নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাদের হাতে দলীল প্রমান কম তারা গালি দেয় বেশী

.

রাতুলবিডি৪

বলার কিছু নাই

রাতুলবিডি৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অক্সিজেন বিহীন এভারেষ্ট আরোহণে 'বিশ্বের প্রথম অভিযান' : রেইনহোল্ড মেসনারের কাহিনী : (অল ফোরটিন এইট থাউজেনডারস" থেকে অনুবাদ : )

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:১১



ফুটবলের যেমন পেলে, মাউন্টেনিয়ারিং এ মেসনার । তার কালজয়ী রচনা " অল ফোরটিন এইট থাউজেনডারস" - এ লিখেছেন অক্সিজেন ছাড়া সবগুলো উচু চুড়ায় উঠার কাহিণী। মেসনার গতানুগতিক পথে না চলে সবসময়ই চেয়েছেন এডভেঞ্চারে নতুন মাত্রা যোগ করতে , সম্ভবের সীমানাকে অসম্ভবের পানে ঠেলে দিয়ে এডভেঞ্চারের নতুন দিগন্ত খুজে পেতে । তিনি দু-দুবার এভারেষ্টে উঠেন অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া । প্রথম উঠেন ১৯৭৮ সালে , প্রবল বাধা আর সমালোচনার মুখে ।" অল ফোরটিন এইট থাউজেনডারস" থেকে সে কাহিনীর সংক্ষিপ্ত অনুবাদের চেষ্টা :
================
পর্বতারোহণে পূর্বসুরীদের চেয়ে এক কদম এগিয়ে যাওয়া একরকম 'কোয়ান্টাম' লম্ফ । পরমাণুর ভেতর এক শক্তি স্তর থেকে ভিন্ন স্তরে পরিভ্রমণ যেমন অনেকটা সেরকম, এক জায়গায় স্হির না । যখনই আমি আমার সামর্থের সীমাকে স্পর্শ করতে চেয়েছি , তখন সেটা 'সম্ভব-অসম্ভবের' শেষ সীমা মনে হলেও , সেই সীমানা স্হির থাকেনি, বাস্তবে সেটা পরিবর্তনশীল। যে কোন সময় -এ পর্বতারোহনের " সীমা" এমন একটা নিষিদ্ধ প্রাচীর, যা ধীরে ধীরে সরে যায় চুড়ান্ত অসম্ভবের দিকে ! এমন একটা স্হানে যেখানে কেউ পৌছাতে পারবে না , কোনদিনই। কিন্তু সেটা অজানা এক জাদুময়ী বিন্দু যা অনিশ্চয়তা আর এডভেঞ্চারকে প্রাণবন্ত করে রাখে । ৮০০০ মিটার পিকগুলোতে অভিযাণ করতে গিয়ে ধীরে ধীরে আমি বুঝতে শিখেছি আরো কতটা "বেশী কিছু" করা সম্ভব, আর কতটা "ভাল ভাবে " করা যাবে । কিন্তু তার আগে আমাকে শিখতে হয়েছিল অসম্ভবের সীমায় যেতে হলে ঠিক কোন কাজগুলোকে আরো 'সহজ' করা যাবে, আর কোন বিষয়গুলোকে একেবারে বাদ দেওয়া যাবে। আমার 'শেষ ধাপ' টা ছিল এভারেষ্ট শিখরে "সলো ক্লাইম্ব " বা কারো সাহায্য ছাড়া একাকী আরোহণ ।
..............
তিনটি ৮০০০ মিটার চুড়ায় অক্সিজেন ছাড়া উঠেছিলাম আরো আগেই, আর চুড়ান্ত লক্ষ্যে যাবার আগে আমি জানতে চাইছিলাম একই পথে এভারেষ্টেও উঠা যাবে কি না ! ' বিশুদ্ধ পথে' এভারেষ্ট আরোহন : এই উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম প্রস্তুতিতে । আর একই উদ্দেশ্য নিয়ে যোগ দিলাম অষ্ট্রিয়ার পর্বতারোহী একটা দলের সাথে । ১৯৭২ সালে মানাসলু অভিযানের সময় থেকে এরা এভারেষ্ট -এ উঠার পরিকল্পণা করছিলা , কিন্তু একটা পারমিটের জন্যই কয়েক বছর দেরী হয়ে গেল । অবশেষ ১৯৭৮ সালে পারমিট পাওয়া গেল ! আমি ঠিক করলাম পিটার হাবলারকে এই অভিযানে আমন্ত্রণ জানাব, পুরাপুরি আমার নিজস্ব অর্থায়নে । এছাড়া অষ্ট্রিয়ান টীমকেও একটা টাকা দিতে হয়েছিল বেস ক্যাম্প এবং রুট শেয়ার করব বলে।
.............
