নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যে ও সুন্দরের পক্ষে সব সময়

রাসেল উদ্দীন

জীবনের সবকিছু মহান স্রষ্টার জন্য নিবেদিত

রাসেল উদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত" গ্রন্থ পর্যালোচনাঃ পর্ব-২

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:১৩

গ্রীক জাহিলিয়াতের নিদর্শনসমূহঃ
(ক) ‘বহু খোদা’ সংক্রান্ত বিশ্বাসই হচ্ছে গ্রীক জাহিলিলিয়াতের মৌলিক নিদর্শন। প্রচীন, নব্য ও আধুনিক জাহিলিয়াতেরও সর্বাত্মক নিদর্শন হচ্ছে বহু খোদায় বিশ্বাস। গ্রীক জাহিলিয়াত মানুষ ও সেসব কল্পিত খোদাগণের মধ্যে অত্যান্ত মারাত্মক ও ক্ষতিকর শত্রুতার চিন্তাকে শক্ত করে বসিয়ে দিয়েছে। তারা কতক খোদাকে দুষ্ট প্রকৃতির বলে কল্পনা করেছে। মানুষের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ এবং নিরর্থক ধংস ও বিপর্যয় সৃষ্টি করাই সেসব খোদাগণের উদ্দেশ্য। বস্তুত এসব কারণেই আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হচ্ছেনা। ঈমান আনার প্রতি স্বভাবগত প্রবণতা ও তাগিদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

(খ) গ্রীক জাহিলিয়াতের আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে, রুহের পরিবর্তে বিবেক-বুদ্ধিকে অত্যন্ত মহান ও পবিত্র বলে বিশ্বাস করা। আর এমন বিশ্বাস থেকেই গ্রীক জাহিলিয়াতে সকল প্রকার বিপথগামীতার উদ্ভব ঘটেছে। ফলে বিবেক যেটাকে সত্য ও পবিত্র মনে করেছে সেটাই সত্য বলে বিবেচিত হয়েছে। আর বিবেক যেটাকে সমর্থন করেনি তা তারা ভাবতেও কখনো প্রস্তুত নয়। অথচ মানবীয় আত্মা মহান আল্লাহকে স্বীকার করে, কিন্তু গ্রীক চিন্তার ফলে তা গুরুত্ব পায়নি। এমন চিন্তা এতটাই নিকৃষ্ট যে, মানুষের মূল্য ও মর্যাদাকে নগণ্য ও হীন বানিয়ে দেয়।

রোমান জাহিলিয়াতঃ
(ক) রোমান জাহিলিয়াতের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হচ্ছে, ‘বস্তুনিষ্ঠতা’। বস্তুর উপর প্রচন্ড বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা। রুহ বা আত্মা সেখানে উপেক্ষিত। বস্তুই সব, বস্তুর বাইরে কোন কিছুই স্বীকৃত নয়। সামান্য থাকলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়।
(খ) রোমান জাহিলিয়াতের আরেকটি বড় বিপর্যয়কারী নিদর্শন হচ্ছে- ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার প্রতি গুরুত্বারোপ। ইন্দ্রিয় চাহিদার উপর সর্বাধিক স্বাধীনতা প্রদান করা তাদের বৈশিষ্ট্য। এ কারণেই রোমানরা লাম্পট্য ও অনৈতিকতায় নিমজ্জিত ছিল। ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি পূরণের জন্য তারা মানুষ হত্যা করেছে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে বিকৃত করে উল্লাস করেছে।
(গ) তৃতীয়ত, রোমান জাহিলিয়াতের একটি বড় বিপথগামীতা হচ্ছে, রোমান ‘সুবিচার’। ন্যায়বিচার পাওয়ার একমাত্র অধিকার ছিল রোমানদের। আর বাকীরা ছিল রোমানদের ক্রীতদাস, ন্যায়বিচার পাওয়ার কোন অধিকার তাদের ছিল না।

