নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এ জাতির অপার শক্তি আছে। উন্নয়ন-অগ্রগতির ভিত্তিও তৈরি আছে। এখন আমাদের দরকার বিভক্তির পরিবর্তে ঐক্য। একটা জাতি কি এভাবে বিভক্তির মধ্যে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবে একটা দেশকে চলতে দেয়া যায় না।
আমেরিকার সর্বোচ্চ পদক কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রাপ্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে দেয়া সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস এসব কথা বলেন।
গ্রামীন ব্যাংক সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রচেষ্টাকে ‘ছিনতাই’ বলে মন্তব্য করে নোবেল জয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, “নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিশ্বের একমাত্র প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংককে মূল মালিকদের সম্মতি ছাড়া বে আইনি শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রচেষ্টা রুখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এটা আমরা হতে দেবো না ।”
নোবেল জয়ী ইউনূস সুহৃদ-চট্টগ্রাম এ সম্বর্ধনা সভারআয়োজন করে।
বিকালে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেসরকারি ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ড, ইউনূসের এক সময়কার সহকর্মী প্রফেসর সিকান্দর খান।
এতে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আলমগীর মো. সিরাজ উদ্দিন, চিকিৎসক এস এস ফজলুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মঈনুল ইসলাম, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, অধ্যাপিকা তাহমিনা খানম, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম বীর প্রতিক ও ব্যবসায়ী আমীর হুমায়ূন মাহমুদ চৌধুরী।
রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদসহ নগরীর নানা শ্রেণী ও পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রফেসর ইউনূসের ঘন্টাধিক সময় ধরে দেয়া বক্তব্যে গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রালগ্ন থেকে বর্তমান অবস্থায় পৌছার নানা ঘটনা, এটিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ-আয়োজন আর বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসার অগ্রগতি আর আগ্রহের বিষয় উঠে আসে।
সামাজিক ব্যবসা উদ্ভাবনের কারণে তিনি আরেকটি নোবেল পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন বলে কয়েকজন বক্তার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে শুরুতেই তিনি বলেন, “অনুষ্ঠানে আমার নানা গুণগানের পাশাপাশি আরেকটি ভয়ও দেখানো হয়েছে। সেটি হচ্ছে আরো একটি নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির প্রত্যাশা। এক নোবেল নিয়ে আমার এত সমস্যা। আবার আরো একটি নোবেল পুরস্কার?” তার এ বক্তব্যে পুরো সভায় হাস্যরোলের সৃষ্টি হয়।
ইউনূস বলেন, “১৯৯০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের পরিবর্তে বোর্ড কর্তৃক নিয়োগের আইন পাশ হলেও চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থেকে যায়। বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে সর্বশেষ ক্যাবিনেট সভায় এটি উত্থাপিত হবার মুহূর্তে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান কর্তৃক পরবর্তী সভায় তোলার কথা বলা হলেও সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আর বিষয়টি সুরাহা হয়নি।” পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এটি ক্যাবিনেটে পাশ হলেও সংসদে র্যাটিফাই না করায় গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা পুনরায় সরকারের হাতে চলে যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭ শতাংশের মালিকানা এর ঋন গ্রহিতাদের হাতে ।আর সরকার এর মাত্র তিন শতাংশের মালিক। আট হাজার কোটি টাকার মুলধন, এক হাজার কোটি টাকার ইক্যুইটি আর ৬০ কোটি টাকার পেইড আপ ক্যাপিটালের সিংহভাগ মালিকদের সম্মতি ছাড়া এর নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেয়ার চিন্তা মুলত ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
তিনি বলেন, “যে আইন গ্রামীণ ব্যাংককে নোবেল জয়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করলো সে আইন পাল্টিয়ে একে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেবেন , এটা কি এত সোজা? এটা দেশের মানুষ সহ্য করবে বলে মনে হয় না।”
তিনি বলেন “তাজমহকে যেমন অপূর্ব সৃষ্টি হিসেবে অপার কৌতূহল নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দেখতে যায়, গ্রামীণ ব্যাংককেও একটা অপূর্ব সৃষ্টি গণ্য করে বিভিন্ন দেশের মানুষ এটি পরিদর্শনে আসে।”
আমেরিকা, ইউরোপ আর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত বড় বড় কোম্পানি সামাজিক ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “সামাজিক ব্যবসার মূল সুর পুজি নয়, নতুন নতুন সুষ্টিশীল আইডিয়া, বুদ্ধি আর পরিকল্পনা। এটার মূল লক্ষ্য মুনাফা নয়, মানুষকে তার নিজের শক্তিতে বলীয়ান করে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করা।”
তিনি বলেন, “দান আর সামাজিক ব্যবসার মধ্যে পার্থক্য হলো দানের টাকা ফেরত আসে না। আর সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগের টাকা দেরিতে হলেও ফেরত আসে। মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়। বেকারত্ব থাকে না।”
পুজিবাদ বড় সংকটকাল অতিক্রম করছে এবং ব্যবসার নামে সর্বোচ্চ মুনাফার কথা বলে মানুষকে রোবটে পরিণত করেছে বলে উল্লেখ করে ক্ষুদ্র ঋণ ধারনার এ প্রবক্তা বলেন, “পুজিবাদ দারিদ্র নির্মিূলে ব্যর্থ। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের আদলে উন্নত দেশগুলো নানা সুবিধার আবরণ পরিয়ে তাদের নাগরিকদের দারিদ্র্য ঢেকে রেখেছে।”
তিনি বলেন, “ইউরোপ বয়স্ক, বৃদ্ধ নাগরিকের ভারে ন্যূজ, জর্জরিত আর আমাদের রয়েছে প্রচুর যুবশক্তি। এ শক্তিকে কাজে লাগাতে প্রয়োজন অতীতমুখীতা আর বিভক্তি ছেড়ে ভবিষ্যৎমুখী ঐক্য।”
সমাজকে একটা পরিবারের সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, “এর সদস্যরা এক একজন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি সমর্থন করবে। তবে পৃথক হবে না। ভবিষ্যৎ মুখী হলেই আমাদের অগ্রগতি নিশ্চিত। আমাদের অপার শক্তি আছে। তাকে কাজে লাগাতে হবে। এমনকি আমাকেও কাজে লাগানো হচ্ছে না। অথচ আমারও নানা দেশে বন্ধুবান্ধব, সম্পদ, শক্তি রয়েছে।”
নোবেল জয়ী ইউনূস সুহৃদ-চট্টগ্রাম এর আহবায়ক ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. সিকান্দর খান সভাপতির বক্তব্যে আগামী তিন মাসব্যাপী বিভিন্ন ইস্যুতে সংগঠনের ব্যনারে কর্মসুচি দেয়া হবে বলে জানান।
http://www.nowbdnews.com/2013/06/20/195270.htm
©somewhere in net ltd.