নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"সুরঞ্জনা\"সোনার খাঁচায় বন্দী যে জন -প্রেমিক মাতাল [email protected]

নুর ইসলাম রফিক

প্রেমিক মাতাল

নুর ইসলাম রফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সপ্নের মৃত্যু

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:২৫

এন আই রফিক



শাওন তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।

তারা গ্রামে বসবাস করে। শাওনের বাবার গ্রামের বাজারে ছোট একটি মুদির দোকান আছে।

সেখান থেকেই চলে তাদের ছোট্ট সংসার। মা গৃহীনি। মায়ের সপ্ন ছেলে ডাক্তার হবে। মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে শাওনের বাবার সপ্নও শাওন ডাক্তার হবে।



শাওন সবে মাত্র এইচ.এস.সি পরীক্ষায় পাশ করেছে জি.পি.এ. 5.00 পেয়ে। এস.এস.সিতে ও জি.পি.এ 5.00 পেয়েছিল।



শাওনের বাবা মা আনন্দে আত্মহারা। পৃথিবীর সব সুখ যেন তাদের ঘরে এসে ভীর করেছে।

সপ্ন তাদের সত্যি হতে চলছে। শাওন ও খুশীতে আত্মহারা। সে তার মা বাবার সপ্ন সত্যি করতে চলছে।



আগামী শুক্রবার শাওনের মেডিক্যাল ভর্তি পরিক্ষা। শাওন তাই পরীক্ষার পস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত।

রাত দিন শুধু পড়া আর পড়া। মেডিকেলে তাকে চান্স পেতেই হবে।



শাওনের মা ও খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভাল ভাল রান্না করছের ছেলের জন্য।

ছেলে কি খাবে কি খাবেনা সব সময় খোজ নিচ্ছেন।

ছেলেকে নিজ হাতে গোসল করান। মুখে তুলে খাবার খাওয়ান। আর একটু পর পর নিজের শাড়ির আচল দিয়ে মুখ মুচিয়ে দিয়ে বলেন, বাবা তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে।

শাওন মাকে বলে, মা তুমি যে কি বলো ?

আমার আবার কষ্ট কিসের। তোমার মতো মা যাদের আছে তাদের কি কষ্ট বোদ থাকে।

মা আমি তো কষ্ট কাকে বলে তাও আজো জানতে পারলাম না।



রাত ১২টা বেজে গেছে শাওনের বাবা এখনো বাড়ী ফিরেননি।

শাওনের মা শাওনকে বললেন, বাবা শাওন তুমি ঘুমিয়ে পর রাত অনেক হয়েছে । তোমার বাবা তো এখনি আসেননি উনি আসলে আমিও শুয়ে পরবো।

শাওন বললো, বাবাতো এখনো আসেননি তো আমি বাবা আসার আগপযর্ন্ত আরো কিছু সময় পরে নেই।



বাহির থেকে দরজায় টুক টুক শব্দ শুনা গেলো।

শাওনের মা দৌড়ে গিয়ে গিজ্ঞেস করলেন, কে?

আমি দরজা খোল।

শাওনের মা বললেন, ও আচ্ছা তুমি এসেছো। তা এতো দেরী কেনো?

শাওনের বাবা বললেন, ভিতরে আসো বলছি।



তারা দু-জন শাওনের রুমে গেলেন।

শাওন পড়ছে।

শাওনের বাবা শাওনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, বাবা শাওন এখন ঘুমিয়ে পরো।

কালতো তোমার মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা। ঘুমের সমস্যা হলে পরীক্ষায় সমস্যা হবে বাবা।



শাওন বই ভাজ করতে করতে বললো, বাবা এতো দেরি করলে কেনো?

শাওনের বাবা বললেন, ও আচ্ছা তোমাদেরকে না বলে একটি কাজ করে ফেলেছি।

শাওনের মা ও শাওন এক সাথে বললো, কি কাজ?

শাওনের বাবা বললেন, আমাদের কৃষি জমিটা বিক্রি করে দিয়েছি।

শাওনের মা ও শাওন আবার এক সাথে বললো, কেনো?

শাওনের বাবা বললেন, আমার তো আর নগদ টাকা পয়সা নাই, তাই জমিটা বিক্রি করে দিলাম।

কথাটা শুনে শাওনের মুখটা শুখিয়ে গেল।

শাওনের মা শাওনকে বুকে জরিয়ে ধরে বললেন, বাবা মন খারাপ করোনা। তুমি যখন ডাক্তার হবে তখন তো তুমি কতো জমি কিনে দিতে পারবে।

শাওনের বাবা শাওনকে বললেন, শাওন ঘুমিয়ে পরো।

শাওন ঘুমিয়ে পরলো।

শাওনের বাবা মা শাওনের কপালে চুমু দিয়ে বললেন, বাবা ঘুমিয়ে পরো। শুভরাত্রি।



শাওনের বাবা মাও তাদের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলেন।



আজ শুক্রবার



সকাল ৭টা বাজে। শাওনের মা শাওনের জন্য নাস্তা এনে টেবিলে দিয়ে বললেন, বাবা শাওন নাস্তা করে নাও।

শাওন বললো, মা বাবা কোথায়?

শাওনের মা বললেন, তোমার বাবা নাস্তার টেবিলে আছেন।

শাওন বললো, মা বাবাকে নাস্তা দিয়েছো?

