নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিরাজের খেরোখাতা

সফদার কবিরাজ

আমি চ’লে যাব - তবু জীবন অগাধ তোমারে রাখিবে ধরে সেই দিন পৃথিবীর ‘পরে;- আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!

সফদার কবিরাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বই কেনা

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:২৯

ছোটবেলা থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস। বই কেনা আর পড়ার পেছনে জীবনে কত সময় যে ব্যয় করেছি তার হিসেব নেই। অনেক সময় এত বই জমে যেত যে নতুন বই কেনার জন্য নিজে নিজে কোন উপলক্ষ তৈরী করে নিতাম, যেমন- বছরের প্রথম দিন, পরীক্ষা শুরুর আগের দিন, পরীক্ষা শেষের দিন, ফলাফলের দিন, কোন জায়গায় গেলে তার প্রথম দিন আরো কত উপলক্ষ। একটা সময় গেছে বাবা ব্যাঙ্কে মাসিক হাতখরচের টাকা পাঠালেই সেই টাকা তুলে সবার প্রথমে বইয়ের দোকানে চলে গেছি- ১/২ টা বই কিনব বলে। পরবর্তীতে এর পরিবর্তিত রূপ হয়েছে-বেতনের টাকা হাতে নিয়ে বইয়ের দোকানে চলে যাওয়া। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পড়ার সুবাদে ফরিদপুরে থেকেছি প্রায় সাড়ে ছয় বছর। বই কেনা আর পড়ার নেশায় ফরিদপুরের প্রায় সব উল্লেখযোগ্য বইয়ের দোকানে গিয়েছি, পরিচয় হয়েছে অনেকের সাথে, জড়িয়ে গেছে জীবনের অনেক স্মৃতি।





ফরিদপুরের সবচেয়ে বড় বইয়ের দোকান মোসলেম লাইব্রেরীর সোনা ভাইয়ের সাথে পরিচয় বই কেনার সুবাদে। এমন দিন খুব কমই গেছে-নিউমার্কেট গেছি কিন্তু ঐ দোকানে ঢুঁ মারিনি। মানিব্যাগ একদম ফাঁকা তারপরও বন্ধুদের কাছ হতে টাকা ধার করে হলেও বই কিনেছি। একটা সময় এমন অবস্থা হল অনেক ভীড়ের মাঝেও সোনা ভাই আমাকে দোকানের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েছেন নিজে যাতে হাতে নিয়ে দেখে-শুনে বই কিনতে পারি। ওনার দোকানের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল ৩০% কমিশনে বই কিনতে পারা, যেটা ফরিদপুরের অন্য দোকানে প্রায় অসম্ভব।অনেক অনুবাদ বই, আমার পুরো পল্লীকবির কালেকশন, কিছু ক্ল্যাসিক বই কিনেছি এখান থেকে। ফরিদপুর যেদিন ছেড়েছি তার আগেরদিনও মধ্যাহ্ন বইটা কিনেছি ওনার দোকান থেকেই।





মোসলেম লাইব্রেরীর পাশে ছিল ইসলামিয়া লাইব্রেরী। এখানে ভারতীয় ঔপন্যাসিকদের বইয়ের সংগ্রহ বেশী। মোসলেম লাইব্রেরী থাকায় এখান থেকে তেমন একটা কেনা হয়নি, তারপরও দুই-একটা কিনেছি।





ফরিদপুরের জনতার মোড়ের আনন্দ বিপনীর কথা মনে পড়ছে। ফরিদপুর হতে সেবা প্রকাশনী-র যত বই কিনেছি তার ৯০%-ই এখান থেকে কেনা। একটা দুঃখ রয়েছে দোকানদার ভদ্রলোককে কখনো হাসিমুখে দেখিনি- না আমার সাথে,না অন্য কারো সাথে। একটা বই নেড়েচেড়ে দেখলাম, তারপর-আংকেল বইটার দাম কত, দাম মেটালাম, বই হাতে নিয়ে চলে আসলাম। তবে পাশে আরেকটা দোকান ছিল, এই দোকানের মালিক খুবই অমায়িক- শুধু একটাই সমস্যা বইয়ের দাম অনেক বেশী। এমনও হয়েছে দোকানের ভেতরে ঢুকে ৩০/৪০ মিনিট দেখে অনেক খুঁজেপেতে একটা বই বের করেছি, তারপর দামে বনেনি দেখে চলে এসেছি। এই দূর্মূল্যের বাজারে ৩০% কমিশনের বই ১০%-এ কেনা হয়নি। তারপরও দোকানদার আংকেল কিছু বলতেননা, পরেরবার গেলে আবার হাসিমুখে নতুন বইয়ের কথা শুরু করতেন।





