নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"The whole world is great ashtray\"

রাকীব হাসান

***আশা আছে বিন্দু বিন্দু তাই যুদ্ধ বেঁচে থাকার ***

রাকীব হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বরাবর: তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

০২ রা জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩০

প্রিয় মহোদয়,

প্রথম আলোতে আপনার “বিসিএস সার্ভিস; বৈষম্য কি চলতেই থাকবে?” শিরোনমে লেখাটি পড়ে মর্মাহত হলাম। তারই কিছু আপনাকে জানানোর প্রয়োজন বলে মনে করে এই লেখাটি। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস নিয়ে আপনাদের মত প্রাজ্ঞ জনদের লেখা প্রায়ই পত্রিকায় দেখি। অনেকটাই আমলা নির্ভর এই দেশে সার্ভিস নিয়ে আপনারা আর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ভাবনা আমাদের মুগ্ধ করে। তাই আপনার লেখার কিছু বিষয় নিয়ে আপনার উদ্দেশ্যেই এই লেখা।

পৃথিবীর অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশে সেই দেশের প্রশাসন পরিচালনা করে থাকে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রশাসনিক সার্ভিসের অফিসাররা যা এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস নামে পরিচিত। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠ প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় প্রশাসন পরিচালনা করে থাকে প্রশাসনিক সার্ভিসের অফিসাররা। কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে মাঠ পর্যায়ে অন্য সকল বিভাগের কর্মকান্ডের সমন্বয় ও নির্দেশনার দায়িত্ব থাকে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি তথা জেলা প্রশাসনের। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়াতে জেলা পর্যায়ে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিকে জেলা শাসক নামে অভিহিত করা হলেও আমাদের দেশে সেই একই কর্মকর্তাকে বলা হয় জেলা প্রশাসক। ইন্ডিয়াতে কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসন পরিচালনা করে থাকে আইএএস(ইন্ডিয়ান এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) অফিসাররা। আর আমাদের দেশে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ইন্ডিয়াতে যদিও কেন্দ্রীয় প্রশাসনে এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের বাইরের কোন অফিসারের পদায়ন হবার সুযোগ নেই তবে আমাদের দেশে রয়েছে। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে ডিএস পুলে অন্য সার্ভিসের অফিসাররা আসতে পারে এবং তারা অনেকেই সচিব পর্যন্ত হয়।