শাওনের মা বললেন, না, তোমাকেই প্রথম দিতে আসলাম।এইতো এখন আমরাও নাস্তা করবো।

শাওন বললো, মা আজ আমিও তোমাদের সাথে বসে নাস্তা করবো পড়ার তেমন ক্ষতি হবেনা।

শাওনের মা বললেন, আচ্ছা আসো।



শাওনের মা নাস্তা গুলি হাতে নিয়ে শাওনকে বললেন আসো।



শাওন ও তার মা চলে এলেন নাস্তার টেবিলে।

শাওনের বাবা শাওনকে দেখে বললেন, আয় বাবা কতো দিন একসাথে নাস্তা করা হয়না। আজ আমরা একসাথে নাস্তা করি।

শাওনের মা বললেন, তোমার ছেলেও এমনটা বলছে, তাই নিয়ে আসলাম।

শাওনের বাবা বললেন, বুঝতে হবেনা কার ছেলে।

শাওনের মা বললেন, ছেলে বুঝি শুধু একাই তোমার আমার না।

শাওন বললো মা আমি দুজনেরই ছেলে।

শাওনের বাবা বললেন, ও আচ্ছা শাওনের মা তুমিও চলো আমাদের সাথে।

শাওনও বললো, হে মা তুমিও চলো আমাদের সাথে। তোমরা দু-জন আমার যতো কাছে থাকবে, আমার পরীক্ষা ততো ভাল হবে

মা ছেলের অযুহাতে না করতে পারলেন না। বললেন, ঠিক আছে বাবা আমিও যাবো। এবার নাস্তা সেরে নাও তোমরা।



তারা তিন জন বেরিয়ে পরলো শহরের উদ্যেশে। পরীক্ষা কেন্দ্র তাদের এখান থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। তাই একটু তারাতারী বেরিয়ে পরলেন তারা তিন জন।



বাসষ্ট্যানে থামলো গাড়ী। গাড়ী থেকে নামলো তারা। ৫ মিনিট পায়ে হেটে চলে এলো শহরের প্রাণ কেন্দ্রে।

শাওনের বাবা রিক্সা খুঁজছেন পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবার জন্য। কিন্তু একটিও রিক্সা, গাড়ী নেই আশে পাশে।

শহরটা থম থমে নিরব। শুক্রবার হওয়ায় দোকান সব দোকান পাট, মার্কেট বন্দ।

ফুটপাত দখল মুক্ত করা হয়েছে কিছু দিন আগে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যেগে। তাই নেই ফুটপাতেও জিনিসের পসরা সাজানো। খন্ড খন্ড পুলিশের দল দাড়িয়ে আছে চার পাশে। তাই শাওন ও তার মা খুব ভয় পাচ্ছিল। আগে কখনো শহরে আসেননিতো তাই।



একটু দূর থেকে বাতাসে ভেসে আসছে রাজনৈতিক শ্লগানের মিছিলের আওয়াজ। শাওন ও তার মা আরো ভিতু হয়ে গেলেন। শাওনকে শাওনের মা জোরে ধরে রাখলেন শক্ত হাতে। শাওনের বাবা বললেন চলো আমরা পিচন দিকে যাই, মিছিল সামন দিকে আসছে।



তারা তিন জন পিচন দিকে একটু হাটতেই আবার শুনল রাজনৈতিক শ্লগানের মিছিলের আওয়াজ। আটকে গেল তারা দুটি মিছিলের মাঝে।শাওনের মার চোখে অশ্রু ঝরতে লাগলো। ভয়ে শাওনকে আরো শক্ত হাতে ধরে রাখলেন।

শাওনের বাবা বললেন, ভয় পেয়না, আমরা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকি মিছিল শেষ হলে এখান থেকে চলে যাবো।



দুটি মিছিল দুদিক থেকে কাছাকাছি চলে আসলো। মাঝখানে দারিয়ে আছে পুলিশ বাহিনী, শাওন, শাওনের মা, শাওনের বাবা, আরো অল্প কিছু মানুষ।

শাওন তার মাকে বললো, মা আমি বুঝি আজ আর পরীক্ষা দিতে পারবনা।

শাওনের মা বললেন, পারবে বাবা পারবে। তোমাকে যে পারতেই হবে। তুমি যে ডাক্তার হবে । আমাদের সপ্ন পুরণ করবে।

শাওনের বাবা বললেন, শাওন ভয় পেওনা বাবা। এইতো একটু পরেই আমরা চলে যাবো এখান থেকে। মিছিল গুলো একটু শান্ত হোক।



পুলিশ মিছিল দুটিকে দুদিক দিয়ে বাধা দিচ্ছে। মিছিলকারিরা মারমুখি অবস্থানে।

পুলিশকে অতিক্রম করে লেগে গেলো মারামারি। শুরু হলো গুলি আর ককটের আওয়াজ। লুঠিয়ে পরলো রাস্তায় কয়েক জন পুলিশ আর মিছিলকারি। গুলি খেয়ে রাস্তায় পরে কাতরাচ্ছে তারা।

এই দৃশ্য দেখে শাওন ও তার মা ভয়ে কাদতে শুরু করলেন। শাওনের বাবাও দারিয়ে কাপচ্ছেন ভয়ে।

হটাৎ একটি গুলি এসে লাগলো শাওনের বুকে। নিমিষেই লুঠিয়ে পরলো শাওন মাঠিতে। লুঠিয়ে পরলো হাজার বছর পুষে রাখা বাবা মা সপ্ন। নুংরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কেরে নিলো একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কেরে নিলো বাবা মার কাছ থেকে একমাত্র সন্তান। কেরে নিল আমাদের কাছ থেকে একজন ভবিষ্যৎ ডাক্তার। মৃত্যু ঘটলো একটি সপ্নের।

শাওন শুধু একটি কথাই বলে গেলো, আমি পারলামনা তোমাদের সপ্ন সত্যি করতে। তোমরা আমায় ক্ষমা করে দিও।



>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>সমাপ্ত<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: গল্পটি পড়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ......

২| ১০ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৮

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: gdfgdfgdfgdfgdfg

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.