নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিরাজের খেরোখাতা

সফদার কবিরাজ

আমি চ’লে যাব - তবু জীবন অগাধ তোমারে রাখিবে ধরে সেই দিন পৃথিবীর ‘পরে;- আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!

সফদার কবিরাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই রিভিউ - নিশি মিয়া ট্রিলজি

১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৫




নিশি মিয়া একজন সাধক। সাধারণ কোন সাধক নন, প্রেতসাধক। তার উদ্দেশ্য মহৎ, সে মানুষের উপকারার্থে প্রেতসাধনা করে। অসুস্থ মানুষের সুস্থতার জন্য নিশি মিয়া উপমহাদেশীয় প্রাচীন প্রেতসাধনার পদ্ধতি ব্যবহার করে। যেমন রাতের আঁধারে নিশি ডাকে, মানুষের দোরে যেয়ে। এই নিশি ডাকে কেউ সাড়া দিলে সেই ব্যক্তি বেঘোরে মারা পড়ে আর অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠে।



নিশি মিয়া-কে নিয়ে লেখক রাজীব চৌধুরী তিনটি বই লিখেছেন – প্রেতসাধক নিশি মিয়া, নিশি মিয়া আধোচক্র এবং নিশিমিয়া মানুষখেকো। প্রথম বই ‘প্রেতসাধক নিশি মিয়া’ আলাদা সাতটি গল্প নিয়ে, সবগুলোর কাহিনি আলাদা, যদিও একের পর এক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে। এই বইতে নিশি মিয়া অপদেবতা খারুর সাথে লড়াই করে। এক পর্যায়ে ঘটনাচক্রে নিশি মিয়ার নিজের দেবী নেতা তার বিরুদ্ধে চলে যায়। দ্বিতীয় বই ‘নিশি মিয়া আধোচক্র’ প্রথমটির মতই কয়েকটি গল্প নিয়ে। এখানে নিশি মিয়ার সাথে নেতা দেবীর দ্বৈরথ, মাহারু নামে অপর একজন অপদেবতার আগমন এবং এক পর্যায়ে ওলা বিবি-র মুখোমুখি হয়, গ্রাম-বাংলায় যে পরিচিত কলেরা এবং স্মলপক্সের বাহক হিসেবে। তৃতীয় বই ‘নিশিমিয়া মানুষখেকো’ উপন্যাস – যেখানে তিনটি কাহিনী সমান্তরালে চলেছে। একদিকে নিশি মিয়ার ভক্ত নিতিনের পাগলামি, অন্যদিকে লেডি গাগা নামে শয়তানের উপাসক চিরযৌবনা এক নারী যে দেশের বিশিষ্ট কয়েকজনকে সাথে নিয়ে চাইছে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে। একদল কিশোরও যুক্ত হয়ে যায় যারা এফএম রেডিওর অনুষ্ঠানের জন্য ঘোস্ট হান্টিং করে, যাদের উদ্দেশ্য মৃতকে জীবিত করা। প্রথমে খাপছাড়া মনে হলেও বইয়ের শেষে এসে বোঝা যায় সবগুলো ঘটনার সমাপ্তি একই স্থানে।



নিশি মিয়া বিভূতিভূষণ-এর তারানাথ তান্ত্রিক হতে অনুপ্রানিত বলে মনে হয়। উপমহাদেশের প্রাচীন প্রেতসাধনা-র বিস্তারিত, ভয়াবহতা লেখক তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। বইগুলোতে ভয়ের উপাদানের কমতি নেই, তবে শুধু ভয় পেতে নয়; প্রেতসাধনা, প্রেতসাধক, অপদেবী-দের নিয়ে লেখক অনেক অজানা তথ্য দিয়েছেন, এজন্যেও বইগুলো পড়া প্রয়োজন। সিরিজের প্রথম বইটি আমার কাছে সবথেকে সেরা লেগেছে। শেষ বইটি আরেকটু সময় নিয়ে লিখলে আরো পূর্নতা পেতো ধারণা করি। কিছু ভুল-ভ্রান্তি পীড়া দিয়েছে, বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিতিন চিকিৎসক যদিও চিকিৎসা-পদ্ধতি ঠিক সেই সুলভ ছিলনা। মূমুর্ষূ প্রাণীকে চিকিৎসা-র শুরুতেই অতিরিক্ত অঙ্গহানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রাণীটিকে মৃত্যুমুখে আরো ঠেলে দেবার নামান্তর। রক্তপড়া বন্ধ করতে বার্নার নয়, ইলেক্ট্রোকটারি ব্যবহার করা হয়। র‍্যাবিস –এর বাংলা জলাতঙ্ক, সুতরাং দুইটি একই রোগ।



তিনটি বই-ই প্রিয়মুখ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে। অতিপ্রাকৃত এবং হরর প্রেমী-দের জন্য নিশি মিয়া ট্রিলজি অবশ্যপাঠ্য। নিশি মিয়া যেন ট্রিলজি-তে আটকে না থাকে, লেখকের কাছে দাবী রাখবো আবারো নিশি মিয়া-কে পাঠকদের মাঝে ফিরিয়ে আনার জন্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.