নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একশ’টা বই পড়ার চেয়ে একটা বই বুঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।মলাটবদ্ধ অক্ষর-সমষ্টিমাত্রই বই নয়।বই হচ্ছে সেই বৈধ প্রতারক, যামানুষের বর্তমান মুহূর্তকে অস্বীকার করে।

রাশেদ রাহাত

ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন এটা কাহিনী; সত্য হলো, মানুষই ঈশ্বরের স্রষ্টা।

রাশেদ রাহাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষিত দহন ।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২১

চর্মরোগ না থাকলেও কিছু মানুষের চামড়ায় এলার্জি নিয়ে বাস করার স্বভাব। অর্থ, খ্যাতি, জাত ও যৌনতার প্রশ্নে এদের শরীর এতটাই চুলকায়; ঝান্ডু বামেও আরোগ্য লাভ অসম্ভব। ক্ষুধা নিবারণে হিংস্রতায় এরা হায়েনাকেও হার মানায়, সেইটা হোক পেটের কিংবা চ্যাটের। এদের শরীর উত্তেজনা এতটাই প্রবল; পৌষের শীত উপেক্ষা করে চৈত্রের দুপুরের বিবস্ত্র বেশ নেয়াটা তুড়ির ব্যাপার। কোমরের কাপড় হাঁটু পরিমাণ নামালেই হল, আর দরকার একখানা অন্ধকার সুড়ঙ্গ। তাদের জন্য দুনিয়ার তামাম সুখ যেন ঐ সুড়ঙ্গে খোদায়িত। দণ্ড ঢুকানোর যায়গা হলেই হল, সেইটা অবলা জীব, নারী-পুরুষ অথবা দুধেল শিশুরই হোক না কেন?

এই সুড়ঙ্গের সুখ ছিনতাইকারীদের হাতে সোপর্দ করতে গিয়ে কত প্রাণ অকালে শ্মশানে গিয়ে আদমশুমারি থেকে নাম কাটিয়েছে তার হিসাব এখন অব্দি কোন পত্রিকায় ছাপা হয়নি। তাদের দু’একজন সভ্য সমাজের অসভ্যতায় বলিদান হয়েও জীবনকে ধারণ করে আছে ঠিকই, তবে ভারসাম্যহীন সেই বাঁচা মৃত্যুর চেয়ে কম যন্ত্রণাদায়ক নয়।

এই পশু গুলোর শিরায় সুঁই সিধাতে গেলে কুঠার ঢুকানোর হাঁক ডাকে, কিন্তু ভুক্তভোগীদের শরীরে বাঁশ ঢুকানোর চিৎকার শুনে লালসার ঢেঁকুর তোলে। শিকার গুলো যখন কান্নাজড়ানো কণ্ঠে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়, তখন এরা বাংলা ছবির খলনায়কের হাসি উপহার দিয়ে সমবেদনা জানায়। অথচ নিজস্ব নারীদের গায়ে কেউ আঁচড় দিলে আঘাতটা ঠিক হৃদপিণ্ডে গিয়ে লাগে, তখন শত্রু দমনে এক একটা সুপারম্যান হয়ে উঠে।
আমাদের সভ্য সমাজে পতিতালয়ের স্থান আজও বর্তমান তার নেপথ্যে আমরাই। যদি আমি, আমার বাবা কিংবা ভাই পতিতালয়ের চৌকাঠ না মাড়াতাম তবে ঐ নিষিদ্ধ পল্লীর স্থানে মুয়াজ্জিনের আযান কিংবা গির্জার ঘড়ির শব্দ শুনতাম। তেমনি এই সুড়ঙ্গ উপাসক কুকুর গুলো আমাদের স্বজনদেরই কেউ, তাইতো পত্রিকায় রেড হেডলাইনে বলাৎকারের নৃশংসতা দেখে দুই ঠোঁটের ফাঁকে কুকুর ডাকার শব্দ তুলে আফসোস করি, কিন্তু কুকুর গুলোর বিপক্ষে প্রকাশ্যে আপোষহীন হতে পারি না।

পিচ ঢালা কালো রাস্তায় অনাদরে পড়ে থাকা ব্যবহিত চুইংগাম হয়ে স্যান্ডেলের সোলে লেপ্টে যাওয়ার কষ্ট আপনি-আমি বুঝবোনা, কিন্তু প্রতি ধাপ পায়ের তলায় পিষ্ট হওয়ার অসহনীয় তীব্র যন্ত্রণার জ্বালা চুইংগাম আর ধর্ষিতরা ঠিকই বোঝে।

