নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিটল রাইটার এবং জার্নালিস্ট

মোঃ রাকিব খান

লিটল রাইটার এবং জার্নালিস্ট

মোঃ রাকিব খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

টিম -৭১

২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:০৪


1971 সাল। চলছে মহান মুক্তিযুদ্ধ। বীর বাঙালীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি দোসরদের হাত থেকে রক্ষা করতে। দেশকে রক্ষার্থে বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিস্তব্ধ হয়ে আছে বাংলাদেশের আকাশ, বাতাস। ভয়ার্ত সাধারণ মানুষগুলোর বিচরণও কমে গেছে রাস্তাঘাটে। সবাই আতঙ্কে থাকে, এই বুঝি হানাদার বাহিনীর লোক চলে আসবে। তার উপর রাজাকার -আলবদর বাহিনীগুলোর উপদ্রব তো আছেই। সর্বত্রই থমথমে পরিবেশ, শান্তি নেই কোথাও। তবুও এদেশের মুক্তিকামী মানুষ স্বপ্ন দেখে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। তার জন্য যত ত্যাগ স্বীকার করতেই হোক না কেন, তারা সর্বদা প্রস্তুত। নিজের জীবন দিয়ে হলেও।

13 -14 বছর বয়সের এক কিশোর রাস্তার পাশ ধরে হেটে যাচ্ছে। আশেপাশে লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। এমন ভীতিকর পরিবেশে সে বেশ বুক ফুলিয়েই হাঁটছে। তবে কিছুটা সন্তর্পনে। পরনে সাদামাটা পোশাক। হাতে কয়েকখানা পেপার। পাশের কয়েকটা বাসায় দেওয়ার পর চলল স্কুলঘরের দিকে। এখন সেটা আর স্কুল নেই, পাকিস্তানি মিলিটারীদের ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। কথাটা মনে হতেই রাগে ফুসতে লাগল সে। কিন্তু বাইরে কিছুই প্রকাশ করল না।

স্কুলের ভেতর ঢুকল সে। লম্বা, চওড়া, সুঠামদেহী গম্ভীর একজন লোককে দেখতে পেল। তাকে দেখেই লোকটি বলল, ' এদিকে আয়। '
বালকটি এগিয়ে গেল। আবার জিজ্ঞেস করল, 'তোর নাম কি যেন? '
'মনির '
'তুই তো প্রতিদিন সকালেই আসিস '
'হ্যাঁ, আজকের পত্রিকাটি নিন। '
'দে ' হাত বাড়িয়ে পত্রিকাটি নিল সে।
'আপনাদের কিছু প্রয়োজন হলে আসগর চাচা আমাকে জানাতে বলেছেন। '
' হুমম। আপাতত প্রয়োজন নেই। পূর্বদিক দ্রুত আসতে বলবি। ঠিক আছে? '
'হুমম। '
'এত গোপনীয়তা রক্ষার পরেও ওরা যে কিভাবে জানতে পারে? '

লোকটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। মনির কিছু না বোঝার ভান করে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। পকেট থেকে ভাঁজকরা কাগজটি বের করে তার হাতে দিয়ে মনির চলে আসলো। আর খেয়াল রাখল পার্শ্ববর্তী অপর মিলিটারী সদস্যরা কি বলাবলি করছে। মিলিটারীদের একটি গাড়ি চলে গেল তার সামনে দিয়ে।

সন্ধ্যার পর অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। করিম একজন মুক্তিযোদ্ধা। ক্যাম্পে বসে পরবর্তী আক্রমণের একটি ছক তৈরিতে ব্যস্ত। রেডিওতে প্রচারিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর অমর বাণী। 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম '। এমন সময় হঠাৎ মনির তার কক্ষে প্রবেশ করল। করিম জিজ্ঞেস করল, ' কিরে কি খবর আজ?'
'পূর্বদিকে হামলা হবে আজ। আসগর চাচার সাংকেতিক চিঠিতে ঐ এলাকার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসার ঠিকানা দেওয়া আছে। '
'হারামজাদা বাঙালি হয়ে পাকিস্তানিদের গোলামী করে। '
'ওরা ভেবেছে সাংকেতিক ভাষায় লিখিত চিঠির কিছুই বুঝি না আমি! আমি সবই বুঝি। '
'হুমম। আজকে আবার আসবে ওরা। '
'সেদিনের মতো একটা জানোয়ারকেও ফিরে যেতে দেব না। '
'সেজন্য খুব দ্রুত জুতসই প্রস্তুতি নিতে হবে। '
'আমরা প্রস্তুত। ওরা রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করবে, তাই আমাদের জন্যও সুবিধা হবে। প্রয়োজনে মুখে কালি বা অন্যকিছু মেখে নেব যাতে কেউ চিনতে না পারে। '
'তোরা পারবি তো? '
'কি যে বল তুমি! আমরা পারি নি কখন? '
'হুমম। তোদের ওপর ভরসা রাখা যায়। তবুও আমরা কয়েকজন থাকব। '
'তাহলে তো আরো ভাল হবে। '
'তোদের "টিম -71 " এর অন্যদের ডাক। '