ফরিদপুরের বইয়ের দোকানের মাঝে শাহীন ভাইয়ের বেঙ্গল লাইব্রেরী একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এখন তিনি নেই, তবে আমরা যখন ফরিদপুর ছেড়ে চলে আসি তখনও শাহ ফরিদ মসজিদের সাথে লাগোয়া মার্কেটে দোকানটা ছিল। বিকেলবেলায় হাঁটতে বেরিয়ে শাহ ফরিদ মসজিদে প্রায়ই মাগরিবের নামাজ পড়া হত। যাওয়া-আসার মাঝে কিভাবে যেন ওনার সাথে পরিচয় গড়ে উঠে। প্রথম দিকে একাডেমিক বই রাখলেও পরের দিকে কিছু ফিকশন বই নিয়ে আসেন। আমার সম্পূর্ণ কাকাবাবু কালেকশন তাঁর দোকান থেকেই কেনা। বই কিনি বা না কিনি ওনার দোকানে যেয়ে বই উলটে পালটে দেখতে ভালো লাগতো। তারপর একসময় দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষা চলে আসল, প্রায় মাস দেড়েক যাওয়া হয়নি ওনার দোকানে। পরীক্ষা শেষে একদিন গেলাম দোকানে, দেখি বন্ধ হয়ে আছে। পাশের দোকান থেকে বললো আগেরদিনও দোকানে বসেছিলেন তিনি, রাতে বাসায় ঘুমের মাঝে হঠাৎ করে মারা গেছেন। খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। হয়তো আগেরদিন আসলেও শেষ দেখাটা হত। হাসিখুশী মানুষটা হুট করে নেই হয়ে যাবেন এমনটা ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি।





ফরিদপুরের বই কেনার কথা বললে অবশ্যই সেখানকার মেলার কথা আসবে। ফী বছর এখানে বইমেলা হয়, আর এই মেলা থেকেও অনেক বই কিনেছি । আরেকবার ঐতিহ্য থেকে মেলা হল, ঐতিহ্য-র প্রকাশিত আইজাক আজিমভ আর আর্থার সি ক্লার্কের ৬ টা সায়েন্স ফিকশন সেইবার কিনেছিলাম।





হোস্টেলে মাঝে মাঝে ঢাকার পরমা হতে বিক্রয়কর্মীরা এসে বই বিক্রি করতো। ওরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকাশনীর বই আমদানি করে। একবার দুইটা বই এতই পছন্দ হল যে অনেকদিনের জমান দুইহাজার টাকা দিয়ে বই দুইটা তৎক্ষণাৎ কিনে ফেললাম।



প্রথম ফরিদপুর যাবার কয়েক সপ্তাহ পরেই ২০০ টাকা দিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিশেষ সদস্য হয়েছিলাম। তখন প্রতি শুক্রবার বিকালে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী আসতো। পুরো সপ্তাহ একটা বই পড়া শেষে আবার অনেক বেছে একটা বই নিব, এই উত্তেজনার কোনও তুলনাই হয় না! আমি পুরো অদ্ভূতুড়ে সিরিজ এখান থেকেই পড়েছি। তারপর জনৈক শ্রদ্ধেয় বড়ভাই আমার নেয়া বইটি হারিয়ে লাইব্রেরীর সদস্যপদের ইতি টেনে দেন। এছাড়াও মেডিকেলের সন্ধানী আর প্রতীতী-র লাইব্রেরী থেকেও অনেক বই নিয়ে পড়েছি।





ফরিদপুরের বই পড়ার দুই সঙ্গী রাজীব মজুমদার আর আল- রাযি মাহমুদ তালুকদার-এর কথা না বললেই নয়। লোডশেডিং-এর রাতে হোস্টেলের ছাদে বসে বইয়ের আড্ডাগুলোর কথা মনে পড়ে। ওরা না থাকলে হয়তো অসম্ভব সুন্দর ভালোলাগার কিছু বই আজো পড়া হোত না। রাযি তো বইয়ের যত্ন ক্যাটাগরীতে আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পাবার যোগ্যতা রাখে। রিজওয়ান জামিল আর তাওহীদ ইতুল বিপদের দিনে পকেট গড়ের মাঠ হবার পরও টাকা ধার দিয়ে অনেক বই কিনতে সাহায্য করেছে। আর রাজন হাসান কেও ধন্যবাদ জানাতে হবে, বইয়ের দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছি আর বই কিনি কিনি করছি, এমন মুহূর্তে ও আমাকে বাধা দিয়ে সমসাময়িক অর্থনৈতিক দৈন্যদশা হতে আমাকে মুক্ত করেছে।





ল্যাপটপ কেনার পর এখন বই কিছুটা কম পড়া হয়। আর আগের মত অনেক কষ্ট করে বই কিনতে হয়না, এখন মোটামুটি ইচ্ছেমতই বই কিনতে পারি। তারপরও ল্যাপটপ পর্দায় ই-বই পড়া আর হাতে নিয়ে পাতা উলটে বই পড়ার মাঝে বিশাল পার্থক্য। বই কিনে এখনো যে আনন্দ পাই সে আনন্দের তুলনা নেই! সবাই অনেক অনেক বই পড়ুন আর কিনুন। বইয়ের জয় হোক!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৪৮

ঢাকাবাসী বলেছেন: খুব ভাল অভ্যেস ছিল আপনার, তবে এখন ইন্টারনেটের যুগে বই পড়া অনেকের আর ইচ্ছেটা নেই। ধন্যবাদ।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:১৮

সফদার কবিরাজ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.