নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াই।

মোঃ রাফিদ

বই পড়তে আর গান শুনতে ভালোবাসি

মোঃ রাফিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্যি কি স্বাধীন করবার পাইছি দেশটারে....

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৮

নামডা মফিজউদ্দীন নওয়াব।  বাপে শখ কইরা নামের  শেষে রাখছিল নওয়াব। তাই বইলা কিন্তু আমি নওয়াব হইবার পাই নাই। এই নিয়া আমার কোন আফসোস নাই। ছোডবেলায় আম্মায় আদর কইরা কইতো, বাপ তুই একদিন  ঠিকই নবাব হইবি, দেইখিস। আমিও   আম্মারে জড়ায়া ধইরা কইতাম, আম্মা সত্যি কইতাছো তো?
আম্মা কইতো, হ রে বেটা, দেখবি,  কত্ত  বিশাল তর বাড়ি থাকবো, আলো দিয়া ঝকমক করবো, দাসদাসী  দিয়া ভরপুর থাকবো অন্দরমল।  আমি ফিক  কইরা হাইসা  আম্মারে আরও শক্ত কইরা জড়ায়া ধরতাম।


কাইল ১৬ ডিসেম্বর।  একখান বড়  দেইখা    লাল সবুজ  পতাকা কিন্যা চায়ের দোকানের উপরে লাগাতাছিলাম। কয়ডা পুলাপান আইয়া কইলো- ওই কাকা, চা দাও।
আমি কইলাম, বাবারা খাড়াও একটু,  পতাকা খান লাগায়া লই।
- ধুর কাকা   টাইম নাই  আমাদের আর তুমি আছ ফালতু পতাকা লাগানো নিয়ে।
বুকটা ছ্যাল্যৎ কইরা উঠলো, পুলাপান এ কইলো কি এইডা? আমগোর   দেশ, আমগোর মা'র পতাকা এইডা। আর এরা কয় কি?
আমি কইলাম,  বাবারা  দেশের পতাকা রে এমনে কওন লাগে না। দেশটায় আমগোর মা।
- ওই বুইড়া ওই। এত্ত প্যাচাল পারস কে? শালা চা দিবার কইলাম, তা না দিয়া দেশ শিখাবার আসছস আমাদের? আমরা কি বুঝি না দেশ কি, পতাকা কি।   ফালতু একটা পতাকা, সেইটা  নিয়ে কত্ত প্যাচাল। রাখ তর চা'ই খাবো না।

পুলাপানগুলা এইসব কইয়া বাইর হইয়া গেল।
চোখ দিয়া আমার পানি আওন  লাগলো।  পতাকাখান  লাগায়া একটা স্যালুট দিলাম।   গাল বাইয়া কয়েক ফোডা পানি পইরা গেল।

বিকালত দোকানডা তাড়াতাড়ি বন্ধ কইরা বাড়ির দিকে  রওনা হইলাম।  রাস্তা দিয়া যাইবার পথে দেখি কয়ডা  পুলা এডা মাইয়ারে জ্বালাইতাছে। মাইয়াডার হাত ধইরা টানাটানি করবার লাগছে। আমি যাইয়া যেই পুলাগুলারে ধমক দিলাম, ওমনি এডা পুলা আমারে চড় মারলো। আমি পইড়া গেলাম।।মুখ দিয়া রক্ত বাইর হইতে লাগলো। মাইয়াডা রে খারাপ খারাপ কতা কইলো। মাইয়াডা শেষ লাহান কানতে কানতে গেল গা।
বড্ড কষ্ট পাইলাম।  আমারে  চড় মারনের জইন্যে  না।   রাস্তায় এত্ত গুলা মানুষ হাঁটাহাঁটি করবার লাগছে, সব্বাই     চাইয়া চাইয়া দেখলো  ঘটনাডা। কিন্তু কেও আগাইয়া আইলো না মাইয়াডারে বাঁচাইবার।

আমি কোন রকমে উইঠ্যা   হাঁটন ধরলাম। সন্ধ্যা নাইমা আইছে।  চিন্তা করবার লাগলাম, সেই রাইতর কথা।