তবে পিটার আর আমি চেয়েছিলাম দল থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের মত কাজ করব। আমাদের মূল পরিকল্পণা ছিল সাউথ পিলার দিয়ে ক্লাইম্ব করা । সাউথ ইষ্ট রিজ (১৯৫৩ তে এভারেষ্ট এর প্রথম সফল আরোহী হিলারী -তেনজিং এর রুট) আর সউথওয়েষ্ট ফেস ( ১৯৭৫ এ ক্রিসবনিংটন প্রথম আরোহন করেন) - এই দুই রুটের মাঝামাঝি একটা নতুন রুট - এই সাউথ পিলার । যেটা দিয়ে আগে কেউ এভারেষ্ট - এ উঠে নি । পর্বতে পৌছানোর পর তাড়াতাড়ি - ই বুঝতে পারলাম , এই রুটে চেষ্টা করাটা একটু বেশী বেশী হয়ে যাচ্ছে । এত খাড়া একটা পথ আর ক্লাম্বিং এর জন্য বরফের এত বাজে অবস্হা : একবারে দুই ধাপ লাফ ! কঠিন রাস্তায় এভারেষ্ট আরোহণ আবার অক্সিজেন ছাড়া আরোহন। তাই দুজনে ঠিক করলাম গতানুগতিক রাস্তায় - ই চেষ্টা করব , অন্যদের সাথে একই রুটে ।
................
স্বভাবতই এভারেষ্ট-এ আরোহণ ছাড়াও আমরা চাইছিলাম শুধু কুম্বু এলাকা-টাকেও ভাল ভাবে জানতে। এটা প্রায় ৩০০ বছর ধরে শেরপাদের বাসস্হান। আর এ এলাকাই প্রাকৃতিক ভাবে হিমালয়ের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্হ এলাকা । অনেক অনেক অভিযান আর ট্রেকিং ইন্ডাস্ট্রীর কারণে এখানকার ইকোলজী -ই সবচেয়ে বেশী বিপর্যস্ত হয়েছে ।
.....................
পিটার আমি যতক্ষণ সক্ষম ছিলাম পর্বতে ক্যাম্প তৈরীর কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছিলাম । দলের অন্যান্যদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাল ছিল ।লিও ডেকিনসননের নেতৃত্বে একটা বৃটিশ টীম আমাদের আভিযাণের উপর একটা ফিল্ম তৈরীর কাজ করছিল । কিন্তু আমাকেই একটা ক্যামেরা বহণ করতে হচ্ছিল সামিটের কাছাকাছি আমাদের আরোহণের ডকুমেন্টশন তৈরী করতে । আর এই ফিল্মের কপিরাইট বিক্রি করেই আমাদের অভিযানের খরচের অনেকটা যোগাড় হয়েছিল ।
.....................
এভারেষ্টের পথে রওনা দেবার আগে যখন অক্সিজেন-বোতল ছাড়াই এভারেষ্ট আরোহণের কথা উচ্ছারণ করেছিলাম, তখন ব্যাপক বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলাম । আর এই বৈরিতা আমার আগের সব কাজের বাধা - বিপত্তি বা সমালোচণার চেয়েও বেশী ছিল। পন্ডিতেরা বড় বর প্রেস কনফারেন্স বা টিভিতে এসে বলতে শুরু করল ' সম্ভবত অক্সিজেন মাস্ক ছাড়া চুড়ায় যাওয়া যাবে , তবে জীবিত ফিরে আসা যাবে না, আর ফিরে এলেও অক্সিজেনের অভাবে এতটাই ব্রেনসেল ড্যামেজ হবে যে মানষিক স্হবির ও নির্জিব কিছু একটা হয়ে বেচে থাকতে হবে ।স্বাভাবিক ভাবেই এত এত কথা শুনে সন্দেহ আর আক্রমণাত্মক আচরণ আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে। আমাদের তাজা উচ্ছাস আর উদ্দীপণা পোতান হয়ে গেলো। তবে একান্তই যা চাইছিলাম সব পূর্বভাসের বিপরীতে আমাদের একই লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যেতে । স্রোতের বিপরীটে চলাটা নিজেকে সন্দিহান করে তুলেছিল, কিন্তু সমালোচকদের সাথে অবিরত যুদ্ধ চালানো আমার সামর্থকে বাড়িয়ে দিয়েছিল - শুধু পর্বতে নয় আমার বাকি জীবনেও - কোন পথ বের করার জন্য ।
.............
শুধু মাত্র গোয়ার্তুমির কারণে না, আমি প্রমানটাই চাইছিলাম যে আমার ধারণাটা ঠিক ছিল । আমার একান্ত বিশ্বাসকে উপস্হাপণ করতে চাচ্ছিলাম যে এটা সম্ভব । বোতলের অক্সিজেন ছাড়াও আরোহন করা সম্ভব , সেটা এভারেষ্ট হলেও।

