নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা বলি..... বর্তমানের- কথা বলি ভবিষ্যতের.......

মাই নেম ইজ রেজাউল ইসলাম। এন্ড আই অ্যাম নট এ রাজাকার !!!

মোঃ রেজাউল ইসলাম

আমি নতুন সর্বদা----

মোঃ রেজাউল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কী হচ্ছে পাকিস্তানে?

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৩৯



এক অদ্ভুত রাজনৈতিক সুনামির মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিকভাবে অনেকটা বিতর্কহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর দেড় বছর পার না হতেই নওয়াজ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে দু’টি দল ইসলামাবাদে সহিংস আন্দোলন শুরু করেছে। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ইমরান খান ছাড়া সংসদের সব বিরোধী দল সরকার পতনের এই আন্দোলনের বিরোধিতা করে বলছে এটি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এরপরও এক অজানা শঙ্কা দেশটির রাজনীতি অর্থনীতি এমনকি নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেও অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো? এর গন্তব্য বা পরিণতিইবা কীÑ এই আলোচনা পাকিস্তানের ঘরে বাইরে সবার মধ্যে।

এই আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তি ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-পিটিআই দেশটির বিগত নির্বাচনে তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। জাতীয় পরিষদে ৩৪টি আসন রয়েছে তার। খাইবার পাখতুন খোয়ায় জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছে পিটিআই। ইমরানের অভিযোগ পাঞ্জাবের ১০টির মতো আসনে ক্ষমতাসীন দল কারচুপি করে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিয়েছে। এসব আসনে তার দলের প্রার্থীরা প্রথম দিকে অগ্রগামী ছিল। এই অভিযোগে তিনি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগ দাবি করছেন। তার যুক্তি একটাই, তিনি ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচনী জালিয়াতির নিরপেক্ষ তদন্ত হবে না। এর বাইরে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে নয়া নির্বাচন দেয়াসহ নানা দাবি রয়েছে। ইমরানের সাথে রয়েছেন ড. তাহিরুল কাদরি নামে কানাডায় বসবাসকারী এক পাকিস্তানি ধর্মীয় নেতা। তিনি কানাডা থেকে মাঝে মধ্যে এসে রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে এ ধরনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এবার তিনিও পৃথক লংমার্চ নিয়ে ইমরানের সাথে ইসলামাবাদের রেড জোনে বিক্ষোভ করেছেন। দ্বৈতকণ্ঠে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন নওয়াজ শরিফের। নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে তাহিরুল কাদরি বলছেন, নওয়াজকে এবার যেতেই হবে, জনগণ যদি আবার ভোট দেয় তাহলে তিনি পুনরায় ক্ষমতায় যেতে পারবেন। ড. তাহিরুল কাদরি আসিফ আলি জারদারির সময়ও একবার এ ধরনের লংমার্চ ও আন্দোলন করেছিলেন। তিনি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছিলেন। কিন্তু তার দল পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক-পিএটি পরের নির্বাচনে আর অংশ নেয়নি। ফলে কাদরির বা তার দলের কতটা জনপ্রিয়তা সেটি বোঝার কোনো উপায় ছিল না।



এবারের আন্দোলনে নানা ধরনের রহস্য ভর করেছে। ইমরানের পিটিআই দলের জাতীয় সংসদ সদস্যরা পদতাগপত্র দিয়েছেন। কয়েকটি প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরাও পদত্যাগ করেছেন। খাইবার পাখতুন খোয়ায় ইমরানের পিটিআইয়ের কোয়ালিশন অংশীদার হলো পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী। দলটির বর্তমান আমির সিরাজুল হক একসময় প্রাদেশিক সরকারের সিনিয়র অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ইমরানের সরকারের পদতাগের দাবির সাথে তিনি কোনো সময় একমত হননি। তার প্রশ্ন, এভাবে নির্বাচনের অল্প ক’দিন পর সমাবেশ করে সরকারের পদত্যাগ করানো হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কিভাবে টিকবে? তবে সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ইমরানের সব দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরছেন কেবল নওয়াজের পদত্যাগের দাবিটি ছাড়া। এই প্রচেষ্টায় সরকারপক্ষ স্বাগত জানালেও ইমরানের সমঝোতার ইচ্ছা সব সময় এক রকম যাচ্ছে না। প্রথম দিকে তিনি আলোচনার কথা বলেছেন। পরে শক্ত অবস্থান নিয়ে বলছেন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করার পরই অন্য দাবি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এভাবে তিনি মাঝখানে অনেকটা এড়িয়ে গেছেন সমঝোতার প্রয়াসকে। এখন আবার সমঝোতার ব্যাপারে তার আগ্রহ কিছুটা বেশিই দেখা যাচ্ছে।



মূল শক্তি কারা?

