নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যে ও সুন্দরের পক্ষে সব সময়

রাসেল উদ্দীন

জীবনের সবকিছু মহান স্রষ্টার জন্য নিবেদিত

রাসেল উদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত" গ্রন্থ পর্যালোচনাঃ পর্ব-৩

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৬

আধুনিক জাহিলিয়াতের নিদর্শন
মূলত ইতিহাসের সবক’টি জাহিলিয়াতের মৌলিক বিশেষত্ব হল আল্লাহর প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস না থাকা। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসই ব্যক্তিকে তার যথার্থ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে এবং মানুষের যাবতীয় ভুল-ভ্রান্তি ও বিপথগামীতা থেকে দুরে রাখে। কিন্তু যখনই এ আকিদার বিকৃতি ঘটে, তখনই মানুষের গোটা সত্তায় বিপর্যয় দেখা দেয়। অতএব, আকিদা হতে হবে নির্ভুল সত্য, সক্রিয় ও সর্বব্যাপক। যা ব্যক্তির ভাবনা, মূল্যবোধ ও আচার-আচরণ পরস্পর সমঞ্জস্যপুর্ণ হবে। এ দিক বিবেচনা করে আধুনিক জাহিলিয়াতের নিদর্শনসমূহ নি¤œরুপ-

আকিদা ও বাস্তবতার বৈপরিত্বঃ
আধুনিক জাহিলিয়াতের প্রথম নিদর্শন হচ্ছে আকিদা ও বাস্তবতার মধ্যে বৈপরিত্য। যেমন- আরবের কাফেররা আল্লাহকে বিশ্বাস করত এবং সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মানত। কিন্তু আল্লাহর প্রতি কার্যকর ঈমান রাখত না। আল্লাহর দেয়া বিধানকে নিজেদের জীবনে কার্যকর করত না। অথচ মানুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট হল, যা তার বিশ্বাস, তাই তার কাজ। বিশ্বাস করবে একরকম বাস্তবে আমল করবে অন্যরকম- এটা কখনো হতে পারে না। অতএব আল্লাহকে বিশ্বাস করলে আল্লাহর দেয়া শরিয়ত মেনে চলতে হবে। ইসলামী আকিদা এবং শরিয়ত এক, অভিন্ন ও অবিচ্ছিন্ন ব্যাপার।

কামনা-বাসনার অনুসরণঃ
মানুষ যখন আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে না, তখনই তা অনিবার্যভাবে লোকদের কামনা-বাসনার অনুসরণ করতে বাধ্য হয়। শাসকশ্রেণী যখন তাদের কামনা-বাসনা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করে, তখন সমগ্র জনগোষ্ঠী তা মানতে বাধ্য হয়। আতএব হয়তো আল্লাহর বিধানানুযায়ী বিচার ফায়সালা করতে হবে- আর তা হবে ইসলাম। অথবা লোকদের কামনা-বাসনার অনুসরণ করতে হবে- আর তা হবে জাহিলিয়াত। আর এ দ্বিতীয় অবস্থা-ই হল আধুনিক জাহিলিয়াতের অন্যতম নিদর্শন।

তাগুতের গোলামীঃ
আল্লাহদ্রোহী তাগুতি শক্তি সবসময় সচেষ্ট থাকে আল্লাহর ইবাদত থেকে মানুষকে দূরে রাখতে। ফলে অনিবার্যভাবে মানুষ অন্য সত্তার ইবাদত করবে- এটাই স্বাভাবিক। সে তাগুত হতে পারে কোন ব্যক্তি, জনগোষ্ঠী, সংগঠন অথবা কোন মতবাদ। তাগুত কখনো আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করতে পারে না। বাধ্য হয়ে মানুষ মানুষের গোলামে পরিণত হয়। অথচ আল্লাহর ঘোষনা অনুযায়ী সকল মানুষই সমান, কারোর উপর কারো কর্তৃত্ব নেই।

ভোগবাদীতাঃ
মানুষের সত্তায় কতক মৌলিক দাবী রয়েছে। তা হচ্ছে- খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান, যৌন প্রবৃত্তি ও মালিকানা দখল। বেচেঁ থাকার জন্য এগুলো অপরিহার্য। কিন্তু যখন তা প্রয়োজন সীমার বাইরে চলে যায়, তখন তা লালসা-কামনা বা ভোগবাদীতায় রুপ নিয়ে থাকে। প্রচলিত আইন যে কাজকে অপরাধ গণ্য করে, অপরাধীরা সেসব কাজ গোপনেই করে। কিন্তু নিজেকে অপরাধ থেকে দুরে রাখতে পারে না। শুধুমাত্র আল্লাহর ভয়ই অপরাধ থেকে মানুষকে দুরে রাখে।

