নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোয়েন্দা কাহিনি কফিমেকার (বুক রিভিউ)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৪



গোয়েন্দা কাহিনি 'কফিমেকার' বইটি পড়ে শেষ করলাম। একটানা পড়েছি তবু সময় লেগেছে সাড়ে চার ঘন্টা। এত সময় লাগতো না, এর মাঝে দুইবার ব্রেক নিয়েছি চা-টা খাওয়ার জন্য। কিছু বই আছে পড়ে ভালো লাগলে ইচ্ছা করে বন্ধুদের সাথে ভালো লাগাটা শেয়ার করি। তাই, এই বই নিয়ে রিভিউ'র মতোন কিছু একটা লিখতে ইচ্ছা করলো। যদিও রিভিউ লেখা খুব কঠিন, যা আমার কর্ম না। তবুও চেষ্টা করছি। যাই হোক, 'কফিমেকার' বইটি নিয়ে লেখার আগে আমি আপনাদের সাথে লেখকের পরিচয় করিয়ে দিব। কারণ আগে গাছ তারপর ফল। সে হিসাবে আগে লেখকে জানতে হবে। তারপর তার বই। লেখককে জানলে-বুঝলে বা চিনলে তার বই আরও বেশি আনন্দময় হয়।

লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস বয়সে তরুন। গোপালগঞ্জের ছেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। লন্ডন থেকে স্নাকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায়। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। এরই মধ্যে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, দক্ষিন আফ্রিকা, নেপাল, মালোশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং লিবিয়া ভ্রমন করছেন। লেখকের প্রথম বই ছিলো ইংরেজি কবিতার একটি বই। নাম ‘নেমেসিস’। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাসের প্রিয় কবি ও লেখকের তালিকায় আছেন, জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত, তারা শঙ্কর, মানিক বন্দোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কোনান ডায়েল, এডগার এলেন পো, শেলি, কিটস এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ আরো অনেকে।

এবারের বই মেলাতে তার পনের টি বই প্রকাশিত হয়েছে (যদি আমি ভুল না করে থাকি)। এক সাক্ষাৎকারে লেখককে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এত লেখার সময় কখন পান? উত্তরে লেখক বলেছেন, ''আমি বই পড়ি জ্যামের মধ্যে বসে। কাজ করতে করতে মানুষ যেমন গান শোনে, তেমনি সুযোগ পেলেই আমি পড়ি এবং লিখি। তবে লেখালেখির জন্য আমি মূলত গভীর রাতকেই বেছে নিয়েছি। বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেলে লেখা শুরু করি। এবং চেষ্টা করি বেশি না ঘুমানোর। এছাড়া শুক্র এবং শনিবার আমি ঘর থেকে বের হই না।'' রুপালী আলো ডট কম এ 'কফিমেকার' ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত লেখকের প্রায় নব্বইটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কিশোর উপন্যাস, ভালোবাসার উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, গোয়েন্দা গল্প, অতি প্রাকৃত গল্প এবং রম্য গল্প লিখেছেন। পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। আমার ধারনা লেখক অরুন কুমার বিশ্বাস গোয়েন্দা গল্প এবং রম্য গল্প লিখে বেশি আনন্দ পান।
ঘটনা চক্রে এই লেখকের সাথে একদিন আমার দেখা হয় তার অফিসে। সেদিন তিনিও খুব ব্যস্ত ছিলেন, আমিও খুব ব্যস্ত ছিলাম। ইচ্ছা আছে আরেকবার যাবো অরুণ কুমার বিশ্বাসের কাছে। আমার ধারনা তিনি প্রচন্ড পড়ুয়া একজন মানুষ। খুব সুন্দর করে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলেন। এবং কথা বলার ভঙ্গিমাতে যথেষ্ট পরিমানে আন্তরিকতা আছে। যা আমাকে মুগ্ধ করেছে!

