নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডায়েরী হারিয়ে ফেলি।

ৎৎৎঘূৎৎ

হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা,অল্পবিদ্যা, কুশিক্ষা এবং ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দৃষ্টিকোণ না থাকলে প্রকৃত বাঙ্গালি হওয়া যায় না।

ৎৎৎঘূৎৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা কারেন্ট এফেয়ার্রস আর তিন গোয়েন্দার ৮৩ নাম্বার ভলিউম টা কিনে বাসায় ফিরেছি। একে তো বইটি ভালো লাগে নি। আমাকে করা তার তিরস্কার টা খুব স্পস্ট এখনো। হয়তো একা সংসার চালানোর ব্যাপারটি তাকে খুব সাবধানী করে রেখেছিলো। এই কারণে নিছক গল্পের বই কিনে আনা তার পছন্দ হয়নি। তার একজন সাকসেসফুল ব্রিলিয়ান্ট ছেলের দরকার ছিলো। যেখানে আমি ছিলাম পড়াশোনা বিমুখ একজন।

আমাদের বাসায় যারাই আসতেন তারাই আমার ব্যাপারে মাকে বলতেন, ওর মেধা আছে। আমার মা ও বিনয়ের আতিশয্যে ডুবে গিয়ে বলতেন, ওর মেধা আছে। পড়লে সব পারে, কিন্তু পড়তেই চায় না। আমার মেধার নমুনা না দিয়ে পারছি না। পঞ্চাশোর্ধ একজন মানুষ যিনি সম্পর্কে আমার কি হোন এখন মনে পড়ছে না আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাকে ৮ টি বিস্কুট দেয়া হলো এবং বলা হলো এমন ভাবে তোমার ভাই সহ খাবে যেন তোমার যাতে দুটো বেশি থাকে। আমি বলেছিলাম, আমি ৬ টি আর ও ২ টি। তিনি বললেন, সে এতো কম নেবে? ফেলে দেবেনা? আমি আর কিছুই বলতে পারিনি। এটা আপনারা হলে কি উত্তর দিতেন মন্তব্যে দিতে পারেন। নিজেকে ৮ বছরের আপনি ভেবে নিয়ে উত্তর দিন। সৎ ভাবে দয়া করে।

আমি গ্রামের স্কুলে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিয়ে বৃত্তি পেয়েছি। যে স্কুল থেকে আমার চৌদ্দ পুরুষ পড়াশোনা করে বেরিয়েছে। আমার হাত ধরেই ওখানে প্রথম বৃত্তির সুচনা। একটি দরজা ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাফল্য। যেখানে আমি ছাড়া সবাই খালি পায়ে আসতো। ওখান থেকে সাধারণ বৃত্তি কোটা সিস্টেমে পেয়ে তখন সবার প্রশংসা কুড়াচ্ছি আমি। কিন্তু অতটুকু বয়সে আমি জেনে গেছি আমি অংকে দুর্বল। আমার মুখস্ত শক্তি নেই। যা এই বইটির সাথে অর্ধেক মিলে। তাতিন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। আর ওর মুখস্থ শক্তি অসাধারণ। আর আমি বানিয়ে লিখতে পারতাম।

আরো কিছু মিলেছে। অলসতার কারণে প্রতিভার অপচয়। কোন কিছু পুরো না পড়েই শুরু করে দেয়া। যেমন এই অসাধারণ বইটিও যে আমি পুরো না পড়ে অযাচিতভাবে ব্লগে এসে লেখে ফেলছি তাও তো অবধারিত। ফিরে আসি তাতিন এ। আমার তখন এইটে বৃত্তি পাওয়া হয় নি। বলতে গেলে প্রত্যাশার চাপ কমিয়ে এনেছি। নির্ভার লাগছে। এমন সময় স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা দিতে হবে। ততদিনে সবাই আমার মধ্যকার কবি কবি ভাব বুঝে ফেলেছে। কিছু লিখেও ফেলেছিলাম একটা ডায়েরি তে। তা একজন পড়ে ফেলে। আর সবাইকে জানিয়ে দেয়। যথারীতি একজন শিক্ষক আমাকে ডেকে পাঠালেন। লেখা দেবার জন্য। আমি একটা কোথাও পাওয়া কবিতার টুনটুনি শব্দটার জায়গায় বুলবুলি বসিয়ে পুরো ছড়া দিয়ে আসলাম। ছাপানো ও হলো। তাতিন ও করেছে এমন। সে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিয়ে দিয়েছে। কারণ সে আমার চেয়ে অনেক ভালো ছিলো। অথচ আমার আরো লেখা ছিলো। মৌলিক সব লেখা। আমার লেখা৷ দিলাম না। গ্রহনযোগ্য হবে কিনা সেই ভয়ে।

তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। ছোটদি আমাকে চমকে দিয়ে ইংরেজিতে চিঠি লিখে পাঠালেন। না বুঝে লিখে ফেললাম এক চিঠি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার মেধা আমাকে অবাক করে। সে কারণে বুঝে গেলাম যে এটার কিছুই হয়নি। বরং হাস্যরসের সৃস্টি করবে আমার মামাবাড়িতে। ফেলে দিলাম। একজন আংকেল ছিলেন। যিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তার কাছে সমস্যাটি নিয়ে যাবার পর জীবনের প্রথমবার আমাকে ধমকে বিদায় করে দিলেন। আমিও অবাক হয়ে ফিরে এলাম। তিনি এখনো আমাকে খুব ভালোবাসেন। আমার আনিছ আংকেল। পায়জামা-পাঞ্জাবি পড়া সৌম্যদর্শন দাড়ি সমেত মুখটি আমার ভেতর এখনো শ্রদ্ধারই তৈরি করে। পরে ইংরেজি ভীতি সম্পর্কে অবগত হই। যাই হোক মামণি সাহায্য করলেন। বাংলায় উত্তর করা গেলো। এখনো মনে আছে মায়ের বলা সেই শুরুর বাক্য,,,,,,
প্রিয় ছোটদি, তুমিতো ইংরেজিতে লিখতে পারো। আমি তো এখনো অনেক ছোট,,,,,,,,,,,

অষ্টম শ্রেণিতে যখন পড়ি তখন থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম আমি পড়াশোনা একদম পছন্দ করি না। শুধু একটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেই আমার আর এতোটুকু সহ্য করা লাগতো না ঐ বয়সেই আমার মাথায় তা ঢুকে গিয়েছিলো। আমাকে শায়েস্তা করার জন্য বিকেল বেলা খেলার সময় রাগী শিক্ষক আনা হলো। তার ভয়ে আমার প্রতিবেশির চার বছরের মেয়ে লাবন্য ও চুপসে যেতো। একদিন বলা হলো, তুমি যদি হুবহু লাইন বাই লাইন মুখস্থ না বলতে পারো তাহলে আমার কাছে আসার দরকার নেই। আমি সুযোগ পেয়ে গেলাম। কান্নাকাটি করে তাকে বাদ দেয়ার চেস্টা করলাম। তিনি আসলেন এবং বেদম প্রহার করলেন। আমিও বললাম আপনার কাছে পড়বো এবং বিদ্যালয় থেকে ছুটির পর পালালাম। মামণি কান্নাকাটি করলেন। যুদ্ধ সমাপ্ত হলো। তিনি বাদ পড়লেন। আমি তাতিন নই। আমি জীবনেও এক লাইন মুখস্থ বলতে পারিনি। কিছু জায়গায় বাহবা পেয়েছি বেশিরভাগ জায়গায়ই তিরস্কৃত হয়েছি। আমার সহপাঠীদের উন্নতি চোখে ধরা পড়লো। আর আমি পিছিয়ে পড়তে লাগলাম। নির্ভার হতে লাগলাম।

এস এস সি তে বিজ্ঞান বিভাগে ততকালীন প্রায় সাড়ে বায়ান্ন হাজার এ প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থীরা যখন আনন্দে মিস্টির বন্যা বইয়ে দিচ্ছে আর মামণি আমাকে যখন জীবনের প্রথম ও শেষবারের মতো পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছাড়ছেনই না তখন আমার মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন, দুবার রসায়ন আর দুবার উচ্চতর গণিতে ফেল করা আমি শুধু পাশ করতে চেয়েছিলাম। যাকে তার শিক্ষকেরাও গোনায় ধরেন নি সেই আমি এ প্লাস পেলাম কি করে?