মধ্যযুগীয় জাহিলিয়াতঃ
মধ্যযুগীয় জাহিলিয়াত হচ্ছে ভিত্তিহীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন আকিদা ও বিশ্বাসের জাহিলিয়াত। পৌত্তলিকতা সংমিশ্রিত খ্রিস্টান ধর্মীয় আকিদা এ জাহিলিয়াতের মূল ভিত্তি। তাওরাত অনুযায়ী জীবন পরিচালনার কথা বললেও বাস্তবে তা ছিল অন্তঃসারশূন্য। খোদায়ী শরিয়তের পরিবর্তে তারা রোমান সভ্যতা অনুযায়ী জীবন-যাপন করত। অথচ আকিদা-বিশ্বাস, আচার-আচারণের উপর গীর্জার একক আধিপত্য ছিল। গীর্জার পাদ্রী-পুরোহিতরা জনগণের উপর নানাবিধ কর ধার্য করে যাচ্ছিল। বিনা পয়সায় পরিশ্রম, নিজেদের পায়ে সেজদা করতে বাধ্য করাসহ নির্যাতনের চরম পরাকাষ্ঠা দেখাতে লাগল। এমনকি তারা বৈরাগ্যবাদের দিকে ধাবিত হয়ে নৈতিক অপরাধ ও অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হল। ফলে ধর্ম সম্পুর্ণ হাসি তামাশা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্রে পরিণত হল। খেল-তামাশা ভোগবাদী, প্রতারণা ও বাটপারিই মুখ্য হয়ে দাড়াল। আকিদার সাথে বাস্তব জীবনের কোন মিল না থাকায় মানব জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল।

ডরউইনের বিবর্তনবাদ ও শিল্প বিপ্লবঃ
১৮৫৯ সালে ‘প্রজাতিসমূহের মূল’ এবং ১৮৭১ ‘সালে মানুষের মূল্য’ নামে ডরউইনের দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। অতঃপর মানুষের চিন্তা ও মতবাদে ভয়াবহ তোলপাড় ও প্রলয়ংকারী আঘাত হানে গ্রন্থ দু’টি। ডরউইন মানুষকে পশু হিসাবে ঘোষনা দিল। তার এই তত্ত্বের নাম হল ‘বিবর্তনবাদ’। ফলে ডরউইন ও গীর্জার মধ্যে প্রচন্ড সংঘর্ষের সৃষ্টি হল। গীর্জা ডরউইনকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিল এবং ডরউইন গীর্জাকে মূর্খতা ও কুসংস্কারের কেন্দ্র বলে অভিযুক্ত করল। গীর্জার অত্যাচার ও বিবর্তনবাদের যুক্তিতে পরাজিত হয়ে জনগণ ডরউইনের পক্ষাবলম্বন করল। অতঃপর সমাজব্যবস্থার রুপ পাল্টে গেল। মানুষ একে অপরকে পশুর সাথে তুলনা করে সম্মানবোধ হারিয়ে ফেলল। ফলে মানুষ হত্যা, চুরি, লুটপাট ও অবাধ যৌনাচারিতায় লিপ্ত হল। ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে মানুষ ভোগবাদী ও বিলাসপ্রিয় হয়ে গেল। কালমার্কসের নিষ্ঠুর পুজিঁবাদ সামান্য মজুরীর আশায় নারীদের সুখের সংসার ছেড়ে শিল্প কারখানায় উপস্থিত করে দিল। বিশ্ব ইহুদিবাদ এ সুযোগটিরই অপেক্ষা করছিল। তারা ডরউইনের বিবর্তনবাদকে বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করতে লাগল। শিল্প বিপ্লবকে তারা বিপর্যয় সৃষ্টির হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করল। নারীদের ঘর থেকে বের করার মহাসুযোগে অশ্লীল সিনেমা, রুপচর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে পুরুষের নৈতিকতায় প্রচন্ড আঘাত হানল। গোটা বিশ্ব যেনা-ব্যভিচারের আড্ডাখানায় পরিণত হল।

চলবে...

গ্রন্থের নাম- "বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত"। মূল লেখকঃ সাইয়েদ মুহাম্মাদ কুতুব, অনুবাদঃ মাওলানা আব্দুর রহীম (রহঃ)
প্রথম পর্বের লিংক- Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.