নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাবমান কালো চোখে আলো নাচে- ১৭ (ধারাবাহিক উপন্যাস)

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২৩





তিনি একজন শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। তিনি আমৃত্যু সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। তিনি একজন স্ব-শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে টাঙ্গাইলের কাগমারিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এলাকার কালা গ্রামে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। সারা রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রচুর প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী ছিলেন এবং বেশ কিছু সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচনে জয়ীও হয়েছিলেন তবে কখনও ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেন নি। রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি মাওপন্থী কম্যুনিস্ট, তথা বামধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
আসাম সরকার দেশ ভাগের সময় তাকে গ্রেফতার করে এবং ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে এ শর্তে মুক্তি দেয় যে, তিনি চিরতরে আসাম ছেড়ে চলে যাবেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব বাংলায় আসেন। ১৯৪৯ সালে তিনি আবার আসাম যান তখন তাকে আবার গ্রেপ্তার করে ধুবড়ি জেলে পাঠানো হয়। ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের উপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে তিনি রেগে গিয়ে কঠিন প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদ করার ফলে পরেন দিন ২৩ ফেব্রুয়ারী তাকে আবার তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। বারবার কারাবরণের ফলে কারাগারে কমিউনিস্টদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে এবং তিনি সমাজতান্ত্রিক মতবাদ সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে ওঠেন।

তিনি ছিলেন মূলত কৃষকদের বন্ধু। কৃষকের সঙ্গে চাষ করে, জেলেদের সঙ্গে মাছ ধরে আয়-রোজগার করেছেন। সব শ্রেনীর মানুষের সাথে মিশে কাজ করার মধ্য দিয়েই তিনি হয়ে ওঠেন কৃষক, জেলে, কামার ও কুমারের বন্ধু। সারা জীবন ওই বোধই তাকে মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠায় অটল রেখেছে। জমিদার আর মহাজনদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি সবসময়। আর এ কারণেই পেয়েছেন ‘মজলুম’ উপাধি। তিনি পল্টন ময়দানে চিৎকার করে বলেছেন, ‘হে বাঙালিরা, আপনারা মুজিবের উপর বিশ্বাস রাখেন, তাকে খামোকা কেউ অবিশ্বাস করবেন না, কারণ মুজিবকে আমি ভালোভাবে চিনি’।
তার যখন ৩০ বছর বয়স, ওই সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তখন পূর্ববঙ্গ সফর করেন। তিনি ছিলেন তার সার্বক্ষণিক সফরসঙ্গী। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছেন। তখন তিনি পরতেন পায়জামা ও পাঞ্জাবি। একদিন তার ধর্মীয় গুরু মাওলানা আজাদ সোবহানী বললেন, চেগা মিয়া আমার কথা মন দিয়া শোনো, কৃষক শ্রমিক যা পরে তা না পরে তুমি কীভাবে তাদের বন্ধু হবে। সেই যে তিনি লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরা শুরু করেছিলেন আজীবন তা বহাল রেখেছেন। এ পোশাক পরেই তিনি ইউরোপ ভ্রমণ করেছেন, চীনে সরকারি সফরে গিয়েছেন। চীন সফর করে আসার পর তাঁর চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি যে ছোট বইটি লিখেছিলেন তার প্রথমেই উল্লেখ ছিল, ৮৬ বছর বয়সে এসে নতুন করে দীক্ষা নেয়ার সুযোগ আমার নেই।

খুব ছোটবেলায় চেগা মিয়া তার বাবা মা ভাই বোনদের হারায়। প্রথমে তার বাবা মারা গেলেন। তখন তার বয়স ছয়। তারপর মহামারি কলেরাতে মা ও দুই ভাই ও বোনকে হারান, তখন তার বয়স এগারো। তারপর চেগা মিয়া চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে চলে যান। একদিন চাচার সাথে অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে গেলেন শাহজাদপুরে এক দূঃসম্পর্কের ভগ্নিপতির বাড়িতে। মহামারীতে তাঁর পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু তাকে যত না নাড়া দিয়েছে, তাঁর চেয়ে অনেক বেশি করে নাড়া দিয়েছে দুর্ভিক্ষে সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও কষ্ট। ১০-১২ বছর বয়সে যে মানুষটির এ রকম অনুভূতি, পরিণত বয়সে তিনি বিদ্রোহী ভাসানী না হয়ে পারেন কি? ঠিক এই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তাঁর আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান।
মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি হজ পালন করেছিলেন এবং তিনি মরুভূমির মধ্য দিয়ে হেঁটে মক্কা থেকে মদিনা গমন করেছিলেন।