আপনার লেখার সারমর্ম যা তাতে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে দেশের অন্য সব সার্ভিসের অফিসাররা বঞ্চিত হচ্ছে। তারা কেউই সচিব হতে পারছে না, যুগ্ম সচিব হতে পারছেন না। পারছেন না ডিসি বা ইউএনও হতে। পার্শবর্তী অন্য সব দেশের দিকে তাকালে আমরা দেখি প্রশাসন সার্ভিসের বাইরে অন্য কোন অফিসার এই সব পদে কখনোই আসীন হতে পারেন না। আপনি বলেছেন স্বাস্থ্য, কৃষি, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্য টেকনিক্যাল বিভাগের অফিসাররা প্রশাসনের অফিসারের তুলনায় বেশী মেধাবী তাই তাদের ই সচিব পদসহ প্রশাসনের উচ্চ আসনে আসীন হওয়া প্রয়োজন। আবার এও বলেছেন বিসিএস পরীক্ষায় প্রার্থীদের প্রথম পছন্দ থাকে পররাষ্ট্র, প্রশাসন ও পুলিশ। মেধার দিক থেকে সেরারাই এই সব ক্যাডারে যোগদান করে। আর এদের পেছনের সিরিয়ালে যারা থাকে তারা অন্য সব টেকনিক্যাল ক্যাডারে যোগদান করে। বিষয়টি আমার কাছে স্ব-বিরোধীতা বলে মনে হয়েছে। টেকনিক্যাল ক্যাডারের অফিসাররা বেশী মেধাবী হয় তারাই তো নিশ্চয়ই পররাষ্ট্র, প্রশাসন ও পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করতো! হ্যা করছেও টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশুনা করা মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা যারা পরীক্ষায় ভালো করছে তারাই প্রথম দিকের ক্যাডার গুলোতে যোগদান করছে। আর অন্য বিষয়ে পড়ে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীরা যারা পরীক্ষায় ভালো করছে তারাও প্রশাসন- পুলিশে যোগদান করছে। এখানে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে মেধার পরীক্ষার মাধ্যমেই নির্ধারিত হচ্ছে যার যার স্থান। মেধায় প্রথম দিকে থাকা শিক্ষার্থী পাচ্ছে তার প্রথম পছন্দের ক্যাডার আর সিরিয়ালে শেষের দিকে থাকা প্রার্থী পাচ্ছে শেষের দিকে চয়েস দেয়া ক্যাডার। তাই এই কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ সার্ভিসে তুলনামূলক মেধাবীরাই আসছে। আর এই সব মেধাবীরাই প্রশাসন পুলিশ পরিচালনা করবে সেটাই স্বাভাবিক। আপনি বলেছেন, স্বাস্থ্য ক্যাডারে কর্মরত চিকিৎসকদের পদোন্নতি পেতে উচ্চ ডিগ্রির দরকার কিন্তু ক্যাডারে কর্মরতদের উচ্চ আসনে যেতে ডিগ্রির দরকার হয় না। আপনি পরোক্ষ ভাবে চিকিৎসকদের উচ্চ ডিগ্রি নিতে নিরুৎসাহিত করেছেন। আর একটি বিষয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক করার পর বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন বিশেষ সেবা প্রদানের জন্য জরুরী। আমরা সবাই জানি একজন চিকিৎসকের ছোট ভুল একজনের জীবন হানির জন্য যথেষ্ট। আবার আপনি চিকিৎসককে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব করতে বলেছেন, এতে নাকি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পরিচালনায় গতিশীলতা আসবে। আপনার জানা উচিত একজন সচিব ঐ মন্ত্রনালয়ের প্রিন্সিপাল একাউন্টিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন। মন্ত্রনালয়ের পরিচালনাসহ দাপ্তরিক অনেক কাজই তাকে সমাধান করতে হয়। পরিকল্পনা প্রণয়নসহ নানাবিধ ফাইল ওয়ার্ক থাকে তার। আর সচিবালয়ে একটি বিভাগের কাজের সাথে আরো অনেকে বিভাগের কাজ সংযুক্ত, তাই অন্য সব বিভাগের কাজ সম্পর্কেও তাকে সমান জ্ঞান রাখতে হয়। যেমন যে কোন মন্ত্রনালয়ের কাজের সাথে অর্থ মন্ত্রনালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের কাজের সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া সব মন্ত্রনালয়ের কাজের সাথেই মাঠ প্রশাসনের কাজের সম্পর্ক থাকে। তাই কোন মন্ত্রনালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব সুচারু রূপে পালন করতে হলে তার উপরোক্ত মন্ত্রনালয় ও বিভাগের কাজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। সেই সাথে সচিবালয়ের কাজের ধরণ ও প্রশাসন পরিচালনা সম্পর্কে জ্ঞান থাকাও অতি জরুরী। যা একজন স্বস্থ্য ক্যাডারে কর্মরত চিকিৎসক, কৃষি বা ফিসারিজ ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তার থাকে না। তাদের পদগুলো বিশেষায়িতভাবে বিশেষ কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য দিকে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তারা প্রথম থেকেই মাঠ প্রশাসন ও সচিবালয়ে কাজ করে প্রশাসনিক কাজ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেন। তাই পরবর্তীতে তারাই প্রশাসন পরিচালনা ও কাজের ধারাবাহিকতায় সচিবালয়ে সচিব পদে আসীন হন। অন্য দিকে বিশেষ বিভাগে কাজ করা অফিসাররা তাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান হন। এটাই হবার কথা। আর প্রশাসন পরিচালনায় আসার যোগ্যতা থাকলে তারা পূর্বেই পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের মেধার স্বক্ষর রেখে বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসেই আসতেন। তাই মেধার বিষয়টি চাকুরী জীবন ২৫ বছর অতিবাহিত হবার পর নতুন করে সামনে আনা দুরভিসন্ধিমূলক।

