নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট কথা

রাজিব

আমি ভালবাসি বাংলাদেশ, আমার বউ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন, ইতিহাস, গান, ফুটবল, লিখতে,

রাজিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

রজার ক্রফোর্ড: অনেক কিছুই পারি না আমি

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:১৬

টেনিস খেলার জন্য যা দরকার রজার ক্রফোর্ড এর সবকিছুই ছিল, শুধু ছিল না তার দুইটি হাত ও একটি পা।

রজারের বাবা মা যখন তাদের এই সন্তানটিকে প্রথমবারের মত দেখেন তখন তারা দেখতে পান তার ডান হাতের কনুই থেকে কব্জির পর হঠাৎ করে একটি বুড়ো আঙ্গুল এবং বাম হাতের কনুই থেকে কব্জির পর হঠাৎ করে একটি আঙ্গুল বের হয়ে গেছে। অর্থাৎ হাতের তালু বলতে রজারের কিছু ছিল না। পায়ের অবস্থাও খুব একটা ভাল কিছু ছিল না। ডান পায়ে মাত্র তিনটি আঙ্গুল ছিল। আর বা পায়ের অবস্থা এত খারাপ ছিল যে পরে তা কেটে ফেলতে হয়।



রজারের চিকিৎসক বলেছিলেন যে ছেলেটি জন্মের সময় এমন এক খুঁত নিয়ে জন্মেছিল যা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি নব্বই হাজার শিশুর মধ্যে একজনের বেলায় ঘটে। সেই ডাক্তার এইও বলেছিলেন যে রজার সম্ভবত জীবনে হাঠতে এবং নিজের যত্ন নিতে পারবে না। সৌভাগ্যবশত রজারের বাবা-মা ডাক্তারের সেই কথা বিশ্বাস করেন নি।



রজার বলেন, “আমার বাবা-মা আমাকে সবসময় বলতেন যে আমি ততখানি প্রতিবন্ধি হব যতখানি আমি নিজেকে তা হতে দিব। আমার মা-বাবা কখনোই প্রতিবন্ধি বলে বাড়তি সহানুভূতি দিতেন না বা অন্যদের থেকে আমি বাড়তি সহানুভূতি যাতে না পাই সে ব্যপারে সতর্ক থাকতেন। একবার আমি স্কুলে একটা ঝামেলায় পড়ে যাই। স্কুলের হোম ওয়ার্ক জমা দিতে ক্রমাগতভাবে আমার দেরী হচ্ছিল কারণ আমাকে দুই হাত দিয়ে পেন্সিল ধরে লিখতে হত এবং এর ফলে আমার লেখার গতি অত্যন্ত ধীর ছিল। আমি আমার বাবাকে অনুরোধ জানাই তিনি যেন আমার শিক্ষককে একটি চিঠি লেখেন এই বলে যে আমাকে প্রতিটি অ্যাসাইনম্যান্ট করার জন্য বাড়তি দুইটি দিন দেওয়া হয়। বাবা তা না করে উল্টো প্রতিটি অ্যাসাইনম্যান্ট লেখার বেলায় সময় আসলে দুই দিন আগে থেকে আমাকে লিখতে বসিয়ে দিতেন।”

রজারের বাবা রজারকে সবসময় খেলাধুলায় অংশ নিতে উৎসাহিত দিতেন। তিনি তার ছেলেকে ভলিবল খেলতে শেখান এবং উঠানে আমেরিকান ফুটবলও খেলতে শেখান। মাত্র বার বছর বয়সে স্কুলের ফুটবল দলের একজন সদস্য হবার যোগ্যতা অর্জন করে রজার।

স্কুলের হয়ে প্রতিটি ম্যাচের আগে রজার চোখ বন্ধ করে স্বপ্ন দেখত যে সে টাচ ডাউন (আমেরিকান ফুটবলের গোল বা স্করিং পয়েন্ট) করবে। একদিন তার সেই সুযোগ এল, অর্থাৎ তাকে মাঠে নামানো হল। বল তার হাতে এল এবং সে তার কৃত্তিম বাম পা নিয়ে যতটা সম্ভব দ্রুত ছুটতে শুরু করল প্রতিপক্ষের গোল লাইনের দিকে। তার স্কুলের কোচ এবং অন্যান্য খেলোয়াড়রা তাকে চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছিল। গোল লাইন থেকে সে যখন মাত্র দশ গজ দূরে তখন প্রতিপক্ষ দলের একটি ছেলে ছাপিয়ে পরে তার বাম পায়ের গোড়ালি ধরে ফেলে তাকে থামানোর জন্য। রজার যথাসাধ্য চেষ্টা করল তার কৃত্তিম বাম পাটি ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য কিন্তু উল্টো তার বাম পা তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