'কফিমেকার' বইটির প্রধান চরিত্র অলোকেশ রয়। তিনি ডেপুটি কমিশনার 'কাস্টমস'। চৌকস শুল্ক গোয়েন্দা। তিনি শুধু একজন শুল্ক গোয়েন্দা নয় একজন লেখকও। অলোকেশ তার বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে চোরাকারবারীদের ধরে ফেলেন। কোনো বিমান বন্দরে কোনো স্মাগলার তার চোখ ফাঁকি দিতে পারে না। তিনি বিমান বন্দরের অসংখ্য যাত্রী থেকে ঠিকই দুষ্টলোককে ধরে ফেলেন। অলোকেশ একবার লন্ডনে উচ্চতর ট্রেনিং নিতে গিয়ে একজন খুনের আসামীকে তার দক্ষতা, মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে ধরে ফেলে। মধ্যরাত্রে এয়ারপোর্টে এক নিগ্রোকে সন্দেহ করেন অলোকেশ। তার পাসপোর্ট দেখেই দ্বীপদেশ মাদাগাস্কারের রাজধানীর সব খবরাখবর বলে দেন। তার সহকর্মীরা অলোকেশের মেধা ও বুদ্ধির প্রশংসা করেন। অলোকেশ প্রচুর বই পড়েন। তার মনে রাখার ক্ষমতা অনেক।
অলোকেশ রয় কফি খেতে খুব পছন্দ করেন। প্রায়ই তাকে কফি খেতে দেখা যায়। অলোকেশ গর্ব করে বলেন, ল্যাটিন আমেরিকান কফি ইজ দ্য বেস্ট। এই বইয়ে আরেকটি চরিত্র 'মন্তাজ।' পুরো বইয়ে তার কোনো ডায়লগ নেই। মন্তাজ শুধু অলোকেশকে কফি বানিয়ে দেয়।

'কফিমেকার' বইয়ের ৬১ পাতায় লেখক লিখেছেন, ''আমরা অনেক সময় এমন সব মিথ্যে বলি যা হয়তো না বললেও চলে। আবার বললেও তেমন ক্ষতির কিছু নেই। কিন্তু কোনো কোনো সময় দু-একটি নির্দোষ মিথ্যে থেকে বড়ো কোনো সত্যি বেরিয়ে পড়ে'। কথাটি আমার বেশ ভালো লেগেছে। কফিমেকার বইটি পড়ার পর বুঝতে পারলাম 'অলোকেশ' চরিত্রটি লেখকের ব্যক্তিগত জীবন থেকে প্রভাবিত। লেখক বিমান বন্দরে ডেপুটি কমিশনার অফ কাস্টমস হিসাবে কাজ করেছেন। অনেক অপরাধীকে ধরেছেন। অনেক অভিযান চালিয়েছেন। এই বইয়ে অলোকেশ রয় শুধু মাত্র তার বুদ্ধি, মেধা দিয়ে এবং নিখুঁত ভাবে তাকিয়ে আসামীদের সনাক্ত করে ফেলেন। কফিমেকার বইয়ে লেখক ৯২ পাতায় লিখেছেন, দীর্ঘ বারো ঘণ্টা একটানা ডিউটি। কর্তৃপক্ষের উচিত এই সময়ের ব্যাপারটা বিবেচনা করা। আফটার অল, চাকরি করে মানুষ জীবনের প্রয়োজনে। দিনের অর্ধেক যদি এয়ারপোর্টেই কেটে যায় তাহলে থাকল কী! 'কফিমেকার' বইয়ে লেখক নিজের অভিজ্ঞতার কথাই বলেছেন অলোকেশ রয়কে দিয়ে।

লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস তার এই বইয়ে বেশ কিছু বইয়ের কথা বলেছেন। বই গুলো নিয়ে সামান্য আলোচনাও করেছেন। যা আমার বেশ ভালো লেগেছে। বইটি পড়লে বুঝা যায় লেখক দেশ নিয়েও বেশ চিন্তিত। এক শ' বারো পাতায় লেখক আক্ষেপ করে লিখেছেন, আমাদের কোনো স্বপ্ন নেই, এখনো পাইনি মাহাথিরের মতো একজন যোগ্য নেতা। আবার ১১৬ পাতায় দেখা যায় লেখকের আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠেছে, তিনি লিখেছেন, 'নতুন প্রজন্ম তাদের বুদ্ধি ও পরিশ্রম দিয়ে বদলাবে দেশটাকে।