বিজ্ঞানের প্রতি নির্ভরতাঃ
আধুনিক বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক আবিস্কার, উদ্ভাবন ও অগ্রগতির প্রতি তীব্র আকর্ষণবোধ করায় মানুষ বিজ্ঞান নির্ভর হয়ে পড়েছে। এমনকি আল্লাহর সাথে মোকাবেলায় লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। মানুষের ধারণা জন্মেছে যে, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। এ কারণে আধুনিক জাহিলিয়াত অত্যাধিক নিকৃষ্ট, জঘন্য ও নির্মম। প্রাচীন জাহিলিয়াতে সত্য মিথ্যার পার্থক্য স্পষ্ট ছিল। কিন্তু আধুনিক জাহিলিয়াত বিজ্ঞানের প্রভাবে সত্য মিথ্যার পার্থক্য অস্পষ্ট করে দিয়েছে। আর তা প্রচারের জন্য রয়েছে- পত্রিকা, ইন্টারনেট, রেডিও, টেলিভিশন ও সিনেমা। এগুলোর মাধ্যমে মানুষের মন-মগজকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। ফলে মানুষ সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য মনে করছে। বস্তুত তাগুতী শক্তি মানুষের রোষানল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বৈজ্ঞানিক সুবিধার নামে চাক্ষুস চাকচিক্যতা তৈরী করেছে।

চিন্তার ক্ষেত্রে সৃষ্ট বিপর্যয়
ধর্ম সম্পর্কে চিন্তাঃ
আধুনিক জাহিলিয়াতের ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারণা হচ্ছে, ধর্ম হল ¯্রষ্টা ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক মাত্র। বাস্তব জীবনের সঙ্গে তার কোন সম্পার্ক নেই। আকীদা যাই হোক না কেন, তার স্থান কেবল মনের অনুভুতি ও স্বজ্ঞায়। অথচ এটা কখনো যৌক্তিক ধারণা হতে পারে না। কারণ, মানুষের আকিদা যা, তার বাস্তব কর্মকান্ড ঠিক তাই হবে। জীবন কখনোই আকিদা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না।

বহুত্ববাদ বা বহু খোদাঃ
বহু খোদার চিন্তা থেকেই আকিদা ও বাস্তব জীবনের বৈপরিত্বের উদ্ভব। একদিকে ধর্ম বিবর্জিত বিজ্ঞানের অগ্রগতি, অপরদিকে গীর্জার আকিদা সর্বস্ব চিন্তা- একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক। ফলে আল্লাহর পরিবর্তে নবতর বহু খোদা মাথাচড়া দিয়ে উঠে। একদিকে গীর্জায় গিয়ে আল্লাহর ইবাদত, অপরদিকে শিল্পগত দিক থেকে প্রকৃতিই খোদা বলে মনে করা হচ্ছিল। বিশ্বলোক নিয়ে চিন্তা করলে বিজ্ঞানকে খোদা সাব্যস্ত করা হয়। আবার রাষ্ট্র চিন্তা করলে সরকার ও আইন-কানুন হচ্ছে আরেক খোদা। এভাবে একই ধর্মে তিন খোদার বিভক্তি হয়ে পড়ে। অথচ মধ্য যুগে ছিল দুই খোদা। একজন আকিদাগত, অপরজন বিধানগত খোদা। অতঃপর শিল্প বিপ্লব ঘটল। তখন শুরু হল আল্লাহর ইবাদত নিতান্তই বাহ্যিকভাবে। গ্রাম্য জনতা আল্লাহর ইবাদত করলেও অন্যান্য খোদাগণের সাথে শিরক করে যাচ্ছিল। আর শহরের জনগণ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে উৎপাদনের মালিক আল্লাহর পরিবর্তে বিজ্ঞানকে সাব্যস্ত করল।

চিন্তার বিপর্যয়
মানব জীবন দেহ কেন্দ্রীকঃ
আধুনিক জাহিলিয়াতের নিকৃষ্ট চিন্তা হচ্ছে, দেহ থেকেই মনের উৎপত্তি। মানুষের জীবনে সম্পুর্ণ দেহ কেন্দ্রীক। দেহের চাহিদা-ইচ্ছা পূরণের লক্ষেই মনের উৎপত্তি। এদিক থেকে মানুষ ও জানোয়ারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

রুহকে উপেক্ষাঃ
আধুনিক জাহিলিয়াতের ধারণা অনুযায়ী, মানব জীবন যেহেতু দেহকেন্দ্রীক, তাই রুহকে কোণঠাসা করে দেহকেই বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা রুহ তো সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। আর জাহিলিয়াত কখনোই চাইবে না আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে। তার কাছে মানুষের দৈহিক কামনা-বাসনা, লালসার গুরুত্বই সর্বাধিক।