মনির একটি সংকেত দিতেই জনাছয়েক তরুণ কক্ষে প্রবেশ করল। বয়স 13- 14 হতে 18-19 বছর হবে।প্রত্যেকের কাঁধে বন্দুক। চেহারা মলিন তবে চোখগুলো চকচক করছে। করিম তাদেরকে বুঝিয়ে দিলো কেমন পরিস্থিতিতে কি করতে হবে বা কোন অবস্থানে থাকতে হবে।
করিম বলল, ' সময় খুব কম। কিছুক্ষণ পর ওরা চলে আসবে। আমাদের এখনই যেতে হবে। '

মফস্বল এলাকা, অত্যাধুনিক শহরের মতোও নয় আবার গ্রামের মতও নয়, অন্যরকম একটা পরিবেশ। বৈদ্যুতিক বাতির কল্যাণে কোনো অংশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বা কোনো অংশ আবছাভাবে। বাকিটুকু অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে।

হঠাৎ রাস্তার উপর বুটের শব্দ হল। একজোড়া নয়, একাধিক। পাশ্ববর্তী প্রত্যেক গলির কোণে আড়ালে অন্ধকারে টোপ পেতে লুকিয়ে আছে সবাই। একেকজন একেক পজিশনে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে আক্রমণ। ভয়াবহ সেই আক্রমণ, রীতিমতো জীবন - মরণের খেলা। বুকটা ঢিপ ঢিপ করছে সবার। মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে হয়। যেকোনো সময় প্রাণ- পাখিটা উড়ে চলে যেতে পারে।

বুটের শব্দগুলো আরও জোড়ালো শোনাচ্ছে। পাশ্ববর্তী বাড়িগুলোতে তল্লাশি চালাবে। আর মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে খতম। নিরীহ শিশু, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধরাও রেহাই পায় না। কী বিভৎস সে দৃশ্য! স্বচক্ষে দেখলে যে কোনো মানুষের মনও শিউরে উঠবে।

পরিকল্পনামাফিক একটা গুলির শব্দ হল। কিছু বুঝে উঠার আগেই পাক সেনাদের একজন রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল "টিম -71 " এর সদস্যদের হাতের অস্ত্রগুলো। ভীত -বিহ্বল, দিশেহারা পাক সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। পজিশন নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করার আগেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়লো বেশিরভাগ। কিছুক্ষণ জোড়ালো যুদ্ধ চলল দু 'পক্ষের মধ্যে। পুরো এলাকাটিই যেন একটি ভয়ানক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হল। অতঃপর যখন দীর্ঘ সময় পর সমস্ত পরিবেশ নিস্তব্ধ হল, মনে হল যেন একটি মহাশ্মশান। গাছের একটি পাতাও যেন নড়ছে না। রাস্তার এখানে- সেখানে পাক সেনাদের রক্তাক্ত মৃতদেহগুলো পড়ে আছে। ধীরে ধীরে মুক্তিযোদ্ধারা একে একে আত্নপ্রকাশ করল। চকচকে চোখগুলোতে আনন্দোল্লাস ফেঁটে পড়ছে।

16ই ডিসেম্বর। বাংলাদেশ স্বাধীন হল। দলে দলে মানুষ লাল -সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বিজয়োল্লাসে মেতে উঠেছে। "টিম -71" এর সদস্যরাও নিজেদের বঞ্চিত করেনি এই বিজয়োল্লাস হতে। জাতীয় পতাকা হাতে, মোমবাতি প্রজ্জলন করে তারা স্মরণ করে জাতির সেই বীর সন্তানদের, যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেশের জন্য। আজ তাদের সাত সদস্যের এই ছোট্ট দলটিতেও একজন অনুপস্থিত। চলে গেছে না ফেরার দেশে। দেশের জন্য তাদের এই আত্নত্যাগ জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। স্বাধীনতার আলো যেন মোমবাতির দ্বীপশিখার আলোর মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.