অষ্ট্রিয়ান টীমের সাথে আমি আর পিটার ১৯৭৮ এর বসন্তে এভারেষ্ট বেস ক্যাম্প-এ হাজির হলাম । ৫৪০০ মিটার উচুতেও তখন হিমশীতল ঠান্ডা ছিল। ভোর পাচটায় স্লীপিং ব্যাগের ভিতরেও আমাদের আপাদমস্তক ঠান্ডা হয়ে যেতো - আর আদৌ 'গা'টা আর গরম হতো না ।

তখন তাপমাত্রা বাড়ার সময়, বিশাল পর্বতের পাদদেশে অবিরাম আইসফল ভাংগে পরার শব্দ শুনে শুনে বিশ্বাস হচ্ছিলনা যে অক্সিজেন স্বল্পতা - ঠান্ডা আর উৎকন্ঠার বিপরীতে শক্তি ফিরে পাব। তবে আমি মরার ভয়ে ভীত ছিলাম না , জীবনে বহুবার এমনটা হয়েছে - দুমাসের অভিযানের শুরুতে একেবারে অনুভুতি-শুন্য -চিত্তে সামনের ঝুকি - বিপদ আর কষ্টের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকা । কয় সপ্তাহ যেতে অনুভুতিগুলো ও উড়ে গেলো ।
........................
এপ্রিলের ভিতরেই আমি সাউথ কোলে পৌছে গিয়েছিলাম। পিটার পুরোপুরি সুস্হ ছিলা না, আমার সাথে দুজন শেরপা আং দরজি আর মিংমা ছিল । তীব্র ঝড়ো হাওয়ায় দুদিনের জন্য আটকা পরেছিলাম । জীবনের প্রথম বারের জন্য বুঝতে পারছিলাম অক্সিজেন বোতল ছাড়া ৮০০০ মিটারের উপর বেচে থাকার মানে কি ! মনে প্রাণে যা চাইছিলাম তা হচ্ছে শুধু নেমে আসা । এরপরও আমার বিশ্বাস আরো অনড় হল যে ভাল আবহাওয়ায় সাউঠ কোল থেকে আরো অনেক উপরে যাওয়া যাবে।

( চলবে ..

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪

♥কবি♥ বলেছেন: চলুক:)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২২

রাতুলবিডি৪ বলেছেন: ধন্যবাদ কবি, সাথে থাকবেন কিন্তু , পরের পর্ব এখানে :
http://www.somewhereinblog.net/blog/ratulbd4/30014075

২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চলুক। সাথে আছি।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২২

রাতুলবিডি৪ বলেছেন: ধন্যবাদ কবি, সাথে থাকবেন কিন্তু , পরের পর্ব এখানে :
http://www.somewhereinblog.net/blog/ratulbd4/30014075

৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৩

রাতুলবিডি৪ বলেছেন: মেসনার তার "অল ফোরটিন " বই - এ সব চ্যাপ্টারের শুরুতে কিছু কোটেশন এনেছেন । এভারেষ্ট চ্যাপ্টারের শুরুতে "সোল স্টেইন " এর উক্তি ব্যবহার করেছেন :

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.