১৯৭১, মে।
আমগোর ক্যাম্পে খবর আইলো   হরিমদন  স্কুলে পাকি'রা ক্যাম্প করছে। ১৭/১৮ ডা যুবতী সেইখানত পাকি হায়নাগোর জিম্মায় বন্দি। আমগোর ক্যাপ্টেন শরীফ ভাই কইলো ,  আইজ রাইতর মধ্যই ওই   যুবতীগুলারে বাঁচন লাগবো আর পাক-ক্যাম্পডারে উড়ায় দিতে হইবো।
মিশন এ গেলাম আমরা কয়জন,  সঙ্গে আমার পরাণের বন্ধু কাশেম। স্কুলের কাছে যাইয়া কাশেম সক্কলেরে বুঝায়া দিল কেমনে কি করতে হইবো। আন্ধার রাত।   হুট কইরা কাশেম গ্রেনেড মারলো।   সঙ্গে সঙ্গে পাকিগোর চিল্লা চিল্লি আর গুলাগুলি শুরু হইয়া গেল। আমরাও চার্জ শুরু  করলাম আর আস্তে আস্তে আগাবার লাগলাম।  হঠাৎ কইরা একখান গুলি আইয়া কাশেমের পেটত লাগলো। কাশেম  ছিল ইয়া  বলশালী মানুষ একখান।   গুলি খাইয়াও পাত্তা না দিয়া     যুদ্ধ  চালায় গেল। শেষ লাহান পাকিরা হাইরা গেল, আমগোর হাতে বন্দি হইলো। আমরা গিয়া  যুবতীগুলারে মুক্তির লেইগা  বন্দি রুমডার দরজা  ভাইঙ্গা দিলাম।   ভেতরে যাইয়া কইলাম, বোইনেরা আমরা মুক্তিবাহীনী, তোমরা ভয় পাইয়ো না। তোমরা এহন মুক্ত। ভয় নাই, পাকি রা আমগোর কব্জায়।
সঙ্গে সঙ্গে কয়ডা মাইয়া আইয়া আমগোর ঘিরা ধরলো। কইলো, ভাইজান গো, আমগোরে বাঁচান। 
দেখলাম, অগোরে  শাড়ি-কাপড় সব ছিড়া। মুখখানা এক একটার শুকনা,  কান্দনের পানি গাল বাইয়া শুকাইয়া  আর ভয়ে মুখ গুলা পাণ্ডুরলাহান।
বুক ভাইঙ্গা আমার কান্দন আওন লাগলো। ক্যাম্পে  ট্রেনিং এর সময় খবর আইছে আমগোর গ্রাম এ হামলা হইছে।   আমি দোঁড়াইয়া যায়ে দেখি, বাপ আর মায়ের বুক  জুইড়া রক্ত   মাটিত পইরা শুকায়া কালা হইয়া গেছে।   চোখ  গুলা খোলা ভয়ে আর  মুখগুলার উপর বড় বড় মাছি ভনভন করতাছে।     কাঁনতে কাঁনতে হাটু ভাইঙ্গা পইড়া গেলাম।   বড় বোন দুইডারে তুইল্যা নিয়া গেছে, কত্ত খুঁজোন খুঁজছি, পাই নাই। কই আছে না আছে,  বাইচা আছে কিনা তাও জানি না।

এহন এই মাইয়াগুলারে দেইখা বুকটা দুমড়ায়া মুচড়ায়া কান্দন আইলো, আমার বোন গুলা কি এইহানেও নাই?
নাকি ওগোর  ধর্ষিত  লাশগুলা   নদীর পানিত ভাইসা  গেছে? নাকি কোন জংলার ধারে শেয়াল-কুত্তায় টুকরা টুকরা করতাছে?

কাশেম হঠাৎ  কইরা লুটায়া পরলো। কইলো, বন্ধু আমার আর সময় নাই।   গাল বাইয়া চোখের পানি আমার  পরা শুরু হইলো। বন্ধু কইলো, কানবি না,  একদম কানবি না। এহন কানলে  পরে লড়বার পাবি না। তুই বড্ড নরম রে মফিজ, বুকটারে শক্ত কর। কানবি কখন? যখন দেশ টা স্বাধীন হইবো, পতাকা উঠবো আমগোরে লাল সবুজ পতাকা। সেইদিন প্রাণ   ভইরা কানবি আর স্যালুট দিয়া কইবি  এই দেশ আমার, স্বাধীন বাংলা আমার। ভালবাসি মা গো তোমারে।

এরপর দেশ স্বাধীন হইছিল  ঠিকই।  লাল সবুজে পতাকাখান  বাংলার আকাশ জুইড়া  উড়তেছিল। কিন্তু পাই নাই ফিরা আমার আব্বাজান, আম্মাজান, বোনগুলারে আর কাশেমেরে।




আইজ, দেশ স্বাধীন। অনেক আধুনিক।  মানুষগুলাও কত্ত আধুনিক হইছে। কিন্তু আল্লাহ'রে জিগাই, হায় আল্লাহ, মানুষগুলার মন গুলাও কি এত্ত আধুনিক হইয়া গেছে গা যে  আমগোর দেশরে  ভুইলা  গেছে গা? ভুইলা গেছে গা আমগোর  মা-বোনগোর ইতিহাস? ভুইলা গেছে গা শহীদগোরে ইতিহাস? হায় আল্লাহ, এই দেশের লেইগাই কিবামি লড়ছিলাম যেই দেশে রাস্তা ঘাটে  অন্যায় হইলেও ওহন কেও থামাবার  নাই, কেও সাহসের লগে প্রতিবাদ করনের নাই

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.