নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা বলি..... বর্তমানের- কথা বলি ভবিষ্যতের.......

মাই নেম ইজ রেজাউল ইসলাম। এন্ড আই অ্যাম নট এ রাজাকার !!!

মোঃ রেজাউল ইসলাম

আমি নতুন সর্বদা----

মোঃ রেজাউল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতকে আমরা যে আমাদের নদীপথ ব্যবহার করতে দিচ্ছি তার মূল্য কি বছরে শুধুই ১০ কোটি টাকা!

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ডঃ আবু আহমেদ এর নিবন্ধঃ

-------------------------------------------------

তবু বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো যে শেষ পর্যন্ত ২৫ হাজার বর্গমাইলের দাবীকৃত সমুদ্র এলাকার মধ্যে ১৯ হাজার বর্গমাইলের কিছু বেশি এলাকা আন্তর্জাতিক সমুদ্রবিষয়ক সালিসি আদালতের মাধ্যমে হিস্যা হিসেবে পেয়েছে। এই পাওয়াও সম্ভব হয়েছে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের কারণে। না হলে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আরো এক যুগ আলোচনা চালিয়ে গেলেও সমুদ্রের দাবীকৃত অংশের ন্যায্য হিস্যা পেত না। ভারত শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে কখনো সমতার হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে দেওয়া-নেওয়ার বিষয়গুলো মীমাংসা করতে চায়নি। যা ভারত চেয়েছে তা হলো, হয় এতটুকু নাও নতুবা কোনো আলোচনা নয়, ওই সামুদ্রিক অঞ্চল আমাদের। ভারত ও মিয়ানমার আদিতে তাদের সমুদ্রসীমাকে যেভাবে চিহ্নিত করতে প্রয়াস পেয়েছিল তাতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বলতে তেমন কিছু একটা থাকত না। বাংলাদেশ সমুদ্রসীমার পরিবর্তে বের হওয়ার জন্য একটি সমুদ্র করিডর পেত মাত্র। তবে গত এক যুগের দরকষাকষি আর সালিসি সিদ্ধান্ত থেকে বাংলাদেশ একটা বিষয়ে শিখতে পেরেছে যে অনেক দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছে। গঙ্গার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। সামুদ্রিক এলাকা ভাগাভাগি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই একটি বড় ইস্যু ছিল। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ জয় না হলেও সন্তুষ্ট হওয়ার মতো জয় হয়েছে বলা চলে। তালপট্টি ভারতের ভাগে পড়েছে কেন সেই প্রশ্নের উত্তর বিশেষজ্ঞরা খুঁজে অবশ্যই জাতিকে জানাবেন। ওই দ্বীপ, যেটা এখন জলমগ্ন, সেই দ্বীপ অবশ্য সমুদ্রসীমা বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো ইস্যু হিসেবে সালিসি আদালত বিবেচনায় নেননি। আদালত ভাগ করে দিয়েছেন পুরনো ম্যাপ অনুযায়ী কোন দেশ বঙ্গোপসাগরের কত অংশ পাবে। আদালতের কাছে তালপট্টি দ্বীপের মালিকানার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ চায়নি। ভারতের কাছ থেকে কিছু আদায় করতে সক্ষমতা প্রয়োজন চাইলে সে ব্যাপারে এই আদালত কী বলত জানি না। তবে দ্বীপ ভাগাভাগি বা নতুন গজিয়ে ওঠা চর ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অন্য আইন থাকার কথা। বাংলাদেশ সেসব আইনের আশ্রয় নিয়ে দেখতে পারে। যা হোক, আমরা আশা করি এখন আমাদের সমুদ্র অঞ্চল যেহেতু চিহ্নিত হয়ে গেছে, আমরা ওই চিহ্নিত অঞ্চলকে আমাদের কাজে লাগাতে পারব, যেভাবে আমরা চাইব সেভাবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্যা কোনো দিন শেষ হওয়ার নয়। তবু বড় সমস্যাগুলো ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাধান হলে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে আরাম বোধ করবে। একটা ইস্যু বাংলাদেশকে বারবার ভাবিয়ে তোলে, সেটা হলো সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভারত কি বাংলাদেশকে একটি ছোট্ট লোহার খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ করতে চায়? একটা আবদ্ধ দেশের সঙ্গে আবার ভারত খোলা বাণিজ্য করতে চায়। আজকে খোলা বাণিজ্য হচ্ছেও, তবে সেটা শুধুই একতরফা। ভারত বাংলাদেশের কাছে পণ্য চেয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কিংবা আরো বেশি মূল্যের, কিন্তু বাংলাদেশ শত চেষ্টা করেও ভারতে তার বিক্রয়কে বাড়াতে পেরেছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার কিংবা তার থেকে একটু বেশি। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে শুধুই ক্রেতা। তিস্তার পানির অংশ পাওয়াটা একটা পুরনো ইস্যু। ভারত আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা দেবে বলেও দেয়নি। দিতে দিতে এত দেরি করে ফেলেছে যে এখন তিস্তায় বণ্টন করার মতো পানিই নেই। তিস্তার পানি ভারতই একতরফাভাবে উজানে অন্য নদীতে নিয়ে যাচ্ছে, অন্য কাজে ব্যবহার করছে। এ ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশকে যে পানি দিতে হবে সেটা বিবেচনায়ই নেয়নি। ভারতের অবস্থান হলো পানি না দিলে বাংলাদেশ কী করতে পারবে। আসলে বাংলাদেশ কিছু করতেও পারেনি। দু-একবার তিস্তার পানি ইস্যুকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ভারত ভালো করেই জানে, বাংলাদেশের সেই ইচ্ছা এতটা প্রবল নয়। আসলে আমরা যা দেখি তা হলো, বাংলাদেশ তিস্তার পানি পায়নি তার নিজের দোষেই। তিস্তার পানি ভাগাভাগিকে অন্য ইস্যুগুলো থেকে আলাদাভাবে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ কোনো দিনই তিস্তার পানির ন্যায্য অংশ পাবে না। বাংলাদেশ তার নিজের কী আছে ভারতকে দেওয়ার মতো সেটার মূল্য এখন ভুলে গেছে।



