নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরম সত্য বলে কিছু নেই।

জেন রসি

সময়ের সাথে দাবা খেলি। বোর্ডের একপাশে আমার অস্তিত্ব নিয়ে বসে আছি। প্রতিটা সিদ্ধান্তই এক একটা চাল। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত খেলাটা উপভোগ করতে চাই!

জেন রসি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুভি রিভিউঃ A Clockwork Orange(১৯৭১)

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১০



ওরা চারজন। অ্যালাক্স, জর্জ, ডিম এবং পিট। অ্যালাক্স হচ্ছে আলফা ম্যান। অর্থাৎ লিডার। বাকিরা তার অনুসারি। এক সন্ধ্যায় তারা নেশা করে। রাস্তায় এক মদ্যপ বৃদ্ধলোককে পিটায়। প্রতিপক্ষ গ্যাঙের ছেলেদের সাথে মারামারি করে।তারপর তারা অ্যালেকজান্ডার নামক এক লেখকের বাসায় ঢুকে তাকে পিটিয়ে পঙ্গু বানিয়ে ফেলে। তার বউকে তার সামনেই রেপ করে। এবং তার বাসা লুটপাট করে।

গ্যাঙের অন্য তিনজন আলাক্সের দাদাগিরি মেনে নিতে পারেনা। তারা সমান অধিকার দাবি করে। অ্যালাক্স তাদের উপর বল প্রয়োগ করে। ভয় দেখায়। তারা বশ্যতা মেনে নেয়।

ক্যাট লেডি নামে অভিহিত এক প্রভাবশালী মহিলার বাসায় অভিযান চালায় অ্যালাক্স। অন্য তিনজন বাইরে থাকে। লেডি অ্যালাক্সকে বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে সে ক্যাট লেডিকে আঘাত করে। এবং পুলিশের সাইরেন শুনতে পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ডিম তার চোখে কিছু একটা নিক্ষেপ করে যা তাকে কিছু সময়ের জন্য অন্ধ করে দেয়।বাকি তিনজন তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং পালিয়ে যায়। অ্যালাক্সকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

গল্পের এই পর্যায়ে এসে আমরা চারজন ছেলেকে দেখি যারা তাদের যাপিত জীবন নিয়ে বিরক্ত। একমাত্র নেশা, আলট্রা ভায়লেন্স এবং সেক্স তাদের উদ্দীপ্ত করে। তারা তাদের গাটস ফিলিংসকে সাপ্রেশ করে রাখেনা। যা করতে ইচ্ছা করে কোন রকম সংশয় ছাড়াই তা করে ফেলে। নিজেদের মানসিক যন্ত্রণাকে তারা আরাম দেয় মানুষ পিটিয়ে, রেপ করে এবং লুটপাট করে। তাদের মনোজগতে নীতি নৈতিকতার কোন বাঁধা নিষেধ কাজ করেনা। কেন করেনা এটা দর্শকদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হতে পারে যদি কেউ আগ্রহী হয়। আরো দেখি প্রতিশোধ পরায়নতা এবং ঈর্ষা। অ্যালাক্স যা করতে পারে জর্জ বা ডিম তা থেকে কেন বঞ্চিত হবে? এই বোধ থেকে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা এবং অ্যালাক্সকে পুলিসের হাতে ধরিয়ে দেওয়া।

খুনের অভিযোগে অ্যালাক্সের ১৪ বছর জেল হয়। সেখানে তার এক মিশনারির সাথে দেখা হয় যে বিশ্বাস করে মানুষকে ঠিক মত বুঝাতে পারলে সে ফ্রি উইল থেকেই ভালো কিছু করবে। কিন্তু অ্যালাক্সের উপর তার খুব একটা প্রভাব পরেনা। আমরা দেখতে পাই একটা বইয়ে জেসাসকে অত্যাচার করার দৃশ্য পড়ে অ্যালাক্স নিজেকে অত্যাচারকারীর যায়গায় কল্পনা করে এবং উদ্দীপ্ত হয়। যাইহোক ২ বছর পর অ্যালাক্স আইন মন্ত্রলালয়ের একটা এক্সপেরিমেন্টাল প্রজেক্টে অংশ নেয়। এখানে সাবজেক্টকে মেডিসিন এবং থেরাপি দেওয়া হয়। এবং সাবজেক্ট একসময় যে অপরাধ গুলো করে উদ্দীপ্ত হত তার প্রতি বিরাগ অনুভব করতে থকে। বরং সে সেসবের মুখোমুখি হলে ভয় পায়। পালিয়ে যেতে চায়। অ্যালাক্সের থেরাপি শুরু হয়। তাকে ভায়োলেন্স এবং সেক্সের ভিডিও দেখানো হয়। সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে থাকে তার প্রিয় বিটোভেন্স নাইনথ সিম্ফোনি। অ্যালাক্স ভায়োলেন্স, সেক্স এবং বিটোভেন সহ্য করতে পারেনা আর। এসব তার কাছে অসহ্য লাগতে থাকে। এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়। অ্যালাক্সকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারন তার ক্রাইম করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