মাওলানা ভাসানী তখন দলের সভাপতি আর শেখ মুজিব দলের সাধারণ সম্পাদক। একদিন মাওলানা ভাসানী মুজিবকে আট আনা পয়সা দিয়ে নারায়নগঞ্জে একটি কাজে পাঠান। মুজিব নারায়নগঞ্জ থেকে সারিদিনে সে কাজ সম্পন্ন করে এসে বিকেলে মাওলানা ভাসানীর হাতে আট আনা পয়সা ফেরত দেন।
মাওলানা ভাসানী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, মুজিব তুমি নারায়ণগঞ্জ কিভাবে গেলে..? উত্তরে মুজিব বলেন ‘সাইকেল নিয়ে গিয়েছিলাম, টাকাটা বেঁচে গেছে’।
শেখ মুজিবুর রহমানকে মওলানা পুত্রসম স্নেহ করতেন। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবনে অনেক সেক্রেটারি এসেছে কিন্তু মুজিবরের মতো যোগ্য সেক্রেটারি অন্য কাউকে পাইনি।’

আরেকটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। সাল ১৯৫২। শেখ মুজিব তখন কারাগারে। মুজিবকে লেখা ভাসানীর একটি চিঠি তুলে ধরা হল।

দোয়াবরেষু!
আমি সর্বদাই গ্রাম অঞ্চলে বাস করি কারণ গ্রামের মরণাপন্ন (চিঠিতে বানান মরণাপন্য) কৃষক-মজুরদের অবস্থা ভাল না হইলে এবং পাকিস্তান শুধু কয়েকজন বড় লোকের নহে। সাড়ে সাতকোটি লোকের পাকিস্তানের উন্নতি স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতি,অনাচার, অবিচারদমনের ব্যবস্থা আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত করার দায়িত্ব সকলকেই গ্রহণ করিতে হইবে।

প্রাণের চেয়ে প্রিয় জিনিস পাকিস্তানের প্রত্যেক নাগরিককে অনুভব করিতে হইবে। তোমার মুক্তির জন্য সরকারের দৃষ্টি বহুবার আকর্ষণ করিয়াছি কিন্তু ছেলে অন্ধ হইলে নাম পদ্মলোচন রাখলে লাভ কি। ধৈর্য্যধারণ করো আল্লাহ তোমার সঙ্গে আছেন। দেশের মুক্তির সঙ্গে তোমার মুক্তি। সরকার অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র স্থায়ী এবং আমাদের। আমার দোয়া জানিও এবং সকল বন্দীদিগকে জানাইও।

আবদুল হামিদ খান ভাসানী

কিছু মানুষ শুধু স্বপ্ন দেখাতে নয়, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকেন। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সেই মাপের একজন মানুষ ছিলেন। আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে ভাসানী এক পিকুলিয়ার ক্যারেক্টার। তিনি একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি কোনদিন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি। ভাসানি শুধু কাজে নয়, চিন্তার দিক থেকেও অসাধারন মানুষ। সম্ভবত তিনিই ছিলেন একমাত্র জাতীয় নেতা, যার রাজধানী শহরে কোনো প্লট বা বাসস্থান ছিল না।

মার্কিন সাংবাদিক আনা লুই স্ট্রং তাঁর এক লেখায় বলেছিলেন, পৃথিবীর তিনজন নেতা জনগণের ভাষায় কথা বলতে খুবই পারঙ্গম। এরা হলেন, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো, ইন্দোনেশিয়ার ডি এন আইবিত ও চীনের মাও সে তুং। জনগণের ভাষায় কথা বলার সামর্থ্য রাজনৈতিক নেতাদের জন্য একটি অতি অপরিহার্য গুণ। যারা জনগণের ভাষায় কথা বলতে পারেন, তারা খুব সহজেই জনগণের হূদয়ে ঠাঁই করে নিতে পারেন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



তিনি সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য লড়েছেন আজীবন।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১২

রাজীব নুর বলেছেন: চারপাশ দেখে শুনে মনে হয়, শুধু বঙ্গবন্ধু লড়েছেন। বাকি সবাই কিছুই করে নাই।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২১

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: লেখাটা ভাল হয়েছে।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০৮

সনেট কবি বলেছেন: তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত জননেতা।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
শরীরের অবস্থা এখন কেমন?

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১৯

সনেট কবি বলেছেন: শরীরের অবস্থা টেনে-টুনে চলার মতো। অপারেশন থেকে আপাতত বাাঁচাগেল বলে মনে হয় হাঁফ ছেড়ে বেঁচে গেলাম।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: প্রার্থনা করি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।

খাওয়া দাওয়া, গোছল, ঘুম কোনো কিছুতেই অনিময় করবেন না।

৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৮

ইসিয়াক বলেছেন: এই পোষ্টে এত কম ভিউ কেন ? মন্তব্য ও নেই তেমন একটা ।
প্রিয়তে নিলাম । আসলে আমরা হতভাগ্য জাতি । আর শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মিস ইউজ করে সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১২

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে এত পুরোনো পোষ্ট খুঁজে পড়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.