ইমরান খান অথবা তাহিরুল কাদরির এরকম কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বা ক্ষমতা নেই যে, এত বিপুল সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের পর তাদের আন্দোলনে সরকারের জন্য এক পতনোন্মুখ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। আসলে সবার ভয় আতঙ্ক হলো সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে। ১৯৯৯ সালে অনেকটা এভাবেই নওয়াজের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করেছিলেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। গণতন্ত্র ব্যাহত হওয়ার এই আশঙ্কার কারণেই বলা যায় পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক শক্তি এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলেছে। সৃষ্ট পরিস্থিতিকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি নানা ঘরানার সামাজিক শক্তিও এবার সরকারের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে। যদিও উচ্চতর আদালতের কী ভূমিকা হবে সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের মনে।



ইমরান-কাদরির আন্দোলনের পেছনে সেনাবাহিনীর হাত থাকার বিষয়টি অনুভবের স্তর থেকে প্রকাশ্যে চলে আসে ইমরানের পিটিআইয়ের সভাপতি জাভেদ হাশেমির এক বক্তব্য থেকে। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘পাকিস্তানে ‘বাংলাদেশ মডেল’ অনুযায়ী ঘটতে পারে নীরব অভ্যুত্থান! সেনাসমর্থিত বাংলাদেশের বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো পর্দার আড়ালে থাকবে সেনাবাহিনী। ইমরান খান এমনই আভাস দিয়েছেন তার দলের নেতৃত্বকে।’ ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী পর্দার আড়ালে থেকে যেভাবে সরকার পরিচালনা করেছে তেমনটি ঘটার কথা বলা হয় এ ক্ষেত্রে। জাভেদ হাশেমির বক্তব্যের সূত্র ধরে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ মডেলের সরকার রাজনীতিতে শুদ্ধি অভিযান চালাতে পারে। কিছু রাজনীতিককে (এর মধ্যে থাকতে পারেন শরিফ ভ্রাতৃদ্বয়) দূরে সরিয়ে দিতে পারে। নিতে পারে সৎ ও যোগ্য (ইমরান খানের মতো) ব্যক্তিদের সামনে নিয়ে আসার উদ্যোগ।

এ ধরনের সরকার কী কী কাজ করবে তার ধারণা পাওয়া যায় জেনারেল আসলাম বেগের এক নিবন্ধে। তিনি লিখেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নতুন বিন্যাস ঘটাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদমশুমারি করতে হবে। স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করতে (পড়–ন প্রতিপক্ষ ঘরানার বিচারপতিদের বিদায় করতে) সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করতে হবে। এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে। তারপর আয়োজন করতে হবে সাধারণ নির্বাচনের। সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে যারা জয়ী হবে, তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। এর সব কিছু করতে হবে ৯ মাস সময়ের মধ্যে। সময়সীমার বিষয়ে পিটিআই সভাপতি জাভেদ হাশেমি বলেছেন, ‘যখন ইমরান খান তার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করলেন আমি তার কাছে জানতে চাইলাম- খান সাহেব আপনি কী করছেন? জবাবে ইমরান খান বললেন, আমি আপনাকে বলছি সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হবে। সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে আছে।’ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপও সম্প্রতি একই ধরনের আভাস দিয়েছে। তারা বলেছে, পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার আশঙ্কা প্রবল। এমনটা ঘটলে অর্থনৈতিক, উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় যে উন্নতি হয়েছে তা বাধাগ্রস্ত হবে।