গল্পের এই পর্যায়ে আমরা অ্যালাক্সকে দেখি একটা এক্সপেরিমেন্টের সাবজেক্ট হিসাবে। এক্সপেরিমেন্টটা করছে আইন মন্ত্রনালয়। তার বিহেভকে নিয়ন্ত্রন করে তাকে অনেকটাই রোবট বানিয়ে ফেলা হয়েছে। তার আবেগ এবং উইল পাওয়ার এক্সপ্রেশ করার জায়গায় কন্ডিশন আপ্লাই করে তাকে অনেকটাই মানসিকভাবে জম্বি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ অ্যালাক্সের ফ্রি উইল বলতে কিছু নেই এখন। সে আর ক্রাইম করতে পারবে না কারন সে অক্ষম। কন্ডিশনড। সে করতে চাচ্ছে কি চাচ্ছেনা এতে কিছু এসে যায়না।

অথরিটিত এমনটাই চায় সমসময়। মানুষকে নিজেদের ইচ্ছামত সুবিধামত নিয়ন্ত্রন করা। মানুষের মনোজগতের ভানরাবিলিটিকে কাজ লাগিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করা। যাইহোক এবার গল্পের পরের অংশে ঢুকা যাক।

অ্যালাক্স বাসায় ফিরে আসে। সেখানে তাকে তার বাবা মা মেনে নিতে পারেনা। সে বাসা থেকে চলে যায়। রাস্তায় তার সাথে এক মদ্যপ বৃদ্ধের দেখা হয়। এই বৃদ্ধকে একদিন সে পিটিয়েছিল। বৃদ্ধ তাকে চিনতে পারে। এবং দলবল নিয়ে পিটানো শুরু করে। দুই পুলিশ অফিসার তাকে উদ্ধার করতে আসে। তাদের দেখে অ্যালাক্স চমকে উঠে। জর্জ এবং ডিম। আইন তাদের ক্রিমিনাল হিসাবে সনাক্ত করতে পারেনি। বরং তারা আইনের ফাঁক ফোকর গলে নিজেরাই আজ পুলিস! ওরা অ্যালাক্সকে ধরে নিয়ে যায়। নির্জন এক স্থানে নিয়ে গিয়ে তাকে অত্যাচার করে। অ্যালাক্স আশ্রয় খুঁজতে থাকে। একসময় সে এক বাসায় যায়। লেখক আলেক্সজান্ডারের বাসা। যাকে সে একদিন মেরে পঙ্গু করেছিল। এবং যার বউকে তার সামনেই রেপ করেছিল। সে ভেবেছিল লেখক তাকে চিনতে পারবেনা। সে লেখককে মন্ত্রনালয়ের এক্সপেরিমেন্টের কথা বলে। লেখক মানবধিকারের কথা বলে তার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। অ্যালাক্সকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু পরের দিন আরো দুজন এসে অ্যালাক্সকে একটা রুমে আটকে রেখে বিটোভেন ছেড়ে দেয়। এক্সপেরিমেন্টের পর থেকে অ্যালাক্স সেক্স, ভায়োলেন্স এবং বিটোভেন সহ্য করতে পারেনা। সে সহ্য করতে না পেরে জানালা দিয়ে লাফ দেয়। সে মরেনা। হসপিটালে কোমায় চলে যায়। মন্ত্রনালয়ের এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে কড়া সমালোচনা শুরু করে বুদ্ধিজীবী এবং মানবধিকার কর্মীরা। সরকারের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

কর্মা বলে একটা ব্যাপার আছে। অর্থাৎ যেমন কর্ম তেমন ফল। অ্যালাক্স মানুষকে অত্যাচার করেছে। যন্ত্রণা দিয়েছে। সে নিজেও তা ফিরে পেয়েছে। অর্থাৎ সব তার কাজের কনসিকোইয়েন্স। এটা একটা দেখার বিষয়। আবার তারই দুই সঙ্গি ক্রাইম করেও সাজা না পেয়ে বরং পুলিস হয়ে গেছে। তাহলে সেক্ষেত্রে কর্মা কিভাবে কাজ করেছে? তবে কি কর্মাও ম্যানউপুলেটেড হয়? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

চাপের মুখে পরে মন্ত্রনালয় তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। তারা আবার অ্যালাক্সকে ডিকন্ডিশন্ড করে ফেলে। একটা সাইকোলজিকাল টেস্টে দেখা যায় অ্যালাক্স সেক্স এবং ভায়োলেন্সের প্রতি আর বিরাগ ফিল করছেনা। মন্ত্রী তার সাথে দেখা করতে আসে। সাংবাদিকরা তাদের ছবি তুলে। তারা হাসিমুখে কেমারার দিকে তাকিয়ে থাকে।

পিউর পলিটিক্স। সময় বুঝে আদর্শ পরিবর্তন করে ফেলা। কৌশল পরিবর্তন করা। উদ্দেশ্য একটাই।নির্বাচনে জিততে হবে!


