নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিটল রাইটার এবং জার্নালিস্ট

মোঃ রাকিব খান

লিটল রাইটার এবং জার্নালিস্ট

মোঃ রাকিব খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সায়েন্স ফিকশন :" অচেনা জগৎ "

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৩৪



স্কুল থেকে বাসায় ফিরে ব্যাগটি সোফার দিকে ছুঁড়ে মেড়ে অরিক দ্রুত তার শয়নকক্ষের দিকে যাচ্ছে। আজকে তার মনটা ভাল নেই। ক্লাসের শিক্ষকের উপর তার খুব রাগ হচ্ছিল। স্যার বলছিলেন- পৃথিবীর বাইরেও নাকি প্রাণের অস্তিত্ব আছে। কিন্তু কোথায় আছে সেটা বার বার জানতে চাওয়ায় সার তাকে ধমক দিয়েছে। বিছানার এক কোনে বসে কিছুক্ষণ চিন্তা করল সে। বেশ ক্লান্ত বোধ করছে। বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিল। স্কুল বয়সী ছেলেমেয়েদের জানার ব্যাপারে আগ্রহ বেশি। পৃথিবীর বাহিরে কোথায় জীবন্ত প্রানী আছে। তারা দেখতে মানুষের মতো নাকি বীভৎস কোনো আকৃতির। তারা শারীরিক দিক দিয়ে অনেক বড় নাকি ক্ষুদ্র। আহ! যদি খুব ক্ষুদ্র হত তাহলে সে তাদেরকে পকেটে পুরে বা বোতলে আঁটকে রেখে খেলা করতে পারত। কথাটা চিন্তা করতেই হাসি আটকে রাখতে পারল না সে। এরকম আরো কত কি ভাবছে সে। নিয়মিত বিজ্ঞান সাময়িকী পড়ে সে।

এভাবে কতকাল কেঁটে গেছে সে বলতে পারবে না। নিজেকে সে এমন একটা জায়গায় আবিষ্কার করল, যা সে আগে কখনো কল্পনাও করেনি। সম্পূর্ণ আপরিচিত একটা জগৎ। স্থিরভাবে সে দন্ডায়মান। মাটির রং তামাটে। সামনে বিস্তৃর্ণ সমভূমি যাতে গাছ পালার ছিটে ফোঁটাও নেই। পেছনে তাকিয়ে কিছুটা ঘাবড়ে গেল সে। গভীর পাহাড়ী জঙ্গল, সেইসাথে ঘুটঘুটে অন্ধকার। যদিও মাথার উপর ছেছীপ্যমান গাড় হলুদ সূর্য আলো বিকিরন করছে। তার তাপও যে কম নয় তা সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। লাল বর্নের অদ্ভুত আকাশ দেখেও সে কম বিস্মিত হচ্ছে না। সে মনোরম নীল আকাশ দেখে অভ্যস্থ। প্রথম দিকে জঙ্গলের দিকটা তার কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন বলে মনে হয়েছিল। ভাল করে লক্ষ্য করে দেখল আসলে তা নয়। গাছ পালাগুলো কালো তাই অন্ধকারচ্ছন্ন মনে হচ্ছিল। সমস্ত কিছুই তার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছিল। এমন জনমানবহীন স্থানে একা একা তার ভাল লাগছে না। ইচ্ছে করছে গলা ঠাটিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে। হঠাৎ একটা কোমল কন্ঠস্বর শুনতে পেল সে, ভয় পাচ্ছ কেন খোকা। আমরা তোমার কোন ক্ষতি করব না। আমাদের পরীক্ষা সমাপ্ত হলে তোমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেব।

চারপাশে বা উপরে-নিচে কাউকে দেখতে না পেয়ে চমকে উঠল সে। মৃদু অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে কিন্তু শব্দের উৎস খুঁজে পাবে না। কোনো মানুষ আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে দেখতে পাবে না, কারণ তাদের চোখের সে ক্ষমতা নেই। আমাদের শরীর থেকে আলো প্রতিফলিত হয় না বললেই চলে।
‘আমি তোমাদের দেখতে চাই।’
‘তুমি সর্বোচ্চ আমাদের শারীরিক অস্তিত্বের অবস্থা প্রতিকৃতি দেখতে পাবে।’
‘যাই হোক, আমি দেখতে চাই তোমাদের।’

তার সম্মুখে শূন্যে ভাসমান বিশাল একটি অদ্ভুত আকৃতির মহাকাশযান ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠল এবং সেটা সমতল ভূমিতে অবতরন করল। স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজা খুলে গেল। ভেতর থেকে এক এক করে তিনটি বস্তু বেরিয়ে এল। তাদের দুটো প্রায় অদৃশ্য, শুধুমাত্র অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে আর অপরটা দৃশ্যমান। অপরটার আকৃতি মানুষের মতো। কিন্তু মানুষ নয়। অরিক বুঝতে পারল ওটা রোবট জাতীয় কিছু। তাদের ভাষা আর মানুষের ভাষার মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকায় এই যন্ত্রের মাধ্যমে ভাবের আদান-প্রদান করা হয়েছে এতক্ষণ। ব্যাপারটা বুঝতে বাকি রইল না তার। এতক্ষণ পর আরেকটা ব্যাপারে টনক নড়ল তার। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। কিন্তু এখানে তো কোনো অক্সিজেন নেই। তাহলে সে কিভাবে বেঁচে আছে। সে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের বেঁচে থাকার জন্য কি অক্সিজেন লাগে না?
‘না আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি না।’
‘এখানে তো কোনো অক্সিজেন নেই তাহলে আমি বেঁচে আছি কীভাবে।’
‘তোমার জন্য অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে তাই বেঁচে আছো। ঐদিকে তাকাও। দেখ অক্সিজেন উৎপাদন হচ্ছে।’