জাভেদ হাশেমির বক্তব্যের আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনী দৃশ্যত কোন পক্ষ অবলম্বন করছে, এমনটি দেখা যায়নি। যদিও অনুভব করা গেছে রাজনৈতিক সুনামির পেছনের হাতটি তাদেরই সক্রিয় রয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মির্জা আসলাম বেগসহ যারা পত্রপত্রিকায় লেখেন, তারা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে পদত্যাগ করতে হবে বলে উল্লেখ করছেন। কেউ কেউ শরিফ ভ্রাতৃদ্বয়কে গণতন্ত্রের শত্রু বলেও উল্লেখ করছেন। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাথে সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে নওয়াজ শরিফকে সেনাপ্রধান পদত্যাগ করতে বলেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। যদিও পরে তা করা হয়েছে অস্বীকার। সেনাবাহিনীকে মধ্যস্থতা করার অনুরোধের বিষয়টিও এসেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা দমনে সরকার বারবার সংশয়ের মধ্যে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা পিটিভি ভবন দখল করে নিলে ঘণ্টাকালব্যাপী সেনাবাহিনী কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। এসব কারণে পুরো ঘটনার অন্তরালে যে সেনাবাহিনী ও সরকারের দ্বন্দ্ব সক্রিয় রয়েছে, তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকেনি।



পাঞ্জাবের বণিক শিল্পপতি রাজনীতিবিদ নওয়াজ শরিফ এর আগে যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন বছর তিনেকের মতো সময় ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন। এরপর সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। এরপর জেনারেল পারভেজ মোশাররফের ৯ বছরের শাসন নওয়াজের জন্য মোটেই সুখকর ছিল না। সেনাশাসকেরা নওয়াজের পরিবর্তে বেনজিরের পিপিপির সাথেই সমঝোতায় বেশি আগ্রহী হন। এরপর জারদারির নেতৃত্বে পিপিপি সরকার পূর্ণ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকে। পিপিপি সরকারের মেয়াদ পূর্তির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০১৩ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লীগ ক্ষমতায় আসে। কিন্তু সেনাবাহিনীর সাথে সেই পুরনো দ্বন্দ্বই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। জারদারি নানা ধরনের বৈরী অবস্থার মধ্যেও সেনাবাহিনীর সাথে আপসরফা করে যেভাবে ক্ষমতাকে ধরে রাখতে পেরেছেন, সেভাবে যেন পারছেন না নওয়াজ।

নরেন্দ্র মোদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ভারতের ক্ষমতায় আসার পর শপথ অনুষ্ঠানে সার্ক নেতাদের আমন্ত্রণ জানালে নওয়াজ শরিফ সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। সেনা নেতৃত্ব নওয়াজের এ সফরের বিরোধিতা করেছিল। সেটিকে পাত্তা দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি নওয়াজ শরিফ। তিনি শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হন। মোদির সাথে বৈঠক করেন। ভারতের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিভিন্ন রেটরিকও তিনি উচ্চারণ করেন। এটি ুব্ধ করে সেনাবাহিনীকে।



এ ছাড়া সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে চলমান মামলায় সেনাবাহিনী চেয়েছিল তাকে বিদেশে চলে যেতে দেয়া হোক। অভ্যুত্থানের জন্য কোনো সেনাপ্রধানের বিচারের বিষয়টি সেনাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে চায়নি। নওয়াজ শরিফ এখানেও সেনাবাহিনীর আকাক্সাকে নিজের প্রতিশোধ ইচ্ছার কারণে আমলে নেননি।

তৃতীয় বিষয়টি ছিল সেনা গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান আইএসআইয়ের বাজেট কমানো বা কাট টু সাইজ করার ইস্যু নিয়ে। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আইএসআইয়ের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। আবার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিতর্কও রয়েছে সেখানে। এই বিতর্কের জের ধরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। পিপিপির পাঁচ বছরে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো অন্তরালে সরকারের ওপর আইএসআইয়ের বাজেট কমানো এবং তাদের বেসামরিক জবাবদিহিতার মধ্যে আনার ব্যাপারে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়েছে। যদিও যেসব আন্তর্জাতিক শক্তি এ ধরনের চাপ দিয়েছে তাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থার বাজেট ক্রমেই বেড়েছে এবং সেখানকার জবাবদিহিতার মাত্রা পাকিস্তানের চেয়ে খুব অগ্রসর এমনটি বলা যাবে না। তবে এই চাপকে হাতিয়ার করে পিপিপি পাঁচ বছরে আইএসআইয়ের অব্যাহতভাবে বাজেট কমিয়ে এর নেটওয়ার্ক সীমিত করে ফেলেছে। মুসলিম লীগ আমলে এসে এর উন্নতি প্রত্যাশা করেছিল সেনা কর্তৃপক্ষ। বাস্তবে তাদের হতাশই হতে হয়েছে। সেই পুরনো প্রবণতাই অব্যাহত থেকেছে। আইএসআইয়ের গোপন বিষয় তোলা হয়েছে আদালত পর্যন্ত। গণমাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে বিভিন্ন সমালোচনা নিত্য বিষয়ে পরিণত হয়।