স্টেনলি কুব্রিক পরিচালিত আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ মুভিটি আমাদেরকে বেশ কিছু সোজাসাপ্টা প্রশ্নের মুখোমুখি করে।

ফ্রি উইল মানবধিকারের প্রথম শর্ত। সেক্ষেত্রে ফ্রি উইলের যে একটা ধ্বংসাত্মক দিক আছে তার সাথে কিভাবে ডিল করতে হবে? অথরিটি কিভাবে তাদের মতবাদ, আইন কানুন দর্শন দিয়ে ক্ষমতার স্বার্থে মানুসের ফ্রি উইল নিয়ন্ত্রণ করে? মানুসকে কনডিশনড করে নিজেদের কাজে লাগায়? তা কি ঠিক? ঠিক না হলে তার অলটারনেটিভ পথ কি?

আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ মুভিটি আমাদের কিছু প্রশ্ন করে সংশয়ের মুখে ফেলে দেয়। কিছু ব্যাপার এমন নগ্ন ভাবে উপস্থাপন করে যার দিকে আমরা না তাকিয়ে পারিনা। আবার মেনেও নিতে পারিনা। আমার কাছে এটাই এ মুভির সার্থকতা।





মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩

শেহজাদী১৯ বলেছেন: রিভিউটা বিশ্লেষনধর্মী। উপস্থাপনা দারুন।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১৩

জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ শেহজাদী। :)

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪৫

গেম চেঞ্জার বলেছেন: ছবিটা যখন দেখি তখন এভাবে ভাবিনি, ম্যাচুরিটি না থাকাটাই হয়তো বড় কারণ। বেশিরভাগ অংশগুলো এখনো স্পষ্ট মনে ভাসে। ডিসটোপিয়া বলে একটা টার্ম এই ছবিতে প্র‍য়োগ করা হয়েছে দেখেই ভীষণ আগ্রহ নিয়ে এটি দেখি। মানুষ হিসেবে আমরা যেভাবে ভালত্বের মুখোশ পরিধান করে সমাজে বসবাস করি সেই মুখোশ খুলে ফেলার সুযোগ দিলে কি ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে সেটা দেখতে চাইলে ছবিটা দেখে নেওয়া আবশ্যক।
রোবটিক হয়ে যাওয়াটাকে যদি আমরা নেগেটিভ সেন্স থেকে দেখতে পারি আবার পজিটিভ সেন্স থেকেও দেখার সুযোগ আছে। আমার মতে ধর্ম নামক টার্মটি যেভাবে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে সেটা কিছুটা এই টাইপেরই। যেখানে আসলে ভেতর থেকে জোর করে পশুকে দমিয়ে রাখা হয়, সুযোগ পাওয়ার অভাবে সেটা সুপ্ত থাকে।
ফিল্মটা আবার দেখতে হবে, আমার কালেকশনে এখনো থাকার কথা।
(আপনাকে থ্যাংক্স ঠিক এই ছবিটা নিয়েই লেখার জন্য)

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৬

জেন রসি বলেছেন: মানুষ হিসেবে আমরা যেভাবে ভালত্বের মুখোশ পরিধান করে সমাজে বসবাস করি সেই মুখোশ খুলে ফেলার সুযোগ দিলে কি ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে সেটা দেখতে চাইলে ছবিটা দেখে নেওয়া আবশ্যক।

দেখে ফেলুন গেম চেঞ্জার ভাই। ভাবনা চিন্তা করার অনেক খোরাক আছে মুভিতে।

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:১৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: নামাচ্ছি।
মারাত্মক রিভিউ দিয়েছেন

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৭

জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ রাখাল ভাই। :)

৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩০

হাসান মাহবুব বলেছেন: ;)

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৭

জেন রসি বলেছেন: :P

৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৯

তাশমিন নূর বলেছেন: দেখেছিলাম মুভিটা। ভালো রিভিউ হয়েছে।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৮

জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ তাশমিন নূর। :)

৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৯

তাশমিন নূর বলেছেন: দেখেছিলাম মুভিটা। ভালো রিভিউ হয়েছে।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৮

জেন রসি বলেছেন: :)

৭| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৯

সম্রা৩২১ বলেছেন: আপনার রিভিউ দেখে অনুপ্রানিত ‍আজকেই ছবিটা দেখব।ধন্যবাদ আপনাকে

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৯

জেন রসি বলেছেন: দেখে ফেলুন। :)

৮| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০৭

কিরমানী লিটন বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষনধর্মী রিভিউ। ভালোলাগায় ভালোবাসা প্রিয় জেন রসি ভাইয়া।

২২ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৫৬

জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ ।



৯| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০০

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার রিভিউ।

২২ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৫৭

জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ ।



১০| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৮

ফয়সাল রকি বলেছেন: হামা ভাই'র ব্লগে এই ছবি দেখছি দীর্ঘদিন কিন্তু মুভিটা দেখা হয়নি :(

২২ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৫৮

জেন রসি বলেছেন:
দেখে ফেলুন।








১১| ১১ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৮

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
চমৎকার রিভিউ

১১ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:২৫

জেন রসি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.