ব্যক্তি ও সমাজের দ্বন্দ্বঃ
ব্যক্তি ও সমাজকে পরস্পর সাংঘর্ষিক হিসাবে দাঁড় করিয়েছে আধুনিক জাহিলিয়াত। একদিকে মানুষের সামষ্টিকে অস্বীকার করা হচ্ছে, অপরদিকে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রকে সম্পুর্ণ উপেক্ষা করা হচ্ছে। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র সত্যপন্থি হলে জালিম সমাজে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। আবার সামাজিক সামষ্টিকতা সত্যপন্থি হলে জালিম ব্যক্তি শোষণ নির্যাতনে সমাজকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। অথচ আধুনিক জাহিলিয়াত উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা স্থাপনে সম্পুর্ণ ব্যার্থ হচ্ছে। ফলে বিপথগামীতা, বিপর্যয় ও বিকৃতি সর্বত্র অনিবার্য হয়ে পড়ছে।

হক বাতিলের পরিচয়হীনতাঃ
আধুনিক জাহিলিয়াত হক ও বাতিল চিনে না। সত্য ও ন্যায়পরায়নতাকে উপহাস করে। বরং স্বাথের্র জন্য একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ-ই তার কাছে কাম্য। তাতে কাউকে হক, কাউকে বাতিল বলে সাব্যস্ত করা যায় না। বরং উভয়ই স্বার্থের তারতম্যে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে সাব্যস্ত করা হয়।

যৌন বিপর্যয়ঃ
বর্তমান জাহিলিয়াতে যৌন সম্পর্কে যে বিপর্যয় ঘটেছে তা অতি নিকৃষ্ট ও বিভৎস। যৌন সম্পর্ক স্থাপন নিছক একটি জৈবিক ও দৈহিক কার্যক্রম মাত্র। নীতি নৈতিকতার সাথে আদৌ এর কোন সম্পর্ক নেই। এবং তা নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোন বিধি-নিষেধ থাকতে পারে না।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৫

নতুন বলেছেন: বিজ্ঞানের প্রতি নির্ভরতাঃ

মানুষ বিজ্ঞানের উপকারিতা পাচ্ছে.... ধমে`র কাহিনি থেকে শুনে আসছে যে এটা হয় সেটা হয়...

কিন্তু সেই কাহিনির প্রমান মানুষ পায় না তাই বিশ্বাস কমে যাচ্ছে।

আপনিও কিন্তু আজ বিজ্ঞানের ব্যবহার করেই এই ব্লগ লিখেছেন।

আগে চোখ বন্ধ করে মোরাকাবায় গিয়ে আরেক জনের সাথে দেখা করার কাহিনি শুনতেন... এখন মানুষ ফোনে ভিডিও কল করেই সরাসরি কথা বলে..

আগে জায়নামাজে করে উড়ে বেড়ানোর কেরামতির কাহিনি শুনতেন...... এখন মানুষ নিয়ে উড়তে পারে এমন ড্রোনও আছে।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৩২

রাসেল উদ্দীন বলেছেন: “মানুষ বিজ্ঞান নির্ভর হয়ে পড়েছে। এমনকি আল্লাহর সাথে মোকাবেলায় লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। মানুষের ধারণা জন্মেছে যে, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”।
এটি হচ্ছে মূল কথা। বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের বৈপরিত্ব নেই। তবে বিজ্ঞানের সাথে স্রষ্টার ক্ষমতা একাকার করে দেয়া চলবে না!

কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ!!

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩

মেরিনার বলেছেন: দেখুন: view this link

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২৭

রাসেল উদ্দীন বলেছেন: দেখলাম। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।

ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন!!

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪০

নতুন বলেছেন: লেখক বলেছেন: “মানুষ বিজ্ঞান নির্ভর হয়ে পড়েছে। এমনকি আল্লাহর সাথে মোকাবেলায় লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। মানুষের ধারণা জন্মেছে যে, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”।
এটি হচ্ছে মূল কথা। বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের বৈপরিত্ব নেই। তবে বিজ্ঞানের সাথে স্রষ্টার ক্ষমতা একাকার করে দেয়া চলবে না!

কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ!!


এটার কারন কি? কারন আগে মানুষ অলৌকিক কাহিনি বললে বিশ্বাস করতো... প্রশ্ন করতো না।

কিন্তু এখন করে.... কারন এখন প্রমান করার সুযোগ আছে যে কাহিনি গুলি ঠিক না।

তাই ধমের` উপরে বিশ্বাস কমে যাচ্ছে এবং বিজ্ঞানের উপরে আস্হা বাড়ছে....।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.