এবার রজারের নিজের ভাষ্য শুনুন, “তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না যে ঠিক কি করা উচিত। তাই আমি এক পা দিয়ে লাফাতে লাফাতে গোল লাইনের দিকে এগুতে থাকলাম। রেফারি আমার কাছে দৌড়ে এসে তার দুই হাত উপরের দিকে তুলে বললেন “টাচ ডাউন”। এতে করে যে ছয় পয়েন্ট আমি অর্জন করেছিলাম তার থেকেও ভাল লেগেছিল বিপক্ষ দলের যেই ছেলেটি আমার কৃত্তিম বাম পাটি ধরে রেখেছিল তার চেহারায় বিস্ময় দেখে।”

দিনে দিনে খেলাধুলার প্রতি রজারের ভালবাসা বৃদ্ধি পেতে থাকল এবং এর ফলে তার আত্মবিশ্বাসও বাড়তে থাকল। কিন্তু তাই বলে রজার সবকিছুতে সফল হল এমনটা মনে করা উচিত হবে না। স্কুলে খাবার ঘরে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুপুরের খাবারের সময় অন্যরা যখন তাকে দেখত যে স্বাভাবিকভাবে খেতে পারছে না। সেই অভিজ্ঞতা রজারের জন্য বেদনাদায়ক ছিল। সে টাইপিং ক্লাসেও বার বার ফেল করত। রজারের মতে, “টাইপিং ক্লাসে ব্যর্থতা থেকে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় শিখি। আপনি সবকিছুতে সফল হবেন না। তাই যে কাজ আপনি ভাল পারেন সেটাতে লেগে থাকা উচিত।”

একটা কাজ রজার পারত আর তা হচ্ছে টেনিস র‍্যাকেট নিয়ে সুইং করা। দুর্ভাগ্যবশত সে যদি একটু বেশী জোরে সুইং করার চেষ্টা করত তাহলে তা তার হাত থেকে ফসকে বের হয়ে যেত। অর্থাৎ তার গ্রিপ একেবারেই শক্ত ছিল না। তবে সৌভাগ্যবশত একদিন একটি ক্রীড়া সামগ্রীর দোকানে এমন একটি টেনিস র‍্যাকেটের দেখা পায় যা সে সহজে ধরে রাখতে পারত। এটি তার হাতে এতটাই ফিট হয়ে যায় যে সে স্বাভাবিকভাবেই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। প্রতিদিন সে প্র্যাকটিস করত এবং খুব শীঘ্রই সত্যিকারের ম্যাচ খেলা শুরু করল এবং প্রতিটি ম্যাচেই হেরে যেতে থাকল।

কিন্তু রজার হাল ছেড়ে দিল না। সে আরও বেশী অনুশীলন করতে থাকল এবং আরও বেশী ম্যাচ খেলতে থাকল। বাম হাতের দুই আঙ্গুলে সার্জারি করার মাধ্যমে রজারের গ্রিপের উন্নতি হল এবং সে ওই বিশেষ র‍্যাকেটটি আরও শক্তভাবে ধরতে সমর্থ হল। এরে ফলে তার দক্ষতা অনেক গুনে বেড়ে গেল এবং সে আগের থেকে অনেক ভাল খেলতে শুরু করল। রজারের সামনে কোন রোল মডেল ছিল না বা তাকে গাইড করার মত কেউ ছিল না। কিন্তু টেনিসই তার ধ্যান জ্ঞান হয়ে গেল এবং পুরোটা সময় সে এই খেলার পিছনে দিতে থাকল। ফলে একসময় সে একটা দুইটা করে ম্যাচ জয় লাভ করা শুরু করল।

রজার কলেজ টেনিসে অংশ নেওয়া শুরু করল এবং সেখানে তার ক্যারিয়ার রেকর্ড ছিল ২২ টি জয় এবং ১১ টি হার। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেশনাল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন তাকে টেনিস শিক্ষকের একটি সার্টিফিকেট প্রদান করে যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোন একজন প্রতিবন্ধি প্লেয়ার তা প্রথমবারের মত লাভ করে। রজার এখন সারা দেশে ঘুরে বেড়ায় এবং সবার কাছে- যত প্রতিবন্ধকতা থাকুক না কি করে জীবনে জয়ী হওয়া যায় সেই বিষয়ে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ায়।