আমি কখনোই মেধাবী ছাত্র ছিলাম না। ফলাফল সামনেই পেয়ে গিয়েছে সবাই। আমার পুরো শিক্ষাজীবন উত্থান পতনে ভরপুর ছিলো। জীবনের শেষ পরীক্ষায় ও যখন সবাই আমাকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীর ফলাফল পাওয়ায় ঈর্ষা করছে আমি তখনো ভাবছি, আমি শুধুমাত্র পাশ করতেই চেয়েছিলাম। আমি তাতিন নই।

এই বইয়ের "পোকানাশক আলো" পর্যন্ত পড়ে ঢোলকলমি পোকা ছাড়া অন্য সবকিছু একটু মিলে যাওয়ায় উত্তেজিত হয়ে ব্লগে এসে পড়লাম। রিভিউ দেয়ার ব্যাকরণ আছে। আমি কোনকিছুতেই স্বয়ংসম্পুর্ণ নই। বইমেলায় বিষ্ণুশর্মার "পঞ্চতন্ত্র " বই কিনবো বলে মনস্থ করেছি। ইদানীং পছন্দের ধরন খুব একমেলো হয়ে যাচ্ছে মনের । কিন্তু "আরো দেখি" রোগে আক্রান্ত হয়ে স্টল হারিয়ে আর কেনা হয় নি। অর্থনৈতিক দৈন্যতার ব্যাপার মাথায় রেখে যুতসই বই খুজছি। এমন সময় মাথায় এলো নামটা। নেটে সার্চ দিয়ে স্টল খুজে 'মেলডি তোমার নাম' এর সাথে কিনে ফেললাম। ভাগ্য ভালো যে জিজ্ঞেস করেছিলাম," উনার আর বই আছে? "


যাই হোক। ভাবতে ভালো লাগছে আরো অনেক পৃস্টা পড়ার মতো আছে বইটির। আমার আর বই নেই পড়ার মতো। স্টল থেকে একজন বললেন, তিনি এসেছিলেন কাল। আমাকে তা ভাবালো না। They say, " Don’t meet your heroes." তবে আবেগ প্রবণ হয়ে একটা চিরকুটের মতো লিখে দিয়ে এসেছিলাম। তারা বললেন এই লেখা তারা পৌছে দেবেন। আমি ফ্যাটালিস্ট হিসেবে এই হ্যাংলামির ব্যাপারে অতো গুরুত্ব দেই নি। হয়তো পৌছবে, হয়তো পৌছবে না। মেজদি জোর করে লেখালো। আমি লিখলাম দু এক লাইন। বুদ্ধিদীপ্ত কোন লেখার কাতারেও পড়েনা। হয়তো লেখক পাবেন না। না পেলেই মনে হয় ভালো।

কিন্তু সবসময় আমার ভেতর প্রবলভাবে থাকা "হামা" কে অস্বীকার করি কিভাবে!





মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

সত্যপীরবাবা বলেছেন: বই নাকি রিভিউ বেশি চমৎকার এই দ্বন্দে পড়ে গেলাম।
+++

২| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৯

শায়মা বলেছেন: পোস্টের ছবির বইটা আসলেই দারুন।
আমিও এই বইটা নিয়ে একখানা রিভিউ লেখার ট্রাই করেছিলাম। :)

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: হাসান মাহবুব মানেই উন্নত মানের রুচিসম্মত কোন কিছু।

৫| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১২

শেরজা তপন বলেছেন: দুর্দান্ত রিভিউ- এভাবে আগে কখনো পড়া হয়নি। এমন করে অন্য একজনের জীবনের সাথে মিলে যায় কি করে!!!

৬| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৪৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: কালকে আপনার লেখাটা চোখে পড়েছিল। ভাবছিলাম যে এটা আসলে কে হতে পারে! পরিচিত হওয়া দরকার? পরে মনে হলো, সবার সাথে কথা, দেখা হবার দরকার নেই। আড়ালের সৌন্দর্য থাকুক। যদি পারতাম তবে শুধুই লিখতাম। হঠাৎ হঠাৎ দূর দূর থেকে নাম না জানা কোনো পাঠক অনুভূতি জানাতে্ন। আমি অতীতচারী নই, তবে এই বিষয়গুলি মিস করি।

চিঠি কিন্তু পৌঁছোয় নি আমার কাছে। খোঁজ নিয়ে দেখব।

এই বইটার শেষ অংশ নিয়ে আমার আক্ষেপ আছে। স্পষ্ট তাড়াহুড়ার ছাপ রয়েছে সেখানে। আমার রিরাইট করার ইচ্ছা আছে আবার। মেলোডি তোমার নাম কেমন লাগল জানাবেন।

ভালো থাকবেন।

৭| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আপনার এই রিভিউ পড়ে, আমারও এমন ধাঁচে রিভিউ লেখার ইচ্ছা জেগেছে৷ দারুণ।

যদিও I met my hero. I mean হামা ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.