আপনি বলেছেন, পদোন্নতি বঞ্চিতদের ভাসমান পদোন্নতি প্রদানের কথা যেমনটা আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে হয়ে থাকে। বিষয়টি আমাকে মর্মাহত করেছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আপনার জানা উচিত আদর্শ প্রশাসন সব সময়ই পিরামিড আকৃতির হয়ে থাকে। এখানে পদোন্নতি হবে পদের বিপরিতে। এতে করে প্রশাসনে শৃঙ্খলা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইচ্ছামত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছাড়াই প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি দেয়া যায়, আর এতে তেমন কোন সমস্যাও নেই। এক বিভাগে ১০ জন অধ্যাপক থাকলে কোন সমস্যা হবার কথা নয় কিন্তু একটি মন্ত্রনালয়ে একজনের বেশী সচিব থাকা অসম্ভব। এতে প্রশাসন পরিচালনায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। একইভাবে অন্যান্ন ক্ষেত্রে পদবিহিন পদোন্নতি কাজের গতিশীলতা বাড়ানোর পরিবর্তে বরং কমিয়ে দেবে।

আপনি বলেছেন, বিভিন্ন ক্যাডারের অফিসারদের বিভিন্ন কাজের জন্য সচিবালয়ে যেতে হয়। নানা বিভাগের মহাপরিচালক/পরিচালকদের সচিবালয়ে বিভিন্ন ডেস্কে কর্মরত জুনিয়র অফিসারদের কাছেও যেতে হয়। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন। আসলে সারা পৃথিবীতেই বিভিন্ন বিভাগ/অনুবিভাগ/দপ্তর/পরিদপ্ত কেন্দ্রীয় কোন মন্ত্রনালয় বা সচিবালয়ের অধীনে থেকে তার নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমে কাজ করে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রন ও শৃঙ্খলার জন্য সারা পৃথিবীতে এই নিয়ম স্বীকৃত। আপনার অভিযোগ অন্য ক্যাডারের অফিসাররা সচিবালয়ের একজন জুনিয়র কর্মকর্তার কাছে কাজের জন্য যাবে কেন? আসলে সচিবালয়ের ঐ জুনিয়র কর্মকর্তার কাছে দাপ্তরিক কাজের জন্য বিভিন্ন বিভাগের প্রধান/মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গিয়ে থাকেন। এটাই সিস্টেম। বিনয়ের সাথে বলতে হচ্ছে, আপনার লেখা পড়ে মনে হয়েছে আপনি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রশাসন সার্ভিসের বিরুদ্ধে লেগেছেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি তথা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এটা আপনার কাছ থেকে আমাদের কাম্য নয়। যে কোন গঠনমূলক সমালোচনাই সবার কাছে সাধুবাদ পেয়ে থাকে আমরাও মনে প্রাণে তা সমর্থন করি, তবে কোন বিশেষ মহলের স্বার্থ রক্ষা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সমালোচনা কোন দেশ প্রেমিক মানুষেরই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে আমরা আরো দায়িত্বশীল লেখা কামনা করি। পরিশেষে আপনার দেশ প্রেম ও শুভ বুদ্ধির উদয় কামনা করছি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৭

শিবল৩৭ বলেছেন: বুঝতে পারছি আপনি ২০০ বছরের পুরানো সিস্টেমের হীন সুবিধাভোগী ।

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৪২

সাখাওয়াত০২ বলেছেন: bcs exam a ki sottie medar porichoi bohon kore? actually bd ta medar mullo nai . ai kane sobia sob bisoy expert!!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.