গরুছাগলের মুখ থেকে ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে কৃষক বেড়া ব্যাবহার করে, কিন্তু সেই বেড়াই যদি ফসল সাবাড় করে, তাহলে নির্বাক অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ ছাড়া কৃষকের কিছুই করার থাকে না। তেমনি কিছু গরুছাগল আপনার বাড়ীর চার দেয়ালের ভীতরে আপনারই নাকের ডগায় বসে অবুঝ সন্তানের সতীত্ব শ্রাদ্ধ করে আদর-ভালবাসা শিরোনামে চালিয়ে দেয়, আপনি কৃষকের মতই নির্বাক দৃষ্টি নিয়ে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেন, উচ্ছ্বাসিত হন সন্তানের প্রতি গরুছাগলের ভালবাসা দেখে। কিন্তু সেই ভালবাসার গভীরতা আপনার সন্তানের কোমরের নিচে কি বুকের উপরে উঠেছে তার হিসাব খতিয়ে দেখেন না।

দুপুরবেলায় চিকন চালের বিরিয়ানি খেয়ে দাঁতের দুই ফাঁকে খিলাল ভরে আরামচে ঘুমানোর তোরজোড় করছেন, সাথে সফুরার মাকে ডাকিয়ে পানে চুন মাখিয়ে দাঁতের তলে ডলছেন, কিন্তু খেয়াল রেখেছেন কি, ভর দুপুরে আপনার কিশোর ছেলে খেলার বাহানায় বাড়ীর বাহীরে গিয়ে কোন মাংসাশী কুকুরের কামড় খাচ্ছে?

যদি জানতেন কুড়ি টাকার কিটক্যাট চকলেটই আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ সকাল-বিকাল অবিরত ধর্ষণ করে যাচ্ছে। তবে নিশ্চয় এই জিনিষ প্রতি রাতে বাসায় এনে সন্তানের আবদার রক্ষা করে চকলেট লোভী বানাতেন না। বড়জোর দশ সদস্যর অভিভাবক কমিটি গঠন করে সমস্ত চকলেট ফ্যাক্টরি বন্ধ করার আন্দোলন নিয়ে রাস্তায় নামতেন। দাঁড়ান, আগে নিজের লুঙ্গীর গোছা টাইট মারেন, পরে মাঠে নেমে আন্দোলন চালান। এরচেয়ে ঢের ভালো, পাশের বাড়ীর মাঝবয়সী মোতালেব মিয়ার ঘর তল্লাশি চালান, দেখতেও পারেন প্রতি বিকেলে চুইংগাম, চকলেট অথবা টম এন্ড জেরিতে লোভাতুর হওয়া কেউ একজনের পশ্চাৎদেশের ভার সোফায় সইতে না পেরে এখনো খাদ ধরে রেখেছে। আরেকটু ভাল করে তাকিয়ে দেখুন, কয়েক ফোঁটা রক্ত দানা বেঁধে শুকিয়ে আছে সেখানটায়, আরে ঘেন্না করছেন কেন? স্পর্শ করে দেখতে পারেন, এই রক্তের গ্রুপ আপনার মতই এ “নেগেটিভ”।

মোতালেবের চৌকাঠ ছেড়ে আসতে গিয়ে দেয়ালের কণ্ঠে শুনতে পাচ্ছেন কোন শিশুর বেদম চিৎকারের প্রতিধ্বনি? ছিপছিপে ছোট্ট দেহে ঢেঁড়স ঢুকানোরও অযোগ্য যায়গায় জোরসে সবরি কলা ঢুকানোর অপচেষ্টায় উপচে পড়া প্রাণের চিৎকার আপনার চেনা মনে হচ্ছে না তো? এত চিন্তা করছেন কেন, বাসায় গিয়ে ছেলের হাফ প্যান্টের পিছনটায় দেখলেই উত্তর পেয়ে যেতে পারেন।

দস্যিপনায় আপনার ছেলে, সুনীলের সন্তুর মত শান্ত নয়, রবীন্দ্রনাথের ফটিকের মত চঞ্চল তা আপনি ভাল করেই জানেন। আম গাছ কি কাঁঠাল গাছের কালচে কষের দাগ দিয়ে হাফপ্যান্টের পিছনে ট্র্যাফিকজ্যাম লাগিয়েছে তা আপনার অচেনা নয়, কিন্তু সেই দাগ বুকে নিয়ে রক্তাক্ত এক মানচিত্র ঠাহর করতে পারছেন তো? এই চিত্র কোন স্বাধীন দেশের ভৌগলিক রেখা অনুসরণে নয়, বড়জোর আপনার গাফেলতিতে শিশু নির্যাতনের নৃশংসতার মানচিত্র। আপনার নির্ভীক দুরন্ত ছেলেকে কারো মাথার দিব্যি খাইয়ে মুখবন্ধ করানো অসম্ভব, তাহলে সে ছেলেই প্যান্টের মানচিত্রের ব্যাপারে কোন দেবতার দোহাইতে স্বরনালী থেকে বর্ণমালা খুইয়ে নিশ্চুপ ছিল? তার উত্তর আপনি যেমন রাখেন না তেমনি আপনার সন্তানও জানে না।