রজার মানুষকে বলে, “আমার ও আপনার মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে এই যে আপনি আমার প্রতিবন্ধিতা দেখতে পান কিন্তু আমি আপনারটা দেখতে পাই না। আমাদের সবার মধ্যে কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। লোকে যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমি আমার শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে কিভাবে অতিক্রম করলাম তাদের আমি বলি আমি আসলে কোন কিছুকে অতিক্রম বা জয় করিনি। আমি শিখেছি যে কি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়- পিয়ানো বাজাতে বা চপ স্টিক দিয়ে খেতে আমি পারি না। কিন্তু সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখেছি তা হল আমার পক্ষে কি করা সম্ভব। তারপর তা আমি মন প্রাণ ঢেলে করার চেষ্টা করি।”



রজার ক্রফোর্ড এর উইকিপিডিয়া লিংকঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Roger_Crawford

টুইটারঃ https://twitter.com/RogerCrawford

নিজের ওয়েবসাইটঃ http://www.rogercrawford.com/

লেখাটি অনুবাদ করা। মূল লেখার লিঙ্কঃ Click This Link

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১৫

রাজিব বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৫২

হাসান মাহবুব বলেছেন: অসাধারণ! এমন মানুষেরাই তো প্রেরণার উৎস।

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:২২

রাজিব বলেছেন: আসলেই এমন মানুষেরা হোক আমাদের প্রেরনার উৎস। সুন্দর কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৩৬

এহসান সাবির বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২৩

রাজিব বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৪| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৫:০৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমার হঠাৎ করেই দক্ষিন আফ্রিকার অস্কার প্রিষ্টোরিয়াসের কথা মনে পড়ে গেল। যে এমনই প্রতিকুলতাকে জয় করে ব্লেড রানার হিসাবে খ্যাতি পেয়েছিল।
আসলে মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই। প্রয়োজন মনবল আর উৎসাহের।।
ঈদ মুবারক।।

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০৭

রাজিব বলেছেন: অস্কার প্রিষ্টোরিয়াসের কথা আমারও মনে পড়েছে। ঠিক কথাই বলেছেন মানুষের অসাধ্য বলে কিছু নেই যদি মন দিয়ে সে চেষ্টা করে এবং লেগে থাকে।

৫| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৬:২২

আরজু মুন জারিন বলেছেন: আপনার প্রতিটি লেখা ই অনেক প্রেরনার, আশান্বিত জীবনের কথা বলে।এত প্রতিবন্ধকতা, সীমাবদ্ধতার মধ্যে রজারের উপরে উঠে আসা সব প্রতিবন্ধী মানুষের যেমন আশার আলো দেখাবে তেমনি তা নিঃসন্দেহে আমাদের মত সাধারন মানুষদের জীবনে তা প্রেরনার বীজ বুনে যাবে।চলার পথে বাধা প্রতিবন্ধকতায় যেন দমে না গিয়ে দৃঢ় সংকল্প সহকারে পথ চললে মানুষ কি না অর্জন করতে পারে রজারের জীবন তার উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।

অনেক চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ রাজীব ভাই।শুভেচ্ছা রইল।ভাল থাকবেন।

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:৩০

রাজিব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্য।

৬| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯

জুন বলেছেন: বিস্ময় জাগানিয়া রজার ক্রফোর্ড তাকে সালাম
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য রাজিব।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০৩

রাজিব বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

৭| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৩১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: খুব ভাল লাগলো।মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এমন লেখা ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৪:৩৩

রাজিব বলেছেন: আসলেই মানুষকে অনুপ্রানিত করে।

৮| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫৫

সুমন কর বলেছেন: এ ধরনের মানুষগুলোর জন্য বাকিরা স্বপ্ন দেখতে আজো ভালবাসে।
গুড পোস্ট।

৯| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:১৫

অপ্‌সরা বলেছেন: রজার মানুষকে বলে, “আমার ও আপনার মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে এই যে আপনি আমার প্রতিবন্ধিতা দেখতে পান কিন্তু আমি আপনারটা দেখতে পাই না। আমাদের সবার মধ্যে কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। লোকে যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমি আমার শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে কিভাবে অতিক্রম করলাম তাদের আমি বলি আমি আসলে কোন কিছুকে অতিক্রম বা জয় করিনি। আমি শিখেছি যে কি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়- পিয়ানো বাজাতে বা চপ স্টিক দিয়ে খেতে আমি পারি না। কিন্তু সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখেছি তা হল আমার পক্ষে কি করা সম্ভব। তারপর তা আমি মন প্রাণ ঢেলে করার চেষ্টা করি।”


খুবই ভালো লাগলো !!!


তোমার জন্য একটা লালনের গান ভাইয়া

http://www.youtube.com/watch?v=WQfA4IeJkOI

১০| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৪৫

রাজু রহমান বলেছেন: রাজিব ভাই, আসুন না আমরা একটা গ্রুপ বা পেইজ খুলি ফেইসবুকে?

http://www.facebook.com/rajuraj698

১১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩

লিরিকস বলেছেন: আপনি ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.