বাংলাদেশের হাতে ভারতকে দেওয়ার মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ট্রানজিট এবং বাংলাদেশের বাজার। বাজার তো আমরা আগে থেকেই দিয়ে আসছি। কিন্তু ট্রানজিট প্রদানের ক্ষেত্রে যে দরকষাকষির দরকার ছিল সেই দরকষাকষির শক্তি ও কৌশল কি বাংলাদেশ দেখাতে পেরেছে? ভারতকে আমরা যে আমাদের নদীপথ ব্যবহার করতে দিচ্ছি তার মূল্য কি বছরে শুধুই ১০ কোটি টাকা! সুতরাং বাংলাদেশ না চাইলে ভারত দেবে কেন? বাংলাদেশ নিজেই নিজের মূল্য চাইতে জানে না। আজকের দুনিয়ায় মূল্যহীনভাবে কোনো দেশ অন্য কোনো দেশকে কিছু দেয় না। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিষয়টি হলো এমন, বাংলাদেশ যা কিছু দেবে বলেছে সবই দিয়ে দিয়েছে আর ভারত দেবে বলে দেয়নি। বাংলাদেশও যদি দেওয়ার বিষয়গুলো ঝুলিয়ে রাখত, তাহলে তিস্তার পানি বাংলাদেশ এত দিনে পেয়ে যেত। শুধু শুধু আমরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে তিস্তার পানি না পাওয়ার জন্য দোষ দিচ্ছি। কলকাতার মমতা তো তাঁর ভোটারদের কল্যাণ চাইবেনই। কিন্তু প্রশ্ন হলো- পাঞ্জাব ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীরা পাকিস্তানকে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিলে সেই বাধা কি টিকত? পাকিস্তান শক্ত অবস্থানে ছিল বলে তারা সিন্ধুর পানি পেয়েছে ঠিকই, তাদের দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি ভারত একতরফাভাবে তুলে নিতে পারেনি। আর বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত অন্য নদীগুলোর পানির অবস্থা কী? ভারত তো নদীগুলোর আন্তসংযোগ প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে তাদের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করেছে। বাংলাদেশ কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে সে ব্যাপারে কোনো সমীক্ষা প্রণয়ন করেছে কি? নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ভালো অবস্থা হলো আন্তর্জাতিক আদালতগুলোর আশ্রয় নেওয়া। বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তির জন্য আর কতকাল গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করবে? আরেকটি কথা বাংলাদেশকে মনে রাখতে হবে, সেটি হলো ভারত শুধু তাদের রাজনীতিবিদদের দ্বারা চালিত হয় না। ওই দেশ চালান সুজাতা সিংয়ের মতো ঝানু আমলারা। ভারতের রাজনীতিবিদরা যতই দেবেন বলুন না কেন, দরকষাকষির বিষয়গুলো দেখে ওই দেশের আমলারা, যাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকটা অন্তর্মুখী। ফলে বাংলাদেশ আমলা পর্যায়ে আলোচনা করতে গেলে বারবার হতাশ হয়। বিগত কংগ্রেস সরকার আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ছাড় দেবে বলেছিল তা পাওয়া গেছে কি? কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ছিলেন একজন সৎ ও পণ্ডিত ব্যক্তি। ঘুরিয়ে কথা বলা তিনি জানতেন না। তাই বাংলাদেশের ন্যায্য দাবির ক্ষেত্রে যুক্তিগুলো গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু মোদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশকে আরো চোখ-কান খোলা রেখে অগ্রসর হতে হবে। তিস্তার পানির ইস্যুটা একটা টেস্ট কেস হতে পারে। অন্য ইস্যুগুলো বাংলাদেশের জোরালোভাবে তুলে ধরা উচিত। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের বাধামুক্ত প্রবেশাধিকার। আজকে বাংলাদেশ দূর-দূরান্তের বাজার খুঁজতে ব্যস্ত। কিন্তু ঘরের কাছে ভারতীয় বাজারের ব্যাপারে বাংলাদেশের অর্জন কতটুকু? নেপাল থেকে বাংলাদেশ জলবিদ্যুৎ আনতে চাইছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভারতের অনুমতি দরকার হবে। নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জন্য অনেক সস্তা হবে। সেই সস্তা বিদ্যুৎ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধাটা তো আসছে ভারত থেকেই। সুতরাং সব কিছু নিয়ে একসঙ্গে আলাপ করলে বাংলাদেশ দরকষাকষিতে কিছুটা হলেও জিতবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ভারত-বাংলাদেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারত যদি যথাযথ নেতৃত্ব দেয়, তাহলে উভয় দেশই উপকৃত হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সহযোগিতার অপশন ছাড়া অন্য অপশন নেই। তবে সহযোগিতা হতে হবে পারস্পরিক বিশ্বাস ও উপকারের ভিত্তিতে।



লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.