রাতের অতিথিকে ভগবানের আসন দিয়ে সন্তানের বিছানায় ঠেলে দিয়েছেন, সেই ভগবান আপনার সন্তানকে যৌনতার শূলে চড়িয়ে পূজার প্রসাদ বানিয়ে ভোগ করছেন না তো? আপনি নাকে তেল দিয়ে ঘুমচ্ছেন, কিন্তু আপনার সন্তানের গাড় ঘুম ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসছে হাতে ধরিয়ে দেয়া মাংশদণ্ডের গরমে। বুকের উপর আসন পেতে বসা জানোয়ার আদর-শিক্ষা নামে কামসূত্র শিখাচ্ছে আর জড়িয়ে ধরার কলা কৌশল আয়ত্তে নিচ্ছে আপনার অবুঝ সন্তান। জানোয়ারের গরম নিশ্বাসে আপনার শিশুর যৌনাঙ্গ শিথিল থাকলেও গায়ের পশম খাঁড়া হয়ে মস্তিষ্কে ভাল লাগার শিহরণ তৈরি করছে না তো? পরবর্তীতে এই ভালো-লাগায় বলিদান হয়ে স্বাভাবিকতার বিপরীত লিঙ্গে আসক্ত না হয়ে আপনার উপহার দেয়া সমলিঙ্গের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে গেলে কি করবেন?

আপনার সন্তান বাড়ীর বাহিরে গেলে চিন্তার বলি রেখায় মুখে কালো মেঘ জমিয়ে তুলে, সেই মেঘের কালো রঙ সন্তানের বস্ত্র-তলে ঢেকে রাখা যৌনাঙ্গের অবস্থান অনুযায়ী গাঁড় কিংবা হালকা হয়। কিন্তু শুনেছেন কি, “পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়” প্রবাদটির মত আজকাল ছেলে-মেয়ে উভয় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়?

মিছিলে বয়ে চলা হাজার মানুষের মাঝে একজন হা করে ম্যানহোলে পড়ে পটল তুললে মিছিলের কিচ্ছু যায় আসবে না, কিন্তু যে মায়ের বুক খালি হয় সে বোঝে সন্তান হারানোর ব্যথা। আপনার অসাবধানতা আর অবহেলায় অকালে আপনার সন্তান যেমন ভারসাম্যহীন হয়ে মৃত্যুর কোলে ঝুলতে পারে, তেমনি একটুখানি সচেতনতায়ই গড়তে পারে সন্তানের নির্ভীক ভবিষ্যৎ। যে সন্তান একবার শারীরিক কিংবা মানসিক ভাবে ধর্ষণের শিকার হয়, তার স্বাভাবিক জীবন প্রত্যাশা করা আর ঘরে বসে কাঞ্চনঝকা দেখা সমান কথা। মনে রাখবেন,

শুধুমাত্র যৌনাঙ্গের উপর যৌনাঙ্গ ঘষলেই মানুষ ধর্ষিত হয় তা নয়, কারো কারো লালসিত দর্শনেও ধর্ষিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বিঃ দ্রঃ পোস্ট-টি সামু ব্লগেই একজন প্রাক্তন ব্লগারের।এক বছর আগে কপি করে রাখা। মাঝে মাঝে লেখাটি পড়তাম। কি অসাধারন লেখা...!
লিঙ্কটাঃ Click This Link (মোবাইল থেকে পোস্ট করছি বলে ডাইরেক্ট লিঙ্ক দিতে পারছি না। উপরের লিঙ্কটা কপি করে হোম থেকে সার্চ করুন।)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩১

অনর্থদর্শী বলেছেন: এ লেখা অসাধারন। কোনো সন্দেহ নেই যে আমরা এখনও যথেষ্ট সচেতন নয়।

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪২

রাশেদ রাহাত বলেছেন: ধন্যবা

৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৭

শামচুল হক বলেছেন: অসাধারণ পোষ্ট।

৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩

রাশেদ রাহাত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.