এর বাইরে পাকিস্তানি তালেবান হিসেবে পরিচিত তেহরিক-ই-তালেবানের সাথে আলোচনার বিষয় নিয়েও সরকারের সৃষ্টিভঙ্গি আর সেনাবাহিনীর প্রত্যাশা একই বিন্দুতে মেলেনি। সেনাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদোন্নতির মতো বিষয়েও হয়তো কোনো ক্ষোভ অসন্তোষ থাকতে পারে। এসব বিষয় সেনাবাহিনীর সাথে সাথে রাজনৈতিক সরকারের দূরত্বকে বাড়িয়ে তুলেছে। এ কারণে হয়তোবা বেপরোয়াভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কর্মকাণ্ডে পেছন থেকে সমর্থন জুগিয়েছে সেনাবাহিনী।

আন্তর্জাতিক সমীকরণ

পাকিস্তানের রাজনৈতিক সুনামির পেছনে সক্রিয় থাকতে পারে নানা আন্তর্জাতিক সমীকরণ। ২০১৪ সাল বৈশ্বিক নানা ঘটনাপ্রবাহের জন্য পাকিস্তান বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকছে। আফগানিস্তানে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার কথা এই বছরে। আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা অথবা মার্কিন সেনা প্রত্যাহার-উত্তর দেশটির পরিস্থিতির ব্যাপারে পাকিস্তান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তান সহযোগিতা করলেও তাতে দেশটির স্বার্থ সব সময় রক্ষিত হয়নি। ন্যাটো অভিযানের পর আফগানিস্তানের উন্নয়নকাজ এবং গোয়েন্দা সংস্থার পুনর্গঠন থেকে শুরু করে অনেক কৌশলগত বিষয়ে আমেরিকা ভারতের ওপর বেশি নির্ভর করেছে। ২০১৪ সালে মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহারের শূন্যতার বড় অংশ ভারতকে দিয়ে পূরণ করার ইচ্ছা ছিল ওয়াশিংটনের। বিভিন্ন টানাপড়েনে সেটি কতটা বাস্তবে সম্ভব তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। পাকিস্তানের যেকোনো শক্তিশালী সরকার আফগানিস্তান নিয়ে দরকষাকষির জন্য অন্য পক্ষের জন্য অনুকূল হবে না। রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সাথে সেনাবাহিনীর স্নায়ু সঙ্ঘাতের ফলাফল যাই হোক না কেন, তা সরকারের অবস্থানকে দুর্বল করবে। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করলে বৈধতা নিয়ে সঙ্কটে থাকবে সরকার। আর সেনাবাহিনীর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সরকার টিকে গেলে একক কর্তৃত্ব থাকবে না রাজনৈতিক সরকারের। এই হিসাব-নিকাশ পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টির পেছনে ইন্ধনের কারণ হতে পারে।



পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে পাকিস্তানের। রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের যেকোনো দুর্বল অবস্থা সৌদি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব কারণে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির সাথে আন্তÍর্জাতিকভাবে অনেক মহলের স্বার্থ যুক্ত রয়েছে। এর বাইরে পাকিস্তান তার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এ ব্যাপারে নওয়াজ শরিফেরও রয়েছে বিশেষ স্ট্রাটেজিক দৃষ্টিভঙ্গি। রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি বা এর সমাধানে আমেরিকা যে ভূমিকা পালন করতে পারে সেটি পারে না চীন। পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের সাথে ভারসাম্য আনার জন্য চাপ সৃষ্টির একটি সম্পর্ক থাকতে পারে এই সঙ্কটের সাথে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে সাংবিধানিক সরকারের পক্ষে কথা বলছে। পাশ্চাত্য প্রভাবিত বৈশ্বিক চিন্তক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বা ইকোনমিস্টের মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যম পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলছে; কিন্তু এ জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্যও রয়েছে তাদের মূল্যায়নে।

পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার জন্য গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন শক্তিশালী সেনাবাহিনী। এই দুইয়ের মধ্যে যখনই সঙ্ঘাত দেখা দিয়েছে, সেটি রাষ্ট্রটিকে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বিবেচনায় পিছিয়ে দিয়েছে। এখন তেমন এক পরিস্থিতির আশঙ্কা নানা কারণে করা হচ্ছে। এ দফা সঙ্কটের সমাধান হয়ে নওয়াজ শরিফের সরকার টিকে গেলেও এই খড়ক তার মাথার ওপর থেকে হয়তো কোনো সময় চলে যাবে না। পাকিস্তান রাষ্ট্রটির যারা শুভ কামনা করে না, তারা এ ধরনের অস্থির এক অবস্থায় তাদের স্বার্থ আদায় করতে চায় সব সময়।

কী ঘটতে পারে?



পাকিস্তানের ঘটনা পরম্পরা কোন্ দিকে মোড় নেবে তা এখনই নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে না। ইমরান-কাদরির ন্যূনতম দাবি বলা হয়েছিল নওয়াজ শরিফের পদত্যাগ। এখন তাদের সে অবস্থানে নমনীয়তা এসেছে। ‘বাংলাদেশ মডেল’ বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও কিছুটা কমে এসেছে। ইমরান-কাদরি আলোচনা করছেন মধ্যস্ততাকারীদের সাথে। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের ব্যাপারে পশ্চিমা চাপ মনে হয় বেশ খানিকটা বাড়ছে। দেশের ভেতরে বাইরে সৃষ্ট সঙ্কট নিয়ে যেভাবে সেনাবাহিনীর বিতর্কিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাতে সরব নীরব সামরিক অভ্যুত্থানের কোনো ঝুঁকি তারা এ সময়ে নেবে বলে মনে করা হচ্ছে না।

অন্য দিকে ইমরান-কাদরির সমাবেশে লোক কমার সাথে সাথে নিজেদের ভেতরেও বিরোধ শুরু হয়ে গেছে। এমকিউএমকে তাদের লাইনে আনার চেষ্টা সফল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে তাদের অবস্থানকে এক দিকে ধরে রাখা যেমন অসম্ভব হয়ে উঠছে, তেমনিভাবে তাদের সামনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ঝুঁকিও বাড়ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মেনে রেড জোনে অবস্থান কর্মসূচি চালানোর ঝুঁকির পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে দুই নেতার বিরুদ্ধে। সব চেয়ে বড় কথা হলো এভাবে ২০-২৫ হাজার মানুষ সমবেত করে একটি নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটানোকে কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য মনে করা হচ্ছে না। জনমতও উল্টে যেতে শুরু করেছে। যদিও ইমরান-কাদরির সেরকম ব্যাপক সমর্থন কোনো সময় ছিল না। কিন্তু সেনাপ্রতিষ্ঠানকে এখনো পাকিস্তানে অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক বলে মনে করে জনগণ। সে অবস্থানে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটুক তা হয়তো চাইবে না সেনা নেতৃত্ব।

তবে নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো-না-কোনোভাবে আপসে যেতে হবে সেনাবাহিনীর সাথে। সেটি হতে পারে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মতামত গ্রহণ করা। পাকিস্তানের শক্তিমান রাষ্ট্রিক অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত যত কমানো যাবে, ততই হবে মঙ্গল। এবারের সঙ্কটে অবশ্য রাজনৈতিক শক্তির একটি ঐক্যের প্রতিফলন ঘটেছে। এটি দেশটির সংহতি ও শক্তিকে আরো উচ্চকিত ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করবে।



সুত্রঃ মাসুম খলিলী

Click This Link

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:০৪

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: বালছাল নিয়ে অনেক লম্বা বাল লিখেছেন?

২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৩৮

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: পাকিস্থান = রসাতল।
পাকিস্থান = গোরস্থান।

৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৪৮

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: দুঃখিত লিখটা পড়তে ইচ্ছে হলোনা। শুধুমাত্র টাইটেল দেখেই মন্তব্য করার ইচ্ছে হলো। পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ে ০% আগ্রহ নেই। ওদরে নিজেদের গোয়ার্তোমির ফল নিজেরাই ৪৭ থেকে ভুগতেছে আর আগামীতেও ভুগবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.