অরিক তার বামদিকে তাকিয়ে দেখল খানিকটা দূরে একটা যন্ত্র বসানো আছে এবং সেটা আলোয় ঝলমল করছে। যন্ত্রটার স্বচ্ছ আবরণের ভেতর দিয়ে সে লক্ষ্য করল বুদবুদ আকারে কি যেন পাশের দিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারল ঐ অদ্ভুত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অক্সিজেন উৎপন্ন হচ্ছে। আচমকা চার পাশের পরিবেশ দ্রুত নীলাভ হতে শুরু করল। সে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। তাকে আবারও নির্ভয় দিয়ে বলে উঠল, এসব তোমাকে রক্ষা করার জন্যই করা হচ্ছে। আমাদের সূর্য থেকে যে ‘ইউটা’ রশ্মি নির্গত হচ্ছে সেটা বেশিক্ষণ তোমার শরীরের উপর পড়লে তুমি মারা যাবে। এই নীলাভ এরিয়া তোমার বিচরণ ক্ষেত্র। এর বাইরে যাওয়া তোমার জন্য নিষেধ। এই এরিয়ার মধ্যে তুমি হেসে খেলে সময় কাটাও। আরেকটা মজার ব্যাপার হল এখানে অভিকর্ষ বলের পরিমান খুবই কম। তুমি লাফ দিলে কয়েকশত ফুট উপরে চলে যেতে সক্ষম হবে।’
‘তাহলে তো খুব মজা হবে।’
‘হ্যাঁ, আমরা চললাম আবার পরে দেখা হবে। ল্যাবরেটরী কন্ট্রোলরুম থেকে ডাক পড়েছে।’

মুহুর্তের মধ্যে ওরা অদৃশ্য হয়ে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। অরিক তাদের আর খুঁজে পেল না। ভীত সন্ত্রস্ত এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিয়ে সে আস্তে করে উপরের দিকে লাফ দিল। সত্যিই অনেক উপরে উঠে গেল সে। ভূমিতে অবতরন করার পর আরো জোরে এক লাফ দিল সে। কী আশ্চর্য! মানুষ যে কখনো লাফিয়ে এত উপরে উঠতে পারে সেটা সে কখনো কল্পনাও করে নি। উপর থেকে নিচের জিনিষ দেখতে অদ্ভুত ও বিচিত্র বলে মনে হয়। সে যেন এখন আকাশে উড়ছে। নিচের দিকে তাকিয়ে অবাক হল সে। তার কাছে মনে হল সে যেন এখন পৃথিবীর যে কোন পর্বতের চেয়েও বেশি উপরে অবস্থান করছে। নিজেকে খুবই ভাগ্যবান বলে মনে হল তার। শরীর নিয়ন্ত্রণ করে সে যেন আকাশে ভেসে থাকার কৌশল ও খানিকটা রপ্ত করে ফেলেছে। এভাবে লাফাতে লাফাতে সে যে কখন নীলাভ সীমারেখার প্রান্তে চলে এসেছে, একটুও টের পায় নি আনন্দের আতিশয্যে। আরেক লাফ দিতেই সে নীলাভ সীমারেখার বাইরে চলে এল। কিছুক্ষনের মধ্যে সে শরীরে ব্যাথা অনুভব করল এবং ক্রমেই যেন তা বেড়ে চলছে। চারদিক ধীরে ধীরে অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে লাগল। সেও যেন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। মস্তিস্ক আগের মতো কাজ করছে না। বুঝতে পারল সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। কেউ যেন কোমল কন্ঠে তাকে ডাকছে। এই ডাকটা যেন তার অতি পরিচিত। কিন্তু সে কোন উত্তর দিতে পারছে না। কারণ তার এখন কথা বলার শক্তিও নেই। সে যেন একটা জড় পদার্থ।

ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো অরিক। কয়েক মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়ার পর নিজেকে কক্ষের মেঝের উপর আবিষ্কার করল। থতমত খেয়ে গেল সে। সে তো বিছানার উপর ছিল। নিচে এল কি করে। শরীরে চিনচিন ব্যাথা এখনও আছে। তার স্নেহময়ী আম্মু এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিল। সে তখনও নিশ্চুপ। চিন্তা করতে লাগল, এতক্ষণ সে কোথায় ছিল। পৃথিবীর বাইরে থেকে কি তাকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। আবার যদি সে ঐ জগতে ফিরে যেতে পারত তাহলে কত্ত মজা হত! মা তাকে আদরের পরশ বুলাতে বুলাতে বলল, ‘বিছানার ওপর থেকে পড়ে গিয়ে খুব ব্যাথা পেয়েছিস ?
প্রত্যুত্তরে সে শুধু বলল, ‘না’।
যদিও সে ব্যাথা পেয়েছিল এবং বেশ ভালভাবেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৬

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভালই এন্ডিইং টা বোঝা যাচ্ছিল। শেষটা ভিন্ন হতে পারতো। তারপরেও ভাল লেগেছে। শুভ কামনা লিটন রাইটার :-B

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৬

মোঃ রাকিব খান বলেছেন: লেখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.