব শব্দ। কিছু কিছু শব্দের অস্থিরতা টের পাই। কিছু শব্দের হাহাকার। কিছু আনন্দের। ক্ষুধা মেটেনা। শব্দ ক্ষুধা।

- শুনতে পাচ্ছো? excuse me. শুনতেপাচ্ছো? somebody help! help! somebody help us.
সে শব্দ! সুক্ষ, তীব্র। মনে পড়ছে না। কিছু ঘটেছে। মনে পড়ছে না। একের পর এক বেজেই চলছে কানে। টুপ,,,,টুপ,,,,টিং,,,টিটিং,,,,টিং,,,,টিটিং,,,,,,,ঢিব,,,,ঢিব,,,,ঢিব,,,,,দুয়ার খোলেন,,,,,,থ্যাপ,,,,,,,,সেই আওয়াজ টা,,,শিরোনামহীন সে আওয়াজ,,,,,, সুক্ষ,তীব্র,,,,,,আযান,,,,আল্লাহ,,,,,,,,,, আবার সেই আওয়াজ,,,,,সুক্ষ, তীব্র,,,,,,, একটু পর সব থেমে গেল।ইযযযযযযযযযব। অসহ্য কানে তালা লাগানো নিরবতা। শব্দহীন।কালো।
কিছুক্ষন পর নিজেকে হাসপাতালে আবিস্কার করি।
- আমার কি হয়েছিলো?
চমকে ওঠে পাশের মেয়েটি।
- অহ গড! তুমি ভার্সিটির বাসটায় ধাক্কা খেয়েছিলে। আমি বাসটার সামনেই ছিলাম।
- একটু হাটতো,,,,,,,,!( একটু থেমে থেমে বলি)
- মানে?
- একটু হা,,,,টো,,,!

,,,,,,,,,,হ্যা। সেই আওয়াজ টাই। সুক্ষ,,,,,,,,তীব্র,,,,,,। শব্দেরা খেলে,,,,,,,। শব্দেরা খুব খেলে আমার সাথে। একপেশে খেলা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: লিখাটি ভাল লেগেছে । লিখার হাত তো দেখা যায় ভাল তারপরেও
এত কম লিখালিখি কেন , আরো লিখুন পাঠে লাগবে ভাল ।
শুভেচ্ছা রইল ।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২২

ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ।

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:১৭

হুমম্‌ বলেছেন: +++++++++++++

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৩

ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.