যারা গোয়েন্দা কাহিনি পছন্দ করেন 'অলোকেশ' চরিত্রটি তাদের ভালো লাগবে এটা আমি বিনা দ্বিধায় বলে দিতে পারি। আমার ধারনা লেখক অলোকেশ চরিত্রটিকে নিয়ে নিয়মিত লিখে যাবেন। তিনি চরিত্রটি সেভাবেই দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছেন। আসলে এই অলোকেশ চরিত্রটি লেখক নিজেই। এই বইয়ে কয়েকটা বিষয় আমার বেশ ভালো লেগেছে- তা হলো আমি কোনো বানান ভুল পাইনি। অন্তত আমার চোখে পড়েনি। ইংল্যান্ডের বেশ সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাতের খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। দুষ্টলোক গুলো কিভাবে সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে চেষ্টা করে তা বেশ সুন্দরভাবে লেখক তুলে ধরেছেন। অবৈধ ভাবে দুষ্টলোক গুলো কিভাবে সোনা চালান করে, মোবাইল, ডলার পাউন্ড রিয়েল এবং নেশা জাতীয় জিনিস কিভাবে বহন করে একদেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে যায় তা নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন।

'কফিমেকার' বইটিতে খারাপ লেগেছে তিনটি বিষয়। এক, লেখক বেশ তাড়াহুড়ো করছেন আসল রহস্য বলার জন্য। দুই, অনেকবার অনেক জায়গায় লিখেছেন, 'মজার ব্যাপার হলো'। এতবার লিখেছেন 'মজার ব্যাপার হলো' আমার ভালো লাগেনি। তিন, প্রধান চরিত্র অলোকেশ কিন্তু তার ব্যাপারে তেমন কিছু নেই, যেন তার কোনো অতীত নেই। পাঠকের মনে চরিত্রটি গেঁথে দেবার জন্য অলোকেশ সম্পর্কে আরও বেশি কিছু দরকার ছিল। যেহেতু, লেখক অলোকেশ রয় কে নিয়ে নিয়মিত লিখেবেন। উদারন স্বরুপ আমি হুমায়ূন আহমেদের 'মিসির আলি'র কথা বলতে চাই। নিজের অজান্তেই মিসির আলী চরিত্রটিকে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। সম্মান করতে ইচ্ছা করে। কারন মিসির আলীর আগাগোড়া সবটুকু আমরা জানি। মিসির আলি তার কাজের ছেলেকে নিজে লেখা পড়া শিখাতে চেষ্টা করেন। যদিও কয়েকদিন পর সেই কাজের ছেলে ঘরের দামী জিনিস চুরী করে পালিয়ে যায়।

এক নজরে
বইয়ের নাম : কফিমেকার (গোয়েন্দা কাহিনি)
প্রকাশনী : অনিন্দ্য প্রকাশ
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১২৭
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
মূল্য ২০০ টাকা (ভ্যাট সহ)
প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারী, ২০১৮ বইমেলা


লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৩

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: পতুল নাচের ইতিকথায়, যাদব

কীভাবে মারা যায়??

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমি গলা টিপে মেরে ফেলি।

আপনি বলুন, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের আসল নাম কি?

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৭

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: আপনি যতগুলো লেখকের গোয়েন্দা কাহিনী পড়েছেন তার মধ্যে কোন লেখকের লেখা আপনার সবচেয়ে ভাল লেগেছে?

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ
হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলি
স্যার আর্থার কোনান ডয়েল এর শার্লক হোমস
সুনীলের কাকাবাবুও ভালো লাগে
সমরেশ মজুমদার অর্জুন
সত্যজিৎ রায় প্রদোষ মিত্র (ফেলু দা)

আসলে যখন যেটা পড়ি সেটাই ভালো লাগে। শুধু একজনের নাম বলতে পারবো না।

৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়(মে ১৯,১৯০৮-ডিসেম্বর ৩,১৯৫৬) ছিলেন একজনভারতীয়বাঙালিকথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নামপ্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

কপি-পেষ্ট

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


"মজার ব্যাপার হলো", লেখাটা ভয়ংকর মুদ্রাদোষ; ব্লগে এই বাক্য পড়ার পর, পোষ্ট পড়া বন্ধ করে দিই; আপনার সাথে আমার কিছু মিল আছে!

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১০

রাজীব নুর বলেছেন: মিল আছে !!!!
তাতে আমি দারুন আনন্দিত।

৫| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬

ভুয়া মফিজ বলেছেন: লেখক পুরাই সচিব নাকি আগে আর কিছু আছে? একজন সচিবের কাজ দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন। রাতে না ঘুমানোর চেষ্টা করলে দিনের কাজে তার প্রতিফলন হতে বাধ্য!! এই জন্যই বোধহয় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে!!! ;)
ভালো চেষ্টা করেছেন। তবে বই এর চেয়ে লেখকের কথা বেশী হয়ে গিয়েছে।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.